somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মোবাইল অপারেটররা নামমাত্র দামে ফ্রিকোয়েন্সি পাচ্ছে : গত ১৫ বছরে সরকারের গচ্চা গেছে ৫ হাজার ২শ’ কোটি টাকা

২৬ শে জানুয়ারি, ২০১১ দুপুর ১২:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দেশের চারটি মোবাইল অপারেটরের লাইসেন্স নবায়ন নিয়ে বিটিআরসি সম্প্রতি যে গাইডলাইন প্রকাশ করেছে, তাতে ফ্রিকোয়েন্সির দাম অনেক কম ধরা হয়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা দাবি করেছেন। কারণ, নতুন নীতিমালা বাস্তবায়িত হলে স্পেকট্রামের জন্য আবেদন করতে মোবাইল অপারেটরদের মাত্র ৫০ হাজার টাকা ফি লাগবে। যদিও পৃথিবীর অন্যান্য দেশে এই ফি আরও অনেক বেশি। এছাড়া স্পেকট্রাম অ্যাসাইনমেন্ট ফি দিতে হবে প্রতি মেগাহার্জে জিএসএম ১৮০০ ব্যান্ডের জন্য ১৫০ কোটি টাকা, ৯০০ ব্যান্ডের জন্য ৩০০ কোটি টাকা এবং সিডিএমএ’র প্রতি মেগাহার্জের জন্য ১৫০ কোটি টাকা।
তাদের দাবি, গত ১৫ বছরের আয়-ব্যয়ের একটি সাদামাটা হিসাবকে বিবেচনায় এনে বিটিআরসি লাইসেন্স নবায়ন নীতিমালা তৈরি করেছে। এতে আগামী ১৫ বছরে দেশের মোবাইল সেক্টরের সম্ভাব্য বিকাশকে হিসাবে আনেননি। তাই ন্যূনতম ফি নির্ধারণ শতভাগ ইতিবাচক নয়। বিশেষত ফ্রিকোয়েন্সি চার্জ কমপক্ষে দ্বিগুণ ধরা হলে দেশের আয় বাড়তো। তারা মনে করেন, ২০১১ সালটি বাংলাদেশের টেলিকম সেক্টরের জন্য অতিগুরুত্বপূর্ণ বছর। কারণ, এই বছরই টেলিকম সেক্টরে এমন কিছু সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে যা আগামী ১৫ বছরের ভবিষ্যত্ নির্মাণ করে দেবে। তাই এখানে ভুল করার সুযোগ নেই।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, সরকার ও বিটিআরসির সিদ্ধান্তহীনতার কারণে গত ১৫ বছরে এমনিতেই ৫ হাজার ২০০ কোটি টাকা গচ্চা গেছে। অর্থাত্ ওই সময়ে দেশি-বিদেশি কয়েকটি টেলিকম অপারেটরের কাছ থেকে এই টাকা আদায় করতে পারেনি সরকার। কারণ, কয়েকটি টেলিকম অপারেটরের কাছে দেশের ফ্রিকোয়েন্সি বিক্রি না করে তা ফ্রি বরাদ্দ দিয়েছিল। তাদের মতে, এটি এমন দুর্নীতি যা ভারতের টেলিকম দুর্নীতির চেয়েও ভয়াবহ।
জানা গেছে, সম্প্রতি বিটিআরসি চারটি মোবাইল অপারেটরের লাইসেন্স নবায়নের খসড়া তৈরি করতে গেলে এই ভয়াবহ চিত্র বেরিয়ে আসে।
টেলিকম বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, যেখানে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ওই সময় ফ্রিকোয়েন্সি বিক্রি করেছিল ১৪.৬ বিলিয়ন ডলারে, নরওয়ে ৮৯.৬ মিলিয়ন ডলারে, সিঙ্গাপুর ১৬৫.৬ মিলিয়ন ডলারে, ইউকে ৩৫.৩৯ বিলিয়ন ডলারে, জার্মানি ৪৫.৮৭ বিলিয়ন ডলারে সেখানে বাংলাদেশ ৫টি মোবাইল ফোন অপারেটরের কাছে ফ্রিকোয়েন্সি তুলে দিয়েছে বিনা পয়সায়।
১৯৯৬ সাল থেকে টেলিকম অপারেটররা বাংলাদেশে ব্যবসা শুরু করে। ওই সময় থেকে তারা সম্পূর্ণ ফ্রি চার্জে সর্বমোট ৯২ মেগাহার্জ ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করে আসছে। এর মধ্যে গ্রামীণফোনের ফ্রিকোয়েন্সির পরিমাণ ২২ মেগাহার্জ। রবি’র ১৪ দশমিক ৮ মেগাহার্জ, বাংলালিংক ১৫ মেগাহার্জ, এয়ারটেল ১৫ মেগাহার্জ, টেলিটক ১৫ দশমিক ২ এবং সিটিসেল ব্যবহার করছে ১০ মেগাহার্জ। ২০০৮ সালে ২২ মেগাহার্জ বিক্রি করা হয় কয়েকটি অপারেটরের কাছে। এর মধ্যে গ্রামীণফোন ৭ দশমিক ৪ মেগাহার্জ, বাংলালিংক ৫ দশমিক ১ মেগাহার্জ, রবি ৫ মেগাহার্জ কিনেছে, যা বিক্রি করে সরকার গত ৩ বছরে আয় করেছে ২ হাজার ১৬০ কোটি টাকা। অর্থাত্ এর আগে ১১ বছর সবগুলো অপারেটর হাজার কোটি টাকা দামের ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করলেও সরকারকে কোনো টাকা দেয়নি।
বাস্তবতা হচ্ছে, ২০০৮ সালে বিভিন্ন অপারেটরের কাছে ২২ মেগাহার্জ ফ্রিকোয়েন্সি বিক্রি করার পরও সংশ্লিষ্ট অপারেটরগুলোর কাছে অবিক্রীত ফ্রিকোয়েন্সি থেকে যায় আরও ৬৫ মেগাহার্জ, যা বিক্রি করা সম্ভব হলে সরকারের কোষাগারে আসতো আরও ৫ হাজার ২শ’ কোটি টাকা। অবিক্রীত ফ্রিকোয়েন্সির মধ্যে গ্রামীণফোনের ১৪.৬ মেগাহার্জ, সিটিসেলের ১০ মেগাহার্জ, রবি’র ১২.৬ মেগাহার্জ, বাংলালিংকের ১২.৬ মেগাহার্জ, টেলিটকের ১৫.২ মেগাহার্জ রয়েছে। কিন্তু এসব অপারেটর সরকারের কাছ থেকে ফ্রি ফ্রিকোয়েন্সি নিয়ে তা বিভিন্ন কোম্পানির কাছে বিক্রি করে একই সময়ে কোটি কোটি টাকা আয় করেছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, শুধু চোখ-কান খোলা রাখলেই আগামী ১৫ বছরে সরকার মোবাইল ফোন অপারেটরদের কাছ থেকে কমপক্ষে ১৪ হাজার ৫৭৯ কোটি টাকা আয় করতে পারবে। হিসাব অনুযায়ী, এই আয়ের মধ্যে গ্রামীণফোনের কাছ থেকে আয় করা সম্ভব ৭ হাজার ৫৬ কোটি টাকা। বাংলালিংক থেকে ৩ হাজার ৩০০ কোটি টাকা, রবির কাছ থেকে ৩ হাজার ১৬৩ কোটি টাকা। সিটিসেলের কাছ থেকে ১ হাজার ২০ কোটি টাকা। আর এই টাকা দিয়ে চারটি যমুনা সেতু কিংবা ১০টি যাত্রাবাড়ি ফ্লাইওভার তৈরি করা সম্ভব। কারণ, যমুনা সেতুর বাজেট ছিল সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা। আর গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভারের বাজেটি ১৩শ’ কোটি টাকা।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, দেশের ভৌত অবকাঠামোর উন্নয়নসহ টেলিকম সেক্টরের উন্নয়নের জন্য সরকার বিদেশি সাহায্য সংস্থাগুলোর কাছে একের পর এক হাত পাতলেও হাজার হাজার কোটি টাকার প্রাকৃতিক সম্পদ ফ্রি দিয়ে দিচ্ছে মোবাইল অপারেটরদের।
বর্তমানে দেশে জিএসএম প্রযুক্তির মোবাইল সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ৫টি ও একটি সিডিএমএ অপারেটর। বিশেষজ্ঞরা বলেন, বিটিআরসির খসড়া নীতিমালা শতভাগ যৌক্তিক না হলেও এটি বাস্তবায়ন হলে মোবাইলফোন অপারেটরদের লাইসেন্স পেতে অবশ্যই তাদের ব্যবস্থাপনা পরিষদে ৫০ শতাংশ হারে বাংলাদেশী কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দিতে হবে। আর বিদেশি কর্মকর্তার সংখ্যা অবশ্যই মোট কর্মচারীর ১ শতাংশের বেশি হওয়া যাবে না। শীর্ষ ব্যবস্থাপনা পরিষদ যেমন সিইও, সিএফও, সিসিওসহ শীর্ষস্তরে দেশি-বিদেশি চাকরিজীবীর সংখ্যা হতে হবে ৫০ শতাংশ হারে। অথচ বর্তমানে মোবাইল অপারেটর কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের নিয়ম-কানুন, জবাবদিহিতা এবং স্বচ্ছতা না থাকায় বাংলাদেশী কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা বর্ণবৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। কোনো জিএসএমভিত্তিক অপারেটর যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও কোনো বাংলাদেশীকে সিইও হিসেবে নিয়োগ দেয়নি।
তারা বলেন, খসড়া নীতিমালায় সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, প্রতি বছর অপারেটরগুলোর মোট রাজস্ব আয়ের ১ দশমিক ৫ শতাংশ হারে সোস্যাল অবলিগেশন ফি সরকারি কোষাগারে জমা দেয়ার কথা বলা হয়েছে। যেটি বাস্তবায়ন হলে সরকার এই ফান্ড দিয়ে টেলিযোগাযোগ খাতের উন্নয়নসহ ভৌত অবকাঠামোগত উন্নয়নে ব্যাপকভাবে কাজে লাগাতে পারবে।
নতুন নীতিমালায় বলা হয়েছে, সব অপারেটরকে তাদের গ্রাহকদের জন্য গুণগত সেবা নিশ্চিত করতে হবে। কল ড্রপ, কল ভেঙ্গে যাওয়া, নেটওয়ার্ক সমস্যা এবং ভয়েস ও ড্যাটা সার্ভিসে যাতে কোনো সমস্যা না হয় সেটা নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া প্রচুর পরিমাণে অভিযোগ কেন্দ্র, সার্ভিস সেন্টার থাকতে হবে। জরুরি ও টোল ফ্রি নম্বরগুলোর জন্য কোনো ধরনের চার্জ রাখা যাবে না।
২০০৭ সালে সেলুলার মোবাইল ফোন সংক্রান্ত টেলিকম সেক্টরের সার্বিক সংস্কার উপলক্ষে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়েছিল।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. রফিকুল ইসলামকে আহ্বায়ক করে ৭ সদস্যের ওই কমিটিতে ছিলেন ড. মো. আবু সাইদ খান, মাহাবুব সারোয়ার, এটিএম তারিকুজ্জামান, মজিবর রহমান আল মামুন, তারেক এম বরকত উল্লাহ এবং রেজাউল কাদের। ওই কমিটি সরকারের সঙ্গে মোবাইল অপারেটরদের রেভিনিউ শেয়ারিং নির্ধারণ, মোবাইল টেলিফোনের শেয়ার পুঁজিবাজারে উন্মুক্তকরণ, মোবাইল টেলিফোনের বিভিন্ন চার্জ পুনর্র্নিধারণ, এই সেক্টরে দেশীয় জনবলের কর্মসংস্থান সুবিন্যস্তকরণসহ সিদ্ধান্ত নিয়েছিল মোবাইল অপারেটরগুলোকে তাদের গ্রাহকদের কাছ থেকে আয়কৃত ভাড়া ও কলচার্জের শতকরা ১৫ শতাংশ টাকা রেভিনিউ শেয়ারিং হিসেবে সরকারকে দিতে হবে। আর নতুন লাইসেন্স নবায়ন নীতিমালা সেই সিদ্ধান্তের আলোকেই তৈরি হয়েছে।
৬৫টি মন্তব্য ৫৯টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=হিংসা যে পুষো মনে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৫৮


হাদী হাদী করে সবাই- ভালোবাসে হাদীরে,
হিংসায় পুড়ো - কোন গাধা গাধিরে,
জ্বলে পুড়ে ছাই হও, বল হাদী কেডা রে,
হাদী ছিল যোদ্ধা, সাহসী বেডা রে।

কত কও বদনাম, হাদী নাকি জঙ্গি,
ভেংচিয়ে রাগ মুখে,... ...বাকিটুকু পড়ুন

গণমাধ্যম আক্রমণ: হাটে হাঁড়ি ভেঙে দিলেন নূরুল কবীর ও নাহিদ ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:০৫


জুলাই গণঅভ্যুত্থানের রক্তস্নাত পথ পেরিয়ে আমরা যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলাম, সাম্প্রতিক মব ভায়োলেন্স এবং গণমাধ্যমের ওপর আক্রমণ সেই স্বপ্নকে এক গভীর সংকটের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। নিউ এজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

রিকশাওয়ালাদের দেশে রাজনীতি

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৪৯

রিকশাওয়ালাদের দেশে রাজনীতি

সবাই যখন ওসমান হাদিকে নিয়ে রিকশাওয়ালাদের মহাকাব্য শেয়ার করছে, তখন ভাবলাম—আমার অভিজ্ঞতাটাও দলিল হিসেবে রেখে যাই। ভবিষ্যতে কেউ যদি জানতে চায়, এই দেশটা কীভাবে চলে—তখন কাজে লাগবে।

রিকশায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপিকেই নির্ধারণ করতে হবে তারা কোন পথে হাটবে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:০৫




অতি সাম্প্রতিক সময়ে তারেক রহমানের বক্তব্য ও বিএনপির অন্যান্য নেতাদের বক্তব্যের মধ্যে ইদানীং আওয়ামীসুরের অনুরণন পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিএনপি এখন জামাতের মধ্যে ৭১ এর অপকর্ম খুঁজে পাচ্ছে! বিএনপি যখন জোট... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় আগ্রাসনবিরোধী বিপ্লবীর মৃত্যু নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৭



শরিফ ওসমান হাদি। তার হাদির অবশ্য মৃত্যুভয় ছিল না। তিনি বিভিন্ন সভা-সমাবেশ, আলোচনা ও সাক্ষাৎকারে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি অনেকবার তার অস্বাভাবিক মৃত্যুর কথা বলেছেন। আওয়ামী ফ্যাসিবাদ ও ভারতবিরোধী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×