প্রথমেই ডিসক্লেইমার দিয়ে নেই - শুধু পরিসংখ্যান দিয়ে খেলা বিচার করা যায় না, অনেকগুলো নিয়ামক জড়িত আছে বিধায়ই খেলা এত বিচিত্র, শুধু কিছু সংখ্যা নয়। তবে এটাও সত্য, সর্বকালের সেরাদের পরিসংখ্যান তাঁদের শ্রেষ্ঠত্বকে সমর্থন করে, কারণ তাঁরা যেটায় ভালো সেটায় নিয়মিত সাফল্য পান বলেই না তাঁরা সেরা! পরিসংখ্যান দিয়ে যেটা চেষ্টা করা যায় সেটা হল একটা প্রাথমিক বাছাই করা, কোনোভাবেই তুলনা না করা। আজকে সেটাই চেষ্টা করা যাক, অলরাউন্ডারদের জন্য।
শুরুতেই আমাদের দরকার একটা সাধারণ ক্ষেত্র। ক্রিকেটে সর্বকালের কথা যদি আসে, সেখানে একটা মাত্র লেভেল প্লেয়িং গ্রাউন্ড হল টেস্ট ক্রিকেট, বাকি ফরম্যাটে খেলার সৌভাগ্য অতীত অনেক সেরাদেরই হয় নাই।
এরপর আমাদের একটা স্যাম্পলিং সাইজ নির্দিষ্ট করা প্রয়োজন। আমার ব্যাক্তিগত মত হল, ১০০ উইকেট বা ২০০০ রানের আগে একজন বোলার বা ব্যাটসম্যানকে যেকোনো তালিকায় না ঢোকানো। অতীতে বেশী খেলার সুযোগ ছিল না, তবু এই সংখ্যা পেরোতে প্রয়োজনীয় ম্যাচ তাঁরাও মোটামুটি খেলেছেন। ক্রিকইনফো বলছে, ক্রিকেটের প্রায় ১৫০ বছরের 'সর্বকালে' মাত্র ২৬ জন আছেন যাঁরা ২০০০ রান করেছেন এবং একই সাথে ১০০ উইকেট নিয়েছেন! তালিকাটা একনজর দেখলেই বোঝা যায়, সর্বকালের সেরা অলরাউন্ডারদের খুঁজতে আর কোথাও যেতে হবে না। চমৎকার
তবে, সমস্যা হল, এঁরা আবার সবাই ঠিক অলরাউন্ডার হিসেবে পরিচিত নন। ভাস, কুম্বলে, ওয়ার্নরা ব্যাটিং টুকটাক পারতেন বটে, তবে টুকটাক পারলেই কি অলরাউন্ডার হয়? তাই এবার গড়ের দিকে তাকানো যায়। প্রথমে ভাবলাম ৩০ এর নিচে ব্যাটিং গড় বা ৪০ এর উপর বোলিং গড় ফিল্টার আউট করে দেই। সমস্যা হল, তাতে আবার স্যার হ্যাডলি বাদ পড়ে যান (২৭.১৬)।
আরেকটা কাজ করা যায়, ব্যাটিং গড় বোলিং গড়ের চেয়ে কম হইলে বাদ দেয়া যায়। কিন্তু ফ্লিনটফের (ব্যাটিং ৩১.৭৭, বোলিং ৩২.৭৮) কি হবে তা হলে ? শেষমেষ একটা সহজ ফিল্টার করা যায়, সর্বনিম্ন ২৫ ব্যাটিং গড় আর সর্বোচ্চ ৩৫ বোলিং গড় - মাত্র ১৭ জনের একটা তালিকা পেয়ে যাই (চিত্র), যেটা নিয়ে তেমন বিতর্ক থাকবে না, এঁরা প্রত্যেকে ব্যাটে-বলে দলের জন্য ভালো অবদান রেখেছেন।
তালিকার কাজ শেষ, এবার একটু বিশ্লেষণের চেষ্টা। এক নজর দেখলেই বোঝা যায়, উপরের দু'জনের ব্যাটিং গড় রীতিমত ঈর্ষনীয়, এমনকী সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যানদের দলে ঢুকে যাবেন। নিশ্চিন্তে স্যার সোবার্স আর জ্যাক ক্যালিসকে সর্বকালের সেরা ব্যাটিং অলরাউন্ডার হিসেবে মেনে নেয়া যায়। অনেকের চোখে তাঁরা সবমিলিয়েও সেরা।
আবার স্যার হ্যাডলি, পোলকদের ব্যাটিং গড় তেমন আকর্ষনীয় না হলেও বোলিং গড় অসাধারণ। এমনকী ইমরান খান, কিথ মিলারদের চমৎকার ব্যাটিং গড়ের পরও বলা যায়, বোলিংটা তাঁদেরকে আলাদা করবে। সেদিক থেকে তাঁদেরকে বোলিং অলরাউন্ডার বলা যেতে পারে।
অনেকে বলে সত্যিকার অলরাউন্ডার হলেন তাঁরা, যারা শুধুমাত্র ব্যাটিং
বা বোলিং, যেকোনোভাবেই যেকোনো দলে আসতে পারেন। পরিসংখ্যান অনেক সময়ই মিথ্যা বলে, তবে ৪০ উর্দ্ধ ব্যাটিং গড় বা অনূর্দ্ধ ৩০ বোলিং গড়কে সাধারণভাবে স্পেশালিস্ট হিসেবে বেশীর ভাগ দলে আসার জন্য যথেষ্ট মেনে নেওয়া যায়। মজার ব্যাপার, এই তালিকায় এমন একজনও নাই!
তবে একজনের এখনও সুযোগ আছে, তিনি আমাদের সাকিব আল হাসান (ব্যাটিং ৩৮.৩১, বোলিং ৩১.৪৫)। বয়স ২৭, এখনই ক্যারিয়ার পিকে ওঠার সময়। তবে তাঁর ব্যাটিং বা বোলিং পরিসংখ্যান আলাদা করে কোনোটাই ঠিক এক্সেপশনাল নয়, তিনি বেশী ম্যাচ খেলার সুযোগও হয়ত পাবেন না, আর ভারত, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ডে না খেলার অর্থ গ্লোবাল ইম্প্যাক্ট রাখার সুযোগও তাঁর কম। তাই ক্যারিয়ার শেষে তিনি হয়ত সর্বকালের সেরার ছোট্ট তালিকায় নাও আসতে পারেন।
তবে অলরাউন্ডারের একটা কঠিন ক্রাইটেরিয়ায় অনন্য হবার সুযোগ তাঁর আছে বৈকী!