সকালের দিকে ঢাবি টি এস সি তে গিয়েছিলাম। দেখলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলে মেয়েরা প্রতিবাদ করছে- ঢাবির বুক চিরে মেট্রোরেল নয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বুক দিয়ে ট্রেন।খুব খারাপ কাজ। এতে লেখাপড়ার যথেষ্ট ক্ষতি হবার সম্ভবনা রয়েছে।তাই আন্দোনল যৌক্তিক।কিন্তু কথায় আছে, সময়ের এক ফোড় আর সময়ের দশ ফোড়। মানে timely action.
অনেক ক্ষেত্রে সময়ের কাজ অসময়ে করলে ঐ কাজটি নতুন বিড়ম্বনা সৃষ্টি করে। আমার মনে হয়, বর্তমানে আন্দোলনটি ঠিক এরকম কিছু একটা।
একটু পিছনে যাই...
বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে অক্টোবর মাসে প্রথম একটি প্লান প্রকাশ করে, যাতে মেট্রো রেলের কথা বলা হয়। এরপর বিভিন্ন পথ ও মত পেরিয়ে একটি নকশা গৃহীত হয় যা ১ ফেব্রুয়ারি ২০১১ ডেইলিস্টার এ প্রকাশিত হয়।
তারপর আরো কিছু পথ পেরিয়ে ২০১২ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) এ প্রকল্প অনুমোদন পায়। তারপর কাজের অগ্রগতি শুরু। ১১ সেপ্টেম্বর,২০১৪ নির্মাণাধীন মগবাজার ফ্লাইওভার সংলগ্ন সড়ক পরিদর্শন শেষে যোগাযোগমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, “মেট্রোরেল নির্মাণের জন্য এলাইনমেন্ট ও ১৬টি স্টেশনের নকশা আজ চূড়ান্ত করা হয়েছে। আগামী বছরের শুরুর দিকে মেট্রোরেলের ফিজিক্যাল ওয়ার্ক শুরু হবে।” (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)।
২১ জুন ২০১৫ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম এ প্রকাশিত হয় -ঢাকার বহু প্রতীক্ষিত মেট্রোরেলের নির্মাণকাজে ব্যবহারের জন্য রাজধানীর চারটি বড় পরিসরের জায়গা ভাড়া নিচ্ছে মেট্রোরেল প্রকল্প।প্রাথমিক কিছু কাজ শুরুও হয়েছে। এবছরের ৪ জানুয়ারী ছাত্রলীগের ৬৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানান, আগামী ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় মেট্রোরেল প্রকল্পে নির্মাণকাজের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এখন কথা হচ্ছে, মেট্রো রেলের নকশা যখন হল (২০১১), তখন আন্দোলন করা হয়নি কেন??
একনেকে যখন অনুমোদন করা হয়(২০১২) তখন আন্দোলন হয় নি কেন??
মন্ত্রী যখন কাজ শুরুর প্রচারণা করেছিলেন, তখন আন্দোলন হয় নি কেন??
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, প্রকল্প শুরুর আগে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সাথে তারা আলোচনা করেই প্রকল্প বাস্তবায়নে হাত দিয়েছেন।আরো বলা হচ্ছে, বিদ্যুৎচালিত আধুনিক পদ্ধতিতে চলবে যা ভেরিয়েবল ভোল্টেজ ভেরিয়েবল ফ্রিকোয়েন্সি ইনভার্টার সিস্টেমে খুব কম শব্দ উৎপন্ন করবে এবং তা শব্দ দূষণ করবে না। সাউন্ড প্রুফ লাইব্রেরি করা হবে।ট্রেনে থাকবে ম্যাস স্প্রিং সিস্টেম যার ফলে কম্পন অনুভুত হবে না। ইত্যাদি ইত্যাদি
তাহলে কাজ শুরু করার পর এখন আন্দোলন করা হচ্ছে কেন??
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সংশয় প্রকাশ করে আরো বলেছেন যে, এখন রুট পরিবর্তন করতে গেলে পুরো প্রকল্পটি বাদ যেতে পারে।
কিন্তু মাথায় রাখতে হবে, ঢাকা একটি মেগাসিটি। ১ কোটি ২০ লাখ লোকের বাস।নির্ধারিত সময় ২০১৯ সালে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে প্রতি চার মিনিট পরপর ১ হাজার ৮০০ যাত্রী নিয়ে চলবে মেট্রোরেল। ঘণ্টায় চলাচল করবে প্রায় ৬০ হাজার যাত্রী।মোট ২৪ জোড়া মেট্রোরেল চলাচল করবে রাজধানীতে। উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত সময় লাগবে ৪০ মিনিটেরও কম।সবচেয়ে বড় কথা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা বড় অংশ ছাত্র-ছাত্রী খুব কম সময়ে আসা যাওয়া করতে পারবে।তাদের জন্য সবচেয়ে বড় সুবিধা এটা।
মেট্রোরেলে ১৬টি স্টেশন হবে- উত্তরা (উত্তর), উত্তরা (সেন্টার), উত্তরা (দক্ষিণ), পল্লবী, মিরপুর ১১, মিরপুর-১০ নম্বর, কাজীপাড়া, তালতলা, আগারগাঁও, বিজয় সরণি, ফার্মগেইট, সোনারগাঁও, জাতীয় জাদুঘর, দোয়েল চত্বর, জাতীয় স্টেডিয়াম এবং বাংলাদেশ ব্যাংক এলাকায়।
তাই মেট্রোরেল ঢাকাবাসীর জন্য আর্শীবাদ।
আমি বলছি না, এই আন্দোলন প্রকল্পের জন্য বাধা।কিন্তু সময়ের আন্দোলন টি অসময়ে করার ফলাফল কতটা ফলদায়ক।
সাধারণ নাগরিক হিসাবে আমাদের কথা, আন্দোলন কারীদের সাথে সমঝোতা হোক বা না হোক ,মেট্রোরেল আমাদের চাই।এটা করতেই হবে।সেটা রুট পরিবর্তন করে হোক বা অপরিবর্তিত রেখে হোক।।।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ২:০৮