ছোট বেলার ঈদের কথা মনে পড়ছে, আব্বা টেইলরের কাছে নিয়ে গজ কাপড় দিয়ে ফ্রক বানিয়ে দিতেন। দোকান থেকে চুড়ি ক্লিপ জুতা কিনে দিতেন।
বান্ধবীদের কাছ থেকে সব লুকিয়ে রাখতাম, দেখে ফেললে ঈদের মজা শেষ।
আহা, কি আনন্দ লাগতো! বার বার লুকিয়ে লুকিয়ে জামা জুতা দেখতাম। খুশিতে রাতে ঘুম হতো না, কখন আসবে সেই কাঙ্ক্ষিত ঈদ! কখন উঠবে ঈদের চাঁদ! কখন পরবো নতুন জামা জুতা।
কত অল্পে আমরা সন্তুষ্ট ছিলাম, কত অল্পে আমরা ঈদের আনন্দ করতাম।
ঈদের দিন সকালে উঠেই গোসল করে নতুন কাপড় পরে ফিটফাট হয়ে ঘরের বড়দের সালাম করতাম। প্রতিবেশীদেরও সালাম করতাম।
আর এখনের বাচ্চারা প্রতিবেশী দূরে থাক, ঘরের বড়দেরই সালাম করতে চায় না।
আর এখন কত কম্পিটিশান, কার চেয়ে কে বেশী দামের জামা জুতা কিনবে। এবার বাবা মায়ের দেয়ার সামর্থ থাক আর না থাক, বড় বড় শপিংমল থেকে ব্যান্ডের দামী জামা জুতা কিনতে হবে। কারণ প্রেষ্টিজের ব্যাপার, ঈদ যেন আসে দামী জামা জুতা কেনার জন্য। আহারে মানুষ, আহারে ঈদ.....!
ঊনত্রিশ রমজানে আকাশের দিকে তাকিয়ে চোখ ব্যাথা করে ফেলতাম ঈদের চাঁদ দেখার জন্য।
আর এখন আকাশে কেউ চাঁদ দেখে না, টিভি বা ফেসবুকেই ঈদের চাঁদ উঠে যায়....!
একবার উনত্রিশ রোজায় সবাই চাঁদের অপেক্ষায় আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি। সেদিন আকাশ মেঘলা, চাঁদ আর দেখা যায় না।
জানার জন্য তখন টিভি, ইন্টারনেট এসব ছিল না, একটাই মাধ্যম ছিল কিছুকিছু ঘরে হাতেগুনা কয়েকটা রেডিও।
রেডিওতেও বলছে কোথাও চাঁদ দেখা যায় নি। আব্বা সহ মসজিদের মুসল্লি সবাই তারাবি পড়লেন, আমাদের মনটা খুব খারাপ হলো।
রাতে আব্বা আম্মা সেহরি খেতে উঠলেন। কি মনে করে আব্বা রেডিওটা অন করলেন, "ঈদের চাঁদ দেখা গিয়েছে আজ ঈদ" ঘোষকের কন্ঠে ভেসে উঠলো...!
আব্বা মসজিদের মুয়াজ্জিন কে দিয়ে মাইকে বলালেন, "এলাকা বাসী আপনারা কেউ রোজা রাখবেন না, ঈদের চাঁদ দেখা গিয়ে ছে' আজ ঈদ'।"
ঘরে ঘরে আমরা বাচ্চারা কিলবিল করে উঠে গেলাম, কিসের ঘুম কিসের রাত। সেই মাঝরাত থেকে শুরু হয়ে গেলো আমাদের ঈদের আনন্দ।
আজও ভুলি না মাঝরাতের সেই ঈদের কথা......!
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জুন, ২০১৮ সকাল ১০:৫৬