somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রবীন্দ্রনাথঃ একজন প্রজাপীড়ক অত্যাচারি জমিদার

০৮ ই মে, ২০১৮ রাত ১১:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক। একজন দার্শনিক। এছাড়াও তিনি ছিলেন একজন জমিদার। সেবাদাস গণমাধ্যম রবী ঠাকুরের অনেক কথাই লুকিয়ে রাখে তবে তার চেয়ে বড় সমস্যা কিছু কথাকে পুরো উল্টে দেয়। যেমন গত কয়েক বছর ধরে ২/১ টা গণমাধ্যম এমন প্রচার করার অপচেস্টা করছে রবীন্দ্রনাথ নাকি জমিদার হিসেবে অনেক ভাল ছিল। কিন্তু ইতিহাস দেখি ইতিহাস কি তাই বলে?

পশ্চিমবঙ্গের বুদ্ধিজীবী অমিতাভ চৌধুরী লেখেন,
“রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সামন্তবাদী প্রজাপীড়ক জমিদার ছিলেন। তাঁর দফায় দফায় খাজনা বৃদ্ধি এবং জোর-জবরদস্তি করে তা আদায়ের বিরুদ্ধে ইসমাইল মোল্লার নেতৃত্বে শিলাইদহে প্রজা বিদ্রোহ ঘটেছিল"। [১]

রবীন্দ্রনাথের ঠাকুরের প্রাইভেট সেক্রেটারি অমিয় চক্রবর্তী একবার বিশাল জমিদারীর একটি ক্ষুদ্র অংশ দরিদ্র প্রজাসাধারণের জন্য দান করার প্রস্তাব করেছিলেন । রবীন্দ্রনাথ ইজি চেয়ারে আধ শোয়া অবস্থা থেকে সোজা হয়ে বসে বলেছিলেন-
‘‘বলো কি হে অমিয় ! আমার রথিন তাহলে খাবে কি ?’’ [২]

বামপন্থী বুদ্ধিজীবী ড. আহমদ শরীফ,
"জমিদার হিসেবে ঠাকুর পরিবার ছিল অত্যাচারী। গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়েছিল। বুট পরে প্রজাকে লাথি মেরেছেন,পায়ে দলেছেন দেবেন ঠাকুর। এটাই রেকর্ড করেছিল হরিনাশ মজুমদার। যিনি মহর্ষি বলে পরিচিত, তিনি এ রকমভাবে মানুষকে পদাঘাতে দলিত করেন। গ্রাম জ্বালাবার কথাও আছে। আবুল আহসান চৌধুরীর কাছে এর সমস্ত ডকুমেন্ট আছে। সমগ্র ঠাকুর পরিবার কখনো প্রজার কোনও উপকার করে নাই। স্কুল করা,দীঘি কাটানো এসব কখনো করে নাই। মুসলমান প্রজাদের চিট করার জন্য নমঃশূদ্র প্রজা এনে বসতি স্থাপনের সাম্প্রদায়িক বুদ্ধি রবীন্দ্রনাথের মাথা থেকেই বের হয়েছিল। কাঙাল হরিনাথ মজুমদার তার ‘গ্রাম্য বার্তা প্রকাশিকা’ পত্রিকায় ঠাকুর পরিবারের প্রজা পীড়নেরর কথা লেখে ঠাকুর পরিবারের বিরাগভাজন হয়েছিল।” [৩]

১৮৯৪ সালে রবীন্দ্রনাথ শিলাইদহে জমিদারীতে খাজনা বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। গরীব মুসলমান প্রজারা তাঁর পায়ে পড়লো, কিন্তু রবীন্দ্রনাথ নির্মমভাবে তা আদায় করলেন । পরে সেই বাড়তি আয়ের টাকায় মার্কিন কোম্পানীর কাছ থেকে ডেবরাকোল জমিদারী খরিদ করেছিলেন ।
এ প্রসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের প্রবন্ধকার শ্রী অরবিন্দু পোদ্দার লিখেছিলেন,
“জমিদার জমিদারই । রাজস্ব আদায় ও বৃদ্ধি, প্রজা নির্যাতন ও যথেচ্ছ আচরণের যেসব অস্ত্র চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত বাংলার জমিদার শ্রেণীর হাতে তুলে দিয়েছিল, ঠাকুর পরিবার তাঁর সদ্ব্যবহারে কোনও দ্বিধা করেনি। এমনকি জাতীয়তাবাদী হৃদয়াবেগ ঔপনিষদিক ঋষি মন্ত্রের পুনরাবৃত্তি এবং হিন্দু মেলার উদাত্ত আহবানও জমিদার রবীন্দ্রনাথকে তাঁর শ্রেণীস্বার্থ থেকে বিচ্যুত করতে পারেনি"। [৪]


ঠাকুর পরিবার মূলত অত্যাচারী ছিল অনেক আগে থেকেই শচীন্দ্র অধিকারি লেখেন,

কয়েক পুরুষ ধরে প্রজাদের উপর পীড়ন চালিয়েছে জোড়াসাকোর এই ঠাকুর পরিবারটি। রবীন্দ্রনাথ ও তাঁর ব্যতিক্রম ছিলোনা। "১৮৯৪ সনে রবীন্দ্রনাথ চাষীদের খাজনা বাড়িয়ে দিয়েছিলো,খাজনা আদায়ও করেছিলো। [৫]
একই ধরনের কথা বলেছেন অশোক চট্টোপাধ্যায়,
“জমিদারদের বড়দেবতা হলো অর্থ আর স্বার্থ। অর্থ আর স্বার্থলাভ করতে ঠাকুর পরিবারের জমিদার হিসেবে দুর্নামের কালোদিক আড়াল করে রাখলেও প্রকৃত ইতিহাসের পাতা থেকে তা মোছা যাবে না। “ঠাকুর পরিবারের এই মহর্ষি জমিদারদের প্রতিকটাক্ষ করে হরিনাথ লিখেছেন “ধর্মমন্দিরে ধর্মালোচনা আর বাহিরে আসিয়া মনুষ্যশরীরে পাদুকাপ্রহার, একথা আর গোপনকরিতে পারি না।” [৬]

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জমিদারি ছিল পূর্ব -বাংলায়। এই পূর্ব -বাংলার মুসলমান প্রজাকুল থেকে খাজনা আদায় করে পশ্চিম – বাংলার কলিকাতায় শান্তি -নিকেতন, বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। নোবেল প্রাইজ-এর পুরো অর্থও ব্যয় করেছেন বিশ্ব ভারতীতে। কিন্তু পূর্ব -বাংলার প্রজাদের কল্যাণে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের হাত ছিলো একেবারে মুষ্টিবদ্ধ। এর কারন কি!? [উত্তর খোঁজার চেস্টা করেছি পরের লেখায়।]

আহমদ ছফা একটা প্রবন্ধে লেখেন, জীবিত থাকলে রবীন্দ্রনাথকেই প্রশ্ন করতাম যে মুসলিম প্রজারা প্রজন্মের পর প্রজন্ম আপনাদের পরিবারের অন্ন জুগিয়েছে, তাদের নিয়ে আপনি কেন তাদের জন্য কিছুই করেন নি, কোন একটা ছোট বা বড় গল্প লেখেননি তাদের নিয়ে।[৭]
বিক্রমের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাসুদ মজুমদার লেখেন,
আমাদের দেউলে বুদ্ধিজীবীরা জমিদার রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে যখন বেশি মাতামাতি করেন তখন ভাবতে কষ্ট হয় শাহজাদপুর, শিলাইদহ, নওগাঁর কুঠিবাড়িতে ‘ক্ষুধিত -পাষাণের’ ভেতর কত না নিপীড়িত প্রজারর আহাজারী লুকিয়ে আছে। পূর্ব-বাংলার কত সম্পদই না ঠাকুর বাড়ির সিন্দুকে জমা পড়েছে”। [৮]
তথ্যসূত্রঃ
১। জমিদার রবীন্দ্রনাথ, অমিতাভ চৌধুরী, দেশ, শারদীয় সংখ্যা, কলকাতা ১৪৮২
২। অন্নদা শংকর রায়ের রচনা থেকে উদ্ধৃত, রবীন্দ্রনাথের রাজনৈতিক চিন্তাধারা, আবু জাফর, বইঘর, চট্টগ্রাম ১৯৮৫
৩। ড. আহমদ শরীফ, দৈনিক বাংলাবাজার, ১৪ এপ্রিল ও ১মে ‘৯৭
৪। শ্রী অরবিন্দু পোদ্দার, রবীন্দ্রনাথ ও রাজনৈতিক গ্রন্থ দ্রষ্টব্য।
৫। শচীন্দ্র অধিকারি, “শিলাইদহ ও রবীন্দ্রনাথ” পৃঃ ১৮, ১১৭
৬। (অশোক চট্টোপাধ্যায়, “প্রাক বৃটিশ ভারতীয় সমাজ”, পৃষ্ঠা ১২৭, ১৯৮৮)
৭। আহমদ ছফা, “জীবিত থাকলে রবীন্দ্রনাথকেই প্রশ্ন করতাম” স্টুডেন্ড ওয়েজ
৮। http://www.muldharabd.com/?p=1094
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মে, ২০১৮ রাত ১১:১৩
৮টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×