somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কানাডার স্কুলে এক দিন (পর্ব ১১) - কিশোরিবেলায় কানাডার প্রথম ভালোলাগা - এক গ্রিক দেবতারূপী সুদর্শন কানাডিয়ান ছেলে

০৪ ঠা জুন, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আগের বেশ কিছু পর্বের চেয়ে অনেক আলাদা এ পর্বটা। তাই অন্য পর্বের মতো শুরুতেই ভূমিকা করে বলবনা কি নিয়ে লিখছি। পড়েই দেখুন না কি আছে! অবশ্য টাইটেলেই অনেক কিছু বলে দিয়েছি!

আগের পর্বগুলো:
কানাডার স্কুলে প্রথম দিনের অভিজ্ঞতা
কানাডার স্কুলে প্রথম দিন (২য় পর্ব)
কানাডার স্কুলে প্রথম দিন (৩য় পর্ব)
কানাডার স্কুলে প্রথম দিন (চতুর্থ পর্ব)
কানাডার স্কুলে এক দিন (পর্ব ৫)
কানাডার স্কুলে এক দিন (পর্ব ৬) ১৮+
কানাডার স্কুলে এক দিন (পর্ব ৭) আমার ভারতীয়, পাকিস্তানী অভিজ্ঞতা এবং অন্যান্য
কানাডার স্কুলে এক দিন (পর্ব ৮) কিছু ভারতীয় যে কারণে বাংলাদেশকে ছোট করে দেখে
কানাডার স্কুলে এক দিন (পর্ব ৯): কেন প্রবাসি বাংলাদেশি বাচ্চারা কানাডিয়ান/ভারতীয় হয়ে যাচ্ছে
কানাডার স্কুলে এক দিন (পর্ব ১০) সমকামিতা ১৮++

কাহিনি একদম স্কুলের প্রথমদিনের প্রথম ম্যাথ ক্লাসে ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। আমি অনেক নার্ভাস, রুমের এদিক সেদিক তাকাচ্ছি। কোন বাংলাদেশি পাই কিনা। মেয়েদের ড্রেস দেখে তাজ্জব বনে যাচ্ছি। কি অদ্ভুত চুল, চেহারা! কিসব খটমটে ভাষায় একে অপরের সাথে কথা বলছে সবাই! মনে হচ্ছিল আজব এক চিড়িয়াখানায় আমি। চিড়িয়াটা কি আমি না অন্যরা সেটা বুঝতে পারছিলাম না। আমি দ্বিতীয় সারিতে বসা এবং একটা ছেলে একদম সামনের রোয়ের মাঝখানের চেয়ারটায় বসা। এদিক সেদিক অবাক চোখে ঘাড় ঘোরাতে ঘোরাতে ছেলেটার দিকে চোখ পরল। অন্যদিকে ফিরিয়ে নিতেই আবার ঘুরে গেল ঘাড়।

একি দেখলাম আমি! টকটকে ফর্সা, খাড়া নাক, কোকড়ানো বাদামি চুল, লম্বা একটা ছেলে! শুধু চোখটা ছোট ছোট ছিল কিন্তু তাছাড়া বিশ্বাস করুন গ্রিক দেবতার মতো দেখতে। এতো সুন্দর আমি আর কখনো দেখিনি। আমি হা হয়ে তাকিয়ে থাকলাম কিছুক্ষন। হঠাৎ করে মায়ের বলা কথা মনে পরল। বাংলাদেশে সেভেনে এ উঠতে উঠতে মা বলেছিলেন "ছেলেদের দিকে তাকাবে না আর ওরা তাকালে নরমাল থাকবে। পাত্তা দেবেনা। ভাল মেয়েরা পাত্তা দেওয়া নেওয়ার মধ্যে থাকেনা। বুঝেছ? বেশি বুঝনা কিন্তু আবার!" মনে পরতেই লজ্জায় চোখ সরিয়ে নিলাম।

সুদর্শন ছেলেটি গুনীও ছিল। কদিনেই বুঝে গেলাম স্কুলের ম্যাথ গুরু। সব সাবজেক্টেই ভাল কিন্তু ম্যাথটাকে নিজের আর্ট বানিয়ে রেখেছেন জনাব। ক্লাসের সবাই টিচারের আগে ওর কাছে হেল্প চাইত। আর টিচাররাও জানতেন ছেলে জিনিয়াস। আর এদিকে আমি! ইংরেজী না জানা মফস্বলের বাংলা মিডিয়ামে পড়া মেয়ে। কোনমতে ফেল ঠেকাচ্ছি ক্লাস টেস্টগুলোতে। টিচাররা সাপোর্ট করছে, সিমপ্যাথি ফিল করছে। বলছে এত হার্ড ওয়ার্ক করছ, সব জলদিই ঠিক হয়ে যাবে। আমি টিচারকে বলতাম লেকচারের অনেককিছুই বুঝতে পারিনা, খুব জলদি বলেন। আসলে জলদি বলতেন না, কানাডিয়ান ইংলিশ না বোঝার কারনে তা মনে হত। টিচার আমাকে বলতেন, " wish I could speak your language!" এত সুইটনেসের কারনেই খাটতে লাগলাম মনের জোর করে।

আর আড়চোখে দেখতে লাগলাম প্রতিবার হায়েস্ট পাওয়া গ্রিক দেবতা এরিককে। প্রথমদিনের ভাল লাগাটা কমে যেতে লাগল। রাগে গা জ্বলে যেত যখন ক্লাসের সব মেয়েরা ন্যাকা সুরে ওর আশেপাশে "এরিক! একটু দেখিয়ে দেওনা" বলত। আরে আমার না হয় ভাষা সমস্যা, তোমাদের কি? নিজের ব্রেইন খরচ করে করোনা। একটা ছেলের সামনে এভাবে বারবার হেল্প চাইতে আসতে হবে কেন? মেয়েদের বুদ্ধি ছেলেদের চেয়ে হাজারগুন বেশি, ওদের সামনে হেল্প চাওয়া/মাথা নোয়ানো কি লজ্জার ব্যাপার! আর এরিক প্রচন্ড ডাট নিয়ে হেল্প করত। কারও সাথে আগ বাড়িয়ে কথা বলতনা। নিজের মনে একা একা হুইসেল বাজাত এবং চেহারা দেখে বোঝা যেত যে নিজেকে বেস্ট ইন স্কুল ভাবে।

জেদ চেপে গেল আরো। এই নাক খাড়া অহংকারী ছেলেকে দেখিয়ে দিতে হবে। ভাবতে ভাবতেই কিভাবে যেন একবার আমি একটা ক্লাস টেস্টে হাইয়েস্ট মার্ক পেয়ে গেলাম। টিচারতো আমার চেয়েও দ্বিগুন খুশি। অবশেষে হার্ডওয়ার্কের পুরষ্কার পেল মেয়েটা, পিঠ চাপড়ে বললেন হায়েস্ট ইন ক্লাস। আর সেবারই এরিক কিছুটা খারাপ করল। ৮০র মধ্যেই কিন্তু ওর ৯০ না পাওয়া আর কেয়ামত আসা একই ব্যাপার। আমি আনন্দের সাথে নিজের টেস্টের দিকে তাকিয়ে ছিলাম এসময়ে আমার নাম নিয়ে বলল, "..... তোমার টেস্টটা একটু দেখি?" হায় কিযে খুশি হয়েছিলাম আমি! এত ফ্যামাস ও আমার নাম জানে! কিভাবে? দিলাম ওকে। ভাংগা ইংলিশে মাতব্বরি করে বোঝানোরও চেষ্টা করলাম। সেদিন বাড়িতে আসার সময় পুরো রাস্তা ওর কন্ঠে আমার নেওয়া নামটা কানে বাজছিল। পরে বুঝেছিলাম আমার নাম জানার রহস্য। আমার আলাদা সাজপোশাক আর টিচারের সাথে অধিক কথোপকথনের কারনে কোন বন্ধু না থাকলেও সবাই আমার নাম জানত!
প্রথম সেমিস্টার কষ্টে শিষ্টে শেষ হল। সেমিস্টার শেষে যথারীতি এরিক হায়েস্ট আর আমি ৮৫% পেলাম। ৮৬% এ A হয়, টিচার বললেন এত হার্ডওয়ার্ক করেছ। তুমি A ডিসার্ভ করো। উনি মার্ক বাড়িয়ে দিলেন। এখানে টিচার চাইলে কয়েক পার্সেন্ট বাড়িয়ে দিতে পারেন। কেননা তারা স্টুডেন্টকে কাছ থেকে দেখেন। তাই তাদের ডিসিশনকে সম্মান করা হয়। অনেক টিচারই কয়েক পার্সেন্ট বাড়িয়ে লেটার গ্রেড বাড়িয়ে দেন কাছাকাছি মার্ক থাকলে। খুব আনকমন না ব্যাপারটা তবে আমি অনেক স্পেশাল ফিল করেছিলাম সেদিন ওনার মমত্ববোধে।

ওর কথা ভুলতে ভুলতেই আবার ওপরের ক্লাসে ওর সাথে ম্যাথ পরল। আমার এক কানাডিয়ান বান্ধবী (বেস্ট ফ্রেন্ড) হয়ে গিয়েছিল ততদিনে। কানাডায় খুব কমই কানাডিয়ান বন্ধু হয়েছে আমার। কেন জানি বিদেশিদের সাথে মিশতে বেশি ভাল লাগে। যে দুএকজন কানাডিয়ান বন্ধু হয়েছে "বি" তার মধ্যে অন্যতম। ভাষা বেশ কিছুটা বুঝতে শুরু করলাম। মোটামুটি বেটার পরিস্থিতি। আমার বান্ধবী "বি" খুব খাটত কিন্তু মোটামুটি করত। ব্রেইন অত ভাল ছিলনা। আর এরিক না খেটেও অনেক ভাল করত। এজন্যে খুব হিংসা করত ওকে। আমিও ওর অহংকারি স্বভাব দেখতে পারতাম না। দুইজনে মিলে ওর তাকানো, কথা বলা মিমিক্রি করে আড়ালে হাসাহাসি করতাম। যাই হোক প্রথম ক্লাস টেস্ট আসল। প্রতিটা কথার অংক। অনেক না জানা কঠিন শব্দের কারনে প্রশ্নই বুঝতে পারলাম না। আমি কিছুক্ষন ট্রাই করে টিচারকে বলে দিলাম পারবনা। টিচার অনেক হিন্ট দিলেন, কিছু লিখে জমা দিলাম। কোনমতে পাশ। এরিক এবারও হায়েস্ট!

কিন্তু দিন চেন্জ হল। সেই পরীক্ষাটা শেষ ফেইলিউর ছিল। এরপরের ক্লাসটেস্টগুলোতে আমিই হায়েস্ট/সেকেন্ড হায়েস্ট পেতে শুরু করলাম। ততদিনে ওদের দেশের পড়ার সিস্টেমটা বুঝে গিয়েছিলাম। পাঠ্যবই থেকে কিছুই আসবেনা তাই ইন্টারনেট থেকে আরো প্র্যাকটিস করতাম। কথার অংক না থাকলে কে ঠেকায়! এরিকও ভাল করত। আর হাওয়ায় হাওয়ায় জেনে গেলো আগের গ্রেডে ফ্লুকে একবার হায়েস্ট পাওয়া মেয়েটা আসলেই ভাল করছে! এখানে প্রতিটি স্টুডেন্টের স্টুডেন্ট নাম্বার থাকে যা শুধু টিচার এবং সেই স্টুডেন্টই জানে। মার্ক লিস্টে স্টুডেন্ট নাম্বারের পাশে মার্ক লেখা থাকে। তাই একজনের মার্ক অন্যজন জানেনা। তবে কে ভাল কে খারাপ তা টিচারের কথায়, বা স্টুডেন্টের চালচলনে ঠিকই সবাই বুঝে যায়। এরিক ওর নাম্বারটা লিস্টে হায়েস্ট না হলে আমাকে আমার মার্ক জিগ্যেস করতো। কে হায়েস্ট পেয়েছে এটা জানার ইচ্ছা আরকি! আমি বলতাম না। বলতাম ১-১০০ এর মধ্যে যেকোন কিছু। আমার বান্ধবী "বি" তো খুব খুশি। নিজে না পারলেও অন্যকেউ এরিককে টেক্কা দিল!

ফাইনাল হল। আমি হায়েস্ট পেলাম। আর এরিক জীবনে প্রথমবারের মতো ৯০ এর নিচে ফাইনাল মার্ক পেল। টিচারও অবাক। যদিও ও অনেক মেধাবী ছিল। একটা দূর্ঘটনা ছিল মাত্র। হায়েস্ট আমি পেয়েছি এটা ও জেনেও গেল টিচারের মুখে। এরিকের মুখটা হাসি হাসি ছিলো কিন্তু মন যে খুব খারাপ তা বুঝতে পারছিলাম। অন্য স্টুডেন্টরা অবাক চোখে ওর দিকে তাকাচ্ছে। ওদের অংক গুরুর একি হাল! সেদিন আমাকে অবাক করে দিয়ে ও দুষ্টুমি করল আমার সাথে। হয়ত অকওয়ার্ডনেস কাটাতেই। বোর্ডে আমার নাম লিখে তার পাশে নাম্বারটা লিখল। জোরে বলল "হায়েস্ট ইন ক্লাস!" আমি উঠে যেয়ে মুছে দিলাম আর দুষ্টুমি করে ওর নাম্বারটা লিখলাম সেই জায়গায়। এখনোও মনে আছে ৮৮% পেয়েছিল ও। ও আবার আমারটা লিখল। এভাবে একটু পরে দেখলাম পেন/ ডাস্টার নিয়ে ওর পেছনে দৌড়াচ্ছি, খিলখিল করে হাসছি। যেন কতদিনের বন্ধু আমার! এরিকও প্রানখুলে আমার সাথে হাসল, মিশলো। এখনো অবাক হই ভেবে হঠাৎ করে এত ফ্রি কি করে হলাম আমরা সেদিন? অনেক দৌড়াদৌড়ি, খুনসুটির পরে টিচার থামতে বললেন। আমরা নিজেদের চেয়ারে বসে পরলাম। সেই ক্লাসের শেষ দিন ছিল ওটা। হয়তো সেজন্যেই একটা সুন্দর বন্ধুত্ব হতে হতে হলনা!

এরপরে বছরখানেক পেরিয়ে গেছে। সিনিয়ার ইয়ারে পদার্পন করেছি। গ্রিক দেবতাকে মাঝেমাঝে হাটতে দেখি স্কুলের এদিক সেদিকে। বেখেয়ালি চোখ ঠিকই চলে যায়। আমার সাথে আর কোন ক্লাস পরেনি। আমি তখন স্কুলের টিএ, টিউটরিং ক্লাবের সদস্য, ভাল ছাত্রী। পায়ের তলার মাটি অনেক শক্ত। আমার এক থাই ছাত্রী ছিল যার ক্লাসের টি.এ. এবং ব্যক্তিগত টিউটর দুটোই ছিলাম। মেয়েটা ইংলিশ তেমন পারতনা। ভয়ে ভয়ে থাকত খুব। পুরোন আমাকে দেখতে পেতাম ওর মধ্যে। জান প্রান দিয়ে হেল্প করতাম তাই। ওকে ওর এক টিচারের কাছে নিয়ে গেলাম ও কিছু প্রশ্ন করবে বলে। আমি সাথে থাকলে সাহস পাবে। ওর ভাংগা ভাংগা ইংলিশ টিচারকে বুঝিয়ে দিতে পারব আমি।
সেই ক্লাসে এরিকও ছিল। আমার কাছে এসে বলল, "..... তুমি একটু হেল্প করতে পারবে এই অংকটাতে?" আমিতো থ! এখনো আমার কথা মনে আছে ওর! আর অংকে হেল্প চাইছে! এমনভাবে বলছে যেন কালকেরই কথা ছিল আমাদের শেষ দিনটা। থাই মেয়েটাকে টিচারের সাথে লাগিয়ে ওর অংক দেখতে লাগলাম। এখনও আমার জীবনে অনেক বড় দুঃখ যে সেই অংকটা আমি পারলাম না। অনেক চেষ্টা করেও ওকে হেল্প করতে পারলাম না। ও বলল, "Thanks for trying, I will ask the teacher later." এরিকের সাথে সেটাই শেষ কথা ছিল।

বাড়িতে আসার পরে খুব গিল্ট ফিল হল সেদিন। যে ছেলেটাকে এত অহংকারী ভাবতাম সেকি অবলীলায় আমার কাছে হেল্প চাইল! ওর শান্ত স্বভাবকে আমি বোধহয় ভুল বুঝেছিলাম। কি সম্মান ছিল আমার মেধার ওপরে ছেলেটার যে এতদিন পরেও ভোলেনি! আমার খটমটে বাংলা নামটা ঠিকই মনে রেখেছে স্পষ্ট করে। আমি মেয়ে বলে ওতো হেল্প চাইতে দ্বিধা করল না! আমি কত কিছু ছেলে মেয়ের ভেদাভেদ মনে পুষে রাখতাম। সহপাঠিদের মধ্যে আবার ছেলে মেয়ে কি? আমি আগে কখনো পড়াশোনা বা কোনকিছুতে ছেলেদের হেল্প নেওয়াটা মানহানিকর মনে করতাম। কিন্তু তারপর থেকে এখন পর্যন্ত এভাবে মনে করিনা। এমন অনেক ছেলে আছে আমার চেয়ে মেধাবী, তাদের থেকে কিছু শিখতে পারলে আমারই তো লাভ। গ্রিক দেবতা আমার জীবন থেকে যেতে যেতে অনেক বড় একটা শিক্ষা দিয়ে গেলেন আমাকে। আমি হয়তো ওর জন্যে বেটার মানুষ হতে পেরেছিলাম।

পাঠক, এরিক আমার জীবনের প্রথম ভালবাসা ছিলনা। অতি সুন্দর চেহারা দেখে প্রেমে পরার মতো স্টুপিড সেদিনও ছিলাম না, আজও নেই। তবে হ্যা তাকিয়ে থাকতে ভাল লাগত গ্রিক দেবতার দিকে, সুন্দর ভয়ংকর সুন্দর কোনকিছু ইগনোর করা যায় না। আর অহংকারী, বেখেয়ালি ওর পাত্তা পেতেও ভাল লাগত। যার কাছে সবাই হেল্প চাইত সে আমার কাছে হেল্প চাইলে নিজেকে নিয়ে গর্ববোধ হত। কিন্তু ওর সাথে সম্পর্ক করব এটা কখনো ভাবিনি। এতকিছু বুঝতামও না সে বয়সে। শুধু মায়ের কথা কানে বাজত তাই আর কিউপিড বেল বাজাতে পারেনি হয়তো!
তবে ও আমার জীবনের প্রথম সমবয়সী ছেলে ছিল যে ছেলেদেরকে সম্মান করতে শিখিয়েছে। মফস্বলে ছেলেরা যখন হাফপ্যান্ট পরে মাঠে মজা করে খেলত আমাকে সালোয়ার কামিজ পরে টিভি, বইয়ে মুখ গুজে থাকতে হত। কাজিন ভাইয়েরা মাছ, মাংসের সেরা টুকরোটা পেত। মফস্বলের মধ্যবিত্ত্ব আমি ছোটবেলা থেকেই বুঝে গিয়েছিলাম ছেলেদের ছেলেমানুষ হতে আপত্তি নেই। কিন্তু মেয়েদের জন্যে মেয়েমানুষ শব্দটা একটা গালি! মা খালাদের বোঝানোতে বুঝতাম যে ছেলেরা কম বোঝে বলেই ওদেরকে বেশি সুবিধা দেওয়া হয়। সে বোঝাটা তৃপ্তি দিত। এজন্যে বেশি সুবিধা পাওয়া পুরুষজাতিকে একটু অসম্মানের চোখেই দেখেছি সবসময়। কিন্তু এই ছেলে আমার চিন্তা চেতনা পাল্টে দিয়েছিল। সম্মান পেয়ে নিজেও সম্মান করতে শিখেছিলাম। তাই ওকে প্রথম ভাললাগা তো বলাই যায়!
তবে কানাডাতেও ছেলে মেয়ের বৈষম্য রয়েছে। একদিন সময় করে লিখব সেসব।

শেষ কথা: বেশ কিছুদিন ব্লগে পাসওয়ার্ড সমস্যার কারনে ঢুকতে না পারায় এই পর্ব দিতে দেরি হল, এবং একই কারনে অনেকের কমেন্টের জবাবও দেরিতে দিয়েছি।

"বি" এখন আর্কিটেকচারিং এ পড়ছে।
এরিক সফটওয়্যার ইংজিনিয়ার হতে চাইত। জানি না এখন কোথায়? যেখানেই থাকুক ভাল থাকুক।

আগের পর্বে একজন কমেন্ট করেছিলেন যে আস্তে আস্তে সিরিয়াস বিষয়ের দিকে নিয়ে যাচ্ছি পর্বগুলো। ফিরে গিয়ে পড়লাম সব পর্বগুলো আবারো। মনে হল তাইতো। প্রথম পর্বে সদ্য কিশোরির ইন্নোসেন্স ছিল, ছোট ছোট সমস্যা ছিল কিন্তু আস্তে আস্তে কত সিরিয়াস বিষয় যেমন প্রতিবেশী দেশের সম্পর্ক, প্রবাসি বাচ্চা, সমকামিতা নিয়ে লিখে ফেললাম! সেগুলো আমার কিশোরিবেলার ভাবনাচিন্তা ছিল না। বরং সেই অভিজ্ঞতা ব্যবহার করে ভার্সিটি পড়ুয়া আমার সাবালক মস্তিষ্কের বিশ্লেষন ছিল। আজকে তাই আবারো কিশোরি বনে গেলাম, হালকা বিষয় নিয়ে লিখলাম যা সেই সময়ে খুব জরুরি ছিল। জানি না পাঠকের কেমন লাগবে হঠাৎ করে আবার ছোট হয়ে যাওয়া আমাকে!
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জুন, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:২২
২৪টি মন্তব্য ২৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আপনি কি পথখাবার খান? তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য

লিখেছেন মিশু মিলন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৪

আগে যখন মাঝে মাঝে বিকেল-সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতাম, তখন খাবার নিয়ে আমার জন্য ওরা বেশ বিড়ম্বনায় পড়ত। আমি পথখাবার খাই না। ফলে সোরওয়ার্দী উদ্যানে আড্ডা দিতে দিতে ক্ষিধে পেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×