somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশের ভিনদেশী বন্ধু

২১ শে আগস্ট, ২০১০ রাত ৩:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আমাদের সেইসব বন্ধুরা




বিপদেই বন্ধুর পরিচয়। আর বিপদে যে এগিয়ে আসে সেই তো পরম বন্ধু। একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় আমরা অনেককেই বন্ধু হিসেবে পাশে পেয়েছি। আমাদের গৌরবময় অধ্যায়ের খুব গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে আমরা পেয়েছিলাম ভিনদেশী কিছু মমতাময় মানুষকে। সেইসব দরদী বন্ধুদের নামগুলো আজও আমাদের মনে পড়ে। বিশ্বের মানবতাবাদী মানুষ আমাদের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে অনেক আগে থেকেই মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করেছিলেন। বিভিন্ন দেশের শিল্পী, কবি, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, সংগঠন নিজ নিজ ভূমিকা পালন করতে দ্বিধা করেনি। ১৯৭১ এর চরম দুঃসময়ের সেই ভয়াল ৯ মাসের পুরোটাই এমন অনেক অকৃত্রিম বন্ধু পেয়েছিলাম আমরা।


দ্রোহের মন্ত্রে ভালোবাসা
দ্য কনসার্ট ফর বাংলাদেশ, জর্জ হ্যারিসন এণ্ড হিজ ফ্রেণ্ডস



‘হাজার হাজার সহস্র লোক
মরছে ক্ষুধায়
এ যন্ত্রণার নেই কোনো শেষ
দেখিনি তো এত নির্মম ক্লেশ
বাড়াবে না হাত বলো সবাই
করো অনুভব
বাংলাদেশের মানুষগুলোকে
বাংলাদেশ...বাংলাদেশ।’

আগষ্ট, ১৯৭১ সাল। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক নগরের ম্যাসিডন স্কয়ার। সেখানে চলছে ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’। অপ্রতিরোধ্য বীর বাঙালির মুক্তিসংগ্রামের সঙ্গে একাত্ম হয়ে বিট্লসের জর্জ হ্যারিসন গাইলেন, ‘বাংলাদেশ...বাংলাদেশ’ শীর্ষক এই গানটি। উদ্দেশ্য ছিল, বাঙালি শরণার্থীদের সাহায্যের জন্য অর্থ-তহবিল গঠন করা। তাঁর সঙ্গে ছিলেন সেতারবাদক পণ্ডিত রবিশংকরসহ আরও অনেকে। একাত্তরের দিনগুলোই ছিল এমন ।



ভিন্ন দেশ, ভিন্ন স্বর, তবুও সবাই প্রাণপনে ভালোবেসে গেছে যুদ্ধাহত বাংলাদেশকে। ৫৫ হাজার বর্গমাইলের রক্তাক্ত দেশটির পাশে দাঁড়ানোর জন্য নিবেদিতপ্রাণ কাজ করে গেছে বিশ্ববাসী।
সরাসরি যুদ্ধ, যুদ্ধের একমাত্র উপায় নয়- প্রমাণ করেছিলেন পন্ডিত রবিশঙ্কর আর বাংলার বন্ধু স্যার জর্জ হ্যারিসন। বাংলাদেশের হতভাগ্য শরণার্থীদের সহায়তার লক্ষ্যে ১৯৭১ সালে নিউইয়র্কের ম্যাডিসন স্কয়ারে তাঁরা আয়োজন করেন ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’। কনসার্টে জর্জ হ্যারিসন, রবিশংকর ছাড়াও বব ডিলান, রিংগো স্টার, এরিক ক্যাপটন, লিওন রাসেল, বিলি প্র্যাস্টন সহ বিশ্বের তাবৎ সব বাঘা বাঘা শিল্পীদের সংগীতের মাদকতায় ভেসেছিলো লাখ লাখ মানুষ। জোয়ান বায়েজ কনসার্টে আসতে না পারলেও লিখেছিলেন তাঁর অমর গান ‘বাংলাদেশ বাংলাদেশ’। যুদ্ধ কবলিত বাংলাদেশকে রার এবং সাহায্যের হাত বাড়াতেই এই কনসার্ট আয়োজিত হয়েছিল । পন্ডিত রবিশংকর এর অনুরোধে এবং উৎসাহেই কনসার্টটি আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন বিট জেনারেশনের সৃষ্টিকারী বিটলস-এর জর্জ হ্যারিসন । একটি দেশের স্বাধীনতার সমর্থনে, সেই দেশে চলমান গণহত্যার প্রতিবাদে সেই সময়ের সারা বিশ্ব কাঁপানো সংগীত শিল্পীরা অংশগ্রহন করেন এই কনসার্টে । এবং কালে এই কনসার্ট হয়ে গেল কিংবদন্তী ।



মুলত শরনার্থীদের আর্থিক সহযোগিতা এবং স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্রের সাহায্যার্থে এই কনসার্টের উদ্যোগ নিয়েছিলেন সেতার সম্রাট রবিশংকর । এই কনসার্টে গানে গানে ফুটে উঠে এই কনসার্ট এর আয়োজন এর উদ্দেশ্য; পাক হানাদারদের বর্বরতা ও অধিকারহারা বাঙালির দুঃখগাথা। মুল গায়ক জর্জ হ্যারিসন ও তার মানবতাবাদী গায়ক বন্ধুরা গানে গানে এই কথাগুলোই বিশ্ববাসীকে শুনিয়েছেন, জানিয়েছেন । তার সেই উদ্যোগ শুধু আর্থিক সহযোগিতায় সীমাবদ্ধ থাকেনি, বরং বাংলাদেশের অস্তিত্বের কথা, চলমান গণহত্যার কথা , লাখো দেশান্তরী শরনার্থীর কথা সারা বিশ্বকে জানিয়ে দিয়েছে তারা। পাকিস্তানের হত্যাযজ্ঞের বিরুদ্ধে এবং বিশ্ব বাংলাদেশের পক্ষে জনমত গঠনে ভূমিকা রেখেছে । সেই সময়ের আমেরিকান সরকার বাংলাদেশের জন্মের বিরোধিতা করলেও মার্কিন জনমত ছিল বাংলাদেশের পক্ষে। যার অন্যতম কারণ হিসেবে ধরা হয় এই কনসার্টটিকে ।












১৯৪৩ সালে ব্রিটেনের লিভারপুলে জন্মগ্রহণ করেন হ্যারিসন।স্কুলে পড়ার সময়ই ভাই পিটার আর বন্ধু কেলিকে নিয়ে 'দ্য রেবেলস' (বিদ্রোহীদের দল) নামের ব্যান্ড দল গড়ে তোলেন হ্যারিসন। হাই স্কুলের পালা শেষ করে মাত্র ১৬ বছর বয়সেই তিনি বন্ধু পল ম্যাককার্টনির ‘কুয়ারিম্যান’ রক দলের সঙ্গে যুক্ত হন। ১৯৬০ সালে এ দলটিই ‌‌'বিটলস' নামে পরিচিতি লাভ করে। মাত্র এক দশক টিকে থাকলেও ‘বিটলস’ বিশ্বজুড়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। তখনকার তরুণসমাজ পাগলের মতো ছুটেছে এই দলের চার সদস্য- জন লেনন, পল ম্যাককার্টনি, জর্জ হ্যারিসন ও রিঙ্গো স্টারের পেছনে। এই চার তারকা অদ্ভুত এক সম্মোহনে আবদ্ধ করেছিলেন কোটি তরুণকে। ২০০১ সালের ২৯ নভেম্বর জর্জ হ্যারিসন মারা যান।


মুক্তিযুদ্ধের উন্মাতাল সময়ে লাখো মুক্তিযোদ্ধার বুকে সাহস জুগিয়েছে এই কনসার্ট। আর বিশ্বের মানুষ জেনেছে বাংলাদেশে পাকিস্তানিদের বর্বরতার কথা, লাখো বাঙালির দুর্দশার কথা। যুক্তরাষ্ট্রের মেডিসন স্কয়ারের এ কনসার্টে 'বাংলাদেশ' শিরোনামের গান গেয়েছিলেন জর্জ হ্যারিসন। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে 'বাংলাদেশ' নামটির সঙ্গে অনেকের পরিচয়ই হয়েছিল স্বনামধন্য গায়কের এই গানের মাধ্যমে। সেই থেকে বাংলাদেশের দুঃসময়ের বন্ধু ও আপামর বাঙালির প্রাণের স্বজন হিসেবে পরিচিত হয়ে আছেন হ্যারিসন। পৃথিবী বিখ্যাত এ পপ তারকার প্রতি আজও তাই একইরকম ভালোবাসা অনুভব করে বাংলাদেশ। বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস সংরণকারী জাদুঘর থেকে শুরু করে বই, পোস্টার, সিডি এমনকি তারুণ্যের প্রিয় পছন্দ হয়ে টি-শার্টে স্থান করে নিয়েছেন কাঁচা-পাকা চুল আর দাড়ি ঢাকা মুখের হ্যারিসন।

হ্যারিসনের বিখ্যাত বাংলাদেশ গানটি:

হ্যারিসনের বিখ্যাত বাংলাদেশ গানটি

পর্ব - ১
পর্ব - ২
পর্ব - ৩
পর্ব - ৪ পর্ব - ৫
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জানুয়ারি, ২০১২ বিকাল ৩:২১
১৫টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×