somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশের ভিনদেশী বন্ধু ( পর্ব - ৫ )

২৪ শে আগস্ট, ২০১০ রাত ২:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বিপদেই বন্ধুর পরিচয়। আর বিপদে যে এগিয়ে আসে সেই তো পরম বন্ধু। একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় আমরা অনেককেই বন্ধু হিসেবে পাশে পেয়েছি। আমাদের গৌরবময় অধ্যায়ের খুব গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে আমরা পেয়েছিলাম ভিনদেশী কিছু মমতাময় মানুষকে। সেইসব দরদী বন্ধুদের নামগুলো আজও আমাদের মনে পড়ে। বিশ্বের মানবতাবাদী মানুষ আমাদের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে অনেক আগে থেকেই মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করেছিলেন। বিভিন্ন দেশের শিল্পী, কবি, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, সংগঠন নিজ নিজ ভূমিকা পালন করতে দ্বিধা করেনি। ১৯৭১ এর সে ৯ মাসের পুরোটাই এমন অনেক অকৃত্রিম বন্ধু পেয়েছিলাম আমরা।


সেইসব দরদী বন্ধুদের জন্য ভালোবাসা

একাত্তরে আমাদের দুঃসময়ে আমরা পাশে পেয়েছিলাম এমন আরও অনেক বন্ধুকে। স্মরণ করতে হয়, ফরাসি লেখক আঁদ্রে মালরোকে, যিনি মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করার আগ্রহ প্রকাশ করে এ দেশকে আপন করে নিয়েছিলেন। মালরো লিখেছিলেন, ‘বিদ্রোহ যখন শুরু হলো, তখন থেকে ইসলামাবাদের সেনারা পূর্ব বাংলার কাছে আর স্বদেশবাদী বা স্বধর্মীয় থাকল না, তারা পরিণত হলো দখলদার বাহিনীতে।’

অ্যালেন গিন্সবার্গের অসাধারণ সেই কবিতা ‘সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড’ কি এখনও আমাদের আত্মাকে আন্দোলিত করেনা?
‘লক্ষ শিশু দেখছে আকাশ অন্ধকার/ উদর স্ফীত, বিস্ফোরিত চোখে জলধারা/ যশোর রোডে বিষন্ন সব বাঁশের ঘর/ ধুঁকছে শুধু, কঠিন মাটি নিরুত্তর।’
আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় আমেরিকান কবি ‘অ্যালেন গিন্সবার্গ’ লিখেছিলেন সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড কবিতাটি। যার আলোকে মৌসুমী ভৌমিক গেয়েছিলেন বিখ্যাত ‘যশোর রোড’ গানটি।

একাত্তরে সাংবাদিক সাইমন ড্রিংয়ের বয়স মাত্র ২৭ বছর। লন্ডন থেকে প্রকাশিত ডেইলি টেলিগ্রাফ-এর সংবাদদাতা। কঠোর পাহারার মধ্যেও তিনি বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরেছিলেন পাকিস্তানি হানাদারদের নৃশংস হত্যাযজ্ঞ। ২৫ মার্চ সন্ধ্যায় তৎকালীন ইন্টারকন্টিনেন্টালে নজরবন্দী ছিলেন সাইমন ড্রিংসহ চল্লিশ জন বিদেশি সাংবাদিক। ২৭ মার্চ ঢাকার রাজপথে বের হন তিনি। ধ্বংসপ্রাপ্ত রক্তাক্ত ঢাকা শহর দেখে শিউরে ওঠেন তিনি। ব্যাংককে ফিরে প্রকাশ করেন ‘ট্যাংকস ক্রাশ রিভল্ট ইন পাকিস্তান’। প্রকাশ করেন সাড়ে সাত কোটি মানুষকে ঠান্ডা মাথায় থামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা, দগ্ধ শহর, লাশের পাহাড়, হাজার হাজার মানুষের পালিয়ে যাওয়ার খবর।
১৯৭১ সালের ২১ অক্টোবর যুক্তরাজ্য থেকে প্রকাশিত হয় দ্য টেস্টিমনি অব সিক্সটি। অক্সফামের সহযোগিতায় ঐতিহাসিক এ দলিল প্রকাশ করে ৬০ জন গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তির সাক্ষ্য ও প্রত্যদর্শীর দেখা যুদ্ধাহত পূর্ব পাকিস্তান, হানাদারদের বর্বরতম গণহত্যা এবং অসহায় শরণার্থী শিবিরগুলোর করুণ চেহারা। এখানে লিখেছেন ভিনসেন্ট ফিলিপ, মনসেইনার ব্রুস , লেক্স হেনরি, অ্যান্থনি ম্যাসকারেনহাস, মাদার তেরেসা, জন পিলজার, এডওয়ার্ড কেনেডিসহ খ্যাতনামা সাংবাদিকরা। শুধু তা-ই নয়, ব্রিটেনের শ্রমিক দলীয় পার্লামেন্ট সদস্য পিটার শো ব্রিটিশ সরকারের কাছে আহ্বান জানান, যাতে পশ্চিম পাকিস্তানে কোনো প্রকার অর্থনৈতিক সাহায্য না দেওয়া হয়।
একাত্তরে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন কনসাল জেনারেল আর্থার কে ব্লাডও যুদ্ধাহত বাংলাদেশের চেহারা তুলে ধরে মানবিক সাহায্যের সুপারিশ করেন। তাঁর রিপোর্ট চলে যায় মার্কিন সিনেটে। মার্কিন প্রশাসনের দৃষ্টি দিয়ে ঢাকাকে পর্যবেণ না করায় ব্লাডকে ডেকে পাঠানো হয় ওয়াশিংটনে।
বাংলাদেশের যুদ্ধকালীন সময়ে মাদার তেরেসা বারবার আকুলভাবে বিশ্ববাসীকে বলেছেন, ‘মানুষের প্রতি ভালোবাসা দেখাও। তাঁরা সবাই ঈশ্বরের সন্তান’।
এসময় বাংলাদেশের পাশে আরও ছিলেন মার্কিন সিনেটর এডমুন্ড লাস্কি, মি. ওয়ালডি, জন আর কেলি, মার্ক টালি, ম্যুচর স্যালি, রবার্ট পেইন, স্যার ডগলাস হিউম, রিচার্ড কে টেইলর, সিডনি শনবার্গসহ আরও অনেকে।
সারা বিশ্বের মানবতাবাদী মানুষ প্রতিবাদ করেছিল এই গণহত্যা এবং আগ্রাসন এর। আর তাই বিদেশি এসব সাংবাদিক, সাহিত্যিক, লেখক, শিল্পী প্রত্যেকের অবদানই আমাদের জন্য ছিল অমূল্য। তাঁরাও আমাদের একাত্তরেরই একটি অংশ। যুদ্ধকালীন টাইম সাময়িকী, দি অবজারভার (লন্ডন), ডেইলি টেলিগ্রাফ (লন্ডন), সাপ্তাহিক ইকোনমিস্ট (লন্ডন), নিউজউইক, ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল, ওয়াশিংটন পোস্ট, হেরাল্ড ট্রিবিউন, স্টেটসম্যান, অমৃতবাজার পত্রিকা, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসসহ অসংখ্য সংবাদপত্র আমাদের মুক্তির সংগ্রামকে রেখেছিল গতিশীল। তাই আমাদের দুঃখদিন ও বিজয়ের সঙ্গী সেইসব বন্ধুদের আমরা স্বরণ করি বিনম্র শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায়।



পর্ব - ১
পর্ব - ২
পর্ব - ৩
পর্ব - ৪ পর্ব - ৫
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জানুয়ারি, ২০১২ বিকাল ৩:২২
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×