১০
হন্তদন্ত হয়ে ছুটলাম আমরা। নীলার বাবার হঠাৎ করেই শরীর খারাপ হয়ে যায়। তাঁকে পাশের এক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ওর বাবার আগের যেসব রিপোর্ট দেখেছি, তাতে উনার আগে দুটো অ্যাটাক হয়ে গেছে। আই থিংক, ইট ইজ থার্ড ওয়ান। দ্রুত মেজার নিতে না পারলে, ইট কুড বি ফ্যাটাল।
নীলার মা কে ফোন করে জানালাম, হাসপাতালে পৌঁছে ডিউটি ডক্টরের সাথে যেন আমাকে কথা বলিয়ে দেয়। দ্রুত এগোনোর চেস্টা করছি। বাট ঢাকার রাস্তায়, এই দুপুর বেলা, নেক্সট টু ইম্পসিবল। নীলার দিকে তাকালাম। ওর মুখ শুকিয়ে গেছে। সান্তনা যে দেব, সে সাহসও পাচ্ছি না। সময়মত ইন্টারভেন করতে না পারলে, আই ডোন্ট নো হোয়াট উইল হ্যাপেন।
— বাবা বাঁচবে তো?
— আসলে এটা সিওর হওয়া দরকার এটা হার্ট অ্যাটাক কি না।
— হলে?
— ডোন্ট ওরি, একটু যদি সময় পাই, আই মিন, আমার হাসপাতালে শিফট করা গেলে,… দেখা যাক। এখনই এতো ঘাবড়াবার কিছু নাই।
নীলা মনে হল কিছুটা আশ্বস্ত হল। মাথা নীচু করে আছে। মনে হচ্ছে কিছু একটা বলতে চাইছে। ‘সরি' বা 'থাঙ্কস’ টাইপ কিছু। ‘কিছু বলবে’ টাইপ প্রশ্ন করে সেসব এখন শুনতে ইচ্ছে করছে না। এই মুহুর্তে মাথায় অবশ্য সেসব নেইও। কিছুক্ষণ আগে ঘটে যাওয়া ঘটনা এই মুহুর্তে মাথায় নেই। একটাই কথা ভাবছি, ইন্টারভেনশানের সময় পাব কি না।
এমন সময় নীলার মোবাইল ফোনটা আবার বেজে উঠল। ওর কোলের উপরই রাখা আছে ফোনটা। এক হাতে ধরে রেখেছে। স্ক্রিনে ভেসে উঠল নামটা। 'সোহেল ২’। আই থিঙ্ক একই সোহেল, বাংলাদেশে এসে নতুন সিম নিয়েছে। নীলা কিছুটা এম্ব্যারাস ফিল করছিল। ইশারায় বললাম, ফোনটা ধরতে। ফোনটা ধরল।
বেশিরভাগই হু, হা, টাইপ উত্তর দিল। বড় সেন্টেন্স একটাই বলল, ‘বাবার হার্ট অ্যাটাক করেছে।’ রিজন ইজ প্রবাবলি মি। বাট, আই হ্যাভ নো অপশান। অন্যদিকে সরে যাব, তারও উপায় নেই।
দ্রুতই কথা শেষ হল। এরপরে আমার দিকে তাকাল। প্রবাবলি ব্যাখ্যা দিতে চাইছে। আমার জন্য শোনা জরুরী না। নীলার দিক থেকে চোখ সরিয়ে সামনের দিকে তাকালাম। রাস্তায় জ্যাম মোটামুটি। খুব বেশি স্পীড তুলতে পারছি না। এমন সময় সিগন্যাল পড়ল। কোন উপায় নেই। এই দুমিনিট সময় পুরোটা সামনে তাকিয়ে থাকলে বিশ্রী দেখাবে। আর নীলার দিকে তাকালে, ও ব্যাখ্যা দেবে, সোহেল কি বলল।
— তুমি কি আমার ওপর রেগে আছ?
কথাটা যতটা ইনোসেন্ট শোনাল, কথাটা ততোটা ইনোসেন্ট না। প্রশ্নের ভেতরে আরেকটা প্রশ্ন আছে। আমি যা করছি, সব তো তোমাকে আগেই জানিয়ে রেখেছিলাম। দেন হোয়ায় আর ইউ আপসেট?
ধীরে ধীরে নীলার দিকে তাকালাম। মুখটা বেশ গম্ভীর। কি উত্তর দেব, খুঁজে পাচ্ছি না।
— অ্যাম আই ডুইং সামথিং রং?
— অনেস্টলি স্পীকিং, আই রিয়েলি ডোন্ট নো।
— তুমি কি চাও, আমি থেকে যাই?
প্রশ্নটা যতটা সহজ মনে হচ্ছে, উত্তর ভাবতে গিয়ে দেখলাম, উত্তর আমার নিজেরও জানা নেই। কি বলব? ‘না চাই না’? কিন্তু ওর চোখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলাম, একথা আমি বলতে পারব না। আমার সেই রক্তশুন্য মুখের দিকে তাকিয়ে নীলাও বুঝতে পারল, এই উত্তর আমার জানা নেই। ও আবার বলল
— এমন একটা ডিভাইডেড হার্ট নিয়ে তোমার সাথে যদি থাকিও, ইউ উইল নট বি হ্যাপী। আমরা কেউই সুখী হব না।
শি হ্যাস লজিক। ব্যাপারটা মেনে নিলাম। একটু আগে যে অভিমান মনের ভেতরে কাজ করছিল, সেটা হঠাৎ করে কমে আসল। আমি নিজেও বুঝতে পারলাম, দ্যা প্রব্লেম হ্যাজ অনলি ওয়ান সলিউশান। নীলার দিকে তাকালাম। ও উত্তরের আশায় আমার দিকেই তাকিয়ে আছে। একটু হাসবার চেস্টা করলাম। হল কি না জানি না, তবে উত্তরটা ভালভাবেই দিলাম
— ডোন্ট ওরি, আই উইল বি ফাইন। একটু সময় হয়তো লাগবে, বাট...
নীলা শান্তভাবে কথাগুলো শুনল। এরপরে বলল
— তোমার পরিচিত ল’ইয়ার দিয়েই ডিভোর্স নেব ভেবেছিলাম, বাট আমি সোহেলকে ব্যাপারটা জানানোর আগেই ও সব অ্যারেঞ্জ করে রেখেছিল। আমিও ভেবে দেখলাম, কাজ যেহেতু অনেকটা এগিয়ে আছে, তাই…
দ্যাট ইজ নীলা। বলার আগেই বুঝে ফেলে। আমার অভিমানের জায়গাটা ঠিকঠাক ধরে ফেলে। আই থিঙ্ক আই উইল মিস হার ফর দিজ কোয়ালিটস। নিজের অজান্তেই বড় একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লাম।
সিগন্যাল গ্রিন হয়ে গেছে। গাড়ী ছুটালাম। মিনিট পাচেকের ভেতরেই হাসপাতালে পৌছে গেলাম। গাড়ী পার্ক করেই দৌড়লাম রিসেপশানের দিকে। জানতে পারলাম, উনাকে আইসিইউয়ে সিফট করা হয়েছে।
আমি তখন হাসপাতালের চারিদিকে তাকাচ্ছি। ফ্যাসিলিটি কতটা আধুনিক, বোঝার চেস্টা করছি। ডিরেকশান দেখে দেখে পৌছে গেলাম। নীলার মা সেখানে বসে আছেন। নীলা দ্রুত মায়ের পাশে গিয়ে বসল। আমি আইসিইউর গেটম্যানকে গিয়ে নিজের কার্ড দিলাম। ডিউটি ডক্টরের সাথে কথা বলতে চাইলাম।
আমার পরিচয় কাজে দিল। ডিউটি ডক্টর নিজে বেরিয়ে এসে আমাকে ভেতরে নিয়ে গেল। এরমধ্যে ওরা ইসিজি করে ফেলেছে। কিছু প্রয়োজনীয় ব্লাড টেস্ট পাঠিয়ে দিয়েছে। যা ভেবেছিলাম, তেমনটা না। ইসিজিতে নতুন কোন চেঞ্জ নাই। মনে হচ্ছে না, নতুন করে হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। তারপরও ব্লাড টেস্টের জন্য ওয়েট করার সিদ্ধান্ত নিলাম। ম্যানেজমেন্টের ওপর এক নজর বুলালাম। ঠিকঠাকই আছে।
বাইরে বেরিয়ে আসলাম। নীলা ওর মাকে আগলে বসে আছে। ধীরে ধীরে ওদের কাছে এগিয়ে গেলাম।
— ভয়ের কিছু নেই। আই থিঙ্ক গ্যাসের সমস্যা। সেখান থেকেও বুকে ব্যাথা হতে পারে।
নীলা উত্তর দিল
— সিওর?
হেসে ফেললাম। টিপিক্যান বাঙ্গালী মেন্টালিটি। এদেশের ডাক্তার কিছু জানে কি না সন্দেহ। বললাম
— আমার বিদ্যা তো তাই বলে। তারপরও ব্লাড টেস্টের রিপোর্ট পাওয়ার পরে পুরোপুরি সিওর হব।
নীলা ব্যাপারটা বুঝল। কিছুটা লজ্জিত হয়ে বলল
— আই অ্যাম সরি। আসলে…
ডোন্ট ওরি। তোমরা এখন বাসায় যাও। আমি থাকছি।
নীলার মা প্রতিবাদ করতে চাইলেন। আমি বারণ করলাম।
— আপনি এখানে থেকে বরং নিজেই অসুস্থ হয়ে যাবেন। আমি তো থাকছি। আর কন্ডিশান তেমন খারাপ হলে আমি নিজেই আপনাকে থাকতে বলতাম।
এবার নীলা আমার পক্ষে অবস্থান নিল। সেও মাকে বোঝাল। উনি রাজী হলেন। দুজন ধীরে ধীরে বেরিয়ে গেল।
আমাকে এখন বেশ কিছু ফোন করতে হবে। প্রথমে হাসপাতালে ফোন করে জানিয়ে দিলাম, আজকের সব অ্যাপয়েন্টমেন্ট ক্যানসেল করতে। এরপরে হাসপাতালের এমডিকে ফোন দিলাম। নীলার বাবার অবস্থা জানালাম। উনি আমাদের হাসপাতালে শিফট করতে বললেন। দিন দুয়েক আসতে পারব না জানালাম।
আপাততঃ তেমন আর কাজ নেই। এখন কাজ শুধু ব্লাড রিপোর্টের জন্য ওয়েট করা। আই হোপ সব ঠিকই আসবে। তারপরও সেফ সাইডে থাকা।
এমন সময় আইসিইউর ডিউটি ডক্টর বেরিয়ে আসল। ওদের রেস্ট রুমে বসবার জন্য অফার করল। আমি থ্যাঙ্কস সহযোগে রিফিউজ করলাম। জানালাম আমার অসুবিধা হচ্ছে না।
সময় কাটানো একটা সমস্যা হয়ে দাঁড়াল। কিছুক্ষণ পায়চারী করলাম। আবার এসে চেহারটায় বসলাম। আশে পাশে আরও কিছু রুগীর আত্মীয় বসে আছেন। তাদের দিকে তাকাচ্ছি। এমন সময় একটা ছেলে আমার দিকে তাকিয়ে স্মিত হাসি দিল। আমিও হাসি রিটার্ন করলাম। কি মনে করে ছেলেটা উঠে আসল। আমার পাশে বসল।
— আপনি ডাক্তার ইমরান?
খুব অবাক হইনি। হয়তো উনি যে রুগীর অ্যাটেন্ডেন্ট, সে আমার রুগী ছিল। ঠোটে একটা হাসি টেনে সম্মতি জানালাম। এরপরের ঘটনাটার জন্য ঠিক তৈরি ছিলাম না। ছেলেটা হাতটা বাড়িয়ে দিল। এরপরে নিজেকে ইন্ট্রোডিউস করে বলল
— আই অ্যাম সোহেল।
নিজের অজান্তেই ভ্রু কুচকে গেল। ব্যাপারটা বুঝতে পেরে ছেলেটা এবার বলল
-- সোহেল আরমান। নীলার ফিয়ঁসে।
চলবে