১১
যদিও জানতাম, তারপরও কেন জানি, সোহেলের সাথে আমার ইন্টারঅ্যাকশান নিয়ে সেভাবে কিছু প্ল্যান করে রাখিনি। যখন দেখা হবে, তখন কিভাবে গ্রিট করব, কি বলব, এসব আরকি। কিংবা হয়তো ভেবেছিলাম, অ্যাজ ইউজুয়াল কথাবার্তা হবে। বাট যেটা ভাবিনি, তা হচ্ছে, হোয়াট উইল বি মাই রিয়্যাকশান।
এনিওয়ে, সোহেলের আচমকা আগমনে কিছুটা হলেও তাই অফ ব্যালেন্স হয়ে গিয়েছিলাম। মুখটা যে পাংশু হয়ে যাচ্ছে সেটা স্পস্ট ফিল করলাম। তবে খুব অল্প সময়ের জন্য। দ্রুতই নিজেকে সামলে নিলেও, একটা ব্যাপার নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিলাম, আই অ্যাম গোইং টু লুজ দ্যা ব্যাটল। প্রতিদ্বন্দী আমার চেয়ে অনেক অনেক বেশি যোগ্য ক্যান্ডিডেট।
অবাক হয়ে একটা ব্যাপার আবিস্কার করলাম। আজ যখন সোহেলকে প্রথমবারের মত ফেস করলাম, তখন আরও একটা ব্যাপার রিয়ালাইজ করলাম, সোহেলকে এতোদিন আমি খুব আন্ডারেস্টিমেট করে এসেছিলাম। কারণ? আই থিঙ্ক সোহেল সম্পর্কে কম জানা। এমনটা হয়েছিল কারণ সোহেল সম্পর্কে ডিটেইলে আমিও কখনও জানতে চাইনি, নীলাও কখনও বলেনি। অ্যান্ড দেয়ার আই ক্রিয়েটেড দ্যা প্রব্লেম।
আচ্ছা, আন্ডারেস্টিমেট কথাটা বোধহয় কি ঠিক বললাম? নাহ, আই থিঙ্ক নিজেকে ওভার এস্টিমেট করে এসেছিলাম। ডাক্তার, হার্ট স্পেশালিস্ট, ভাল বেতনের একটা জব করি, ঢাকায় নিজস্ব ফ্ল্যাট আছে, সব মিলিয়ে নিজের অবস্থান নিয়ে একটা অহং ভাব প্রবাবলি আমার ভেতর কাজ করছিল। আর সেকারনেই হয়তো নিজের অজান্তেই ভাবতে শুরু করেছিলাম, নীলা মে টেক অ্যা ইউ টার্ন। সোহেলের সাথে ডাইরেক্ট কম্প্যারাইজন যদি নীলা কখনও করে, স্পেশালি কক্সবাজার ট্যুরের পরে, আই মে উইন।
ফিল করলাম সোহেলকে দেখে দারুণভাবে জেলাস হচ্ছি। ঠিক জেলাস বললে কম বলা হয়, আসলে ভয়ানক একটা ধাক্কা অনুভব করেছিলাম। নিজের ভন্ডামিটা তখন স্পস্ট দেখতে পেলাম। মুখে যতই উদারতা দেখিয়ে বড় বড় কথা বলে থাকি না কেন, ডিসিশান রিকনসিডার করবার একটা ব্যাপার নীলার ভেতরে ঘটবে, নিজের অজান্তেই এমনটা আমি এক্সপেক্ট করতে শুরু করেছিলাম। কারণ? আই থিঙ্ক, নীলার সাম্প্রতিক চেঞ্জ।
এনিওয়ে, সেদিন যখন একেবারে মুখোমুখি হলাম, আর আবিস্কার করলাম, হি ইজ অ্যা জেম, অ্যান্ড ফিল করলাম আই অ্যাম নো ম্যাচ উইথ হিম, তখন হঠাৎ করেই পুরো দুনিয়া অন্ধকার হয়ে গেল। হি ইজ নট অনলি ড্যাম স্মার্ট অ্যান্ড গুড লুকিং, স্কলারশিপ পেয়ে আমেরিকায় যাওয়া ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট অলসো। সো… ব্রাইট ফিউচার ইস নকিং অন দ্যা ডোর। পড়াশোনা শেষ আর একটা ভাল জব পাওয়ার ভেতরে তেমন একটা দুরত্ব নেই।
হতাশা ব্যাপারটা কতটা মুখে ফুটে উঠছিল আর কতটা লুকাতে পারছিলাম, সিওর বলতে পারব না। আমার ধারণা অভিনয় খুব ভাল হচ্ছিল না। স্পেশালি আমার উদারতার প্রসংশাগুলো যখন সোহেল করছিল, শুনতে বিরক্ত লাগছিল। ওর কৃতজ্ঞতা টাইপ কথাগুলোকে তো অসহ্য লাগছিল।
নিজেকে সামলে নেয়ার আপ্রাণ চেস্টা শুরু করলাম। কতটা পারলাম জানি না, তবে আলাপ আমার ওপর থেকে সরিয়ে সোহেলের উপরে নিয়ে গেলাম। কি করে, কোথায় থাকে ইত্যাদি টাইপ প্রশ্ন দ্রুত শেষ করেই অ্যাজ দেশ, রাজনীতি টাইপ কথাবার্তায় চলে গেলাম। ইন দ্যা মিন টাইম অবশ্য ওকে বাসায় ইনভাইটও করলাম। সোহেলও সম্মতি জানাল।
এরপরে? হ্যা, হি কেম টু দ্যা পয়েন্ট। নীলার বাবার কি অবস্থা জানতে চাইল। আসলে ঘটনাটায় সোহেল বেশ খানিকটা ভয় পেয়ে গিয়েছিল।স্বাভাবিক। নীলার বাবার বড় কোন সমস্যা দেখা দিলে, ওর পুরো প্ল্যানের বারোটা বাজবে। আর মাত্র এক সেমিস্টার বাকী থাকা সোহেল চাইছে স্টুডেন্ট থাকতে থাকতে বিয়েটা সেরে ফেলেতে। স্টুডেন্টদের স্পাউস ভিসা পাওয়া কম্প্যারাটিভলি সোজা। তাই ইচ্ছে করেই কোর্স শেষ করেনি।
কথাবার্তায় আরও যে কয়টা ব্যাপার জানতে পেরেছিলাম, তা হচ্ছে ওর ছুটি খুব বেশি নেই। এই কদিনে যে কয়টা কাজ সারতে হবে, তার একটা হচ্ছে বিয়েটা। অ্যাট লিস্ট পেপার ম্যারেজটা করে যেতে পারলে নীলার ভিসা প্রসেসিংয়ের জন্য কাগজ পত্র প্লেস করা যাবে। আর এই যাত্রায় বিয়েটা সারতে না পারলে, সমস্যায় পড়ে যাবে।
ততোক্ষণে আমি নিজেকে সামলে নিয়েছি। স্বাভাবিক আলাপচারিতা শুরু হল। আমি কি করি, কোথায় থাকি, কোথাকার বাসিন্দা এসব সিলি গল্পের পরে যথারীতি বাংলাদেশ, রাজনীতি, আমেরিকার জীবন, এসব টপিকও চলল।
এমন সময় ব্লাড টেস্টের রিপোর্ট এসে পৌঁছল। আইসিইউর ডিউটি ডাক্তার বেরিয়ে এসে আমাকে রিপোর্টটা দেখাল।
— আমার তো মনে হয়...
ইয়েস। আমারও তাই মনে হয়। এটা হার্ট অ্যাটাক না। ছেলেটাকে আমার ডাক্তার পরিচয় আগেই দিয়েছি। এবার জানালাম,
— তোমাদের আপত্তি না থাকলে আমি নিজে একটু উনাকে একজামিন করতে চাই।
— কি যে বলেন স্যার।
প্রবেশ করলাম আইসিইউতে। হাসপাতালটা মোটামুটি করেছেন। আইসিইউর ফ্যাসিলিটি মন্দ না। নীলার বাবার বেডের কাছে গেলাম। জানতে চাইলাম
— কোথায় ব্যাথা করছে?
উনি যথারীতি বুকের বাম দিকটা দেখালেন। আমি বললাম
— এক আঙ্গুল দিয়ে দেখান।
উনি এক আঙ্গুল দিয়ে দেখালেন। আমার যা বোঝার বোঝা হয়ে গেল। উনি অবশ্য সেখানে থামলেন না। দারুণ ব্যাথা তিনি অনেক কষ্টে সামলাবার চেস্টা করছেন এমন একটা ভাব করতে লাগলেন। চোখ মুখ কুচকে থাকলেন। কিছু প্রশ্ন করলাম। খানিকটা একজামিন করলাম। আমার সন্দেহই ঠিক। হি ইজ ডুইং অ্যাক্টিং। সবাইকে ইম্প্রেশান দেয়ার চেস্টা করছেন, দারুণ কষ্ট পাচ্ছেন।
নেহাত ডাক্টারি নলেজ নাই বলে, অ্যাক্টিংটা পারফেক্ট হচ্ছে না। হার্টের ব্যাথাটা কেমন হয় আর ঠিক কিভাবে বর্ণনা দেয়, এই তথ্যটা না জানায়, তিনি আমার চিকিৎসক চোখে ব্যাপারটা ধরা পড়ে গেলেন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, কেন? এই নাটকটা তিনি কেন করলেন?
উনার সাথে যতটা আলাপ হয়েছে, তাতে উনাকে বেশ বুদ্ধিমান লোকই মনে হয়েছে। অকারণে এমন কাজ তিনি করেছেন বলে আমার মনে হয় না। তিনি এই অসুখের কিছু একটা রিয়াকশান চাইছিলেন। কি সেটা?
খানিকটা চিন্তা করতেই একটা সম্ভাবনার কথা মাথায় আসল। একই পাড়ায় থাকার সুবাদে সোহেল আসবার তিনি আগেই পেয়েছেন। আর মেয়েকেও তিনি চেনেন। সম্ভবতঃ এই ব্যাপারটাও তিনি আঁচ করে ফেলেছেন, সোহেল নীলার জন্যই ফেরত এসেছে। আমি যদি খুব ভুল না করি, সেটা ভন্ডুল করতেই তিনি এই নাটক সাজিয়েছেন।
উনাকে একজামিন করে আইসিইউ থেকে বেরোলাম। দেখলাম মাকে বাসায় রেখে নীলাও ফিরে এসেছে। দুজন পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে। দারুণ লাগছে। ধীরে ধীরে ওদের দিকে এগিয়ে গেলাম।
আমার ভুল ভেঙ্গে গেলেও নীলা আর সোহেলের ভাঙ্গেনি। ওরা এখনও ভাবছে বাবার সিরিয়াস কিছু হয়েছে। দুজনের চোখে মুখে এখনও উৎকন্ঠা।
এর সঙ্গে সোহেলের চোখে প্রশ্নটা চিকচিক করছে, নীলার বাবার এই অবস্থায়, ওদের বিয়ে করাটা সঠিক সিদ্ধান্ত হবে কি না। টু বিপ্রেসাইস, ওদের বিয়ের খবর নীলার বাবা জানতে পারলে, বড় কোন ডিজাস্টার হবে কি না।
নীলার দিকে তাকালাম। ওর ভেতর বাংলা সিনেমার যে প্রভাব, স্বামী যেমনই হোক, সেই শেষ আশ্রয়স্থল, তার কোন লেশ নেই। আরও একটা ব্যাপার যেটা ভাবতে করতে শুরু করেছিলাম, এই কয়মাসের সো কলড দাম্পত্য জীবনের স্মৃতি ছিঁড়ে ফেলা ওর পক্ষে সম্ভব হবে না, তেমনটাও মনে হল না।
সো, দেয়ার ইজ নো হোপ দ্যাট দ্যা স্টোরী উইল টার্ন ইন মাই ফেভার।ব্যাপারটা মেনে নিলাম। নীলাকে ব্লাড রিপোর্টের ব্যাপারটা জানালাম। হার্ট অ্যাটাক হয়নি। আপাততঃ ভয়েরও তেমন কারণ নেই।
নীলা এবার প্রশ্নটা সরাসরি করল।
— আমরা, আই মিন বিয়েটা যদি করি, আর সেটা বাবা জানতে পারেন, অবস্থা ডেটেরিওরেট করতে পারে?
এর উত্তরে আমি যা বললাম, এই অবস্থায় অন্য যে কোন ডাক্তার থাকলেও হয়ত একই উত্তর দিত। কথাটা ঠিক মিথ্যা না। টেকনিক্যালি কারেক্টও বলা যায়। বাট আই নিউ, আই টোল্ড ইট, নট অ্যাজ অ্যা ডক্টর, বাট অ্যাজ অ্যা ফিয়ঁসে। ডাক্তার হুওয়ার কারণে আমার হতে অপশানটা ছিল। অপেশানটা ইউজ করে আই প্লেইড দ্যা ব্লাডি ট্রিক। গম্ভীর হয়ে বললাম
— এখনই কিছু বলা সম্ভব না। নেক্সট কিছুদিন আসলে ভেরি ক্রিটিক্যাল। উনি এক্সাইটেড হতে পারেন এমন কোন ঘটনা যেন না ঘটে সেদিকে আমাদের নজর রাখতে হবে।
চলবে
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই মে, ২০১৮ রাত ১০:০৫