somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অতিথি (১৭ তম পর্ব)

২২ শে মে, ২০১৮ দুপুর ২:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১৭

দেখতে দেখতে যাওয়ার সময় হয়ে আসল। এখন নামতে হবে। ট্যাক্সির জন্য রিসেপশানে ফোন করে দিলাম। বাকী সব ডাক্তাররাও এই হোটেলেই আছেন। জানতে চাইলাম, বাকীরা কি নেমে গেছেন? উত্তরটা শুনে বেশ অবাক হলাম। সবাই নাকি বেরিয়ে গেছেন। আমার জন্য ওয়েট করল না? একই ডিসিপ্লিনের সবাই, পুরো জার্নিটা একসাথে থাকলাম, তারপরও? মাঝে মাঝে এমন দিন যায়, সব আনএক্সপেক্টেড ঘটনাগুলো ঘটে।
আজকের দিনটাও বোধহয় এমন ছিল।
হোপ দিনের বাকী যে সময়টা এখনও অবশিষ্ট আছে, সেটা ভাল কাটবে। একদিক দিয়ে ভাবলে বলা যায়, ভালোই হল। দুটো ব্যাপার ক্লিয়ার হয়ে গেল। এতো সব অঘটনের পরেও নীলার জন্য একটা সফটনেস মনের কোণে অবশিষ্ট ছিল। এতোদিন অযথাই ব্যাপারটা অস্বীকার করে আসছিলাম। টিল টুডে, আই লাভড হার। আর আমি ভেবেছিলাম, ভেবেছিলাম বলছি কেন, বলা উচিৎ বিশ্বাস করতে শুরু করেছিলাম, ওকে ভুলে গেছি। হোয়াট অ্যান ইডিওট ওয়াজ আই!
দ্বিতীয় যে ব্যাপারটা ক্লিয়ার হল, এতোদিন এক্সপেক্ট করে ছিলাম, ও ফিরে আসবে।তথ্যটা অজানা ছিল না, বাট নিজেকে বোঝাতাম, এমন কিছুর অস্তিত্ব নেই। আমি আর ওর ফিরে আসা এক্সপেক্ট করছি না। আজকের পরে সেটার, আই থিঙ্ক, বোথ উইল ভ্যানিশ। অ্যাট লিস্ট যাওয়া তো উচিৎ।
ব্যাগ গুছিয়ে ফেলেছি। শেষবারের মত হোটেল রুমের দিকে তাকালাম। নাহ, তেমন কিছু ফেলে যাচ্ছি না। নীলার দেয়া ডিভোর্স লেটারটা কিছুক্ষণ আগেও টেবিলের ওপর রাখা ছিল। বিশ্বাস হচ্ছিল না, এটা দেয়ার জন্য নীলা এসেছিল। আচ্ছা, নীলা কি ইচ্ছে করেই এমন বিহেভ করল? যেন আমি ওকে ঘৃণা করি? ভেরি আনলাইকলি অফ হার।
শুধু এটাই না। আরও একটা ব্যাপার আমাকে স্বস্তি দিচ্ছিল না। আমার চিকিৎসক ব্রেন বলছে, আই মিসড সামথিং। নীলাকে বিদায় দিয়ে রুমে ফেরার পর থেকেই এই অস্বস্তিটা কাজ করছিল। প্রথমে ভেবেছিলাম, নীলার বিহেভ নিয়ে অস্বস্তিটা হচ্ছে। পরে মনে হল, সেটা না। মনে হচ্ছিল আমি এমন কিছু একটা দেখেছি, দ্যাট স্যুড নট বি দেয়ার। কিন্তু কি সেটা?
নীলার বিহেভ নিয়ে যে ইনসাল্টটা ভেতরে ভেতরে কাজ করছিল, কখন যেন সেটা সরে গিয়ে এই ‘মিসিং সামথিং’ ফিলিংটা ডমিনেট করা শুরু করে। ইনফ্যাক্ট এই কিছুক্ষণ আগে পর্যন্ত আমি সেটাই ভাবছিলাম। মন বলছে, আই স্যুড ফাইন্ড ইট আউট বিফোর ইট ইজ টু লেট।
ইন্টারকমে রিসেপশান জানাল ট্যাক্সি এসে গেছে। ধীরে ধীরে বেরিয়ে এলাম। লবিতে নামলাম। নীলা যেখানে বসে ছিল, ইচ্ছে করেই সে জায়গাটায় একটু থামলাম। কিছুক্ষণ আগে যা যা ঘটেছিল, যতটা মনে আছে তা আরেকবার ভিজুয়ালাইজ করবার চেষ্টা করলাম। তেমন কিছু অ্যাবনরমাল লাগছে না। শাল পড়ে আসাটা মে বি, আমাকে একটু আনন্দ দেয়ার চেষ্টা। বাট নট দ্যাট অ্যাবনরমাল। দেন?
ধীরে ধীরে এগিয়ে গেলাম। কি ভেবে রিসেপশানে জানতে চাইলাম, আমার সাথের ডাক্তাররা কি একসাথে গেছেন? না আলাদা? রিসেপশান জানাল, সবাই একসাথে গেছেন। অবাক লাগল ব্যাপারটা। আমাকে না ডাকার কোন গ্রহনযোগ্য কারণ খুঁজে পাচ্ছি না। এসব ভাবতে ভাবতে ট্যাক্সিতে উঠলাম। হাতে সময় আছে। আই থিঙ্ক ঠিক সময়েই পৌঁছে যাব।
ফেলো ডাক্তারদের অভদ্রতা ব্যাপারটা কিছুক্ষণের ভেতরেই মাথা থেকে সরে গেল। সিদ্ধান্ত নিলাম, এয়ারপোর্টে গিয়ে কারো সাথেই আর কোন আলাপ করব না। পথের দিকে তাকিয়ে শেষবারে মত আজকের ঘটনা গুলো ভাববার চেস্টা করলাম।
নীলা একা এসেছিল। সোহেল সাথে আসলে ব্যাপারটা ন্যচারাল লাগত। বাট না আসাটা সেই অর্থে অ্যাবনর্মাল না। ওর কাজ ছিল, কিংবা ও চায়নি নীলা আর তার প্রথম স্বামীর ইন্টার অ্যাকশানের ভেতরে ও থাকুক। অ্যাকসেপ্টেবল।
আর কি ছিল অ্যাবনর্মাল? নীলার সাজগোজ? নাহ। ও প্রসাধন করে, বাট কখনও কখনও সেটা ছাড়াও বাইরে বেরোয়। দেন?
ওর চোখ? মে বি। দেয়ার ওয়াজ সামথিং ইন ইট। আনন্দ? ছিল। বাট ইট ইজ এক্সপেক্টেড। আই ডোন্ট থিঙ্ক, ও আমাকে ঘৃণা করে। এতোদিন পরে পরিচিত কারো সাথে দেখা, একটা দারুণ ফিলিং হওয়া অস্বাভাবিক না। চোখে আর কি ছিল? প্রত্যাশা? প্রথম দেখায় মনে হয়েছিল। বাট… এরপরে যা ঘটল, তাতে আই অ্যাম ফিলিং কনফিউজড। ওভার রিয়াক্ট টা কেন? বোঝাতে চাইল আমার ব্যাপারে নাক গলিও না? না কিছু লুকাতে চাচ্ছে?

আর কি ঘটেছিল? ডিভোর্স লেটারটা নিজে নিয়ে আসা? দ্যাট ক্যান বি। পোস্টে পাঠাতে পারত। ও ভালমতই জানে, আমি সিগনেচার করে দিতাম। বাট ওটা আনবার যে রিজন দেখাল, দ্যাট ওয়াজ অ্যা লিটল অ্যাবনর্মাল। আমার জন্য এতো চিন্তা থাকলে, আগেই পাঠাত।
আরেকটা ব্যাপার হতে পারে। হয়তো বোঝাতে চেয়েছিল, লিগালি উই স্টিল আর কাপল। বাট হোয়ায়? ওয়ান্ট টু ক্যাম ব্যাক? নাহ, মন মানছে না। নিজেকে এভাবে এক্সপোজ করা টাইপ মেয়ে নীলা না। সোহেলের সাথে লিভ ইন করার ব্যাপারটাও কেমন গোলমেলে লাগছে।
আমার মেইলে ঢোকা? ওটা টিপিক্যাল দুষ্টামি। কিছুটা বাড়াবাড়ি, বাট সেটাও আমাকে অস্বস্তিতে ফেলছে না। নাহ আর ভাবব না। মনে আসলে আসবে, না আসলে নাই। রাস্তার দিকে তাকালাম। পৌঁছে গেছি।
লাগেজ নিয়ে নামলাম। ধীরে ধীরে এগিয়ে গেলাম। আমাদের গ্রুপের একজন ডাক্তারকে দেখতে পেলাম। সেদিকে এগিয়ে গেলাম। কিছুদুর এগোতেই দেখলাম ওখানে একজন না, সবাই আছে। বোর্ডিং পাসের জন্য লাইনে দাড়িয়েছে। একই এয়ারলাইনেই আমাদের সবার টিকিট। সো, এগিয়ে গেলাম।
কিউ ধীরে ধীরে এগোচ্ছে। যত এগিয়ে যাচ্ছে, অস্থিরতা ততোই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। কি ছিল নীলার আচরণে? আভরণে? মন বলছে, ইফ আই মিস ইট, ইট উইল বি অ্যা ডিজাস্টার। যেভাবেই হোক প্লেনে ওঠার আগেই আমাকে খুঁজে বের করতে হবে।
—টিকিত প্লিজ।
কখন যে কাউন্টারে পৌছে গেছি, লক্ষ্যই করিনি। এয়ারলাইনের জন্য নির্ধারিত ডেস্কের মহিলার কন্ঠস্বরে সম্বিত ফিরল। নাহ, ইটস ওভার। যদি কিছু অ্যাবনর্মাল থেকেও থাকে, এখন আর মনে করতে চেষ্টা করে লাভ নেই। আই থিঙ্ক আই স্যুড কাম আউট অফ দ্যা হ্যাং ওভার। এনাফ ইজ এনাফ। নো লুক ব্যাক।
টিকিট আর পাসপোর্টটা হাতেই ছিল। হাত বাড়িয়ে ভদ্রমহিলাকে টিকিটটা দিলাম। থ্যাঙ্ক ইউ বলে মহিলা হাত বাড়িয়ে টিকিটটা নিলেন। যদিও এভাবে কোন মহিলার হাতের দিকে তাকানোর অভ্যাস আমার নেই, তারপরও কেন যেন মহিলার হাতের দিকে একটু বেশিক্ষণই তাকিয়ে ছিলাম। কি দেখছিলাম? মহিলা হাতে সুন্দর একটা আংটি পড়ে আছেন। পাতলা একটা আংটি। মাথায় একটা হীরে। অবশ্য হীরের কি না জানি না, নকল কাচও হতে পারে। মনে হচ্ছে ওটা… শিট। নাও আই নো হোয়াট ওয়াজ অ্যাবনর্মাল ইন নীলা। শি ওয়াজ উয়্যারিং মাই ওয়েডিং রিং। দ্যাট ডায়মন্ড রিং আই গেভ হার। দ্যাট মিনস… হাও কুড আই মিস ইট।
ততোক্ষণে আই ডিড দ্যা ডেডলিয়েস্ট ব্লান্ডার অফ মাই লাইফ। টিকিট ভদ্রমহিলার হাতে দিয়ে দিয়েছি। মহিলা হাত টেনে নিয়েছেন। আমি চাইলেও আর এখন উনার হাত ধরতে পারব না।

বাট আই হ্যাভ টু স্টপ দ্যা লেডি। বোর্ডিং পাস ইস্যু করা আটকাতে হবে। নীলার অ্যাপার্টমেন্টে এক্ষুনি যেতে হবে, বিফোর ইট ইজ টু লেট। কিন্তু মুখ দিয়ে কথা বেরোচ্ছে না। সঠিক ইংরেজী কথাটা খুঁজে পাচ্ছি না।' প্লিজ স্টপ' কথাটা কেন যে মুখে আসল না, বলতে পারব না। নিজের অজান্তেই বাংলায় কথা বলা শুরু করে দিয়েছি
— ম্যাডাম থামেন। আমি যাব না। প্লিজ বোর্ডিং পাস ইস্যু করেন না।
মহিলা তখন আমার পাসপোর্ট আর টিকিট দেখতে ব্যস্ত। বাংলায় কথা বলার কারণে তিনি কিছু বুঝতেও পারেননি, আর উনাকে যে বলছি সেটাও বোধহয় লক্ষ্য করেননি।
নিজের ভুল বুঝতে পেরে আমি আপ্রাণ ইংরেজি খুঁজছি। কিভাবে যেন মুখে ইংরেজী ফিরে আসল। বললাম
— প্লিজ স্টপ। প্লিজ ডোন্ট ইস্যু দ্যা বোর্ডিং পাস।
কথাটা কিভাবে বলতে পারলাম নিজেই বলতে পারব না। কথাটা মহিলার কানে গেল। আমার ধারণা ব্যাপারটা বুঝতেও পারল।
অ্যান্ড দেন? ইয়েস, শি লুকড অ্যাট মি। স্মাইলড। অ্যান্ড সেইড ‘
— সরি


চলবে
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে মে, ২০১৮ দুপুর ২:৫০
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×