somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

—তোমরা যারা গবেষক হতে চাও—

২১ শে এপ্রিল, ২০১৭ দুপুর ২:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আমি যখন স্নাতক করি, আমাকে কেউ কখনো ঘুণাক্ষরেও বলেনি,

একজন গবেষক হওয়ার সাধারণ ধারাটা কি। কেন বলেনি আমি জানি না। আমি হলফ করে বলতে পারি, দেশের অধিকাংশ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এখনো এই বিষয়গুলো বলা হয় না। তাদেরকে বুঝতে দেয়া হয় না। কেউ যদি নাই জানে, একজন গবেষক হওয়ার সাধারণ পদ্ধতিটা কী, তাহলে সে সারাজীবন স্বপ্ন দেখলেও কিছু করতে পারবে না। সুতরাং তাকে আগে জানতে হবে। আমার বিশ্বাস, লক্ষ তরুণ-তরুণীর মাঝে অনেকেই বিজ্ঞানী হওয়ার একটা স্বপ্ন পুষে। সেই ছেলে-মেয়েগুলোর কথা ভেবেই এই অণুলেখা।

বড়ো গবেষক বা বিজ্ঞানী হওয়ার একটা ধারা আছে। অলিখিত নিয়ম আছে। সেটা হলো, একজন শিক্ষার্থী যত দ্রুত সম্ভব পিএইচডি শেষ করবে। যত দ্রুত শেষ করা যায় ততো ভালো। পঁচিশ-ছাব্বিশে শেষ করতে পারলে বেস্ট। আটাশের উপরে না যাওয়া হলো সর্বোত্তম! পিএইচডি শেষে অন্তত একবার/দুইবার পোস্টডক করতে হবে। তারপর স্বতন্ত্র গবেষণা শুরু করার জন্য ফান্ড/গ্র্যান্ট ম্যানেজ করে নিজের আইডিয়া অনুযায়ী কাজ করে যেতে হবে। গবেষণার দুনিয়ায় এটা হলো ধারা।

বয়সের ফ্রেমে কী গবেষণা আটকানো যায়? —না, তা যায় না। যে কোন বয়সেই গবেষক হওয়া যায়। তবে যতো তরুণ বয়সে শুরু করা যায় ততোই বড়ো হওয়ার সম্ভাবনাটা থাকে বেশি। তারুণ্যের বিষয়টা গুরুত্বপূর্ণ আরো অনেকগুলো কারণে, যেগুলো এই সংক্ষিপ্ত লেখায় তুলে ধরা যাচ্ছে না। কেউ যখন নিজে গবেষণায় যুক্ত হবে তখনই সে বিষয়গুলো আরো গভীরভাবে উপলব্ধি করতে পারবে।

সাধারণ ধারার বাহিরে যে দুই-একজন বড়ো বড়ো গবেষক/বিজ্ঞানী বের হয় না, তা নয়। তবে তারা ব্যাতিক্রম। যেমন, মারি কুরি পিএইচডি করার সময়ই জগৎখ্যাত উদ্ভাবন করেছেন। তার পিএইচডি’র কাজ দিয়ে তিনি নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। আইনস্টাইন ঘরে বসে বসে গণিতের সূত্র মিলিয়ে তার বিখ্যাত তত্ত্ব উদ্ভাবন করেছেন। সেজন্য তাকে কারো অধীন কাজ করতে হয়নি। এগুলো হলো ব্যাতিক্রম চরিত্র।

কয়েকজন গবেষকের অধীন কাজ শেখার লক্ষ্য রাখতে হবে। চলমান দুনিয়ার বেশিরভাগ খ্যাতনামা গবেষকদের প্রোফাইল ঘাঁটাঘাঁটি করলে দেখবে, তারা এক প্রফেসরের অধীন ব্যাচেলর পর্যায়ের গবেষণা করে। পিএইচডি করে অন্য এক অধ্যাপকের অধীন এবং পোস্টডক করে আরেকজনের ল্যাবে। এতে করে একজন শিক্ষার্থীর কাজের অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানের ব্যাপ্তি বাড়ে। বড়ো বড়ো গবেষকদের অধীন কাজ করতে পারলে বড়ো হওয়ার সম্ভাবনাটা বেশি থাকে। এটা হলো আরেকটি বাস্তবতা। তুমি যদি একশোজন নোবেল বিজয়ীর জীবনী পড়ো, তাহলে দেখবে তারা কাজ করেছেন খ্যাতনামা সব বিজ্ঞানীদের অধীন। দুনিয়ার অলিখিত নিয়ম হলো, যতো বড়ো গাছের শিকড় তুমি, তত বেশি তোমার বিস্তৃতি, ততো বেশি প্রতাপ! তাছাড়া, কেউ যখন বড়ো বড়ো গবেষকদের ল্যাবে কাজ করতে যায়, সেখানে তার সাথে পরিচয় হয় কালের সেরা মেধাবীদের। তাদের সাথে থাকলে তোমার ভাবনার জগতটাই পাল্টে যাবে। মেধা হবে শাণিত!

গবেষণার একটা ট্রেন্ড থাকে। এখানেও হাল ফ্যাশন বলে কথা আছে। সেটা বুঝার জন্য, গবেষেকদের সাথে যোগাযোগ, তাদের সম্পর্কে জানা, তাদের কাজ দেখা বা বুঝার চেষ্টা করা, তাদের কথা শুনা ইত্যাদি খুবই গুরুত্বপূর্ন দিক। তুমি দিনরাত খেঁটেখুঁটে পণ্ডশ্রম করে গেলে হবে না। তুমি যা ভাবছো, সেটা কী অন্যরা যথারীতি করে ফেলেছে কিনা, বা সেটার গুরুত্ব আছে কিনা সেটা জানতে হবে। তালপাতা দিয়ে জামা বানানো ব্যাতিক্রম বিষয়, তবে কথা হলো সেটা কেউ ব্যবহার করবে কিনা সেটাও গুরুত্বপূর্ণ। কাজটা করার আগে ভাবতে হয়, is it really worthy to continue?

সামান্য এই কথাগুলো হলো বাস্তব দুনিয়ার হিসেব-নিকেষ। এর বাইরে, আবেগী দুনিয়ায় বহু কথাই বলা যাবে। সেগুলো শুনতে বেশ ভালো লাগে তবে বাস্তবে কাজ দেয় খুবই কম। বাস্তব দুনিয়ার সত্যটা হলো, যতো শ্রম, ততো মধু। যতো বড়ো লক্ষ্য, ততো বড়ো চেষ্টা!

লেখক, রউফুল আলম। পোস্টডক রিসার্চার, ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভানিয়া। লেখকের ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে হুবুহু লেখাটা তুলে দিলাম।


সর্বশেষ এডিট : ২১ শে এপ্রিল, ২০১৭ দুপুর ২:১৩
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×