somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ডেলিভারি

২৫ শে জুলাই, ২০১৫ দুপুর ২:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ সারা দিন বৃষ্টি হচ্ছে । কখনো টিপ টিপ করে ,কখনো অঝোরে । সুমিত জানলার পাশে বেশ
উদ্বিগ্ন হয়ে দাঁড়িয়ে । অন্য দিন হলে , সে রবি ঠাকুরের গীতবিতান বুকের কাছে টেনে নিত । আজ ,তার
একটা প্রিন্টার কাস্ট মারের বাড়ীতে পৌঁছে দেওয়ার কথা । সকাল থেকে তিন তিনবার ফোন এসেছে । কিন্তু , এই বৃষ্টি তে যাবে কি ভাবে ? কলকাতা হলে না হয় ট্যাক্সি ভাড়া করে নিত । কিন্তু , এই আধা গ্রাম
আর আধা শহরে একমাত্র বিশ্বস্ত যানবাহন হল অটো আর বিক্সা , যা এমন বাদলার দিনে দুর্লভ । যে কটা চোখে পরছে , হয় যাত্রী বোঝাই , না হয় এত ভাড়া চাইবে যে সুমিতের লাভের গুড় পিঁপড়েয় খেয়ে যাবে । টিং টিং করে আবার মোবাইল টা বেজে উঠল ।
--"হ্যালো " , সুমিত ভয়ে ভয়ে বলল ।
-- "হ্যাঁ আমি বলছি , আপনি আসছেন তো ? " ওপাশ থেকে মেয়েলী কণ্ঠস্বর ভেসে এলো ।
--"দেখি , বৃষ্টিটা একটু ধরুক " ।
-- "না না , আপনাকে আজ আসতেই হবে , আমি ওয়েট করছি । " গলাটা এখানে বেশ মোহিনী হয়ে উঠ ল ।
--"দেখুন ... "
--"প্লিজ , আমার খুব দরকার প্রিন্টার টা । না পেলে কাজ বন্ধ হয়ে আছে , বুঝতেই পারছেন । "
-- "আচ্ছা , দেখছি "
-- "বেশ , একটু দেখুন " ।
মোবাইলের সুইচ টা অফ করে দেবে কি ? সুমিত জানলার পাশ থেকে সরে এসে চৌকির উপর বসল ।
"কি রে আজ বেরবি না ? " সুমিতের মা ভেজা হাত আঁচলে মুছতে মুছতে ঘরে ঢুকল ।
"দেখি !" । সুমিত হাল্কা ভাবে বলল ।
"তোর বাবার চোখের ড্রপ ফুরিয়ে গেছে , আন্ তে হবে । " -- মা এক নাগাড়ে বলে যেতে লাগল ।
সুমিত মনে মনে ভাবল , মাসকাবারি মাল আর ইলেত্রিকের বিল মেটাতে গিয়েই , তার মাইনের সিংহ ভাগ বেড়িয়ে যায় । এরপর আছে প্রতিদিনের বাজার খরচ , আর ওষুধ ।
পকেতে যে কটা টাকা আছে , তাতে সাড়ে সাতশ র চোখের ড্রপ সে কিনতে পারবে না । হ্যাঁ , তবে প্রিন্টার টা ডেলিভারি দিলে হাজার টাকা পকেতে আসবে ।
সুমিত আর ভাবল না । তড়াক করে উঠে দাঁড়িয়ে বলল , "মা , ভাত বারো , আমি বেরব । "

প্রিন্টারের প্যাকেটের ওপরে বেশ করে পলিথিন জরিয়ে , হাফ প্যান্ট আর রেন কোট পরে সুমিত বেরল । রাস্তায় জল জমেছে । পায়ের পাতা ডুবে যাচ্ছে ।
নর্দমা থেকে জল উপচে রাস্তায় ছড়িয়ে পরেছে । রাস্তায় জন প্রাণী নেই । গাছ গুল নিরুপায় হয়ে ভিজছে । সুমিত ছপাত ছপাত করে জল ছিটকে হাঁটতে শুরু করল ।
তেমাথা হয়ে স্টেশনের মুখে তাকে যেতে হবে । প্রায় তিন কিলো মিটারের বেশি পথ । বড় রাস্তায় এসে সুমিত অবাক হল । একে এখন আর রাস্তা না বলে নদী বলা ভাল ।
তেমাথার মোড়ে যেখানে তিনটে রাস্তা এসে মিশেছে সে খানে যেন ত্রিবেণী সংগমের সৃষ্টি হয়েছে ।
একটা চার চাকা হুশ করে জল ছিটিয়ে চলে গেল । অটো স্ট্যান্ডে একটাও অটো নেই । একটা রিকশা দাঁড়িয়ে আছে শুধু , খানিকটা দুরে ।
অটো পাবার আশা ছেড়ে দিয়ে সুমিত রিকশর দিকে এগোল ।
রিকশা ওয়ালা পলিথিনের ভেতরে সিটের ওপরে বসে সুমিতের দিকেই তাকিয়ে ছিল ।
--"যাবে না কি " বিরক্ত হয়ে সুমিত বলল ।
--"কোথায় যাবেন ? " গম্ভীরভাবে রিকশ ওয়ালা বলল ।
--"স্টেশন বাজারে নামিয়ে দেবে , কত নেবে ? "
-- "দুশ টাকা দেবেন " সাফ সাফ জানিয়ে দিল রিকশ ওয়ালা ।
-- "তিরিশ টাকা ভাড়ায় যাই "
-- "হবে না "
সুমিতের রাগ চড়ে গেল । এই রেগে ওঠা সুমিতের একটা বাজে দোষ সবাই বলে ।
সে বড় বড় পা ফেলে হাঁটতে শুরু করল । পেছন থেকে রিকশ ওয়ালা ডাকল । কিন্তু , সুমিত এত রেগে গেছে যে ফিরে দেখা তো দুর , মনে মনে রিকশ ওয়ালাকে দু চার খিস্তি দিয়ে বসল ।

বাড়ীটার সমনে যখন এসে পোঁছাল , তখন প্রায় এক ঘণ্টা পেরিয়ে গেছে । দো তলা সাজানো বাড়ি । গেটের সামনে গ্যারেজ । গ্যারেজ টা খোলা , মেঝেয় টাটকা চারটে চাকার দাগ এখনও লেগে ।
লবির বাঁ পাশে এসেই সুমতের বুক টা ছ্যাঁত করে উঠ ল । গ্রিলের দরজা বাইরে থেকে তালা বন্ধ । লবির ভেতরের দরজাও বাইরে থেকে বন্ধ । বাড়ীতে কেউ নেই নাকি ? সুমিত মরিয়া হয়ে
বেশ কয়েকবার কলিং বেল বাজাল ।নাহ , কিছু হচ্ছে না দেখে , বুক পকেটের ভেতর থেকে মোবাইল টা বের করল । কল রিসিভ লিস্ট থেকে কাস্ট মারের নাম্বারে ফোন করল । উত্তর এল "আপনি যে নাম্বারে ফোন করেছেন তা পরিসীমা সীমার বাইরে আছে " । কথাটা একবার হিন্দিতে , একবার ইংরাজি তে রিপিট হবার পর কেটে গেল । হয়ত তার আসতে দেরী হচ্ছে দেখে কাস্ট মার বেড়িয়ে গেছে । কিন্তু , সে তো আসবে বলেছিল । এমন হাজারো প্রশ্ন সুমিতের মাথায় ভিড় করল । আকাশ তখন
আরও কালো করে এসেছে , আরও বেড়েেছে বৃষ্টি র বেগ।

----- "ডেলিভারি" সৌরভ গোস্বামীর গল্প ।



সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জুলাই, ২০১৫ দুপুর ২:৩৩
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সিকান্দার রাজার চেয়ে একজন পতিতাও ভালো।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৭

সিকান্দার রাজা কোকের বোতল সামনে থেকে সরিয়ে রাতারাতি হিরো বনে গেছেন! কিন্তু তাকে যারা হিরো বানিয়েছেন, তারা কেউ দেখছেন না তিনি কত বড় নেমকহারামি করেছেন। তারা নিজেদেরকে ধার্মিক বলে দাবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×