বিজ্ঞানের উপর হাতের প্রভাব নাকি হাতের উপর বিজ্ঞানের প্রভাব, যাই মনে করি না কেন আদিম কালের মানুষেরা মনে করত যে হাত দেখে ভবিষ্যতবাণী করা যায় বা হাতে ভবিষ্যতের একটা ইশারা দেয়া থাকে। তারা বিশ্বাস করত , হাত দেখে তারা হয়ত কিছু আবিস্কার করতে পারবে বা ভবিষ্যৎ সন্মন্দে একটা ধারনা পাবে, যা কালের বিবর্তনে মানুষ একে পামিস্ত্রি (palmistry) বলে নামকরন করে। সোজা বাংলা কথায় আমরা একে হস্তবিদ্যা বা হস্তগননা বলে থাকি , যার আজ পর্যন্ত বৈজ্ঞানিক কোনও ভিত্তি মেলে নাই।
কিন্তু পামিস্ত্রি (palmistry) কে একটু অন্যভাবে ব্যাখ্যা করলে আপনি হয়ত ভবিষ্যৎ দেখতে না পারলেও বর্তমান কে যে ভালোভাবে দেখতে পারবেন বিজ্ঞানিরা সেই ব্যাপারটি কিছুদিন আগে নিশ্চিত করেছেন।
হ্যাঁ। এই হাতের মাধ্যমে আপনার শারিরিক অবস্থা , সহজাত ক্ষমতা, ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট এবং এমনকি যৌন সক্ষমতাও হিসাব করা যায়.
আসুন কিছু ব্যাপার জেনে নেয়া যাক।
অঙ্ক-অনুপাত (digit ratio)
অনেকগুলো আবিস্কারের মধ্যে বহুল প্রচারিত ও জনপ্রিয় একটি হচ্ছে দ্বিতীয় ও চতুর্থ অঙ্কের মধ্যে অনুপাত নির্ণয় করা যা সরাসরি testosterone and estrogen লেভেলের সাথে সম্পর্কযুক্ত। এই পদ্ধতিটি "Digit Ratio" অথবা "2D : 4D ratio" নামে পরিচিত। এই অনুপাতটি জানার জন্য আপনাকে দ্বিতিয় আঙ্গুল(2D) বা index ( যা আমরা তর্জনী নামে জানি) এর দৈঘ্য নির্ণয় করে, চতুর্থ আঙ্গুল(4D) বা RING FINGER এর দৈঘ্য দিয়ে ভাগ দিতে হবে।
তবে এই আনুপাতটি সাধারনত পূর্ণবয়স্ক নর-নারির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। সাধারনত পুরুষদের ক্ষেত্রে ring finger টি index finger এর চেয়ে বড় হয়ে থাকে যেখানে মেয়েদের ক্ষেত্রে index finger টি ring finger এর চেয়ে তুলনামুলকভাবে বড় হয়।
সহজ কথায় বলতে গেলে, চতুর্থ আঙ্গুল(4D) বা RING FINGER টি সরাসরি testosterone এর সাথে সম্পর্কযুক্ত আর যেখানে দ্বিতিয় আঙ্গুল(2D) বা index সরাসরি estrogen এর সাথে সম্পর্কযুক্ত।উদাহরন হিসেবে বলি, ইউরোপে 2D:4D এর আনুপাত 1.0 এবং 0.96 এর মধ্যে থাকে যেখানে নারীদের মানটি উচ্চমুখী ও পুরুসদের মানটি নিম্নমুখি লক্ষ্য করা যায়। তবে ক্ষেত্রবিশেষে ভিন্নও হতে পারে।
১) যে সকল পুরুষদের আনুপাতিক মান (2D:4D ratios) নিম্ন, তাদের ক্ষেত্রে বৃহত্তর ভ্রুন এক্সপোজ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এই কারনে তারা বেশ কামুক, বেশ উগ্র হয়ে থাকে। এরা সাধারনত সঙ্গীত ও খেলাধুলার প্রতি প্রচণ্ড উৎসুক দেখা যায়।
২) যে সকল পুরুষদের আনুপাতিক মান (2D:4D ratios) উচ্চ, তাদের মধ্যে হৃদরোগের ঝুকি বেশি থাকে।
৩) যে সকল মহিলাদের আনুপাতিক মান (2D:4D ratios) নিম্ন, তাদের মধ্যে সমলিঙ্গের প্রতি প্রবল আকর্ষণ লক্ষ্য করা যায়। এ ছাড়াও তারা খুব দৃঢ ও কিছুটা উগ্রবাদী হয়ে থাকে।
৪) যে সকল মহিলাদের আনুপাতিক মান (2D:4D ratios) উচ্চ, তারা খুব কামুক হয় এবং তাদের মধ্যে স্তন ক্যান্সারের ঝুকি বেশি থাকে।
৫) সিজফ্রেনিক রোগীদের মধ্যে আনুপাতিক মান খুব বেশি থাকতে দেখা যায় যেখানে প্রতিবন্ধী বা বিকলাঙ্গদের মধ্যে দেখা যায় খুব কম আনুপাতিক মান।
হাতের রঙ
আনুপাত ছাড়াও আরও কিছু তথ্য আমরা হাতের মাধ্যমে খুব সহজেই পেয়ে থাকি। হাতের রঙ ও গঠনের উপর ভিত্তি করেও আমরা আমাদের স্বাস্থ্য নিয়ে কিছু ধারনা পেয়ে থাকি।
১) কম রক্তসঞ্চালনতা যা অনেক রোগের উপসর্গ। এর মাধ্যমে আমরা কোনও রোগ সন্মন্ধে অগ্রিম ধারনা পেতে পারি।
২) লাল হাত সাধারনত লিভার সিরোসিস রোগ কে নির্দেশ করে।
হাতের নখ
১) ডায়াবেটিস হলে সাধারনত হাতের নখ "Terry's nails"(অর্ধেক সাদা, অর্ধেক গোলাপি বর্ণ ধারন করে)।
২) ভারিধাতুর বিষক্রিয়ায় হাতের নখ নীল হয়ে যায়। তাছাড়া রক্তশূন্যতা, পাকস্তলি ও হার্টের রোগেও নখ নীল হয়ে যেতে পারে।
৩) হলুদ অথবা সবুজ নখ আপনার শ্বাসযন্ত্রের কোনও রোগ প্রকাশ করে।
৪) Clubbing (নখ আঙ্গুলের উপরিভাগে বেঁকে যাওয়া) সাধারনত রক্তে অক্সিজেনের অভাবে পরিলক্ষিত হয়। এছাড়া এটি ফুসফুস, লিভার ও পেটের কোনও সমস্যার কারনেও দেখা যেতে পারে।
৫) Spoon nails ( উত্তল আকৃতির নখ) সাধারনত আয়রন সল্পতাকে নির্দেশ করে।
হাতের রেখা
এমনকি আমাদের হাতের রেখাও রোগ বা চিকিৎসার ক্ষেত্রে বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। কিছু কিছু হাতের বাক এমনভাবে বিন্যাস্ত থাকে যা কিছু জেনেটিক ডিসঅর্ডার যেমন down syndrome কে নির্দেশ করে।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে হাতের ভাজ ও প্রসস্ততা আপনার ভ্রুনের উপর এলকোহলের প্রভাব নির্দেশ করে। তাছাড়া Down syndrome and Noonan syndrome এর ক্ষেত্রে এর উপসর্গ আপনার হাতের মাধমেই প্রকাশ পায়।
আঙ্গুলের ছাপ
Finger print সন্মন্ধে আমরা সবাই জানি। Dermatoglyphic হচ্ছে আঙ্গুলের রেখার বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ। দুর্লভ Dermatoglyphic pattern সাধারনত জেনেটিক ডিসঅর্ডারের সাথে সম্পর্কযুক্ত।
এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, আলজেইমার রোগীদের আঙ্গুলের ulnar loops সাধারনত ভিন্ন হয়।দেখা গেছে যে আলজেইমার রোগীদের আটটি বা এর বেশি রেখা নিয়ে ulnar loops তৈরি হয়।
হাত নিয়ে একটি মজার কথা বলি। আমাদের ভ্রুন গর্ভে নিষিক্ত হওয়ার চার সপ্তাহের মধ্যেই আমাদের হাত গঠন হওয়া শুরু হয়। চার মাসের শেষের দিকেই আমাদের হাতের রেখা, বাঁক, ঢাল সব তৈরি হয়ে যায় এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তা একই থাকে।
এর মানে uterus এর মধ্যেই আমাদের অনাগত ভাগ্য তৈরি হয়ে যাওয়া।
ভালো লাগলে কমেন্ট করে জানাবেন।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:৩৪