somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইউরোপে ২৮ দিন >> ঢাকা থেকে দুবাই

২২ শে নভেম্বর, ২০১১ বিকাল ৪:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আগের পর্ব: [link|http://www.somewhereinblog.net/blog/seoul/29476298|সূচনা.।

ক্ষমাপ্রার্থনা: নিয়মিত লেখার কথা বলে নভেম্বরের শুরু থেকে বিরতি মার্জনীয় নয়। কিন্তু ঈদের ছুটি পেয়েছিলাম ১৬ দিন, তাই পুরোপুরি পিসি থেকে এতদিন দূরে ছিলাম। এখন থেকে আবার নিয়মিত হওয়ার আশা রাখি (যেহেতু সামনে আর কোন ছুটি নাই)।
*************

যাওয়ার কেনাকাটা:
আমার ট্রলি ব্যাগগুলি ছিলনা, তাই প্রথমেই দৌড় দিলাম ওটা কিনতে। রাশেদের রেফারেন্সে খুব ভাল একটা ব্যাগ পেলাম ২৮" এর। হলে এসে ওটা খুলে দেখি যতটা বড় ভেবেছিলাম ওটা তারও ডাবল। কিই আর করা, বাকি জীবনে কাজে দিবে টাইপের সান্ত্বনা দিয়ে লিস্ট করতে বসলাম কি কি লাগবে তার উপর। সারাজীবন স্যুয়েটার পড়ে অভ্যাস, পাতলা জ্যাকেটটায় কাজ হবে না সেটা নিশ্চিত। সুতরাং আরো একটা জ্যাকেট কিনতে হবে। সেইমত বঙ্গবাজারে গেলাম একদিন, আল্লাহ'র রহমতে ওইদিন তাপমাত্রা প্রায় ২৪/২৫ ডিগ্রী ফলে প্রচন্ড গরম, একটা দোকানে দরদাম শুরু করলাম কালো একটা জ্যাকেটের। দাম চাইলো ১৭০০ টাকা, উদাসভাবে এই গরমে এত টাকা দিব টাইপের ভাব ধরে হাঁটা দিলাম ৭০০টাকা দাম বলে। ৫ম পা ফেলার পরেই দোকানদার ডাক দিল ১৪০০ বলে, কাজ হয়নি অবশ্য কারণ ৭০০তেই দিয়েছিল শেষে। এরপরে ওর কাছেই হাতমোজা কিনলাম এবং মনে হল ওকে আমি তাহলে রেডী জার্মানী যেতে কারণ নিজের ব্যবহার্য জিনিস গুলোই নিয়ে যাব জন্যে নতুন করে আর কিছুই কেনা উচিত বলে মাথায় আসছিলো না। ও হ্যা, একটা গলায় ঝুলায় রাখা যায় এমন একটা হ্যান্ডব্যাগ দরকার ছিল পাসপোর্ট রাখার জন্যে, রাসেল ভাইয়ের কল্যানে ওটাও পেয়ে গেলাম।

এরমাঝেই কনভোকেশন হয়ে গেলো ৩ তারিখ, আমার বন্ধুর বিয়ে মিস করলাম ৫তারিখে কারণ এরমাঝে প্রচন্ড দৌড়াদৌড়ী (মন্ত্রী আবুলে'র দৌড় ফেল) গেল ইউরো ম্যানেজ করতে। আর আমি মোটামুটি জিনিস-টিনিস গুছায় খালাতো বোনের বাসায় যখন গেলাম (আব্বা-আম্মা তখন ওখানে) তখনই বুঝলাম ছেলেদের প্রিপারেশন আর মেয়েদের প্রিপারেশন কাকে বলে। অলমোস্ট ১৫টার মত জিনিস আমি নেইনি এটা আম্মা এবং আমার বোন মিলে দেখায় দিল এবং নিজেরাই ম্যানেজ করে দিল। ইউরোপে ওষুধের ব্যাপক দাম তাই বাংলাদেশ থেকেই ওষুধ নেয়া, প্রেসক্রিপশন লিখে দেয়া এগুলোও তারাই করে দিল।

বাংলাদেশ ইমিগ্রেশন:
অবশেষে ৬ই ফেব্রুয়ারী শুরু হল যাত্রা। আমার ফ্লাইটের টাইম রাত ৯টায় এমিরেটস এ। আমি আর জামিল ঠিক করেছিলাম যে আমরা আসার সময় সুইজারল্যান্ডে যাব এবং আসবো জুরিখ থেকে। সেইমত আমাদের টিকেট কাটা ছিল: ঢাকা-দুবাই-ফ্রাংকফুর্ট, জুরিখ-দুবাই-ঢাকা। যেহেতু রাত ৯টায় ফ্লাইট তাই সন্ধ্যা ৬টার সময় চলে আসলাম এয়ারপোর্টে। আসার পথে টিকেটে অনেকক্ষন খুঁজেও সিট নাম্বার পেলাম না, চিন্তায় পড়ে গেলাম (আমার জানা ছিল না প্লেনে সিট নাম্বার চেক-ইন করার পরে দেয়া হয় বেশিরভাগ সময়ই, বাসের মত না)। যাইহোক, একসময় এমিরেটস এয়ারলাইন্স এর চেক-ইন শুরু হলো, লাইনে দাঁড়িয়ে লাগেজ জমা দিলাম এবং কাউন্টারের মেয়েটাকে টিকেটটা দিলাম। এরপরে তাকে এটাও বললাম আমরা ২জন যাব সুতরাং সেইমত পাশাপাশি সিট পাওয়া যাবে কি? (আন্দাজে ঢিল ছোড়া আরকি)। সেই মেয়েটা যখন দেখলো আমাদের কানেক্টিং ফ্লাইট তখন সে ইকোনমি ক্লাসের দ্বিতীয় সারিতেই ২টা ফ্লাইটেরই সিট কনফার্ম করে দিল। এরপরে ৭টার দিকে ইমিগ্রেশন পার হতে লাইনে দাঁড়ালাম এবং বিপত্তিতে পড়লাম।

ইমিগ্রেশন অফিসার প্রথমে জিজ্ঞেস করলো কোথায় যাব, কেন যাব এইসব, ডকুমেন্ট দেখতে চাইলো। আমি সবই বললাম এবং ডকুমেন্টগুলো দেখালাম কিন্তু ঝামেলা বেঁধে গেল ভিসা'র ডেট এর জন্যে। আমার শেনজেন ভিসা ৭ই ফেব্রুয়ারী থেকে, আর আমি ইমিগ্রেশনে দাঁড়ানো ৬তারিখ সন্ধ্যায় সুতরাং সে ৬ তারিখে ৭ তারিখের ক্লিয়ারেন্স দিতে পারছে না। আমি হতভম্ব হয়ে বললাম কিন্তু আমার তো ফ্রাংকফুর্ট পৌছাতে পৌছাতে জার্মানীতেও ৭তারিখ হয়ে যাবে কারণ দুবাই পৌছাব দুবাই লোকাল টাইম রাত ১১টায় আর এরপরে ৮ঘন্টা ৮ মিনিট ট্রানজিট সুতরাং কোনভাবেই আমি ৭ এর আগে জার্মানী যাচ্ছি না। ইমিগ্রেশন অফিসারটা ভালো ছিল, খানিকক্ষন চিন্তা করে বললো ঠিক আছে আমি সিল মেরে দিচ্ছি আপনি সামলে নিয়েন সামনে। আলহামদুলিল্লাহ বলে পার হয়ে আসলাম এবং রাত ৯টার দিকে প্লেনে উঠলাম।



দুবাইয়ের পথে:
প্লেনে উঠার সময় আমি আমার মোটা জ্যাকেটটা হাতেই রেখেছিলাম কারণ ওটা বালিশ হিসেবে দুবাই ট্রানজিট সময়টাতে ঘুমানোর জন্যে ভালো কাজে আসবে বলে মনে হয়েছে (যেই গাবলুশ সাইজ) আর জার্মানীতে তো ব্যাপক ঠান্ডা থাকা উচিত।
এই জ্যাকেটটা প্লেনে উঠার পরে আমার সিটের উপরের কাভার্ডে রাখতে যেয়ে দেখি ওটা অলরেডী ফিল আপ হয়ে গিয়েছে আমার ব্যাগ দিয়েই। কি করা যায় ভাবতেই একজন বলে, "Sir, I can place it there if you want". আমি তাকায় থেকে খানিকটা হতভম্ব টাইপের হয়ে গেলাম। সামনাসামনি দেখে একজনকে এত সুন্দর মনে হতে পারে সেটা আমার বহুদূরের কল্পনাতেও কোনদিন ছিল না। যাইহোক, ভ্যাবাচাকাভাব কাটায় উঠেই আবার হতভম্ব টাইপের হয়ে গেলাম কারণ মেয়েটা খুব বেশী সুন্দর। চিন্তা করে দেখলাম সে বিজনেস ক্লাসের অংশটার কাভার্ডে আমার জ্যাকেটটা রাখতে চাইছে, সুতরাং না বলার কোন কারণ নাই যেহেতু আমার সিট থেকে কাছেই থাকছে ওটা। নাম দেখে বোঝার উপায় ছিল না মেয়েটা কোন দেশের (এমিরেটস প্রায় সব রিজিওনেরই এয়ারহোস্টেস থাকে প্রতি ফ্লাইটে, আমার তেমনটাই মনে হয়েছে), তবে নিঃসন্দেহে এই এয়ারহোস্টেসটি আমার পুরো সময়টায় দেখা সবচেয়ে সুন্দর এয়ারহোস্টেস।

প্লেনে টাইম লাগলো ৪ ঘন্টার মত দুবাই যেতে, সহযাত্রীরা দেখলাম বাংলাদেশীরাই কম বরং অন্যদেশের মানুষ বেশী। ৪ঘন্টার প্রায় পুরোটাই কাটলো সিনেমা দেখে। এমিরেটস এর সিনেমা কালেকশন খারাপ লাগেনি। অবশেষে দুবাই টাইম রাত ১০:৩০ এর দিকে যেয়ে পৌছালাম দুবাইতে। দুবাইতে নিয়ম হল ৮ ঘন্টার বেশী ট্রানজিট হলে আপনি অন অ্যারাইভাল ভিসা পাবেন তবে এর কম হলে পাবেন না। আমাদের যেহেতু ৮ ঘন্টা ৮ মিনিটের মত ট্রানজিট ছিল তাই আমরা চাইলে ট্রানজিট পেতাম কিন্তু অত রাতে বের হওয়ার সাহস হল না। তারচেয়ে মনে হল এখানেই ঘুরে দেখি: দুবাই এয়ারপোর্ট, কানেক্টিং দ্য ওয়ার্ল্ড।

&&

*******
আগামী পর্বে: জার্মানীতে প্রথম দিন

--ছবিগুলো আমার তোলা নয় কারণ আমার ক্যামেরা লাগেজে ছিল তাই এয়ারপোর্টের অংশগুলোতে কোন ছবি তোলা হয়নি।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১২ বিকাল ৩:১২
৮টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×