somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছোটগল্পঃ দেয়াল বন্ধী অপেক্ষারা

২৫ শে আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৪:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

- তোমার নাকের সাথে আমার নাক, ঠোঁটের সাথে ঠোঁট লেগে আছে তাই না ,বল?
- তো? কি হইছে? লাগতেই পারে।
- তুমি কি আমাকে ভালবাস?
- একদম না।
- কেন?
- আগে বল বাসব কেন?
- আমরা এতো দিন ধরে এখানে একসাথে আছি। কথা বলছি। ভাল, খারাপ, আনন্দ, দুঃখ নিজেদের মাঝে বিনিময় করছি এটা কি কম কিছু?
- বেশী কিছুও না। একসাথে থাকলে এমন হতেই পারে।
- তোমার আশেপাশে আরও অনেকে আছে তাদের সাথে তো কথা বলছ না। আমার সাথে বলছ।
- তাতে কিছুই বুঝায় না। আর এসব বাদ দাও। আমরা বোধহয় আর কিছুক্ষণ পরেই আলাদা হয়ে যাচ্ছি।
- কি বল? কে বলল?
- আজকেই নাকি কাজ শুরু হবে। শুনলাম আর কি।
- চিন্তা নেই। তুমি আমি একসাথেই আছি। এভাবেই থাকব। আলাদা জায়গায় আমাদের রাখা হবে না।
- জানি না।

মুখটা একটু গোমড়া করেই টিটা বলল। সেদিকে তাকিয়ে চোখটা বুজে ফেলল এট। টিটার মুখটা বেশীক্ষণ গোমড়া দেখতে খারাপ লাগে। চোখ বুজেই এট বলল, ভালবাসি তোমাকে টিটা।

টিটা কিছু বলল না, ছোট একটা নিঃশ্বাস ছাড়ল।

কাজ শুরু হয়েছে। সিমেন্ট বালু পানিতে মিশিয়ে তা মাখানো হচ্ছে। একটু পর একটার পর একটা ইটের মাঝে তা দিয়ে দালান তোলা হবে। টিটা আর এট দুজনকেও সবাই ইট বলে ডাকে। ওদের ভাগ্যেও তাই আছে। জন্মই হয়েছে এই জন্য। সে হিসেবে কিছুটা ভাগ্যবান বলাই যায় ওদের। কাউকে কাউকে রাস্তায় বিছিয়ে দেয়া হয়, তার উপর দিয়ে পায়ে হেঁটে লোক যায়। পায়ের নিচে ভাল, খারাপ, সুগন্ধ , বেশীর ভাগ সময় দুর্গন্ধ যুক্ত জিনিস থাকে। কাদা মেখে তাই এসে মুছে গায়ের উপর। কেউ এসে সেই রাস্তার ইটদের ধুয়ে দিতে আসে না। চরম অবহেলায় এক সময় ভেঙে চুরে বিলীন হয়ে যায়। কারও কারও অবস্থা আরও ভয়াবহ। নতুন এনেই ভেঙে চুরে খোয়া বানানো হয়, তাই দিয়ে দালানের ছাদ আর নিচে ঢালাই দেয়া হয়। আর টিটা , এট থাকবে ঘরের দেয়ালে। অনেক যত্নে। উপরে সুন্দর করে প্লাস্টার করে দেয়া হবে, করা হবে রঙিন রঙ। কোন ময়লা ফেলা হবে না। করা হবে নিয়মিত পরিষ্কার। তবুও কেউ কেউ দেয়ালে লোহা ঢুকিয়ে ব্যথা দিবে। সেসব সবার ক্ষেত্রে যদিও হয় না। টিটা চিন্তিত কিছুটা, কি নিয়ে চিন্তিত জানে না। এট মাঝে মাঝে টিটাকে ভালবাসার কথা বলে। টিটা কেন যে একটু ভালবাসে না। ভেবে পায় না এট। এবার দালানের মধ্যে গিয়ে একেবারে পাকা পোক্ত ভাবে ভালবাসার কথা জানাবে। দুজন মিলে সংসার পাতবে। এট এর চিন্তা নেই। দুজন একসাথেই আছে সাজানো সব ইট গুলোর মাঝে। দালানেও জায়গা একই জায়গায় হবে। এটকে টেনে তোলা হল, টিটার দিকে তাকিয়ে একবার বলল, শোন আমি যাই, তুমিও আসো কেমন?

টিটা বিষণ্ণ মুখে তাকাল শুধু এটের দিকে। টিটার কেন যেন খুব কষ্ট হচ্ছে। এটের গায়ে বালু সিমেন্ট মাখানো হল, বসানো হল দালানে। এট অপেক্ষায় আছে, টিটাকে পাশেই বসানো হবে। কিন্তু একি? টিটাকে অন্য দিকের দেয়ালে লাগানো হল। কাজ করছেন দুই জন মিস্ত্রি। দুই দিকে দেয়াল বানানো হচ্ছে। এট কে নিল একজন। টিটাকে অন্য জন। টিটা শেষ বারের মত একবার তাকাল এটের দিকে। এট অসহায়ের মত তাকিয়ে আছে টিটার দিকে। টিটা যাবার আগে একবার বলল, তোমাকে একটা কথা বলার ছিল।

এট কান পেতে বলল, বল বল।
টিটা কিছু বলার আগেই মিস্ত্রির হাত ধরে চলে গেল অনেকটা দূরে। কিছু বলল টিটা। তা এট পর্যন্ত এসে পৌছাল না। অন্য পাশের দেয়ালে টিটার জায়গা হল। একপাশ দিয়ে একটু একটু টিটাকে দেখা যায়। এট চেয়ে চেয়ে টিটাকে দেখে। টিটাও বিষণ্ণ মুখে, কাঁদো কাঁদো চোখে তাকিয়ে থাকে। মাঝে মাঝে মুখ নাড়িয়ে কিছু বলে। তা এট শুনতে পায় না। এট বলে ভালবাসি, তাও শুনতে পায় না টিটা। দেখাও হয়না বেশী দিন। প্লাস্টার করা হয় এটের উপর,টিটার উপর। করা হয় রঙ। চলে যায় দৃষ্টির আড়ালে। এট কথা বলে না কোন, পাশের কোন ইটের সাথে। টিটাও আর বলে না, সুখের কথা দুঃখের কথা কারও সাথে। মন খারাপে দিন কাটে, কেটে যায় রাত। সময় গুলো চলে। এট অপেক্ষা করে, অপেক্ষা করে টিটা। কোন একদিন এই দালান পুরাতন হলে। ভেঙে নতুন দালান উঠবে। এট তখন অসাড় দেহ নিয়ে পড়ে থাকবে টিটার পাশে। বলবে আবার ভালবাসি। টিটাও যে বড় একা, বড় দুঃখী, এট কে ছাড়া। অনেকটা সময় পাশাপাশি থাকতে থাকতে, কখন যেন ভালবেসে ফেলেছিল। সে ভালবাসা দেখানো হয় নি। হয় নি প্রকাশ। শেষ বার আমিও তোমাকে ভালবাসি বলেছিল। শুনতে পায় নি এট। মনের গহীনের কথা গুলো বলবে আবার এট কে। একটা অপেক্ষার প্রহর শেষে ভালবাসার প্রহর আসবে। সেই অপেক্ষার প্রহর হয়ত অনন্ত কাল। কিংবা খুব কাছে। ভালবাসা পাবার আকাঙ্ক্ষা সেই অপেক্ষার প্রহর গুলোকে বাঁচিয়ে রাখে। রাখে বাঁচিয়ে এট আর টিটের ইটের শক্ত হৃদয়ের কোণের নরম ভালবাসা গুলো।

খুব শক্ত কোন হৃদয়ের কোণেও একটু একটু বা অনেকটা ভালবাসা থাকে। কাউকে ভালবাসে। নীরবে বা বলে বলে। কেউ ভালবাসা প্রকাশ করে, কেউ রাখে লুকিয়ে। কেউ ভালবাসা নিয়ে বাঁচে, কেউ অপেক্ষায় কাটায়, একটা সময় পর সেই ভালবাসা পাবার। আর কেউ বিলীন হয়, হারিয়ে যায়, ইট পাথরের হৃদয়ের কোণে ভালবাসা খুঁজবার সময় না পেয়ে, ভালবাসার মৃত্যু দেখে।

সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৪:২৮
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আরো একটি সফলতা যুক্ত হোলো আধা নোবেল জয়ীর একাউন্টে‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪০



সেদিন প্রথম আলো-র সম্পাদক বলেছিলেন—
“আজ শেখ হাসিনা পালিয়েছে, প্রথম আলো এখনো আছে।”

একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আজ আমি পাল্টা প্রশ্ন রাখতে চাই—
প্রথম আলোর সম্পাদক সাহেব, আপনারা কি সত্যিই আছেন?

যেদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

লিখেছেন নতুন নকিব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১১

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

ছবি এআই জেনারেটেড

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ প্রতিবাদের ভাষা নয় কখনোই
আমরা এসব আর দেখতে চাই না কোনভাবেই

আততায়ীর বুলেট কেড়ে নিয়েছে আমাদের হাদিকে
হাদিকে ফিরে পাব না... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×