হ্যালো…. হ্যালো…………..। শীলার ফোন। শীলা মেয়েটা আজকাল বড্ড বেহারা হয়ে গেছে। ফোন না ধরা পর্যন্ত দিয়েই চলে ক্ষ্যান্ত দিতে চায় না। মনে মনে একটু বিরুক্ত হলেও ফোনটা রিসিভ করলাম।
হ…আমি শুনতে পাচ্ছি, কি খবর বল?
তুমি কই?
অফিসে আছি।
আজ অফিসে কি কাজ; আজকে না 14 ফেব্রুয়ারী?
আমি জানি কিন্তু কি করব বল।
কিছুই করার লাগবে না। তুমি চলে আসো।
আচ্ছা, তোমাকে পাঁচ মিনিট পরে ফোন দিচ্ছি।
মোবাইল ফোনটা পকেটে রেখে সোজা চলে গেলাম স্যারের রুমে, উদ্দেশ্য আজকে কিছুটা আগে ছুটি নিব। স্যারের রুমে প্রবেশ করলম।
কি খবর সাহু?
স্যার আমাকে এখন ছুটি দেয়া লাগবে।
কেন?
কিছুক্ষণ ভাবতে থাকি। সত্য বলব নাকি মিথ্যা বলব। আমার তত্বাবধানে প্রায় 20 জন পোলাপাইন মাকেটিং এ চাকুরী করে। তারা বিশেষ কোন কারণে ছুটি নিতে হলে অনেক সময় মিথ্যা কথা বলে । যেমন; বাবা অসুস্থ তাকে হাসপাতালে নিতে হবে, দাদি মারা গেছে, ফুফু স্টোক করেছে ইত্যাদি ইত্যাদি।
বলার কারণ আছে, তারা জেনে গেছে সত্য বললে কোম্পানীর রুলস অনুযায়ী আমরা ছুটি দিতে পারি না। আমরা অনেক সময় বুঝে যাই সে মিথ্যা বলছে, তারপরও বিষয়টি না বোঝার ভান করে ছুটি দেই।
আজ যাতে এই সমস্ত অহেতুক ওজর আপত্তি দিয়ে ছুটি নিতে না পারে সেই জন্য অনেক কে সকালে বেলাই ফোন দিয়েছি, যাতে তারাতারি মার্কেটে বেড়িয়ে পরে, সাথে কিছু ডায়ালগও ছাড়ছি , আপনাদের কর্মদক্ষতা আশাব্যঞ্জক নয়।
কিন্তু এখন আমি নিন্ম স্তরের কাতারে আছি আর আমার উপরে একজন বস আছে, তাকে ম্যানেজ করতে হবে। যা হউক সত্য বলার সিদ্ধান্ত নিলাম, সত্যের গুড় নাকি অন্ধকারেও মিঠা লাগে।
………. স্যার শিলার সাথে দেখা করতে হবে। তাকে কিছুটা সময় দিতে হবে।
আমার মুখে একজন মেয়েকে নিয়ে ঘুরতে যাওয়ার কথাটা শুনে স্যারের মুখে কৌতুহল জেগেছে। স্যারের ধারণা আমি মেয়েদের সাথে যে কোন ধরণের রিলেশন থেকে মুক্ত, কারণ এর আগে দীর্ঘ দুই বছরে এ ধরণের সিম্বল তার চোখে পরে নাই। আসলেও ঠিক তাই। কিন্তু শিলা মেয়েটার কে এড়িয়ে চলতে চাইলেও পারি না। সে নিজে নিজেই আমার সাথে সম্পর্ক রাখে। আমিও রাখি, সেটা সৌজন্যবোধ। চাইলেও এড়িয়ে যেতে পারি না। ইদানিং সে ব্যক্তিগত বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা শুরু করে দিয়েছে। যেমন; সকালে অফিসে ঠিক সময় যাতে যেতে পারি সেই জন্য ফোন দিয়ে ঘুম থেকে উঠাবে, শুক্রবারে জুমার নামাজ পড়ানোর জন্য ফোনে আগেই স্মরণ করে দিবে, ইত্যাদি ইত্যাদি।
আসলে আপনি ছুটি চেয়েছেন ব্যক্তিগতভাবে আমার না করতে লজ্জা লাগে। কারণ; আমি জানি আপনি খুব প্রয়োজন না হলে ছুটি নেন না। নিশ্চয় শিলার সাথে সময় দেয়াটা আপনার জন্য আবশ্যিক হয়ে দাড়িয়েছে। কিন্তু কি আর করা, করেন কোম্পানীর চাকরি; তার বিনিময়ে অনেক কিছু ত্যাগ করতে হবে। হেড অফিস থেকে এমডি স্যার ফোন দিয়েছে, গত মাসের রিপোর্টে অডিট বিভাগে গড়মিল ধরা পরছে। যত রাত হউক যেন কারেকশন কপি পাঠিয়ে যাই।
কথা বলা শেষ হলে স্যারের মুখটা কালো হয়ে যায়। আমাকে ছুটি না দিতে পারায় তার ভিতরে হয়ত নাড়া দিয়েছে। তাকে কিছুটা পোড়াইছে। সে হয়ত তার সীমাবদ্ধতার কারণে অনুতপ্ত। আমি কিছুক্ষণ ঠাঁই দারিয়ে থাকলাম। তারপর মুখে আস্তে বললাম, থাক স্যার লাগবেনা। স্যার আমার মুখের দিকে একবার তাকালেন আর মাথাট বাম দিকে নাড়ালেন তারপর বললেন, জানিস সাহু তোর ভাবিও আজকে তারাতাড়ি বাসায় যেতে বলেছে, কিন্তু পারলাম কই?
আমি রুম থেকে বের হয়ে আসলাম। উদ্দেশ্য শিলাকে ফোন দিয়ে না বলে দিব, কিন্তু তার আগেই শিলা আমাকে ফোন দিয়ে বলেছে; এই আসতেছ?
না।
কেন?
অফিসে ঝামেলা আছে, স্যার ছুটি দেয় নাই।
থাক’ তাহলে দরকার নেই, মাথা গরম করে উল্টা পাল্টা কিছু কর না। আমাদের ভালোবাসা দিবসটা আগামী ফ্রাইডে তে পালন করব।
আমি কিছুটা ভাবুক হয়ে যাই। শিলা মেয়েটা এমনই। আর এ জন্যই শিলাকে ভালো লাগে।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই মার্চ, ২০১৭ সকাল ১১:০৭