somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পবিত্র ঈদ-ই-মিলাদুন্নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম): পর্ব-৩: হাদীসের আলোকে

২৭ শে নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পর্ব-১:“ঈদের সংজ্ঞা ও ঈদ কি শুধু দুটিই??
পর্ব-২: আল-কুর'আনের আলোকে ঈদ-ই-মিলাদুন্নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
পর্ব-৩: আল-হাদীসের আলোকে ঈদ-ই-মিলাদুন্নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
-----------------------------------------------------------------------
পবিত্র ঈদ-ই-মিলাদুন্নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর ধারাবাহিক পোষ্ট সমূহে এ পর্বে হাদীসের আলোকে আলোচনা করা হবে।

মিলাদের ব্যবহারিক-অভিধানিক অর্থ জানা প্রয়োজন। অভিধানে মিলাদ শব্দের অর্থ জন্মের সময় কাল এবং ব্যবহারিক অর্থ হুযুর পাক সাল্লাল্লাহু আলায়হে ওয়া সাল্লামের জন্মের খুশিতে তাঁর মুযেজা, বৈশিষ্ট্য, জীবনী প্রভৃতি বায়াণ করা। অগণিত হাদীস শরীফের মাধ্যমে জানা যায়, রাসুলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরাম রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু-গণ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মীলাদ বা জন্ম বৃত্তান্তের আলোচনা করেছেন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে স্বীয় মীলাদ বা জন্ম দিবস পালন করেছেন। নিম্নে কিছু নমুনা উপস্থিত করলাম।
১. عَنْ اَبِى قَتَدَةَ الاَنْصاَرِى رَضِى الله عَنهُ اَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سءل عَنْ صَوْمِ يَوْم الاِ ثْنَيْنِ قَلَ ذَاكَ يَوْمٌ وُلِدْتُ فِيْهِ بُعِثْتُ اَوْاُنْزِلَ عَلَىَّ فِيْهِ-
অর্থাৎ হযরত আবু কাতাদা (রা:) হতে বর্নিত রাসুলে পাক সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলায়হি ওয়াসাল্লামার দরবারে আরজ করা হলো তিনি প্রতি সোমবার রোজা রাখেন কেন? উত্তরে নবীজি ইরশাদ করেন, এই দিনে আমি জন্ম গ্রহন করেছি, এই দিনেই আমি প্রেরিত হয়েছি এবং এই দিনেই আমার উপর পবিত্র কুরআন নাযিল হয়।
[সহীহ মুসলিম শরীফ ২য় খন্ড, ৮১৯ পৃষ্ঠা, বায়হাকী: আহসানুল কুবরা, ৪র্থ খন্ড ২৮৬ পৃঃ, মুসনাদে আহমদ ইবনে হাম্বল ৫ম খন্ড ২৯৭ পৃ:, মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক ৪র্থ খন্ড ২৯৬পৃ:, হিলিয়াতুল আউলিয়া ৯ম খন্ড ৫২ পৃ:]
এ ছাড়াও অন্য হাদিস হতে প্রমাণিত স্বয়ং হুযুর নিজের জন্মের খুশির উদ্দেশ্যে ছাগল যবাহ করেছিলেন।
বিরোধী সম্প্রদায়ের নেতারা বলে থাকে এই হাদীসগুলোকে নাকি আমরা মিলাদুন্নাবী (দঃ) এর পক্ষে দলীল হিসেবে পেশ করি। কিন্তু প্রকৃত সত্য হচ্ছে আমরা নই, বরং আগেরকার যুগের খ্যতিমান আলেমগণ মিলাদের পক্ষে দলীল হিসেবে প্রয়োগ করেছিলেন।
[দেখুনঃ ৯ম শতাব্দীর মুজাদ্দিদ ইমাম সুয়ুতী (রঃ) আল হাবিলুল ফাতোয়া ১ম খন্ড ১৯৬ পৃঃ, মিলাদুন্নাবী (দঃ) এর পক্ষে উনার রচিত স্বীয় কিতাব হুস্নুল মাকাসিদ ফি আমালিল মোলিদ ৬৫ পৃঃ, ইমাম নাব হানী (রঃ) হুজ্জাতুল্লাহে আলাল আলামীন ২৩৭ পৃঃ ইত্যাদি গ্রন্থসমূহ]
তাহলে বোঝা গেল মিলাদ শরীফ পালন করা হুযুরের সুন্নাত।

২. প্রশিদ্ধ হাদিসে বণির্ত হযরত উম্মুল মুমিনিন আয়েশা সিদ্দিকা রাদিয়াল্লাহু আনহা বণর্না করেছেন যে, রসুল পাক সাল্লাল্লাহু আলায়হে ওয়া সাল্লাম এবং আবুবকর সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু আনহু আমার নিকট নিজ নিজ মিলাদ শরীফের বণর্না করেছেন (ইমাম বায়হাকী এই বণর্না কে হাসান বলেছেন)।
[দেখুনঃ আল যামুল কাবীর লিত তাবরাণী ১ম খন্ড ৫৮ পৃঃ, মযমাঊল যাওয়াঈদ ৯ম খন্ড ৬৩ পৃঃ]

৩. হুযুর পাক নিজের মিলাদ বণর্না করে বলেন অবশ্য ই আমি আল্লাহর নিকট খাতিমুল নব্বীইন নিব্বাচিত হয়েছি ওই সময় যে সময় হযরত আদাম মাটি ও পানীতে মিশ্রিত অবস্থায় ছিল। আমি তোমাদের কে আবার প্রাথমিক অবস্থার খবর দিচ্ছি-আমি হচ্ছি হযরত আদাম আলায়হিস সালামের দুয়া ও হযরত ঈসা আলায়হে সাল্লামের খুশির বার্তা এবং আমার মাতার স্বপ্ন যা তিনি আমার জন্মের সময় দেখেছিলেন যে উনার মধ্য হতে একটি নুর নিগর্ত হয়েছে যার দ্বারা শাম দেশের বহু মহল রওশন হয়ে গেছে ।
[মিশকাতুল মাসাবিহ ৫১৩ পৃঃ, তারিখে মাদিনা ও দামাশক – ইবনে আশাকিড় ১ম খণ্ড ১৬৮ পৃঃ, কানযুল উম্মাল ১১খন্ড১৭৩ পৃঃ, মুসনাদে ইমাম আহমদ ৪ খন্ড ১৬১ পৃ, আল মুজমাল ক্বাদির ১৮ খন্ড ২৫৩ পৃঃ, মুসনাদ আফযার হাদিস নং ২৩৬৫, তাফসির দুররে মান্সুর ১ম খন্ড ৩৩৪ পৃঃ, মাওয়ারেদুল জাম্মান ১ খন্ড ৫১২ পৃঃ, সহী ইবনে হাব্বান ৯ম খন্ড ১০৬ পৃঃ, আল মুস্তাদ্রাক লিল হাকিম ৩য় খণ্ড ২৭ পৃঃ , আল বেদায়া অয়ান নেহায়া ২য় খণ্ড ৩২১ পৃঃ, মাযমাউল যাওয়ায়েদ ৮ম খন্ড ৪০৯ পৃ প্রভৃতি]

৪. হুযুর করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর চাচা হযরত আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা তিনি হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট ভারাক্রান্ত হৃদয়ে আসলেন। কারণ তিনি যেন হুযুর করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বংশ বুনিয়াদ সম্পর্কে বিরুপ কিছু মন্তব্য শুনেছেন। [তা হুযুর করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে অবহিত করেন] তখন হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মিম্বর শরীফ এর উপর আরোহণ করেন। (বরকতময় ভাষণ দেওয়ার উদ্দেশ্যে), অতঃপর তিনি সাহাবা কেরামগণের উদ্দেশ্যে বলেন, “আমি কে?” উত্তরে তারা বলেন, “আপনি আল্লাহর রাসুল”। তখন হুযুর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন, “আমি আবদুল্লাহ ইবনে আব্দুল মুত্তালিবের পুত্র মুহাম্মদ (দরুদ)। নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা মানব-দানব সবই সৃষ্টি করেন। এতে আমাকে উত্তম পক্ষের(অর্থাৎ মানবজাতি) মধ্যে সৃষ্টিক করেন। অতঃপর তাদের (মানবজাতি)-কে দু’সম্প্রদায়ে বিভক্ত করেন (অর্থাৎ আরবীয় ও অনারবীয়) এতেও আমাকে উত্তম সম্প্রদায়ে (আরবী) সৃষ্টি করেন। অতঃপর আরব জাতিকে অনেক গোত্রে বিভক্ত করেন। আর আমাকে গোত্রের দিক দিয়ে উত্তম গোত্রে (কোরাইশ) সৃষ্টি করেন। তারপর তাদেরকে (কোরাইশ) বিভিন্ন উপগোত্রে ভাগ করেন। আর আমাকে উপগোত্রের দিক দিয়ে উত্তম উপগোত্রে (বনী হাশেম) সৃষ্টি করেন। সুতরাং আমি তাদের মধ্যে সত্তাগত, বংশগত ও গোত্রগত দিক থেকে সর্বশ্রেষ্ঠ। [তিরমিযী, ২য় খন্ড পৃষ্ঠা নং-২০১; মেশকাত শরীফ, পৃষ্ঠা নং-৫১৩]
[অন্য সূত্রে বর্ণীত এই সম্পর্কিত আরও হাদীসের জন্য দেখুন জামে তীরমিযী ২য় খন্ড ২০১ পৃঃ, মুসনাদে ইমাম আহমদ ১ম খন্ড ৯ পৃঃ, দালায়েলুল নবুওত বায়হাকী ১ম খন্ড ১৬৯ পৃ, কানযুল উম্মাল ২য় খন্ড ১৭৫ পৃঃ]

৫. হযরত যাবির বিন আব্দুল্লাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বর্ণনা করেন- আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে লক্ষ্য করে বললাম- হে আল্লাহর রাসুল(দরুদ)! আমার পিতা-মাতা আপনার উপর কোরবান হোক। আমাকে কি আপনি অবহিত করবেন যে, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কোন বস্তু সর্বপ্রথম সৃষ্টি করেছেন? তদুত্তরে রাসুল করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন- হে জাবির! সমস্ত বস্তুর সৃষ্টির পূর্বে আল্লাহ তোমার নবীর নূরকে তার আপন নূর হতে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ পাকের ইচ্ছায় ঐ নূর কুদরতে যেথায় সেথায় ভ্রমণ করতেছিল। ঐ সময় লওহ-কলম, বেহেশত-দোজখ, ফেরেশতা, আসমান-জমীন, চন্দ্র-সূর্য, জিন-ইনসান কিছুই ছিল না।
[মাওয়াহেবুল লাদুন্নিইয়া, শরহে জুরকানি, ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা নং-৮৯]

উপরের হাদীসসমূহই হল হুজুর পাক (সাঃ) এর জন্ম বৃত্তান্ত সম্পর্কিত হাদীস। আর এই হাদীসের বিষয়বস্তুই মূলত মিলাদে আলোচনা করা হয়। আমরা এসব আলোচনা করলেই বিরোধী সম্প্রদায়ের লোকেরা আমাদের ‘ভন্ড’, ‘বিদ’আতি’ ইত্যাদি খেতাবে ভূষিত করেন। আমাদের খুব জানতে ইচ্ছা হয় স্বয়ং মহানবী (সাঃ) এবং সাহাবীগণ (রাঃ) যখন জন্মবৃত্তান্ত নিয়ে আলোচনা করতেন তখন এই সম্প্রদায়ের নেতারা কি ফতওয়া দিবেন?

অগণিত হাদীস শরীফের মাধ্যমে জানা যায়, রাসুলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরাম রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু-গণ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মীলাদ বা জন্ম বৃত্তান্তের আলোচনা করেছেন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে স্বীয় মীলাদ বা জন্ম দিবস পালন করেছেন। নিম্নে কিছু নমুনা উপস্থিত করলাম

৬. হাদীস শাস্ত্রের প্রখ্যাত ইমাম আবু ঈসা মুহাম্মদ তিরমিযী রহমাতুল্লাহে আলাইহি তার সংকলিত সুনানে তিরমিযী শরীফে “মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম” শিরোনামে একটি অধ্যায় প্রণয়ন করেছেন এবং এতে হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জন্ম তারিখ নিয়ে আলোচনা সম্বলিত হাদীস বর্ণনা করেছেন। হাদীসটি হল---
অর্থাৎ- হযরত মোত্তালিব বিন আব্দিল্লাহ আপন দাদা হযরত কায়েছ বিন মোখরামা হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন- আমি ও নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ‘আমুল ফীল’ অর্থাৎ- বাদশাহ আবরাহার হস্তি বাহিনীর উপর আল্লাহর গজব নাযিল হওয়ার বছর জন্মগ্রহণ করেছি। হযরত ওসমান বিন আফফান রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বনি ইয়ামার ইবেন লাইস-এর ভাই কুবাছ ইবনে আশইয়ামকে বলেন, আপনি বড় না রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম? তখন তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্মান ও মর্যাদার দিক থেকে আমার চেয়ে অনেক বড়। আর আমি জন্ম সুত্রে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে আগে মাত্র। (তিরমিযী শরীফ ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা নং-২০৩)
আলোচ্য হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হল সাহবায়ে কেরাম রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু-গণ নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জন্ম কাহিনী নিয়ে পরস্পরের মধ্যে আলোচনা করতেন।

৭. শায়খ আব্দুল হক মোহাদ্দেস দেহলভী রহমাতুল্লাহে আলাইহি বলেন- সহীহ হাদীসে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন- অর্থাৎ- আল্লাহ পাক সর্বপ্রথম আমার নূর সৃষ্টি করেছেন। (মাদারেজুন নবুওয়াত (উর্দু) ২য় খন্ড, পৃষ্ঠ নং-১)

৮. হযরত আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু হতে বর্ণিত। নিশ্চয়ই রাসুলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন- মহান আল্লাহর পক্ষ হতে আমার জন্য একটি বিশেষ মর্যাদা হলো, আমি খতনাকৃত অবস্থায় জন্মগ্রহণ করেছি। তাই আমার লজ্জাস্থান অন্য কেউ দেখেনি। (মাওয়াহিবে লাদুন্নিয়া, শরহে জুরকানী ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা নং-২৩২)

৯. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। একদা তিনি কিছু লোক নিয়ে স্বীয় গৃহে হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পবিত্র জন্মের ঘটনা বর্ণনা করে আনন্দ উৎসব করছিলেন এবং তার প্রশংসাবলী আলোচনা করছিলেন। এমন সময় নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেখানে তাশরীফ আনেন এবং তা দেখে এরশাদ করেন- “তোমাদের জন্য কেয়ামত দিবসে আমার শাফায়াত বৈধ হয়ে গেল”। (অর্থাৎ সমবেত হয়ে আমার জন্ম বৃত্তান্ত বর্ণনার ফলে তোমাদের জন্য কিয়ামত দিবসে আমার সুপারিশ নিশ্চিত হয়ে গেল)। (আত্তানবীর ফিল মাওলিদিল বাশীরিন্নাযীর) তথ্যসুত্র মীলাদ ও কিয়ামের বিধান, পৃষ্ঠা নং-১০, হাকিকতে মীলাদ, পৃষ্ঠা নং-২৫ ।

১০. হযরত আবু দারদা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। একদা তিনি হুযুর করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে হযরত আমের আনসারী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু-এর ঘরে গিয়েছিলেন। তখন হযরত আমের আনসারী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু তার সন্তানদের ও তার স্বগোত্রীয় লোকদের সাথে নিয়ে হুযুর করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জন্ম বৃত্তান্ত আলোচনা করছিলেন এবং বলছিলেন- “এ দিনটি, এ দিনটি” তখন হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন- (হে আমের আনসারী !) নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা তোমার জন্য রহমতের দরজা সমূহ খুলে দিয়েছেন। আর ফিরিশতাগণ তোমার জন্য মাগফেরাত কামনা করছে। তাছাড়া যারা তোমার মত আমার জন্ম বৃত্তান্ত বর্ণনা করবে (মীলাদ মাহফিল করবে) তারা তোমার মতোই নাজাত লাভ করবে। (আত্তানভীর ফী মাওলিদিল বাশীরিন্নাযীর) তথ্যসূত্র হাকিকতে মীলাদ, পৃষ্ঠা নং-২৫।

আলোচ্য হাদীস দুটি থেকে প্রমাণিত হয় যে, সাহাবায়ে কেরাম রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মীলাদ বা জন্ম বৃত্তান্ত আলোচনা করতেন এবং তা নিজ সন্তানদের ও স্বগোত্রীয়দের শিক্ষা দিতেন।

১১. হযরত হাসান বিন সাবিত (রাঃ) মিম্বরে দাঁড়িয়ে কবিতার মাধ্যমে মিলাদুন্নাবী (দঃ) পাঠ করেছেন। দীর্ঘ কবিতার একাংশ নিচে উদ্ধৃত করা হলঃ
ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনি সর্ব দোষ ত্রুটি হতে মুক্ত হয়েই জন্মগ্রহণ করেছেন। আপনার এই বর্তমান সুরত মনে হয় আপনার ইচ্ছানুযায়ীই সৃষ্টি হয়েছে। আল্লাহ তাঁর প্রিয় নবীর নাম আযানে নিজের নামের সাথে যুক্ত করেছেন। এর প্রমাণ যখন মুয়াজ্জিন পাঞ্জেগানা নামাযের জন্য “আসহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ” বলে আযান দেয়। আল্লাহ তা’আলা আপন নামের অংশ দিয়ে নবীজীর নাম রেখেছেন- তাঁকে অধিক মর্যাদাশীল করার লক্ষ্যে। এর প্রমাণ হচ্ছে আরশের অধিপতির নাম হল ‘মাহমুদ’ এবং ইনার নাম হল ‘মুহাম্মদ’। [দিওয়ানে হাসসান]
হযরত হাসান (রাঃ) এর এই মিলাদ শুনে নবী করীম (সাঃ) বলতেন ‘হে আল্লাহ! তুমি তাকে জিবরাইল মারফত সাহায্য কর’। তাফসীরে কাজাইনুল ইরফানে উল্লেখ আছে, যারা নবী করিম (সাঃ) এর প্রশংসাগীতি করে তাদের পিছনে জিবরাইল (আঃ) এর গায়েবী মদদ থাকে (সূরা মুজাদালাহ); মিলাদ কিয়ামের জন্য এটি একটি শক্ত ও উতকৃষ্ট দলীল।

এমনকি হাদীস শরীফের মাধ্যমে জানা যায় স্বয়ং রাসুলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নির্দিষ্টভাবে স্বীয় মীলাদ বা জন্ম দিবস পালন করে, উম্মতকে মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উৎসব বা ঈদে মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করার ব্যাপারে উতসাহিত করেছেন। হাদীস শরীফটি হলো নিম্নরুপঃ
১২. হযরত কাতাদাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বর্ণনা করেন, রাসুলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে সোমবার রোযা রাখা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তার উত্তরে রাসুলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “ইহা এমন একটি দিন যেদিন আমি জন্মলাভ করেছি এবং যেদিন আমার ওপর কোরআন শরীফ নাযিল করা হয়েছে”। কিতাবের মধ্যে বাইনাছছতর বা দুই লাইনের মধ্যখানে লেখা রয়েছে- “আমি এ দু’নেয়ামতের শোকরিয়া হিসেবে সোমবার রোযা রাখি”। (মেশকাত শরীফ, পৃষ্ঠা নং-১৭৯; মুসলিম শরীফ, ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা নং-৩৬৮)

আলোচ্য হাদীস শরীফের মাধ্যমে স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মীলাদ বা দুনিয়ায় শুভাগমন উপলক্ষ্যে শরীয়তের আলোকে বৈধ পন্থায় শোকরিয়া হিসেবে যে কোন উৎসব বা আনন্দ অনুষ্ঠান (ওয়াজ-মাহফিল, মেহমানদারি, নফল ইবাদত বন্দেগী, দান-সদকাহ ও জশনে জুলুসের আয়োজন করা ইত্যাদি) উদযাপন করা বৈধ এবং সুন্নাতে রাসুল(দরুদ)। আর মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দুনিয়ায় শুভাগমনের শোকরিয়া হিসেবে খুশি হয়ে কোন উৎসব বা অনুষ্ঠান পালন করার নামই হলো পবিত্র ঈদে মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দুনিয়ায় শুভাগমনের শোকরিয়া হিসেবে খুশি বা আনন্দ অনুষ্ঠান।

এখন যারা ঈদে মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিরোধিতা করে তারা কি উপরের হাদীস সমূহ পাঠ করেনি ??? পাঠ করে থাকলে কিভাবে তারা ঈদে মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদযাপন করাকে হারাম, শিরক ও বিদআত ইত্যাদি ফতোয়া দিয়ে মুসলিম সমাজে ফিতনা-ফাসাদ সৃষ্টি করলো ???


পরবর্তী পর্ব সমূহ
পর্ব-৪: খোলাফায়ে রাশেদীন (রাঃ) এর মতে পবিত্র ঈদ-ই-মিলাদুন্নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
পর্ব-৫: প্রখ্যাত আলেমগণের দৃষ্টিতে ঈদ-ই-মিলাদুন্নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
পর্ব-৬: মক্কা-মদীনা শারীফে পবিত্র ঈদ-ই-মিলাদুন্নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
পর্ব-৭: বর্তমানে যারা পবিত্র ঈদ-ই-মিলাদুন্নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর বিরোধীতা করেন তাদের অতীত আলেমদের মন্তব্য

আরও আসছে...........................
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:১৭
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×