উপন্যাস "বধুয়া" পর্ব-১ (ক)
অন্ধকার রাত। আকাশে মেঘের কারণে চঁাদের আলো দেখা যাচ্ছেনা। চারদিকে শুনশান নীরবতা। মাঝে মাঝে দুই একটা ব্যাঙ ডেকে উঠছে। নিশুতি রাতে ব্যাঙের ডাক অন্যরকরম শুনা যায়। গম্ভির সুরেলা অথচ সূক্ষ্ণ একটা আর্তনাদ মিশানো। সেই আর্তনাদের মাঝেই মিশে থাকে প্রণয়ের আহবান।বর্ষাকাল হল ব্যাঙদের প্রজনন ঋতু। সঙ্গিনীকে মুগ্ধ করতেই ব্যাঙ তার বেসুরা কণ্ঠে কিছুক্ষণ পর পর গান ধরে। সঙ্গিনী মুগ্ধ হয়। ব্যাঙদের ঘ্যাঙর- ঘ্যাঙ গান গভির আগ্রহে কান পেতে শুনছে এক কিশোরী। ব্যাঙদের গান শুনতে তার খুব মজা লাগছে। তার কাছে মনে হচ্ছে ব্যাঙরা সবাই দল বঁেধ আল্লাহর কাছে বৃষ্টি পার্থনা করছে। যেন বলছে-
'মেঘ আয়
ঘ্যাঙর- ঘ্যাঙ
মেঘ আয়
ঘ্যাঙর- ঘ্যাঙ'
ব্যাঙের দল বৃষ্টি চাইলেও কিশোরীটি চাচ্ছেনা বৃষ্টি হোক। সে বৃষ্টি পছন্দ করেনা। তারা ভাটি অঞ্চলের মানুষ। একটু বৃষ্টিতেই তাদের চারপাশে হাটু পানি হয়ে যায়। চলাফেরা করা খুব কষ্টের হয় তখন। বর্ষাকালে ভাটি অঞ্চলের মানুষরা হয়ে পড়ে গৃহবন্দী। বিশেষ করে মেয়েরা। তখন তাদের দিন রাত কাটে ঘরে শুয়ে বসে। পুরুষ মানুষরা নৌকা নিয়ে এদিক সেদিক যেতে পারলেও মেয়েরা তা পারেনা। কিশোরী মেয়েটির খুব ইচ্ছা কোন এক গভির রাতে নৌকা নিয়ে একা একা এই বস্তৃত জলরাশি দেখতে যাবে। সঙ্গে কেউ থাকবেনা। আকাশে চঁাদ থাকবে। না থাকলেও চলবে। চঁাদের আলো না থাকলেও প্রকাণ্ড জলাশয়কে অন্ধকার গ্রাস করতে পারেনা। অমাবস্যার অন্ধকারেও জলের বুক থেকে সামান্য কিছু আলো বিচ্ছুরিত হয়। বিশাল জলাভুমির কোথাও কোথাও অল্প সময়ের জন্য স্পষ্ট আলোর ঝিলিক দেখা যায়।
কিশোরী মেয়েটি ভাবে, কোন একদিন নৌকা নিয়ে সত্যিই সে বের হয়ে যাবে। সারা রাত নৌকায় বসে থাকবে। মাঝে মাঝে তাকাবে আকাশের দিকে। করুন সুরে বিলাপ করবে। কেউ তার সে বিলাপ শুনতে পাবেনা। জলাশয়ের ছলাৎ ছলাৎ ঢেউয়ের সাথে তার বিলাপের সুর মিশে যাবে। নোংরা জলের সাথে মিশে যাবে তার চোখের জল। হয়ত একদিন সেই জল ভাসতে ভাসতে কোন এক গঁায়ে গিয়ে থামবে। যেখানে তার মা বাস করে। তার মা সেই জল হাতে নিবে। চোখে মুখে ছিটিয়ে দেবে সেই জল। আচ্ছা, তখন কি তার মা কিছু বুঝতে পারবে? তিনি কি বুঝতে পারবে তার হাতের জলের সাথে মিশে আছে চৌদ্দ বছরের এক বালিকার অশ্রু, ভালবাসা, ঘৃণা আর একটু একটু করে জমানো মান অভিমান। তখন কি জলের মাঝে তিনি তার কিশোরী কন্যার আর্তনাদ শুনতে পাবেনা ?
ব্যাঙের ডাক হঠাৎ করে থেমে গেছে। আবারো চারদিকে শুনশান নীরবতা। কিশোরীটি উড়নার আচলে তার চোখ মুছল। ঘরের জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে বলল-
'মরিয়ম, ব্যপারটা কী কছাইন। বাপজান এহনো আইয়েনা ক্যা।'
মরিয়ম কোন জবাব না দিয়ে পাশ ফিরে শুয়ে পড়ল। মরিয়ম তার ছোট বোনের নাম। যার বয়স আট বছর। আর সেই কিশোরীটির নাম হল সালমা। তার বয়স আগে একবার উল্লেখ করা হয়েছে বলে এখন আর বলছিনা। সেই সালমা নামের মেয়েটিই আমাদের গল্পের প্রধান চরিত্র।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




