সর্বোচ্চ জাকজমকপূর্ণ ভাবে নববর্ষ উদযাপন করে সম্ভবত চায়নিজরা। নববর্ষ নিয়ে সবচেয়ে বাড়া-বাড়িও করে চায়নিজরা। তারপর বাঙালিরা (?)
বাঙালিদের আবেগ এমনিতেও একটু বেশী। তার উপরে যদি ঢোলের বাড়ি পড়ে তাহলেতো কথাই নাই। চায়নিজ বর্ষবরণ উৎসব একদিনের মধ্যেই সিমাবদ্ধ। সেদিকে বাঙালিদের উৎসব চলতে থাকে সমস্ত বৈশাখ মাস জুড়ে। মেয়েরা হলুদ শাড়ি ছেলেরা পাঞ্জাবী পড়ে ঘুরতে বের হওয়া, পান্তা-ইলিশ খাওয়া, বৈশাখি-মেলা, বৈশাখী-কনসার্ট সহ আরও অনেকগুলো নতুন-নতুন আইটেম যোগ হয়েছে নববর্ষের সঙ্গে। আরও হচ্ছে। যেমন, মুখে নকশা আঁকা, মঙ্গল শোভা যাত্রা ইত্যাদি।
এগুলো কেনটাই বাঙালির আদি-সংস্কৃতির অংশ না এটা সত্য।
অনেকে দেখি বাঙালি সংস্কৃতি রক্ষার মহান ব্রত নিয়ে প্রতি বছর বৈশাখ আসার আগে-আগে কান্না-কাটি শুরু করে দেয়। এটা বাঙালি সংস্কৃতিতে নাই। ওটা বিদেশী সংস্কৃতির অনুকরন!
যারা বাঙালি সংস্কৃতি নিয়ে চিন্তাযুক্ত তাঁরা আসলে 'সংস্কৃতি' মানে কী? এটা কি পরিবর্তন-যোগ্য, সংশোধন-যোগ্য? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে পারবেনা।
সংস্কৃতির মূল সংজ্ঞা হল; একটা অঞ্চলে বসবাসকারী মানুষের চলন-বলন-পেশা-ধর্ম-সাহিত্য ইত্যাদির মাধ্যমে ফুটে উঠা অভিব্যক্তি। যার সবগুলোই পরিবর্তনযোগ্য।
বাঙালির চার হাজার বছরের ইতিহাস। চার হাজার বছর আগের সংস্কৃতি কী এখনো টিকে আছে?
মাত্র কয়েক বছর পূর্বেও হিন্দু-মুসলমান সবাই সেলাই ছাড়া ধুতি পড়ত। বার হিসেব করে সমস্ত কাজকর্ম করত। (এইবারে এই কাজ করা যাবেনা।) কেউ যদি লক্ষ টাকার মালিক হত তখন লাখের বাতি জ্বালাত। সেটা ছিল তখনকার সংস্কৃতি। তখনকার সংস্কৃতি এখন অচল।
ধর্ম ভাঙে ধর্ম গড়ে। দেশ ভাগ হয়ে নতুন দেশের জন্ম হয়। এক জাতি অন্য জাতিতে রুপান্তর হয়। জীবিকা, শিল্প-সাহিত্যের ধরন পাল্টায়। সেগুলোর সঙ্গে-সঙ্গে সংস্কৃতিও পাল্টে যায়।
বর্তমান পহেলা বৈশাখের ধারণাটাকে আমি সাংস্কৃতি দূষণ বলব না। বলব সংস্কৃতি-উন্নয়ন।
শত বছর আগে পহেলা বৈশাখ সকল বাঙালির জন্য আনন্দময় ছিলনা। তার কারণ, অর্থনৈতিক দূরাবস্থা। শাষক শ্রেনীর অত্যাচার। ধনি-গরিবের ব্যাবধান। এখন এগুলোর অনেকটাই উন্নতি হয়েছে।
সবকিছু মেনে নিতে পারলেও পান্তা-ইলিশ খাওয়ার ব্যাপারটাকে মানতে পারছিনা। ইলিশের বদলে পান্তা-ভর্তা হতে পারত। বৈশাখ মাস ইলিশের মৌসুম না। অমৌসুমের ইলিশের দাম হয় আকাশ-ছোয়া। যাদের প্রচুর টাকা-পয়সা তাঁরাই ইলিশ বিলাশ করতে পারে। বেশীরভাগ মানুষই ইলিশ কিনতে পারেনা। নতুন বছরে জাতির একটা বিশাল অংশকে বঞ্চিত করে কিছু মানুষ পান্তা-ইলিশ খেয়ে সংস্কৃতি রক্ষার গর্ব করবে তা হতে পারেনা।
নববর্ষের এই আইটেমটা বাদ দিয়ে যদি আগামী বছর থেকে আমরা পান্তা-ভর্তা যোগ করি, তাহলেই আমার মনে হয় সর্বোচ্চ বাঙালিয়ানার গর্বে আমরা গর্বিত হতে পারব। পান্তা ভাতের সাথে ভর্তাটাই মানানসই। ইলিশ না।
(শাহজাহান আহমেদ)