somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইরানকে অস্থিতিশীল করার নতুন চক্রান্ত ব্যর্থ, ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রাজপথে ইরানি জনগণ

০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১১:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দ্রব্যমূল্য বেড়ে যাওয়া ও দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে গত বৃহস্পতিবার থেকে ইরানের কয়েকটি শহরে কিছু মানুষ মিছিল-সমাবেশ করেছেন। কিন্তু হটাত করেই এই ক্ষোভকে ইরানী শাসনবাবস্থা বিরোধী আন্দোলনে রুপ দেওয়ার চেষ্টা করা হয়।


তবে আশার বিষয় হল দ্রুতই ইরানের জনগন ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে তাদের ইসলামি সরকার বাবস্থার প্রতি সমর্থন এবং সাম্প্রতিক সহিংসতার নিন্দা জানিয়ে দেশজুড়ে বিক্ষোভ-মিছিল ও সমাবেশ করেছে,

আর এতে যোগ দিয়েছেন সমাজের সব শ্রেণি-পেশার লাখ লাখ মানুষ।বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেয়া লোকজন আমেরিকা ও ইসরাইলের ধ্বংস কামনা করে নানা স্লোগান দেন।

নাগরিক অধিকারের পক্ষে এই আন্দোলন শুরু করেছিল মূলত ইরানের রক্ষণশীল দল যারা গত নির্বাচনে মধ্যপন্থি হাসান রুহানির কাছে পরাজিত হয়। কিন্তু হটাত করেই এই বিক্ষোভ রক্ষণশীলদের নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পরে এবং ২০০৯ সালে সহিংসতা সৃষ্টিকারী কথিত গ্রীন মুভমেন্ট, প্যারিসভিত্তিক কথিত মুজাহিদিনে খালক বা এমকেও গোষ্ঠীর সন্ত্রাসীরা এই শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের মধ্যে সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে জনগনকে বিভ্রান্ত করতে চেষ্টা করে। তারা মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের ভূমিকা রাখার বিরোধিতা করে এমনকি ফিলিস্তিনের পক্ষে অবস্থানেরও বিরুদ্ধে প্রচারণা চালায়। ইরানের সম্প্রতিক ঘটনাবলী সম্পর্কে জানতে ভিডিওটি দেখবার অনুরোধ রইলো।

মজার বিষয় হল এই কথিত সরকার বিরোধীরা ইরানের সাবেক স্বৈর শাসক শাহ্‌'র পক্ষে শ্লোগান দিয়েছে যাকে ৭৯ সালে ইরানের জনগন বিতাড়িত করেছিল। কথিত গুটিকয়েক আন্দোলনকারীরা গণতন্ত্রের বদলে স্বৈর শাসনে আগ্রহী। আর সেই সময়ের শাহ্‌র সঙ্গীরাই আজ ইরানের কিছু গোষ্ঠীকে সরকারের বিরুদ্ধে উস্কে দিতে সব ধরনের চেষ্টা করে যাচ্ছে।


সহিংসতার ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের প্রতি সমর্থন জানিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত কয়েকদিনে বেশ কয়েকটি টুইটার পোস্ট দিয়েছে। এমনকি খুব শিগগিরই ইরান পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ এবং মানবাধিকার বিষয়ক জাতিসংঘ কমিশনে জরুরী বৈঠক অনুষ্ঠানের জন্য জাতিসংঘে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিকি হ্যালি আহ্বান জানায়।

ইরানে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের প্রতি সমর্থন জানিয়ে ভিডিও বার্তা দিয়েছে ইহুদিবাদী ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের উদ্দেশে নেতানিয়াহু বলেন, "আমি আপনাদের সাফল্য কামনা করছি। আপনাদের প্রতি আমার সমর্থন রয়েছে।"

ইরানের এই বিক্ষোভের পক্ষে এক প্রকার সাইবার যুদ্ধ চলছে যার ইন্ধন যোগাচ্ছে সৌদি আরব, অ্যামেরিকা এবং ইংল্যান্ড। ইরান বিরোধী ভুয়া নিউজ নিয়ে আল-জাজিরার রিপোর্ট দেখুন।
গত ২৪ ঘণ্টায় ইরানের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের প্রতি সমর্থন জানিয়ে ৭২ হাজার টুইট হয়েছে কিন্তু এর ৭৪% ই ইরানের বাহির থেকে যার মধ্যে সৌদি আরব থেকে সব থেকে বেশি টুইট করা হয়েছে ।

সৌদি খবরের শিরনামে ইরান বিরোধী প্রচারণা!


সৌদি মিডিয়া বাহরাইনের বিদ্রোহের ছবি ব্যাবহার করে ইরানের সরকার বিরোধী বিক্ষোভ নামে চালিয়ে দিয়েছে।

মার্কিন মিডিয়া তন্নতন্ন করে বিক্ষোভের ছবি খুঁজছে। এমনকি সরকারের সমর্থনে আয়োজিত মিছিলের ছবিকে সরকার বিরোধী আন্দোলনের নামে ব্যাবহার করছে কথিত মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।


এরই মধ্যে সহিংসতার সঙ্গে জড়িত কয়েকজন এজেন্টকে আটক করেছে ইরানের আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। যারা সরকারি সম্পত্তি ধ্বংস এবং বিক্ষোভের মধ্যে গুলি চালিয়ে হত্যার ঘটনায় জড়িত রয়েছে। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মাদ জাওয়াদ জারিফ বলেছেন, দেশের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা নির্ভর করে এর জনগণের ওপর।


তিনি আরো বলেছেন, অনুপ্রবেশকারীদেরকে ইরানি জনগণের অধিকার লঙ্ঘনের সুযোগ দেয়া হবে না। ইরানের বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভের নামে দাঙ্গাকারীদের প্রতি পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষ সমর্থনের জন্য আমেরিকা, ইহুদিবাদী ইসরাইল এবং সৌদি আরবের নিন্দা করেছে ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী বা আইআরজিসি। তারা জানায় দাঙ্গাকারীদের প্রতি ওই দেশগুলোর সমর্থনের কারণে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারী ও বিদেশী মদদপুষ্ট দাঙ্গাকারীদেরকে পার্থক্য করা সম্ভব হয়েছে আইআরজিসি'র প্রধান আইআরআইবি নিউজ এজেন্সিকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে আরও বলেছেন, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের নানা কর্মসূচির মধ্যে একটি ছিল মানুষ হত্যা করে সেটার দায় অন্যের ওপর চাপিয়ে দেয়া। কিন্তু নিরাপত্তা বাহিনীর প্রস্তুতি ও জনগণের সচেতনতার কারণে তারা আরও একবার ব্যর্থ হয়েছে। আইআরজিসি'র প্রধান বলেন, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের মধ্যে যারা মূল ভূমিকায় ছিল বিপ্লববিরোধী গোষ্ঠীগুলো তাদেরকে প্রশিক্ষণ দিয়েছিল। এখন তাদের বেশিরভাগকেই চিহ্নিত ও আটক করা হয়েছে।


ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশী হস্তক্ষেপের ঘটনা প্রত্যাখ্যান করেছে রাশিয়া, তুরস্ক ও সিরিয়া। দেশ তিনটি আশা করছে, ইরানে আর কোনো সহিংসতার ঘটনা ঘটবে না। রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, "এটা হচ্ছে সম্পূর্ণভাবে ইরানের অভ্যন্তরীণ বিষয়। বাইরের হস্তক্ষেপের মাধ্যমে পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করে তোলার ঘটনা গ্রহণযোগ্য নয়।
ইরানের প্রতিবেশী তুরস্ক বলেছে, ইরানের ভেতরে যেসব সহিংসতার খবর পাওয়া যাচ্ছে তা উদ্বেগজনক। সব রকমের সহিংসতা পরিহার করার আহ্বান জানিয়েছে তুর্কি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। পাশাপাশি বিদেশী হস্তক্ষেপ বন্ধেরও আশা করেছে দেশটি।
অন্যদিকে, ইরানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের জন্য আমেরিকা ও ইহুদিবাদী ইসরাইলের তীব্র নিন্দা করেছে সিরিয়া। দেশটি ইরানের জনগণের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেছে। সিরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আশা করেছে- ইরানের নেতৃত্ব, সরকার ও জনগণ সব ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে উন্নয়নের পথে এগিয়ে যেতে সক্ষম হবে।
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করতে আমেরিকার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে চীন। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গ্যাংগ শোয়াংগ বলেছেন, ইরানের কোনো কোনো শহরে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে তা দেশটির অভ্যন্তরীণ বিষয়। অন্য কোনো দেশ এ বিষয়ে হস্তক্ষেপের অধিকার রাখে না। চীনা মুখপাত্র আরও বলেন, সিরিয়া ও ইরাক তথা মধ্যপ্রাচ্যে ব্যর্থ হয়েছে আমেরিকা। দেশটি মধ্যপ্রাচ্যে একঘরে হয়ে পড়েছে। এ কারণে আমেরিকা এখন প্রতিশোধ নিতে চাচ্ছে। ইরানের উন্নয়ন অব্যাহত থাকবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।


সর্বশেষ খবর ইরান পরিস্থিতি নিয়ে জরুরী বৈঠকে বসার ব্যাপারে এ্ই মুহুর্তে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ কোনো চিন্তা করছে না বলে স্পষ্ট জানিয়েছেন সংস্থাটির প্রেসিডেন্ট কায়রাত উমারভ। ইরান বিষয়ে আলোচনা করতে নিরাপত্তা পরিষদের জরুরী বৈঠকের জন্য আমেরিকা যে আহ্বান জানিয়েছিল তা কার্যত নাকচ করে দিয়েছে জাতিসংঘ। এর মাধ্যমে ইরানের বিরুদ্ধে বিদেশী হস্তক্ষেপের মার্কিন ষড়যন্ত্র ব্যার্থ হয়েছে। জাতিসংঘে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিকি হ্যালি বলেছিল "ইরানি জনগণ মুক্তির জন্য আন্দোলন করছে। জাতিসংঘকে অবশ্যই এ ব্যাপারে কথা বলতে হবে।" ইরান ইস্যুতে কোনো জরুরী বৈঠকে না বসার ব্যাপারে নিরাপত্তা পরিষদের পক্ষ থেকে নেয়া সিদ্ধান্তটি আমেরিকার জন্য এক ধরনের চপেটাঘাত।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ২:০৯
৬টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×