অবশেষে বন্ধু বান্ধবীদের নিয়ে দেখে এলাম বহুল আলোচিত এবং রাতের রানী "সোহানা" খ্যাত সিনেমা "দেহরক্ষী" নিশ্চয় সবাই মুন্নি সাহার মত জানতে চাচ্ছেন "দেখার পর আপনার অনুভূতি কি? সোহানার জামা কাপড় ফ্রেশ ছিল তো? " নিঃসন্দেহে বলছি "ছবি আমার অনেক ভাল লেগেছে "
কাহিনী সংক্ষেপঃ আসলাম (মিলন) শহরের অন্ধকার জগতের অন্যতম শীর্ষ ব্যক্তি, তার প্রতিপক্ষের আরেক শীর্ষ ডন হলেন সিজার (ব্যাটার নাম ভুলে গেছি, অনেক বাংলা ছবিতেই ভিলেন হিসেবে থাকে) । আসলামকে মারার জন্য সিজার তার ভাইকে বিদেশ থেকে নিয়ে আসে, কিন্তু বিদেশ থেকে দেশের মাটিতে আসার পরেই আসলাম তাকে মেরে ফেলে আর তার লাশ গুম করে ফেলে! সিজারের সন্দেহ আসলামের দিকে থাকার ফলেও সে কিছুই করতে পারে না, কারণ তার কাছে কোন প্রমাণ নেই, তবে সে বলে " আমার ভাইকে যদি ফেরত না পাই, তবে তোর জানকেও (ববি) তুই পাবি না!" বেশ উত্তেজনাকর মুহূর্ত
এবার আসা যাক সেই "জানের" কথায় সোহানা (ববি) ঢাকার বিভিন্ন ক্লাবে নাচ, গান করেন। জি না, তিনি খুব সংস্কৃতিমনা বলে নাচ , গান করেন না, তার বাবা (কাজি হায়াত) অসুস্থ, হার্টে তিনটা ব্লক, বাবার অপারেশনের টাকা জোগাড়ের জন্য তিনি এই কাজ করেন এবং বেশ ভালভাবেই করেন আসলাম সোহানাকে তার জানের চেয়ে বেশি ভালবাসলেও সোহানা তাকে একদম ভালোবাসে না। আসলাম তাই সোহানার বাবাকে তুলে নিয়ে যায় আর সোহানাকে বলে যে সে আসলামকে ভাল না বাসলে তার বাবার ক্ষতি হবে- এই বলে সোহানাকেও সে তার আরেক বাড়িতে নিয়ে যায়। বাবার জন্য বাধ্য হয়ে সোহানা প্রেমের অভিনয় করতে থাকে আসলামের সাথে ( হায়রে প্রেম রে!)
ব্যবসার জরুরি কাজে আসলামকে ৭ দিনের জন্য বিদেশে যেতে হবে, সোহানাকে নিয়ে যাওয়া সম্ভব না কারণ এত তাড়াতাড়ি আমেরিকার ভিসা পাওয়া সম্ভব না, আবার না গেলেও হবে না, আবার সোহানাকে একা রেখে যাওয়া মানে সিজারের হাতে সোহানার ক্ষতি হওয়া। তাই আসলা্ম তার ছোটবেলার বন্ধু তীব্র(কাজি মারুফ) কে সোহানার দেহরক্ষী হিসেবে নিয়োগ করে সোহানা বুঝতে পারে, আসলামের মত জালিমের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য তীব্র এর মত হাতিয়ার তার দরকার, তাই সে "ছলে, বলে, কৌশলে " , নিজের রুপের ছটা দিয়ে তীব্রকে তার নিজের দিকে আকর্ষণের চেষ্টা করে এভাবেই কাহিনী এগিয়ে যায়
ছবির ভাল দিকঃ
প্রথমেই আসি অভিনয়ের কথায়, যার অভিনয়ের জন্য পুরো ছবিটা এক নিঃশ্বাসে দেখা যায় তিনি হলেন আনিসুর রহমান মিলন যাকে বলে, দুর্দান্ত! একদম ফাটিয়ে দিয়েছেন! তার হাসি, তার চোখের দৃষ্টি হুমায়ূন ফরিদি এর কথা মনে করায় শেষের দিকে মারুফ যখন তাকে মারতে থাকে আর তারপরেও মিলন হাসতে থাকে সেই দৃশ্যটা "ডার্ক নাইট" ছবিতে ব্যাটম্যান যখন জোকারকে জেলে মারতে থাকেয়ার জোকার হাসতে থাকে- সেই দৃশ্যটা মনে করায়
ববি অভিনয়ের চেয়ে দেহ প্রদর্শনে বেশি মনোযোগী ছিলেন এবং তিনি বেশ ভালভাবেই দেহ প্রদর্শন করেছেন আর পাবলিক তা হা করে গিলেছে আমি নিজে রাতের রানী সোহানা গান দেখে এত বেশি জোরে চিৎকার দিয়েছিলাম যে আমার সামনের আসনে বসা দর্শক আমার উপর কিছুটা ক্ষেপে গিয়েছিলেন তবে ববি অভিনয় খুব একটা খারাপ করেন না, আরেকটু ঘষামাজা করলেই ঠিক হয়ে যাবে, মেয়ের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল মাশাল্লাহ
কাজি মারুফের অভিনয় ভাল হয়নি তেমন, তবে তার এই অভিনয় না করাটাই যেন তার জন্য "শাপে বর" হয়েছে! কথাবার্তায় তেমন এক্সপ্রেশন না থাকায় তার চেহারায় রুক্ষ একটা ভাব এসেছে যা "বডিগার্ড" এর জন্য মানানসই তবে সিনেমার শেষের দিকে তার অভিনয় ভাল ছিল
ছবির প্রাণ হল ছবির "গান" দারুণ শ্রুতিমধুর , অদিতের চমৎকার কম্পোজিশন "রাতের রানী সোহানা" , "দিবানিশি তোরে ভাবি" সহ বাকি সব গানই চমৎকার
ঝকঝকে ক্যামেরা এর কাজ, নায়ক নায়িকার অসাধারণ কস্টিউম, গানের অসাধারণ চিত্রায়ন, একশন দৃশ্যের নতুনত্ব ও দারুণ চিত্রায়ন চোখে অনেক বেশি আরাম দেয় নায়ক, নায়িকা সবাইকে অনেক বেশি গ্লামারাস লেগেছে যেটা খুবই দরকার মারুফের সাথে ববির বৃষ্টির পানিতে দাঁড়িয়ে থাকার দৃশ্যটা ভাল লেগেছে
ছবির দুর্বল দিকঃ ববিকে তার পোশাকে যথেষ্ট মানিয়েছে এটা স্বীকার করতেই হবে, মুন্নি শিলার চেয়ে তাকে কোন অংশে কম সুন্দরী আর কম আবেদনময়ি মনে হয়নি তবে তাকে একটু মোটা লেগেছে, আরেকটু শুকনা হলে (যেটা তিনি তার আগের ছবি "খোঁজ দা সার্চ" এ ছিলেন) তাকে একদম ক্যাটরিনা এর মতই লাগত একটা দৃশ্যে তিনি শর্ট স্কারট পড়েন যা তার একটু মোটা হওয়ার কারণেই দৃষ্টিকটু লাগে ।
দুইটা গুলি খাওয়ার পর হাসপাতালে মারুফ যেভাবে গোলাগুলি করলেন তাতে মনে হয় গুলি খাইলে শক্তি বাড়ে এসব জিনিস যে কবে বাংলা সিনেমা থেকে যে যাবে!
ছবিতে সমকামিতা নিয়ে জোকস আছে, সেটা সমস্যা কি সমস্যা না তা আমি জানি না, তবে এই ছবি বেশিরভাগ দেখতে গেছেন গার্মেন্টস এর কর্মীরা থেকে শুরু করে আমজনতা, তার সমকামিতার জোকস বুঝবেন কিনা এবং না বুঝলে এ ধরনের দৃশ্য রাখার মানে কি তা পরিচালকই ভাল জানেন যারা বুঝবেন তারা ছবি না দেখলে এই ধরনের দৃশ্য রাখার কোন মানে দেখি না
"মাইয়া মানুষ দেখাইলে পুরুষ কি না তাকাইয়া পারে?" টাইপ সংলাপ এ হলের সবাই শিস বাজিয়েছে, কিন্তু এ ধরনের সংলাপ যারা ছবি দেখতে গিয়েছেন তাঁদের চোখে মেয়েদেরকে আরও নিচে নামিয়ে দিচ্ছে কিনা বা মেয়েদের শুধুমাত্র "সেক্স সিম্বল" হিসেবে ইমেজ তৈরি করছে কিনা তা প্রশ্নের দাবি রাখে
পুরো ছবিতে ববি শুধু একবার সালওয়ার কামিজ পড়েছেন- ভাল্লাগে নাই! কি দরকার ছিল? অইসব ড্রেসেই বেশি ভাল্লাগে
সব মিলিয়ে কেমন ছবি? অবশ্যই অনেক ভাল ছবি, পুরা পয়সা উসুল আর ১০০% বিনোদনের ছবি, পরিচালক কাহিনীতে টানটান উত্তেজনা ধরে রাখতে সমর্থ হয়েছেন ছবিতে একটা কাহিনী ছিল- এটা ভাল্লেগেছে, শুধু শুধু নাচ, গান আর মারামারির ছবি এটা না চোরাবালি সো কলড "বাণিজ্যিক ছবির" একটা ভিত স্থাপন করে দিয়েছিল, সেই ভিতে "দেহরক্ষী" আরেকটা নতুন মাত্রা যোগ করেছে এ ধরনের ছবি হতে থাকলে বাংলা ছবির সুদিন ফিরে আসতে আর বেশি সময় লাগবে না
কিছু কথাঃ কিছু "সুশীল" কে দেখলাম বলতে , এই ধরনের ছবি আমাদের সব নষ্ট করে দিচ্ছে, ববি একটা বেহাইয়া আমি বলি "শালারা! তোরা বড় বেহাইয়া! শিলা, মুন্নির নাচ দেখবা, সানি লিওনের ভিডিও দেখবা আর নিজের দেশে কিছু করতে গেলেই তোমার জাত, সংস্কৃতি সব নষ্ট হইয়া যায়? ভাল জিনিসকে ভাল বলতে এত কষ্ট লাগে ক্যান?" আপনারা জানেন কি ছবি ইতিমধ্যেই চরম ব্যবসাসফল এর খাতায় নাম লিখিয়েছে? আপনারা কি এটা জানেন এটি প্রথম বাংলা ছবি যার ট্রেইলার ইউটিউব এ প্রায় দুই লাখের কাছাকাছি বার দেখা হয়েছে? ছবিতে কাহিনী আছে, ছবি ব্যবসাসফল, মানুষ খুশি, পাবলিক চিৎকার করতেসে, প্রযোজক খুশি- আর কি চাই আপনাদের? এতদিন পর আমাদের মানুষ হলে ছবি দেখতে যাচ্ছে, আমাদের ছবির মান সব দিক থেকে আস্তে আস্তে উন্নতি হচ্ছে, এখন ছবিকে বাঁশ না মারলেও চলবে, আরেকটু উন্নতি হোক, তারপর ইচ্ছা মত বাঁশ মাইরেন
দেহরক্ষী ভাল ছবি, প্লিজ হলে চলে যান দেখতে, আমাদের শিল্প যেমনই হোক, আমরা যদি ভাল না বাশি, না দেখেই যদি শুধু " বাংলা ছবি মানুষ দেখে?" বলে চিৎকার করি, তাহলে চলচ্চিত্র শিল্পের উন্নতি কখনও সম্ভব নয় তাই যত তাড়াতাড়ি পারেন, হলের দিকে দৌড় দেন, একা না, বন্ধু বান্ধব সহ
ফাইনাল কথাঃ "ববি" সম্পর্কে আপনাদের ভাবি হয়, খবরদার ওর দিকে কেও কুনজর দিবেন না,সবাই আমাদের দুজনের জন্য দোয়া করবেন
(সামুতে কি হইসে বুঝতেসি না, সিনেমার পোস্টার আপলোড করতে পারছি না, এরর দেখাচ্ছে- এ কারণে দুঃখিত )