somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শুভ জন্মদিন শাহরুখ খান :)

০২ রা নভেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

"আমার ক্যারিয়ারের একদম শুরুর দিকের একটি ঘটনা। তখন মোটামুটি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি- কাজ করলে সিনেমাতেই করব। শুধু সিদ্ধান্ত নিয়েই সময় পার করতে থাকলাম কারণ ইন্ডাস্ট্রিতে আমার কেও পরিচিত ছিল না। একদিন এক বন্ধু বলল- কোন এক সিনেমার জন্য নাকি অডিশন নিচ্ছে। কি সিনেমা, কার সিনেমা, কি ধরনের রোল- কিছু জিজ্ঞেস না করেই চলে গেলাম লোকেশনে।
সকাল দিকে গিয়েছিলাম, দুপুর গড়িয়ে বিকাল হয়ে যাচ্ছিল অথচ ডাক পাচ্ছিলাম না ভিতরে অডিশন দেয়ার জন্য। পকেটে যা টাকা ছিল সব অডিশনের প্লেসে আসতেই খরচ হয়ে গেছিল, সেটাও বন্ধুর কাছ থেকে ধার করা ছিল। খাওার টাকা নাই, ফেরত যাওয়ার ভাড়া নাই- এগুলো নিয়ে যেখানে আমার বেশি করে টেনশন করার কথা, সেখানে আমার হালকা তন্দ্রামত চলে আসলো। আরও কিছু টেনশনের ব্যাপার ছিল, যেই বন্ধুর বাসায় বেশ কয়েকদিনের জন্য ছিলাম, তার মা বাবা মানা করে দিয়েছিল আমি যেন নতুন কোন জায়গা দেখি, তাদের বাসায় যেন আর নাই যাই। যাই হোক, ঘুম ভাঙল একজনের ধাক্কায়- চোখ খুলে দেখলাম মাথায় হ্যাট পড়া একজন বয়স্ক লোক আমার দিকে বিরক্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। তাড়াতাড়ি উঠে দাঁড়ালাম।

- এই ছেলে! কে তুমি? এখানে ঘুমাচ্ছ কেন?
- আমি শুনলাম এখানে সিনেমার লোক নেয়া হবে, অডিশনের জন্য এসেছিলাম।
- আমি এই সিনেমার প্রোডিউসার। আমরা সিনেমার জন্য নতুন "নায়ক" খুঁজছিলাম।
- তাহলে স্যার আমি নায়কের জন্যই না হয় অডিশন দেই?
-(অবাক চোখে আমাকে কয়েক মিনিটের মত দেখে বললেন) নায়ক? তুমি? মাথা ঠিক আছে তো ছেলে?
- কেন স্যার?
- আয়নায় চেহারা দেখস জীবনে? এত মোটা ঠোঁট নিয়ে তুমি হবা নায়ক? আর মাথায় কি এগুলা? ভাল্লুকের মত এত লম্বা লম্বা চুল? চিরুনি নামের কোন জিনিসের নাম কি শুনেছ এই জীবনে?
(আমার মা বলতেন- আমার চেহারা নাকি দিলিপ কুমারের মত। কিন্তু সেই অডিশনের দিন আমি প্রথম বুঝতে পারলাম- কেবল প্রতিটা মায়ের কাছেই তার নিজের সন্তানকে দিলিপ কুমারের মত মনে হয়, বাকিদের কাছে না। আমি চেষ্টা করলাম আমার চেহারা থেকে কথার টপিক অন্যদিকে নিতে)
- কিন্তু স্যার, আমার কাজের অভিজ্ঞতা আছে। আমি দিল্লী থিয়েটার একশন গ্রুপের সদস্য ছিলাম, সেখানে অভিনয় শিখেছি।
- তো? থিয়েটার করলে কি নায়ক হওয়া যায়?
- না মানে, এছাড়া আমি টিভি সিরিয়ালেও কাজ করেছি স্যার, fauji, circus...
- আচ্ছা! এই কারণেই তোমাকে চেনা চেনা লাগছিল কিছুটা। কিন্তু টিভি সিরিয়াল আর সিনেমা তো এক জিনিস না বাছা!
- কিন্তু আমার কাজ তো একই স্যার- অভিনয় করা! সেটা টিভি হোক বা সিনেমা।
- ওরে সর্বনাশ! এই ছেলে দেখি আমার মুখে মুখে তর্কও করে! এখনই এত "অ্যারোগেন্স" হলে সিনেমায় নামলে তো খবরই আছে! বাবা মা কি করে তোমার?
- বাবা মারা গেছেন স্যার। মা অসুস্থ (তখনও মারা যাননি), দিল্লীর হাসপাতালে ভর্তি।
- (তিনি সম্ভবত কিছুটা নরম হলেন) ওহ! মা অসুস্থ আর তুমি এখানে অডিশন দিচ্ছ?
- আমি কয়েকদিন পর পর গিয়ে দেখে আসি দিল্লীতে। আমার একটা বোন আছে স্যার, ও মায়ের সাথে আছে, যদিও ও নিজেও কিছুটা অসুস্থ বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে।
- নাচতে পার?
-জি স্যার?!
- জিজ্ঞেস করেছি নাচতে পার কিনা? নায়কের নাচ জানতে হয়!
- জি স্যার, পারি, থিয়েটার করেছি, ঐখানে নাচের বেশকিছু মুদ্রা শিখিয়েছে।
- উফ! তুমি থিয়েটার করেছ এটা আমি শুনেছি একবার, বারবার বলতে হবে না! ঘোড়া চালাতে পার? নায়কের এটাও পারতে হয়।
- (আস্তে করে বললাম) জি না স্যার, আমার ঘোড়ায় চড়ার ভয় মানে ফোবিয়া আছে।
-(চিন্তিত হয়ে গেলেন এবার তিনি কিছুটা) ওহ! আচ্ছা, তুমি কি বিয়ে করেছ? আশা করি মাইন্ড করবে না, ব্যক্তিগত প্রশ্ন করে ফেললাম!
- না স্যার, করিনি। তবে করে ফেলব, ভালোবাসার মানুষ আছে একজন, তাকেই বিয়ে করব কিছুদিনের মাঝে।
- এই ভুলটা কর না, সিনেমায় চান্স পেলে আই মিন বেশ কিছু সিনেমা করার পরে ধীরে সুস্থে বিয়ে কইর। নায়ক বিবাহিত শুনলে তাদের মেয়ে ফ্যানের সংখ্যা কম হয়, এটা আমাদের সিনেমার ব্যবসার জন্য ভাল না।
- অনেক কষ্টে ভালোবাসার মানুষকে আর তার পরিবারকে রাজি করিয়েছি স্যার। বিয়ে তো আমি করবই আর আশা করি আমার বিয়ে আমার ক্যারিয়ারে কোন প্রভাব ফেলবে না যদি আমার কাজ ঠিক থাকে।
-(কিছুটা বিরক্ত ও হতাশ হয়ে) এক কাজ কর, এক সপ্তাহ পরে আমার সাথে দেখা কর। এই আমার ঠিকানা। দেখি কি করা যায়।

ঐ মানুষটার সাথেই ওটাই আমার শেষ কথা। এক সপ্তাহ পরে ঐ মানুষটার কাছে আর যেতে হয়নি। অন্য জায়গায় কাজ পেয়ে গিয়েছিলাম।
অনেকদিন পরের কথা, ততদিনে আমার বেশ নামডাক হয়েছে। বাজিগর আর ডর সহ আরও বেশ কিছু সিনেমা করেছি, নেগেটিভ রোল বেশি করার কারণে মানুষ স্বাভাবিকভাবেই আমার সাথে একটু ভয়ে ভয়ে কথা বলে। একদিন হঠাৎ সেই প্রোডিউসার আমার বাসায় আসলেন,আমি তাকে দেখেই চিনে ফেললাম। তার আসার উদ্দেশ্য আমার সাথে সিনেমা করা।আমাকে দেখেই যেন তিনি আমার দীর্ঘদিনের পরিচিত এমন সুরে আমাকে জিজ্ঞেস করলেন- হেই শাহরুখ! What's up man?

আমি,আপনি সহ আমরা সবাই জানি what's up মানে হল "কেমন আছ বা কি অবস্থা?" কিন্তু আমি what's up এর আক্ষরিক অনুবাদ(উপরে কি?) করে হাসিমুখে তাকে উত্তরে বললাম
- উপরে ভাল্লুকের মত চুল, যারা কখনও চিরুনি আর আয়না দেখে নাই।
তিনি থতমত খেয়ে গেলেন এবং সম্ভবত এক মুহূর্তেই আমাকে চিনতে পারলেন। আমি আর বেশি কথা না বাড়িয়ে তার সাথে আলাপে মশগুল হলাম। হ্যাঁ, আমি তার সাথে সিনেমা করেছিলাম। সিনেমাটা ব্যবসায়িকভাবে সফল হয়েছিল এবং তার চেয়েও বড় ব্যাপার হল- এই সিনেমাতে আমার অভিনয় আমার সমালোচকদেরও পছন্দ হয়েছিল, তারা আমার অভিনয়কে ওভার অ্যাক্টিং বলেন নাই :P

আমি সেই প্রোডিউসারের নাম বলব না পাঠকদের তবে যেই জিনিসটা বলব সেটা হল, আমার প্রিয় বলিউড নামক ইন্ডাস্ট্রি আমাকে শুরুতেই বুঝিয়ে দিয়েছিল- এই ইন্ডাস্ট্রি যতটা না "ভাল অভিনেতা" কে চায়, তার চেয়ে একটু বেশি চায় একজন "ভাল ড্যান্সার" অথবা একজন "ভাল stuntman" কে। এই "dancer প্লাস stuntman" যদি একই ব্যক্তি হয় তাহলে খুব ভাল হয় আর সেই মানুষটা যদি অবিবাহিত হয় তাহলে আরও বেশি ভাল হয় ;) "

শুভ জন্মদিন। হাফ সেঞ্চুরির (৫০ তম জন্মদিনের) শুভেচ্ছা। সৃষ্টিকর্তা আপনাকে সেঞ্চুরি পালনের তৌফিক দান করুন আর "ফারাহ খান" নামক "শনি গ্রহের" হাত থেকে বাঁচিয়ে রাখুন, আমিন।

সর্বশেষ এডিট : ০২ রা নভেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৩৮
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ মিসড কল

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×