নিম্নবিত্তের অসুখ বিসুখের ব্যাপারে ভাবনা নিয়া গল্প আমরা খুব একটা পাই না। এর কারণ অসুখের চিকিৎসা বাবদ যে খরচ হয়, নিম্নবিত্তের সেইটা ভরণ করার অক্ষমতা আর অসুখ নিয়া নিম্নবিত্তের অনাগ্রহতা। ফলে অসুখ হইবার আগে থেকেই তারা কষ্টকে মেনে নেবার একপ্রকার সংকল্প করে রাখে।
প্রেমেন্দ্র মিত্রের "পুন্নাম" গল্পে নিম্নবিত্ত ললিত আর তার বধূ ছবি তাদের একমাত্র সন্তান খোকার অসুখকে এড়িয়ে যাবার কোন সুযোগ পায় না। এক বিরক্তিকর অসুখে পায় চার বছরের খোকাকে। সারাদিন সে শুধু কাঁদতে থাকে আর অহেতুক সব বায়না ধরে। এমনকি সারাদিনের খাটুনি শেষে রাতের বেলা একটু শুতে গেলেও খোকার কান্না থামে না। সেই সারাক্ষণ কান্না, অহেতুক বায়না আর গোয়ার্তমি এক সময় প্রচণ্ড বিরক্তিকর হয়ে উঠে। ললিত আর ছবি সন্তানকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যায়। ডাক্তার বলে দেয় পরিবেশ চ্যাঞ্জ করতে, তাহলে খোকা সুস্থ হবে। কিন্তু পরিবেশ চ্যাঞ্জ করার জন্য যে অর্থের প্রয়োজন তা ললিতের কাছে নেই।
গল্পের পরের অংশে দেখা যায় খোকা ধীরেধীরে সুস্থ হয়ে উঠে। ললিত দূর থেকে খোকার দিকে তাকিয়ে থাকে আর আনমনা হয়ে কী যেন ভাবে। কিন্তু তবুও ললিত শান্তি পায় না। নিজের ভেতরে এক প্রচণ্ড অপরাধ বোধ তাকে কুড়ে কুড়ে খেতে থাকে। ললিত আত্মহীনতায় ভুগে। এরকম আত্মহীনতায় ভোগা আরেকটি চরিত্রে সন্ধান পেয়েছিলাম মতি নন্দীর "সাদা খাম" গল্পে। সাদা খামকে ঘিরে প্রিয়ব্রত যেভাবে প্রচণ্ড মানসিক অশান্তিতে ভুগতো পুন্নামের ললিতও সেরকম অশান্তিতে ভোগে। এমনি একদিন খোকার দিকে তাকিয়ে সে ছবিকে বলে, "টুনু মরে গেল আর আমাদের ছেলে বেঁচে উঠলো।"