somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমাদের দিনকাল

২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ভোর ৫:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গত শুক্রবার, সহকর্মীর বিয়ের দাওয়াতে কনে পক্ষের জনৈক ব্যাক্তির আজব প্রশ্নে, জীবনে প্রথমবার ডায়াবেটিস রোগীর মত সর্বশরীরে ভৌতিক ধাক্কা অনুভব করলুম। সহপাঠী বন্ধু মনিরের সর্বনন্দিত বানী “কেটেকুটে যাচ্ছে রক্ত বেরুচ্ছে না” জং ধরা বুলেটের মত ঠাস করে মগজে ঢুকে অতিতের গাঁথা স্মৃতিতে থেমে রইল। কেমন আছিস প্রশ্নের জবাবে মনির যেমন খুশি তেমন সাজো মুখাবয়বে রসগোল্লার ঝোলের মত নেতিয়ে এই উত্তরটা দিত।
কাক শহর ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার দিনগুলো থেকে এই প্রশ্নের একই উত্তর বাতাসে বাতাসে ঘুড়তো! জনৈক ব্যাক্তির কেমন আছেন প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবেই হনুমানজির উল্টো গদার মত মস্ত বড় শীর আকৃতির বিস্ময়বোধক চিনহের অবতারনা ঘটালো। কাক পালানোর দিনগুলো থেকে এই অবান্তর প্রশ্নকারীদের অবিবেচকের অত্যাচারী শাষক বলে গন্য করা হত। সেটা বুঝতে পেরেই কি না? ব্যাক্তি অবিবেচক দ্রুত নিজেকে আড়াল করে ফেলেছিলেন।
অথচ লোকটার ধৃষ্ঠতা আমাকে প্রশ্নের কাঠগড়ায় তুলে বিব্রতকর পরিস্থিতির অবতারনা করে সটকে পড়লেন। লোকটার তাচ্ছিল্য ভাবই কি আমাকে এই প্রশ্ন রাউন্ডের পর রাউন্ড গুলির খরচায় আঘাত করছিল মনস্তত্ত, চেতনা, কর্মদক্ষতায়!
মায়ানমারের ছোঁড়া গুলি বা মারান্ডি ভাইদের মৃত্যুর কারনে উদ্ধৃত পরিস্থিতি সরকারের কাজে বিঘ্নতা সৃষ্টি নাও করতে পারে, তবে এই প্রশ্নের নিষ্পত্তি না হওয়া অবধি আমার চিন্তা, চেতনা, মনস্তত্ত, কর্মদক্ষতা মুক্ত আকাশে ডানা মেলে দিতে পারছিলো না। ভাবনার কারাগার থেকে মুক্তির উদ্দ্যেশ্যই আমার কাছে মুখ্য হয়ে উঠল, বাড়ন্ত দাম, মিছিলে গুলি, আয়নাঘর, সেকেন্ড হোম, করের বোঝা, বাইকারদের সাথে প্রাইভেট কার মালিকদের সংঘর্ষ, পোশাকশিল্পের হুমকি, সাগর পাতাল খাল বিল চুরি, দুর্নিতীর মহামারি, সড়কে মৃত্যু এসবের কোনকিছুই আমার একনায়কতন্ত্র অবস্থান থেকে সরানোর পাঁয়তারা ভাঁজতে পারবে না। আমি কেমন আছি? এই প্রশ্নের একটা যুতসই উত্তর খুঁজতেই হচ্ছে।
এই খাত থেকে ঐ খাতে ভর্তুকি দিয়ে চালিত কট্টরপন্থী জীবনের অপরিহার্য চাহিদাগুলো হঠাত ভেঙ্গে পড়া ফ্লাইওভারের গার্ডারের মত বিধ্বংসী আত্মহত্যায় প্রোরোচিত হয়ে চলছিল সর্বক্ষন। বিক্রয় বিপননের এই যুগ, সাধারন মানুষের সুপ্ত চাহিদাগুলোকে সমস্যার লাইনে দাঁড় করিয়ে ক্রমাগত প্রলুব্ধ করে পন্য কিনতে বাধ্য করছিল। অথচ এই সুপ্ত সমস্যা ঘুম থেকে জাগলেও তার অপুর্নতায় মানুষের চলাচল থেমে যেত না বা পৃথিবী তার গতির কোন পরিবর্তন হত না। যতদিনে উপলব্ধি জ্ঞানপ্রাপ্ত হল, ততদিনে পয়সা লুটের পথ ধরেছিল। নির্ভেজালের লোভের কাটতি ব্যাবসায়ীদের এক লাফে গাছে ওঠার সুযোগ করে দিয়েছিল, ভেজাল মিশ্রিত খাঁটি খেয়ে আমাদের পাকস্থলী একপ্রকার অনুভূতিহীন শুন্য অবস্থানে বিরাজমান হয়ে বিগড়ানো বন্ধ করে দিয়েছিল। প্রচন্ড বিভ্রান্ত আমরা মাস্তুল হারিয়ে সবকিছুর থেকে মুক্তির পথ খুঁজছিলুম। অথচ ভুলে গিয়েছিলুম স্বাধীনতা আর মুক্তি এক অর্থ নয়। স্বাধীনতা সেই কবে পেয়েছিলুম হয়ত, কিন্তু মুক্তি! সে আশা গুঁড়েবালি থেকে খালি চোখে অদৃশ্য পরমানুর রুপ ধারন করেছিল। সকল জাহাজের খোঁজ এখন আদার ব্যাপারীদের কাছেই ধরা দিচ্ছিল।
অতীতের আড্ডায় লেনিন, মার্ক্স তেল চিটচিটে ওভারকোট চাপিয়ে হাজির হত, অথচ এখন বাফেট, মাস্ক অথবা নিদেনপক্ষে প্রতিবেশী আম্বানি বা আদানী সঙ্গের জন্য সবার প্রান ঠোঁটের কাছে চলে আসে, ওনারা আসেন না দূর থেকে কড়া সুগন্ধের রেশ রেখে ধরাছোঁয়ার অনেক দূরে চলে যান।
অদৃশ্য রক্তচোষক, প্রযুক্তি দস্যুরা সবার চোখের সামনে দিয়ে কষ্টার্জিত অর্থ, শৃংখলা ছিনিয়ে নিয়ে যায়। আধুনিকতার পদ্মবীজ শক্ত হয়ে শরীরে, চেতনায়, বিশ্বাসে দৃঢ়ভাবে স্থান করে নেয়।
পাইজাম চালের ভাত অধিকতর স্বাস্থ্যকর, সোনালী মুরগী, চাষের মাছ কমদামে কিনে পকেট সামাল দেওয়া আর পরিবারের কাছে ঠকে এসেছি বলে মিথ্যা ব্যাবস্থাপনা যে বেশিদিন চালানো যাবে না, তা ঠিক বুঝে গিয়েছিলুম। কৌশলগত পরিবর্তন আবশ্যিক। এই যুগের দ্রুত, অবিচল, কৌশলী রা জিতবে অতীতের ধীর, অবিচল রা জিতবে ভুল প্রমানিত করে দিয়েছে। ভবিষ্যতে এই বানী ভারি হবে আরও নতুন গতিশব্দ যোগে।
সময়ের অসম্ভব তাড়াহুড়া লক্ষ্যনীয়, শেষ বিন্দুতে পৌঁছানোর সংকেত প্রকট। তাপগতিবিদ্যার তৃতীয় সুত্ত্রেমতে উত্তাপে দিকবিদিক ছুটে চলা অনুগুলোর মত, পৃথিবীর ক্রমবর্ধমান উত্তাপে মানবসন্তানদের ছোটাছুটি আর অস্থিরতার অস্বাভাবিকতা বাড়তেই থাকবে। সময়ের সাথে যুদ্ধ করে টিকে থাকা না হলে অতীতের গর্তে ঢুকে পড়া। এই তো চলছে।
মুখ বন্ধ করে ক্রমাগত ধঋষিত হতে থাকা পরিবেশ যা তার পাওনা উশুল করতে শুরু করে নাই তা কে বলতে পারে! শুক্রানু ডিম্বানুর ক্রমবর্ধমান দুর্বলতা প্রকাশ্য। ভবিষ্যতের অতি সন্নিকটে গাঁ ঠাসাঠাসি করে থাকা ঐ দিনগুলো প্রকাশিত হওয়ার অপেক্ষায়, যখন কৃত্রিম গর্ভে সন্তান উতপাদিত হবে! দম্পতির ভালোবাসার শুক্রানু আর ডিম্বানুর মিলনে জাইগোট থেকে বাচ্চা হবে। কোন ব্যাথা, প্যারা, মাতৃচিনহ থাকবে না। দশমাস পরে বাচ্চা ডেলিভারী নেওয়া যাবে, এমনকি হোম ডেলিভারীর ব্যাবস্থাও সম্ভব। দশমাস বরং সময়ের সাথে যুদ্ধে ব্যায় হবে।
অবিশ্বাস, দুর্নীতী, চোরামী, টাকার নেশার মহামারি লেগেছে যেন। অথচ নিজের দৈন্যতার কথা বুঝতে পারি যখন ঢাকায় আমার একটা ফ্ল্যাট, গাড়ি, জায়গা নেই বলে গ্রামের মানুষের কষ্টে বুক ভারি হয়। সে তত বেশি প্রতষ্ঠিত, যার যত বেশি টাকা আর পার্থিব বস্তুর রকমারি বাহার রয়েছে। আলাপের বিষয়বস্তু যখন সুইস ব্যাংক, কলিগরা যখন আলাপ করে এই পরিমান পাচারকৃত টাকা দিয়ে একটা দেশ কিনে ফেলা যায়, তখন আমার অবিশ্বাসী চোখ দেখে কল্পনা শক্তির ধ্বজভঙ্গ অবস্থার ভোদাই সম্বোধন মেনে নেওয়া ছাড়া কোন গন্তব্য থাকে না।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাগ করা তারামার্কা হোটেলে ডিনার, পাতায়ায় সস্ত্রীক প্রমোদ ভ্রমনের ধারাবাহিক চিত্রাবলী একই সাথে হিংসা আর দাম্পত্য কলহের উদ্রেক ঘটায়। শয়তানের খোল আর ডিজিটাল নির্ঘুম চোখগুলো জেগে থাকে এ কালের দেবদাস, পার্বতি আর চন্দ্রমুখীর বিবস্ত্র লীলা সবার কাছে পৌঁছাবে বলে। তারা রথ তো দেখেই কলার সাথে মিষ্টান্নও বিক্রি করে।
কালেভদ্রে অফিসের ডেস্কে বসে পেছনের রাস্তার দিকে তাকাই, সোনাব্যাঙ্গের মত গলা ভাঙ্গা আওয়াজে ক্রাচে ভর করে যানবাহনগুলো একে অপরকে ঠেলতে ঠেলতে মন্থর গতিতে এগিয়ে চলে। আধিপত্য বিস্তার করা চকচকে শপিং মল, আকাশে মাথা ঠেকানোর স্পর্ধা নিয়ে গজিয়ে ওঠা বিল্ডিং গুলোর ক্রমবর্ধমান দুইদিকের পেষনে, ক্ষতবিক্ষত বুকের ওপর মেট্রো রেল, ফ্লাইওভারের অসহ্য ভরে মৃত্যুর ওপারে থেকে নিঃশ্বাস ছাড়ে একা লড়তে থাকা রাস্তাটা। যুদ্ধ বাংকারের মত গলিপথের ধারে গড়ে ওঠা অস্থায়ী দোকান, অপেক্ষারত তৃচক্রযান, চলতে থাকা হৃদয়হীন মানুষের বুকে লাগে না সে নিঃশ্বাস।
ঝিম মেরে থাকা ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়ার দল যেদিন জাগরনের গান গাইতে গাইতে জেগে উঠবে, সেদিন কোন ডাক্তার বা ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সাধারন মানুষকে উদ্ধার করে নেওয়ার সাহস দেখাতে পারবে না। সব সাহস শক্তি দিয়ে অধিকতর লভ্যাংশ আর সুযোগ আদায় করার এটাই শ্রেষ্ঠ সময়।
বুদ্ধিজীবীর ছাওদের কিচিরমিচির চলতেই থাকবে, সংখ্যাগরিষ্টতা এক এবং অদ্বিতীয় মাত্রায় প্রবেশ করবে। আমাদের মত সাধারন সর্বাভিনেতারা বরাবরের মতই গাঁ বাঁচিয়ে কোনমত নিজেদের রক্ষা করতে চাইবো। রাস্তার পাশে বন্ধ ব্রোথেলের দুর্গন্ধ গোলাপ, হয়তো অল্প সময়ের জন্য কড়া মেকাপে দুর্গন্ধ ঢেকে সুগন্ধ ছাড়ানোর চেষ্টা করবে। একপাশে গড়ে ওঠা চকচকে আধুনিকতার ওগরানো আবর্জনা অন্য পাশ ভর্তি করতে থাকবে। হারিয়ে যাওয়ে কাকের দল ফিরে আসাটা আশ্চর্যজনক ঘটনা হবে, তবুও পৃথিবী ঘুড়তে থাকবে, আমাজন পুড়তেই থাকবে, মোড়লদের ফালাফালি চলতেই থাকবে, নদীরা মরতেই থাকবে, শিল্পায়নের বিপ্লবে পশ্চাদ্দেশ দিয়ে রক্ত ঝড়তেই থাকবে, মানিয়ে নিয়ে গাঁ বাঁচানো চলতেই থাকবে, আর আমি শালা এসব দিন রাত্রির ঠেলাঠেলিতে বুঝেই উঠতে পারব না খারাপ আছি না ভালো আছি।

শামসুদ্দিন হাবিব
০৩/১০/২০২২

সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ভোর ৫:১৩
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিসিএস-পরীক্ষার হলে দেরিঃ পক্ষ বনাম বিপক্ষ

লিখেছেন BM Khalid Hasan, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



বর্তমানের হট টপিক হলো, “১ মিনিট দেরি করে বিসিএস পরীক্ষার হলে ঢুকতে না পেরে পরীক্ষার্থীর স্বপ্ন ভঙ্গ।” প্রচন্ড কান্নারত অবস্থায় তাদের ছবি ও ভিডিও দেখা যাচ্ছে। কারণ সারাজীবন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

জব্বারের বলীখেলা ও বৈশাখী মেলা-২০২৪

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭



ছবি সৌজন্য-https://www.tbsnews.net/bangla




ছবি- মঞ্চে তখন গান চলছে, মধু হই হই আরে বিষ খাওয়াইলা.......... চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী গান।

প্রতি বছরের মত এবার অনুষ্ঠিত হল জব্বারের বলীখেলা ও বৈশাখী মেলা-২০২৪। গত ২৪/০৪/২৪... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

×