somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কয়লা ঢাকলেও ময়লা যায় না

০১ লা জুন, ২০১৭ ভোর ৫:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


জাপানে ময়লার ব‍্যাগ কে "গমি ফুকুরো" বলে। তাদের নানান রং আর বাহার। সব্জি মাছ মাংসের অবশেষ; ফেলে দেয়া আরও যা আছে তা হলুদ ব‍্যাগে, বোতল আর ক‍্যান যাবে সবুজে (এই সবুজ আবার নীল জটিলতা আক্রান্ত, মানে ঔ যে কালার ব্লাইন্ড লোকেরা সবুজ আর নীল গুলিয়ে ফেলেন, সেরকম আরকি)। এছাড়াও বেগুনী, লাল কত তার বাহার। কীভাবে "গমি ফুকুরো" ব‍্যবহার করতে হবে তার একটা নিয়মিত প্রশিক্ষণ হয় বিদেশীদের, জাপানীদের জন‍্য সেটা শৈশব থেকেই। সেটা এক শিল্প, এক মহাযজ্ঞ। এই দেশকে বোঝার জন‍্য খুব গুরুত্বপূণর্ সূত্র। এরা এত সু-ব‍্যাবস্থাপনায় ময়লাকে "নাই" করে দেয়, দূর পাহাড়ের বাথরুমও ঝকঝকে চকচকে রাখে যেমন তা বিস্ময়কর ও প্রশংসনীয়, তেমনি আবার ভীতিকরও।

কেন ভীতিকর? আমার মত বাঙালী যার ছোটবেলা থেকে ময়লার সাথে নিত‍্য বসবাস। চোখে, নাকে, কানে ময়লাকে দেখে শুনে ঘ্রাণে বড় হয়েছে তার কাছে ময়লা, দূরত্বের নয় বরং কাছের। ময়লা মানে সমগ্র, আলাদা আলাদা বাছাইয়ের কিছু নেই, একতাল দলা। চিন্তাহীন, যত্নহীন, ভাবনাহীন ফেলে যাওয়া শুধু। লাশটা, মরে যাওয়া কুকুরটা, পথের ধারে মলস্তুপটা কিংবা সেইন্টামাটর্িনে ফেলে যাওয়া প্লাস্টিক আর র‍্যাপার। কিংবা টক শো, গণমাধ‍্যম, ফেইসবুক সবখানে আমাদের নিয়মিত ময়লা নির্গমন। ময়লার সাথে আমাদের সহবাস এবং বসবাস যেখানে, সেখানে কিনা জাপানে ময়লা ম‍্যানেজম‍্যান্ট নিয়ে এত্তকিছু! বিশাল বিশাল সব জরিমানা। নজরদারি। যেমন ছোট্ট একটা নদীর ধারে লেখা ছিল, “এখানে ময়লা ফেলিলে ১০ মিলিয়ন ইয়েন জরিমানা”।

ময়লা ভীষণ শ্রেণীভিত্তিকও। মাছের আঁশটে ময়লাটা, মুরগীর রক্ত গিলা কলিজাটা, মল হাতে ধরতে হয় নাই বহুদিন। কোরবানীর মাংস কাটতে যেয়ে আধ‍্যাত্মিক পরিশুদ্ধতা অনেকে পেলেও রক্তে সয়লাব করে দিয়েছেন শহর। সেটাও আরেক ঘনিষ্টতা, আরেক মাগর্। হয়তো পরিচ্ছন্ন নাগরিকগণ তাই পরিষ্কার করে কাটা মাছ মাংসের জন‍্য বাজার এড়িয়ে যান সুপার স্টোরে।

জাপান হয়ত অতি পরিষ্কার। ময়লার সাথে তার সম্পকর্ আপাত নির্মোহ এবং ভীষণ দক্ষ ম‍্যানেজমেন্টের। প্রশ্ন জাগে, এখানে কি মানুষ লাশ দেখতে যায়? লাশ ছোঁয়? গোসল দেয়? পোড়ায়? এখানে সেটার জন‍্য সংস্থা রয়েছে। খুবই দক্ষ সংস্থা। এই দক্ষ সংস্থা ভীষণ দক্ষতায় ময়লাকে “নাই” করে দেয়। দেশে আবার একই ধরণের দক্ষতা দেখি লাশ গুম, হত‍্যা, ধর্ষণ, টাকা পাচার, ইস‍্যু ইত‍্যাদি ক্ষেত্রে। তবে তারা বিশেষ সংস্থা না, তারা সম্মিলিত সংস্থা। একটা স্বীকৃতি নিলেই পারে। তাহলে দুটো দেশই নানান পদ্ধতিতে ময়লাকে ডিফাইন করে এবং “নাই” ও করে ।

কিন্তু এত কথা বলতে যেয়ে আসল কথা বলতেই তো ভুলে গেলাম। গত দুই দিন ধরে মাছ কাটবো করে গত রাতে যেই মাছ বের করেছি তখন খেয়াল হল, আরে! মাছ তো তার সুপারস্টোর অবস্থায় নেই (মানে মাছ আছে কিন্তু সাথে পেটের নাড়িভূড়িও আছে)। অগত‍্যা ঈমানী দায়িত্ব নিয়ে মাছ কাটা যখন শেষ হল, ততক্ষণে আমার কক্ষ কাওরান বাজার। রাতে যে আর ঘুম হবে না সে বিষয়ে আমি নিশ্চিত হয়ে গেছি ততক্ষণে । একদিকে জাপানী শাসন, অন‍্যদিকে প্রতিবেশীর অভিযোগের ভয় সব মিলিয়ে আতংকে আমার কাটা মাছ দশা। গমি ব‍্যাগে সব ঢুকিয়ে, শক্ত করে মুখ বন্ধ করে বাইরে রেখেছি। গন্ধ যাতে সরে যায়। এরপরই লিফটে করে নেমে রেখে আসবো। কিন্তু হায়! রাতে আর যাওয়া হল না। তাই সকালে ঘুম থেকে উঠে দরজা খুলে যখন ময়লা রাখতে যাবো, দেখি, সবর্নাশ যা হবার তা হয়ে গিয়েছে। লুকানোর যা ছিল আমার, মাছের ভূড়িটা, কলার ছালটা, ডিমের খোসাটা বিপুল আনন্দে শানের মেঝেতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। আর কি সুবাতাস!

উইসাইন বোল্টের ক্ষীপ্রতায় এবং মাদাম কুরীর দক্ষতায় আমি যখন ময়লাকে ব‍্যাগে তুলছি তখন মনটা ভরে গেল গভীর বিষন্নতায়। দুর্গন্ধে এবং ঝাড়ুতে আমার চোখে শাকিব খানের মত পানি চলে আসলো। পড়িমড়ি করে ব‍্যাগ যখন ময়লার স্টেশনে রেখে ফিরে আসলাম ততক্ষনে সকালের আলো আমার আটতলার ব‍্যালকনিতে ঠিকমতই জাঁকিয়ে বসেছে। কফির পেয়ালা হাতে নিয়ে গবেষণার প্রোপোজাল পুনঃলিখনে বসেছি। কিন্তু এক লাইনও লিখতে পারছি না। মাথা জুড়ে শুধু একটাই চিন্তা, কে করলো কে করলো আমার এই সর্বনাশ। এটা কি কোন বাচ্চার কাজ? নাকি রাতের বেলা কোন বড় মানুষ...কিন্তু কেন? ঠিক সেই সময়টায় বাম দিকটায় একটা শব্দ হল। দরজা খোলাই ছিল। আর আমি সেই কালপ্রিটটাকে দেখতে পেলাম। আমার সর্বনাশের কারণ। সে আমার দিকে সরাসরি তাকালো আর তিনবার চিৎকার করে উঠলো কা কা কা।

হায়! সকালের কাক, ব‍্যাগ করে গেলে ফাঁক।

শরৎ চৌধুরী, হিগাশি হিরোশিমা, জাপান।

সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জুন, ২০১৭ ভোর ৫:০১
১৬টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×