আমি ইনফোরমেটিভ তথ্য সংক্রান্তই বইয়ের ফ্যান । আর ড্যান ব্রাউনের দ্যা ভিঞ্চিকোডটি আমার কাছে রীতিমত তথ্যের ভান্ডার । এই বইটি শেষ করতে আমার পুরো ১টি দিন লেগেছে । যে তথ্যই পেয়েছি সবই ইন্টারনেট থেকে মিলিয়ে দেখেছি এর কতটুকু সত্য বা কতটুকু মিথ্যা । আজকে আমার লিখার বিষয়বস্তু শেষ নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এবং ইসা (আঃ) তথা যীশু তাই পুরো ঘটনা বিশ্লেষণ করতে কিছু সূচনা লিখাটা জরুরী ।
.
যারা ভিঞ্চি কোড বইটি ভালো করে পড়েছেন তারা নিশ্চয় জানেন এর পুরো কাহিনী অবর্তীণ হয়েছে মুলত খ্রিষ্ট ধর্মের অনুসারীদের "পবিত্র/হলি গ্রেইল" নিয়ে । এখানে হলি গ্রেইল সম্পর্কে হালকা ধারণা দিই । হলি গ্রেইল হচ্ছে একটি পেয়ালা , যে পেয়ালা করে যিশু/ইসা (আঃ) লাষ্ট সাপারে মদ/জল পান করেন । যদিও ভিঞ্চি কোডে এই হলি গ্রেইল বলতে যীশুর স্ত্রী ম্যারি মাগদালিনের দেহ এবং তার বংশধরের প্রমাণ সরূপ কিছু কাগজপত্র সমল্বিত একটি সমাধি বা ভল্টকে বুঝানো হয়েছে ।
.
তা যাইহোক খ্রিষ্ট ধর্মের মানুষরা সাধারণ অর্থে হলি গ্রেইল তথা পবিত্র পেয়ালাটির খোঁজ ২০০০ বছর ধরে করেছে । কেউ কেউ বা পেয়েছে বলে দাবিও করেছে । কিন্তু এটি আজো কারো হাতে এসেছে বলে সুনিশ্চিত তথ্য পাওয়া যায়নি ।
.
এখন আসি মুল বিষয়তে । বইটি পড়তে পড়তেই মনে হল আচ্ছা শেষ নবী হয়রত মুহাম্মদ (সাঃ) এর কি এই রকম কোন গ্রেইল কি আছে ? এটলিষ্ট খুঁজতে আগ্রহ জন্মানোর মত । উত্তরটা জানতে ছোটখাট গবেষণা করে ফেলি ।
.
.
.
সুত্রটি হযরত জুবায়ের ইবেন মুতইয়িম (রা) হতে প্রাপ্ত । হয়রত জুবায়ের কুরাইশদের অত্যাচারে ঠিকতে না পেরে সিরিয়ায় চলে যান । সেখানে একটি সিনাগগে (ইহুদিতে উপাসনালয়) আশ্রয় গ্রহণ করেন সেখানকার সন্নাসীদের সরদারের সাথে তার কথা হয় ।
সরদারটি জিজ্ঞাস করেন - তুমি মক্কা মানুষ কিনা ?” উত্তর "হ্যাঁ" হ্যাঁ হওয়াতে সেই সরদারটি তাকে একটি গোপন কক্ষে নিয়ে যান । সেখানে অনেকগুলো ছবি রাখা ছিল । জিজ্ঞাস করলেন , “দেখ তো, এখানে তোমার নবীর ছবি আছে কিনা ?”
.
হয়রত জুবায়ের ভালো করে দেখলেন কিন্তু পেলেন না । সরদারটি উনাকে আরও বড় ঘরে নিয়ে গেলেন, “ খুব ভাল করে দেখতো , এখানে আছে কিনা ?”
.
এবার হয়রত জুবায়ের দেখলেন , এখানে মুহাম্মদ (সা) এর একটি ছবি আছে। একজন মানুষ মুহাম্মদের (সা) কাঁধ জড়িয়ে আছেন । দুজনের হাস্যজ্জল ছবি । সেই ব্যাক্তিটি হলো হয়রত আবু বকর ।
.
.
কাহিনীটা পড়ে আমি রীতিমত হতভম্ভ । মহানবী (সাঃ) ছবি ! অসম্ভব না । সেকালে খ্রিষ্টান ইহুদিরা ভালো ছবি আঁকতে পারতো । তাদের কেউ হয়তো নতুন নবী দাবী করা মুহম্মদ (সাঃ) এর একাধিক ছবি বানিয়ে তাদের ধর্মের ভাইবোনদের কাছে পাঠিয়ে ছিল ।
.
এর পরের কাহিনীটা পাই সম্রাট হিরাক্লিয়াসকে নিয়ে । সংক্ষেপে বলছি - সাহাবী হিশাম ইবনুল আস (রা) সাথে যখন হিরাক্লিয়াসের সাথে দেখা হয় তখন উনি তার প্রসাদে লুকানো একটা চেম্বার থেকে অন্যগুলো নবীর ছবি দেখান যার মাঝে অনেক গুরুত্বপূর্ণ নবী ছিল । সর্বশেষ ছিল মহানবী (সাঃ) এর ছবি ।
.
সুত্র- {নবুয়াতের প্রমাণপঞ্জি, মাওলানা মহিউদ্দিন অনূদিত, পৃষ্ঠা ২০}
.
.
অতত্রব বুঝা যাচ্ছে মহানবী (সাঃ) এর ছবি বাস্তবে অস্তিত্বশীল ছিল , অন্তত এক কালে তো ছিলই । একটু অলীক হলেও , হয়তো আমরাই (মুসলিমরা) এটিকে লুকিয়ে ফেলেছি এবং হয়তো আজো ছবিটি কারো না কারো হাতে এটি আছে , কিন্তু প্রকাশ করা হচ্ছে না বা ছবিগুলো কালের গর্ভে হারিয়ে গেছে । খ্রিস্টানরা ২০০০ বছর থেকে তাদের হলি গ্রেইলের খুঁজে চলেছে । আর আমাদের ধর্মের লোকেরা কিছু খোঁজে না , খুঁজতে চায় না তাই পায় না ।
.
হয়তো এটা একদিক থেকে ভালোই । হয়রত উমর একটি গাছ কেটে ফেলেছিলেন এই বলে যে মহানবী (সাঃ) এই গাছের নিচে দীর্ঘদিন বসেছেন তাই গাছটিকে সবাই ভক্তি করতে করতে শুরু করেছ । যা শিরিক এর অর্ন্তভুক্ত । এখন যদি আমাদের কাছে নবীর ছবিটি থাকতো সেইক্ষেত্রে আমরা কি করতাম তা বলাই বাহুল্য । তবে ইতিহাস ঘেষে যা বুঝলাম এই ছবিটি/ছবিগুলো হয়তো আজো অস্তীত্বশীল । ছবিগুলো সুন্নীদের হাতে নেই বলেই আমার বিশ্বাস থাকলে শিয়াদের হাতেই থাকবে অথবা এমন কারো আছে যে জানেই না ছবিটি মহানবী (সা) এর । এছাড়াও ইন্টারনেটের অনেক অসমর্থিত সুত্রানুসারে সেই সময়ের আঁকা নবীজির একটি ছবি শিয়াদের কাছে আজো আছে । এছাড়া হাদিসেও নবিজির দৈহিক হবহু বর্ণনা দেয়া আছে ।অনেক বিখ্যাত চিত্রকর সেই বর্ণনা অনুযায়ী ছবি এঁকেছেন । সব গুলো ছবিই প্রায় শিয়াদের কাছে থাকা ছবির সাথে মিলে গেছে ।
.
প্যারিসের লুভর মিউজিয়ামে মহানবী (সা) সময়কালের অনেক এরাবিয়ান ছবি আছে যা পরবর্তীতে ক্রুসেডের যুদ্ধে খ্রিষ্টানরা শিয়াদের হতে দখল করে । যার মাঝে মহানবী (সা) এক বা একাধিক থাকাও বিচিত্র নয় ।
.
এখন আসি ধর্মের কথায় । জানি এখন সবাই ইসলাম ছবি নিষিদ্ধ এটা সেটা ইত্যাদি । সব মানলাম । সে ক্ষেত্রে আমাকে এমন একটি তথ্যের খোঁজ দেন যে যেটা প্রমাণ করবে - এই রকম একটি ছবি থাকার সম্ভাবনা শতভাগ শুন্য।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জুলাই, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:২০