somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মাননীয় অর্থমন্ত্রী, সাধারন মানুষের পুরো জীবনটায় কম্প্রোমাইজের, তবে সেটি আর্ট নয়

২৯ শে জুন, ২০০৯ দুপুর ১২:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

“পলিটিক্স ইজ দি হাইয়েস্ট আর্ট অফ কম্প্রোমাইজ” বাজেটোত্তর বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রীর হাস্যমুখ স্বীকারোক্তি ও কালো টাকা সাদা করার সাফাই কম্প্রোমাইজের নতুন কোনো ঘটনা নয়। স্বৈরাচারকে নিয়ে দুইজ়োটের টানাটানি, আওয়ামী লীগ-জামাতের মিলিত আন্দোলন, লগি বইঠা দিয়ে পিটিয়ে মানুষ হত্যা, দূর্ণীতিতে দেশকে চ্যাম্পিয়ন বানানো, এক-এগারোর উদ্ভব এগুলি সবই হচ্ছে রাজনীতির দূর্বৃত্তায়ন ও কম্প্রোমাইজের কিছু ছিটে-ফোটা নমুনা মাত্র। আর তারই ফলাফল হচ্ছে পিছিয়ে পড়া দেশ আর বেশির ভাগ জনগনের নাগরিক আধিকার কম্প্রোমাইজ করে বেচে থাকা। তবে বেশীর ভাগ রাজনীতিবিদ তা স্বীকার করেন না। সুতরাং এ ক্ষেত্রে মাননীয় অর্থমন্ত্রী অবশ্য ধন্যবাদ পাবার যোগ্য।


আবুল কালাম একজন কৃষক। এক বছরের জন্যে তিন বিঘা লীজ নিয়েছেন মোট ত্রিশ হাজার টাকা খরচ করে। ত্রিশ হাজার টাকা খরচায় আলু চাষ করে ফসল বিক্রি করে পেয়েছেন পচিশ হাজার টাকা। এরপর বার হাজার টাকা খরচ করে ইরি চাষ করে ধান বিক্রি করেছেন কুড়ি হাজার টাকায়। আর একটি ফসল তথা আমন চাষ শুধু বাকি। আমনে সাধারনতঃ খরচ কম হয়, তার হিসেবে সাত থেকে আট হাজার টাকায় আমন ধান চাষ করে ধানের বর্তমান দাম থাকলে সর্বোচ্চ পনের হাজার টাকা পেতে পারেন। তার মানে ফসল আবাদের খরচ আর আয় বাদ দিলে থাকে দশ হাজার টাকা। জমি লীজের টাকা বিবেচনায় নিলে ক্ষতি দাঁড়ায় কুড়ি হাজার টাকা। আর নিজের সারা বছরের পরিশ্রম আর ভোগান্তি তো ফ্রী। সারের অতিরিক্ত মুল্য, সময় মত সার না পাওয়া, নিম্নমানের বীজ, সেচের জন্য বিদ্যুত না পাওয়া কত কি।

এভাবেই আবুল কালামের মত লাখো প্রান্তিক চাষী সুখ, স্বচ্ছলতা, লাভ সব কিছুর সাথে কম্প্রোমাইজ করে পেটে ভাতে খেটে যাচ্ছেন দিনের পর দিন। এক বছর কম্প্রোমাইজ করছে সামনের বছরের আশায়। পরের বছর হয়তো অন্য কোনো সমস্যায় ফসল মার খাচ্ছে। এই কম্প্রোমাইজ শেষ করে নিজের অধিকার বুঝে পাওয়া তার আর হয় না।

দেশের অসংখ্য শিক্ষিত বেকার যুবক একটি চাকরির জন্য জুতোর তলা ক্ষয় করে চলেছেন। তাদের হিসেব কে রাখে? কেউ হয়তোবা অসুস্থ মা-বাবার চিকিতসা কিম্বা ছোট ভাই-বোনের পড়াশোনা অথবা বিবাহ যোগ্যা বোনের বিবাহের প্রয়োজনের মত আশু দরকারকে কম্প্রোমাইজ করছেন। কেউ হয়তোবা আজীবন লালিত নীতির সাথে কম্প্রোমাইজ করে সন্ত্রাশ অথবা দুই নাম্বারী কাজে জড়িয়ে যাচ্ছেন। নিকটজনের সান্নিধ্য কম্প্রোমাইজ করে দালালের হাতে সর্বস্ব তুলে দিয়ে বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছেন। যেখানে কেউ হয়তো কাজ পাচ্ছেন, কেউ জেলে পচে মরছেন, কেউবা কফিনের বাক্সে চড়ে স্থল সীমানা কিম্বা নৌকায় চড়ে সমুদ্র পাড়ি দিতে গিয়ে জীবন দিচ্ছেন। আর যারা সবকিছুর পর বেচে যাচ্ছেন তারাই দিনের পর দিন হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে দেশে মুল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা পাঠাচ্ছেন। আমাদের এই ভিআইপি রা নিকটজন দের সান্নিধ্য কম্প্রোমাইজ করছেন, বিদেশে আমাদের মিশন গুলোর অবজ্ঞা-অবহেলা, দেশে ফিরে এয়ারপোর্টে কর্মকর্তাদের দুর্ব্যাবহারের সাথে কম্প্রোমাইজ করছেন। তারপর হয়তো রাস্তায় নেমে সন্ত্রাসী/ছিনতাইকারীর সাথে কম্প্রমাইজ করে দেশে আনা সম্পদ টুকু তাদের হাতে তুলে দিচ্ছেন।

দ্রব্যমূল্যের ঊর্দ্ধগতির রিপোর্ট আমরা পড়ি পত্রিকায়, সচিত্র প্রতিবেদন দেখি চ্যানেলের কল্যাণে। কিন্ত কতজন আমরা উপলব্ধি করি নিম্ন, নিম্ন-মধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্ত মানুষ গুলো কি কম্প্রোমাইজ করে যাচ্ছে? কোনো পরিবার হয়তো সঞ্চয় ভাঙ্গাচ্ছেন, কেউ বাচ্চাকে স্কুল থেকে টেনে কাজে লাগিয়ে দিচ্ছেন, কেউ হয়তো আগে সপ্তাহে একদিন মাছ-মাংস খেতেন এখন মাসে একদিন খাচ্ছেন। কত পরিবার রাতে উপোস থেকে ঘুমাতে যায়, কে তার খবর রাখে? একজন ছা-পোষা নীরিহ মানুষকে যখন সন্ত্রাসীরা ফোন করে চাঁদা দাবী করছে, তিনি জীবন বাচানোর স্বার্থে তার সাথে কম্প্রোমাইজ করছেন। কারন তাদের যাওয়ার কোন জায়গা নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের মত জায়গায় মেয়েদের টিজ করা হচ্ছে, প্রহার করা হচ্ছে, সোনার ছেলেরা ধর্ষনের সেঞ্চুরী করছে। দু-এক জন হয়তো প্রতিবাদ করে কিম্বা অন্যভাবে সংবাদ মাধ্যমে আসছেন কিন্ত হাজারো বোন এগুলির সাথে কম্প্রোমাইজ করে পড়াশুনা চালিয়ে যাচ্ছেন।

এই লিস্ট আর বাড়িয়ে লাভ কি? আসলে সাধারন মানুষের বেঁচে থাকাটায় এক ধরনের কম্প্রোমাইজ। কিন্তু এর মধে কোন আর্ট নেই। রয়েছে শুধু মাত্র বেচে থাকবার তাগিদ। রয়েছে ঘুনে ধরা পচা সমাজ ব্যবস্থার প্রতি অসহায় আক্রোশ আর নিজের ভাগ্যকে দোষারোপ করে নিভৃতে চোখের পানি ফেলা। রাজনীতিবিদ গন “কম্প্রোমাইজ” মুক্ত হতে পারলে আমাদের জীবন অন্য রকম হতে পারত। এরকম উদাহরন বিরলও নয়, তবে অনেক কম। বংগবন্ধু কম্প্রোমাইজ করলে বাংলাদেশ স্বাধীন হতো না। দুই নেত্রী কম্প্রোমাইজ করলে স্বৈরাচারকে হটানো যেত না (যদিও দুই নেত্রীই পরবর্তীতে দঃখজনকভাবে স্বৈরাচারের সংগে আর্ট অফ কম্প্রোমাইজ চর্চা করেছেন)।

সাধারন মানুষ যেন ন্যূনতম অধিকার নিয়ে বাচতে পারে সেটা নিশ্চিত করার দ্বায়িত্ব নেন বলেই তো রাজনীতিবিদ গন আলাদা। তাঁরা জনগনের ভোটে নির্বাচিত হয়ে রাষ্ট্রের দায়িত্ব নেন।
আইনের শাসন প্রতিসঠা, কর্মসংস্থান তৈরী, দ্রব্যমুল্য নিয়ন্ত্রন এসব তো রাষ্ট্রের কাজ। কিন্ত দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে তারা জনগনের কথা ভুলে গিয়ে ক্ষমতা পাকা করার জন্য কম্প্রোমাইজ করেন কালো টাকার সাথে, স্বৈরাচারের সাথে, দুর্ণীতির সাথে। সাধারন মানুষের মৌলিক চাহিদা পুরনের জন্যে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ আপোষহীন ভাবে কাজ করবেন এটিই আমাদের প্রত্যাশা।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জুলাই, ২০০৯ সকাল ৯:৩৭
৫টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×