আমার মায়ের লেখা
স্বাধীনতা
- আতিয়া বেগম
'পেট খেতে চায় ভাদর মাসের পাকন পিঠারে
আমি পেটের কি করি উপায়।
পেট খেতে চায় পেট ভরিয়া ভাতরে
আমি পেটের করি কি উপায়।'
এমনি করে তার না খাওয়ার বেদনা, না পাওয়ার বেদনা, তার দারিদ্রতা, তার ক্ষুধা- এসব চিত্রই তার গানের মধ্যে প্রকাশ পেত। সে ছিল এক মহিষের রাখাল। নাম সদর। কোন এক গৃহস্থের মহিষ চরায় সে। বিনিময়ে জোটে দুবেলা ভাত। সে ভাতে তার পেট ভরেনা। কবে পেট ভরে খেয়েছিল সে কথা মহিষের পিঠে বসে চিন্তা করতে করতে মনে পড়ে যায়, মায়ের সাথে গিয়েছিল বহুদূর এক গ্রামে। চারিদিকে কলেরায় মানুষ মরেছিল। তাই গ্রামের লোকেরা এক হয়ে মিলাদ দিয়ে মানুষ খাইয়েছিল। সেদিন সদর পেট ভরে খেয়েছিল।
সময়টা ছিল ভাদ্রমাসের এক দুপুরবেলা। চারিদিকে পানি আর পানি। বানের পানিতে মাঠ ফসল ডুবেছে। ছমিরুদ্দিনের ১৫ বছরের ছেলেটা কলেরায় মারা গেল। ভীষণ শোক তার। সদর মিয়া ছমিরুদ্দিনের উঠানে বসেই ভাত খেল। অনেক ভাত খেল। বার বার মাকে বলল, আলুর তরকারি অনেক মজা। আলুতে মাংস ছিল, তা সদরের পাতে না পরলেও সে মহাখুশি। সে পেট ভরে ভাত খেয়েছে।
এখন সদরের বয়স বার। মা মরেছে সাত বছর বয়সে। বাবাকে সে কোনদিনও দেখেনি। জীর্ণশীর্ণ দেহ। দেখে মনে হয় কতকাল সে অনাহারে। পরনে তার শত তালি দেয়া লুঙ্গি। একটা গেঞ্জি আছে হাটবারে পরে।
মহিষের সাথে তার যত কথা।
মহিষকে সে চুপি চুপি মা ডাকে। তার যত দুঃখের কথা, তার যত সুখের কথা, তার যত আনন্দের কথা মহিষ-মাকে বলে।
একদিন সদর তার মহিষ-মাকে তার খুব বড় আনন্দের কথা জানালো।
মা, আমি কাল হাটে গিয়ে শুনলাম দেশ স্বাধীন হবে। স্বাধীন হলে অনেক ভাল। পেট ভরে ভাত খাব, ভাদর মাসের পিঠা খাব, নতুন লুঙ্গি পরব। স্কুলে যাব!