somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গোল্লা+গুল্লি+গুল্লা=ঘোড়ার ডিম

০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ২:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




যুক্তফ্রন্ট শব্দটি বাঙ্গালিদের কাছে বিশেষ একটি আবেগের ভাব প্রকাশ করে। কেননা যুক্তফ্রন্ট গঠন ছিল আমাদের ইতিহাসের এক উজ্জ্বল অধ্যায়; যদিও সেই সরকারের স্থায়িত্ব ছিল খুব স্বল্প সময়ের জন্য। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে মুসলিম লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করার লক্ষ্যে যুক্তফ্রন্ট গঠন করা হয়। তৎকালীন আওয়ামী মুসলিম লীগ ১৯৫৩ সালের ৪ ডিসেম্বরে কৃষক শ্রমিক পার্টি, পাকিস্তান গণতন্ত্রী দল ও পাকিস্তান খেলাফত পার্টির সঙ্গে মিলে যুক্তফ্রন্ট গঠন করে। সাথে আরও ছিল মৌলানা আতাহার আলীর নেজামে ইসলাম পার্টি। বামপন্থী গণতন্ত্রী দলের নেতা ছিলেন হাজী মোহাম্মদ দানেশ এবং মাহমুদ আলি সিলেটি। যুক্তফ্রন্টের প্রধান তিন নেতা ছিলেন মওলানা ভাসানী, শেরে বাংলা একে ফজলুল হক এবং হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী।

বিকল্পধারা বাংলাদেশের সভাপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে আহ্বায়ক করে চারটি রাজনৈতিক দল ‘যুক্তফ্রন্ট’ নামে নতুন একটি জোট গঠন করেছে। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সভাপতি আ স ম আবদুর রবের উত্তরায় বাসায় নতুন একটি রাজনৈতিক জোট গঠনের লক্ষ্যে বৈঠকে বসেন বিকল্পধারা বাংলাদেশ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (রব), কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ও নাগরিক ঐক্যের নেতারা। বৈঠকে বিকল্পধারা বাংলাদেশের সভাপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, আ স ম আবদুর রব, বিকল্পধারার মহাসচিব আবদুল মান্নান, যুগ্ম মহাসচিব মাহি বি চৌধুরী, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতনসহ দলগুলোর কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

যুক্তফ্রন্ট নেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী একবার বলেছিলেন ০+০+০=০। বর্তমান আমাদের যুক্ত নেতাদের গলাবাজি শুনে সেই পুরনো উপমাটি মনে পড়ছে। এই ফ্রন্টের প্রধান বদরুদ্দোজা চৌধুরী সাবেক রাষ্ট্রপতি ছিলেন। ব্যক্তিগত ভাবমূর্তি মোটামুটি ভাল বলেই সবার ধারণা। সুন্দর করে গুছিয়ে, পেঁচিয়ে, খুব ভাল করে শ্রোতাকে বিভ্রান্ত করতে পারেন। অনেক বড় চিকিৎসক তিনি। ডাক্তারি বাদ দিয়ে রাজনীতি করতে এসে দেশকে তিনি কী দিতে পেরেছেন সে প্রশ্ন করা যেতেই পারে। আওয়ামী নেতা কফিল উদ্দিন চৌধুরীর সন্তান হয়ে স্বাধীনতা বিরোধীদের রাজনীতি করার সুযোগ করে দেয়ার তথাকথিত বহুদলের গণতন্ত্রের প্রবক্তার সাগরেদ সেজে প্রেসিডেন্ট পর্যন্ত হয়েছিলেন। কিন্তু বেগম সাহেবার খাস-মোসাহেব থেকে একটু দূরে চলে যাওয়ায় চাকরি হারাতে হয়। তারপরের ইতিহাস সবার জানা—এক সময়ের তার অতি প্রিয় ছাত্রদলের শিষ্যরা শরীরের ওপর মোটর সাইকেল তুলে দিয়ে তাদের নেতার ঋণ পরিশোধ করেছে। আজব বাংলাদেশের রাজনীতি! এখানে সব পেশায় অবসর নেয়ার নিয়ম থাকলেও মরার আগে কেউ রাজনীতির পদ ছাড়বেন না। কী মধু উহাতে! ওদিকে এরশাদ চাচায় কিছু দিন আগে তার চ্যালাদের নিয়ে সিঙ্গাপুরে যান। জোর গুজব রটে— বিএনপি নেতা প্রিন্স তারেকের প্রতিনিধির সঙ্গে কোনও সমঝোতা, চুক্তি করতেই নাকি চিকিৎসার নাম করে তারা সেখানে গিয়েছিলেন। যদিও এই নির্লজ্জটাকে বিএনপির অনেকেই বিশ্বাস করতে ভরসা পায় না। এই জোকার কখন কী বলে বা কী করে বসে তার কোনও ঠিক নেই। এই বুড়ো-ভামদের আছর থেকে বাংলাদেশ কবে মুক্তি পাবে কে জানে!

বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী একজন বিরাট মুক্তিযোদ্ধা। কিন্তু সেই মুক্তিযোদ্ধার দোহাই দিয়ে পুরো টাঙ্গাইল জেলা দখল করে ফেলেছিলেন। লতিফ সিদ্দিকীর শুণ্য আসনে ঋণ খেলাপি হবার কারণে তিনি উপনির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারেননি। যারা নিজেরা ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে সময় মত ঋণ পরিশোধ করেন না, তারা এমপি,মন্ত্রী হয়ে দেশের কী-টা করবেন? কত দিন মানুষের মাথায় এরা কাঁঠাল ভেঙ্গে খাবেন! এটা ভাবতে খুব দুঃখ আর লজ্জা লাগে যখন একজন মুক্তিযোদ্ধার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, দখলবাজীর অভিযোগ ওঠে। তাহলে আমাদের সামনে আদর্শ বলে থাকবেন কারা? তিনি এখন গলায় গামছা ঝুলিয়ে দেশোদ্ধারে নেমেছেন।

এমনই আরেক মুক্তিযোদ্ধা হলেন আ স ম আব্দুর রব। স্বাধীনতা পরবর্তীকালে শেখ মুজিবের সমালোচনা শুরু করে শেষ-মেষ বৈজ্ঞানিক হয়ে যান। হিরোশিমা, নাগাসাকির মানব বিধ্বংসী পারমানবিক বোমার মতই ছিল তাদের বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র! সদ্য স্বাধীন দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিতে জাসদের ভূমিকা ছিল আত্মঘাতী। আর সেই সুযোগের পুরোদস্তুর সদ্ব্যবহার করেছে স্বাধীনতা বিরোধীরা। বিশিষ্ট বিজ্ঞানী রব সাহেব স্বৈরাচারী এরশাদের গৃহপালিত বিরোধীদলের নেতা ছিলেন। ছিলেন শেখ হাসিনার মন্ত্রীও আর এখন শেখ হাসিনাকে হঠাতে একাট্টা হয়েছেন। আবার দুদিন পরে সুযোগ মত কোন ঘাটে বড়শি ফেলতে যাবেন কে জানে।

আরেক বর্ণচোরা হল মাহমুদুর রহমান মান্না, টিভিতে খুব বড় বড়, সুশীল-সুশীল কথা বলেন। কয় দিন আগেই আওয়ামী লীগ করতেন এখন তার স্বরূপ উৎকটভাবে প্রকাশিত। জামাত-বিএনপির তিন মাসের আগুন-সন্ত্রাসের সময় এই সুশীল মান্না, সাদেক হোসেন খোকার সঙ্গে টেলিফোন আলাপে বলেছিলেন—এখন থামলে চলবে না, অর্থাৎ চলুক পেট্রোল বোমা! দু-চারটা লাশ ফেলতে চেয়েছিলেন, সেই মান্নারা আমাদের গণতন্ত্রের সবক দেন।

এই সব নেতা-পেতারা টিভি দখল করে থাকে কিন্তু রাজনীতির মাঠে তাদের কাউকে আতশি কাচ দিয়েও খুঁজে পাওয়া যায় না। নিজেদের চাপাবাজি দেখে নিজেরাই চমকিত হন,তৃপ্তির ঢেকুর তোলেন। জন সমর্থনহীন এই নেতাদের যুক্তফ্রন্ট গঠন করা দেখে যুক্তফ্রন্ট নেতা সোহরাওয়ার্দীর মত গোল্লা+গুল্লি+গুল্লা=ঘোড়ার ডিম; ইহাই মনে হইতেছে! তেনাদের কর্মী, দল, সমর্থক থাকুক আর না থাকুক তেনারা একেকজন বিরাট বিরাট অনলবর্ষী ন্যাতা! সমাজে ন্যাতার প্রয়োজন আর নেই, এখনকার মেয়েরা খুব স্মার্ট—এখন প্যাডের যুগ! শেষে একটি কবিতার কয়টা লাইন বলি লক্ষ করে দেখেন, বর্তমান সময়েও কত প্রাসঙ্গিক!

‘সবই মোড়ল, সবাই শুনিবে আপন জয়ধ্বনি;
সৈনিক নাই, শত শত দলে শত শত সেনাপতি;
তখ্‌তে চড়িতে পারিল না কেউ, তক্তায় চড়ে নাচে;
তক্তায় ঠাঁই নাই দেখে নেতা হতে উঠে বসে গাছে।’
[কাজী নজরুল ইসলাম]
ছবিঃগুগল
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১:৩৬
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×