somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

শের শায়রী
অমরত্বের লোভ কখনো আমাকে পায়না। মানব জীবনের নশ্বরতা নিয়েই আমার সুখ। লিখি নিজের জানার আনন্দে, তাতে কেউ যদি পড়ে সেটা অনেক বড় পাওয়া। কৃতজ্ঞতা জানানো ছাড়া আর কিছুই নেই।

চলচিত্র ভাষা পেল যাদের হাতে (প্রথম পর্ব)

১৪ ই মার্চ, ২০১৩ দুপুর ১২:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সিনেমার কিছু মহারথীদের কথা শুনাতে চাই যাদের জন্য আজকে আমরা সিনেমা উপভোগ করতে পারছি। প্রাচীন যুগে গুহাচিত্র, রেড ইন্ডিয়ান্দের ধোয়া সংকেত, চিনা ছায়া নাটক বা মধ্যযুগের ম্যাজিক লন্ঠনের মাধ্যমে গতিকে রূপ দিয়ে সিনেমা দেখানোর প্রচেষ্ঠা অব্যাহত ছিল। ১৮১৬ সালে নিসেফোর নীপসে ফটোগ্রাফিক ইমেজ সৃষ্টির মাধ্যমে সিনেমা দেখানোর প্রয়াস সাফল্য লাভ করে। ১৮৮৯ সালে টমাস এডিসন, মারে ও ইষ্টম্যান আধুনিক সিনেমার পথ সুগম করেন।

১৮৯৫ সালে লুমিয়ের ভ্রাতৃদ্বয় প্রথম ক্যামেরা ও আর্ক ল্যাম্প প্রক্ষেপন যন্ত্র আবিস্কার করেন। একই বছর ২৮শে ডিসেম্বর প্যারিসে প্রদর্শন করেন। ছবিগুলো ছিলঃ Baby at the breakfast, The gardern and the horse ইত্যাদি। তবে লুমিয়ের ভ্রাতৃদ্বয়ের এই সব ছবি ছিল নাটক ও কাহিনী বিবর্জিত সাধারন ঘটনা। এর কিছু পরই ছবিতে গল্প বলা শুরু হয়। শুরু হয় সত্যিকার সিনেমা।

সিনেমার ভাষার সাথে জর্জ মেলিয়াসের নাম জড়িয়ে আছে নিবিড় ভাবে। চলচিত্রের ইতিহাসে তাকেই সত্যিকার প্রথম পরিচালক বলা হয়ে থাকে। ফ্রান্সের লোক। ১৮৬১ সালে ফরাসী দেশের এক বিত্তশালী পরিবারে জন্ম। সিনেমার সাথে জড়িত থাকের আগে তিনি ছিলেন জাদুকর। প্রাকৃত পক্ষে জর্জ মেলিয়াসই সিনেমায় কল্পকাহিনীর জন্মদাতা। ১৮৯৭ সালে মে মাসে মন্ট্রিয়ালে একটি ষ্টুডিও প্রতিষ্টা করেন। চলচিত্রের ইতিহাসে এটিই প্রথম ষ্টুডিও। তিনি ট্রিক্স ফটোগ্রাফি, ডাবল এক্স পোজার, সুপার ইম্পোজিশন, টেবল টপ ডামি ও ফেড আউটের মাধ্যমে ফ্যান্টাসি ধর্মের সিনেমার জনক হয়ে গেলেন। তার বিখ্যাত ছবির নাম ‘সিন্ড্রেলা’।

বিভিন্ন কারনে ১৯১৩ সালে তিনি সিনেমা থেকে বিদায় নিন। ১৯২৩ সালে একটি খেলনার দোকানে চাকুরী নেন। ১৯২৯ সালে এক বিলম্বিত সংবর্ধনা দেয়া হয় এবং ‘ক্রশ অভ দি লিজিয়ন অব অনার’ এ ভূষিত করা হয়। প্যারিসের এক শহরতলীতে ১৯২৮ সালের ২১শে জানুয়ারী মৃত্যু বরন করেন।

সিনেমায় কিভাবে কাহিনী সাজাতে হয় সে কায়দা যিনি প্রথম দেখিয়েছিলেন তার নাম এডুইন এস পোর্টার। ১৯০২ সালে তিনি নির্মান করেন ‘লাইফ অভ আ আমেরিকান ফায়ারম্যান’। শুরু হয় সিনেমার ইতিহাসে সময় ও স্পেশ ভাঙ্গার। ১৯০৪ সালে তিনি নির্মান করেন ‘দ্যা গ্রেট ট্রেন রাবরী’। এ ছবিতে তিনি নাটকীয়তা আনলেন প্যারালাল কাটিং বা প্যারালাল এডিটিং এর মাধ্যমে।

এরপরেই নাম করতে হয় আমেরিকার পরিচালক ডি ডব্লিঊ গ্রিফিথের। তার সন্মন্ধ্যে সত্যজিৎ রায় বলেছেন, ‘ক্যামেরা ও এডিটিং এর যে বিশেষ বিশেষ ব্যাবহারের উপর সিনেমার ব্যাকরনের ভিত্তি তার প্রায় সবটাই গ্রিফিথের আবিস্কার। তিনি প্রথম যে বিষয় উপলদ্ধি করেন তা হল, মুখে যেমন এক নিঃশ্বাসে গল্প বলা যায়না তেমনি সিনেমার দৃশ্যকেও খন্ড খন্ড শট এ সাজিয়ে বলতে হয়। গ্রিফিথ এর এই প্রাথমিক ধারনার ফলে সিনেমার এই ছন্দোবদ্ধ সাহিত্য-নাটক-চিত্রকলা-সংগীতাশ্রিত ভাষা নির্বাক যুগের মাঝামাঝি (অর্থাৎ ১৯১৫ সাল) একটা বেশ স্পষ্ট চেহারা নিয়েছিল।

সিনেমাকে এপিক বা মহাকাব্যিক মাত্রায় ব্যাবহার করেছেন গ্রিফিথ। তার মাধ্যমেই সৃষ্টি হল ক্লোজ আপ, লং শট, মিডলং, হাই অ্যাঙ্গেল, লো অ্যাঙ্গেল, টপশট। আলোর ক্ষেত্রে ও গ্রিফিথ বিপ্লব ঘটালেন, কুয়াশাচ্ছন্ন, দিনের আলো, রাতের আলো ফুটে ঊঠল পর্দায়। সূর্যের আলো প্রতিফলিত করার জন্য এখন যে রিফ্লেক্টর ঘাড়ে করে ঘোরা হয় তাও কিন্তু গ্রিফিথের আবিস্কার।

১৮৭৫ সালের ২২শে জানুয়ারী আমেরিকার কেনটুকিতে জন্ম গ্রহন করেন গ্রিফিথ। পোর্টারের ছবির পার্শ্ব অভিনেতা হিসাবে সিনেমায় পদার্পন করেন। ১৯০৮ থেকে ১৯১৩ সাল পর্যন্ত তিনি প্রায় ছোট ছোট চারশ ছবি তৈরী করেন এরপরই শিল্পীদের বড় শত্রু পৌঃনপূনিকতায় গ্রাস করে। সিনেমার ভাষায় তার ছবি ফ্লপ করে। জীবন সায়াহ্নে আধুনিক চলচিত্রের জনকের সঙ্গী ছিল চরম দারিদ্র, হতাশা, আর পানশালা।

গ্রিফিথের পরেই আসে সের্গেই আইজেনষ্টাইনের নাম। বিশেষ করে তিনি ‘মন্তাজ’ তত্ত্বের জন্য বিখ্যাত। ভিন্ন ভিন্ন অর্থবোধক শট পরপর জুড়ে দিলে একটি নতুন অর্থবোধক শট সৃষ্টি হতে পারে, অথবা যে শটের কোন অর্থই নেই সেই শটও অন্য একটি অর্থবোধক শটের সাথে জুড়ে দিলে দুইয়ে মিলে একটি অর্থবোধক ভাব সৃষ্টি হয়। এরই নাম মন্তাজ। নির্বাক চলচিত্র যুগে ছবির ভাব মূলত মন্তাজের সাহায্যে প্রাকাশ করা হত।

চলচিত্রের ক্ষেত্রে তার আরো একটি অবদান টাইপেজ। এটা বলতে বুজায় টাইপ ভূমিকায় অপেশাদার অভিনেতা নির্বাচন। আরো সূক্ষ্মভাবে বললে, এই সমস্ত অভিনেতার সাজ সজ্জাবিহীন মুখাবয়ব ও অভিব্যাক্তির সমাহার। মন্তাজের ক্ষেত্রে শট যেমন প্রধান উপকরন, তেমনি টাইপেজের ক্ষেত্রে প্রধান উপকরন ক্লোজআপ।

চলচিত্র শিল্পের এই স্মরনীয় ব্যাক্তি ১৮৯৮ সালে সোভিয়েত রাশিয়ায় জন্ম নেন। তিনি ছিলেন আর্কিটেকচার, আবার ছবিও আকতেন তাই তার ছবিতে শৈল্পিক চেতনার পাশাপাশি ফর্ম নিয়ে কাজ করার লক্ষন স্পষ্ট। তিনি ১৯৪৮ সালে মারা যান। তার বিখ্যাত কয়েকটি ছবি Strike (১৯২৪) Battleship Potemkin (১৯২৫) ও Ivan the Terrible (1st part 1946 & 2nd Part 1947)

পোষ্টারের জন্ম হল কেমন করে

বাংলার ইতিহাসে প্রথম নারী অভিনেত্রী বিনোদিনী দাসীর কথা

চলবে

কৃতজ্ঞতাঃ
http://en.wikipedia.org/wiki/D._W._Griffith
Click This Link
Click This Link
http://en.wikipedia.org/wiki/Sergei_Eisenstein
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৪:০৬
৩০টি মন্তব্য ৩০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×