somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এই জনপদে

১২ ই জুন, ২০১৮ দুপুর ২:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলছে। আকাশে বাজ পড়ার শব্দের মত আওয়াজ তুলে যুদ্ধ বিমান মাঝে মাঝে এই জনপদের উপর দিয়ে উড়ে যায়। কেউ বলে জাপানীদের প্লেন কেউ বলে ইংরেজদের। এখানকার মানুষেরা সঠিক কোন খবর পায়না। মাঝে মাঝে দূরে বোমার শব্দ শোনা যায়, কেউ কেউ আতংকিত হয় কেউ তেমন অবাক না হয়ে নিজের কাজে লেগে পড়ে।
জাহানপুর গ্রামে ইংরেজদের যুদ্ধ বিমান নামার জন্য রানওয়ে বানানো হচ্ছে। ইট , পাথর, বালু আসছে নানা জায়গা থেকে। কখনো ট্রাকে কখনো গরুর গাড়িতে, মালবাহী ট্রেনে করেও সময় সময় নানান জিনিস আনা হচ্ছে এখানে। চারিদিকে কাজ আর কাজ,অনেক মানুষ কাজ করছে রানওয়ে নির্মাণে, চারিদিকে সাজ সাজ রব।
খবর এসেছে জাপানীরা বার্মা দখল করে নিয়েছে, তারপরিতারা ব্রিটিশ ভারতে ঢুকে পড়বে। ইংরেজরা একটা কঠিন শিক্ষা পাবে। কেউ কেউ ভাবছে ইংরেজরা তো ভালই ছিল, সয়ে গেছে তাদের অত্যাচার, জাপানীরা না জানি কেমন হয়। স্বাধীনতা বা পরাধীনতা বোঝার সময় এদের নাই। শ্রম দিয়ে ফসল ফলিয়ে বছর কাটায়, বাচ্চা কাচ্চা বোর করে। গ্রামের জীবনে একটু হাসি কান্নার গল্প নিয়ে এদের দিন গুজরান।
এই জনপদের বুক চিরে চলে গেছে ট্রেন লাইন, দিনে রাতে দুই বার করে চারটা ট্রেন চলে এই লাইন দিয়ে।কয়লার ইঞ্জিনের ধোঁয়া আর শব্দ তুলে ট্রেনের ইঞ্জিন কু ঝুক ঝুক করে চলে যায়। এরপর এলাকাতে আবার সেই আগের নিস্তব্দতা নেমে আসে।
এই ট্রেনে করে এখন নাকি সৈন্যরা বার্মায় যাবে। তাদের জিনিসপত্র এখন ট্রেনে করে সেখানে যাচ্ছে। সেই কলকাতা থেকে ঢাকা , তারপর চট্টগ্রাম সেখান থেকে আরও দূরে দোহাজারি পর্যন্ত এই লাই চলে গেছে। তারপর অনেকদুর গেলে বার্মার পশ্চিমের রাজ্য আরাকান। এই রাজ্য ও ব্রিটিশদের দখলে। জাপানীরা নাকি ব্রিটিশদেরকে হারিয়ে দিয়ে বার্মা দখল করে নিচ্ছে, তাই যুদ্ধ চলছে জরেসরে। গুজব সব গুজব, বলছে কেউ কেউ, ব্রিটিশদেরকে হারাবে জাপানীরা, হা , তামাশা নাকি।
সৈয়দ আহম্মদ কন্ট্রাক্টারের ব্যবসা জমজমাট, ইট, কাঠ, পাথর, বালুর সাপ্লাই চলছে, দেদারছে কাঁচা টাকা আসছে। শত শত শ্রমিকের বাদশা এই কন্ট্রাক্টার, তারা তার নাম শুনেই কাপে।দিনের শেষে সময় মত মজুরী সে পরিশোধ করে দেয়। দূর থেকে মাঝে মাঝে তাকে স্রমিকেরা দেখে,তার লোকজন এইসব শ্রমিকদের দিয়ে কাজ করায়।
এই লাইন ধরে মাইলখানেক গেলে রেল লাইনের পূর্ব দিকে একটু দুরেই কন্ট্রাক্টারের বাড়ী, ইট সিমেন্টের পাকা দালান। আশেপাশে এত জমকালো দালান কেউ এখানে দেখেনি। বাড়ীতে ঢুকতেই হাতের বামে পুকুর, রাস্তার দুপাশে সুপারি গাছের সারি, বাড়ীর চারিদিকে নারকেল গাছ, বাড়ীর সামনে উঠান, উঠান পার হলেই ফলের বাগান, কি নেই সেখানে। বাড়ীর দক্ষিণের রাস্তা থেকে বাড়ীর রাস্তা শুরু, সেই রাস্তার ওই পাড়ে মিজি বাড়ী, এরা এখানকার আদিবাসী। বহু বছর ধরে এরা এখানে বাস করছে, এটা এদের বাপ দাদার ভিটা কন্ট্রাক্টরের সাথে তাদের একটু দুঃসম্পর্কের আত্মীয়তা আছে শোনা যায়। আট দশ বছর আগে যখন কন্ট্রাক্টার বাড়ী বানাতে চায় এই গ্রামে তখন এরাই তাদের জায়গা বিক্রি করে দেয়। এই জায়গা যে এত দামে বেচা যাবে ভাবতে পারেনি তারা । কে কিনবে এই পতিত জমি । চাষাবাদ ও যে হয় না এই জংলায়। এই জংলা সাফ করে পুকুর, বাগান বাড়ী এখন সব ঝক ঝক করছে মিজিদের এখন ঈর্ষা হয় এই কন্ট্রাক্টারকে, তারা চুপ করে থাকে আর দেখে কি থেকে কি হয়ে গেছে । বেটার অনেক ঠাট , অনেক টাকা সরকারের সাথে তার যোগাযোগ আছে, ব্রিটিশ রাজের কাজকর্মে তার প্রয়োজন এখানকার কেউ অস্বীকার করতে পারে না। রাস্তার ওপারে মিজিদের দাদার নামে সে একটা মসজিদ বানিয়ে দিয়েছে। সকাল সন্ধ্যা পাঁচ ওয়াক্ত আজান আর নামাজ হয় সেখানে। কন্ট্রক্টারের বাড়ীর কাজের সাথেই এই পাকা মসজিদের কাজ শেষ হয়।মসজিদের সামনে বিশাল পুকুর, ঘাঁতটা সেই বাঁধিয়ে দিয়েছে মুসল্লিদের অজু করার সুবিধার জন্য। মসজিদ থেকে পুব দিকে তাকালে ধান ক্ষেত পেরিয়ে রেল লাইন দেখা যায়। পুকুরের পুব পাড়ে মিজিদের কবরস্থান। মসজিদের পশ্চিমে মিজিদের বাড়ী। পুকুরের আরেকপারে পূর্ব দক্ষিণ কোনে মাস্টার বাড়ী, এটাও এদের বাপ দাদার ভিটা। মাস্টারের অনেক কটা ছেলেমেয়ে, এছাড়া এলাকা বেশ নীরব, মানুষজন অনেক কম গ্রামের এই অংশে। ছায়া ঢাকা শীতল ঝিমানো ঢিমে তালে চলা জীবন , এই জনপদে।
কন্ট্রাক্টারের বাড়ী বানানো আর বিয়ের দিনের কথা এই এলাকার অনেক পুরানো লোকজন এখনো মনে রেখেছে। বহু বছর পর তারা একটা জাকজমক বিয়ে খেয়েছিল তখন। বহু ধুমধামে অনেক ধনী পরিবারের মেয়ের সাথে তার বিয়ে হয়। বারাহিপুর গ্রামের প্রায় সব মানুষই এই বিয়েতে দাওয়াত পায়। বাহির থেকে অনেক শহুরে মানুষ আসে এই অনুষ্ঠানে। তার শ্বশুরদের অনেক জায়গা জমি, সহায়সম্বল প্রচুর, ধনী জামাই পাওয়াতে তারা বেশ খুশি।
যুদ্ধ চলে বেশ কিছু দিন, তারপর যেমনি হঠাৎ করে শুরু হয়েছিল তেমনই একদিন শোনা যায় যুদ্ধ নাকি শেষ হয়ে গেছে , বার্মায় ব্রিটিশদের কাছে জাপানীরা হেরে গেছে, ইংরেজরা বার্মা থেকে তাদের তাড়িয়ে দিয়েছে। যুদ্ধ শেষে ব্রিটিশরা আবার জাঁকিয়ে বসবে ভারত আর বার্মায়। ভারতের স্বাধীনতার স্বপ্ন বুঝি আর পুরন হবার নয়। যুদ্ধ কারো জন্য সৌভাগ্য আনে আর অনেকের জন্য আনে দুর্ভোগ। যুদ্ধ শেষ, রমরমা সাপ্লাই ব্যবসাও শেষ, কাঁচা টাকার ছড়াছড়ি কমে যায় হঠাৎ করে। কাজকর্ম এতদিন যা ছিল তা বন্ধ হয়ে গেছে, মানুষ আবার ফিরে যায় মাঠে, ধানক্ষেতে আবার সেই চাষাবাদে।
চলবে............
কেমন লাগছে জানাবেন, ধন্যবাদ

সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জুন, ২০১৮ দুপুর ২:৪৮
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×