আচ্ছা একটা পৃথিবীর কথা চিন্তা করুন তো যেখানে কোন আবেগ নাই। জন্ম দেবার পর মা সন্তান কে রেখে চলে যাবে, পিতা সন্তানের ভরনপোষন এর দায়িত্ত্ব নিবে না। বৈবাহিক সম্পর্কের মধ্যে শারিরীক চাহিদা ব্যাতিত কোন অনুভুতি কাজ করবে না । আপ্নি কাউরে মিস করতেছেন না, কিংবা আপনার সাময়িক বা স্থায়ী অনুপস্থিতি পৃথিবীর কোন মানুষের কাছে কোন গুরুত্ত্ব রাখে না । আপ্নার বার্থডে তে কেউ বারোটা এক মিনিটে উইশ করতেছে না, জিজ্ঞাসা করছে না আপনি রাতে খেয়েছেন কিনা, আপনার অযৌক্তিক অভিমান গুলোকে ভাংগিয়ে দেবার জন্য কেউ নিষ্ফল অভিনয় করছেনা। জ্বরে যখন শরীর পুড়ে যাচ্ছে আপ্নার মাথায়হাত বুলিয়ে দেবার কেউ থাকছে না………… চিন্তা করতে পারছেন এমন একটা পৃথিবীর কথা ?? যদি পারেনই তাহলে প্রশ্ন করি প্রোগ্রাম ঢুকানো একটা মাইক্রোকন্ট্রোলার রোবট আর আপ্নার আমার মধ্যে পার্থক্যটা থাকছে কি ?
আবেগ জিনিস টা একটা সামগ্রিক অর্থ বহন করে, এটা শুধু রিলেশান আর ছ্যাকা খাওয়া অথবা নিজেকে গুরুত্ত্বহীন মনে করবার মধ্যে সীমাবদ্ধ না।এর সংগা এবং প্রয়োগ অনেক অনেক বিস্তৃত, প্রেম-ভালোবাসার মত বিষয়গুলো একটা প্রয়োগের একটা ক্ষেত্র মাত্র। আমি মনে করি, বাস্তবিক জীবনে আপ্নার ভিতরে যতটা আবেগ বেশি থাকবে আপ্নি ততটা ভাল মানুষ। আপ্নি ততটা রেস্পসিবল এবং একটা খারাপ কাজ করতে আপ্নার হাত তত টাই কাপবে। ইদানিং আমাদের ইয়াং জেনারেশানে যেটা বোঝানো হয় যে, একটু বেশি আবেগ থাকাটা অনেক খারাপ। অনেকেই রিলেশানের ব্যাপারে প্রচুর ডেডিকেটেড থেকে, পরে কোন কারনে ধাক্কা খেলে তারা চেষ্টা করে নিজেকে অনুভূতি শূণ্য বানিয়ে ফেলতে। ইভেন অনেকে পারেও… আমি বেশ কয়েকটা দেখেছি এমন পরিবর্তন। আমার কিছু কথা আছে … দেখুন, একজন অমানুষ যদি আপ্নার আবেগের মূল্য না দিতে পারে সেটা কি আপ্নার দোষ ?? হুনুমানের কাছে হীরকের কোন মূল্য নেই। হ্যা,,,,,আপ্নি সর্বোচ্চ খেয়াল রাখতে পারেন যেন আপ্নার আবেগগুলার অপব্যাবহার না হয়, কিন্তু আবেগহীন হতে হবে কেন? কিন্তু আমি যদি আজ কোন অমানুষের ধাক্কায় নিজের আদর্শকে পরিবর্তন করি , নিজের আবেগ-অনুভুতি গুলাকে নষ্ট করি তাহলে আমি যে ভবিষ্যতে ঐ অমানুষটার মত বিহ্যাব কর্ব না তার গ্যারেন্টি কেউ দিতে পার্বে? আর আমি যদি ঐ আবাল টার ধাক্কা খেয়ে ওর মত হয়ে যাই তাহলে বিজয় টা আসলে কার হলো ?? নিঃসন্দেহে ঐ আবালটার। আচ্ছা কয়েক মুহূর্তের জন্য ধরেই নিলাম যে আপনি আস্তে আস্তে আবেগহীন হয়ে গেলেন … আগে ছোট ছোট যে ব্যাপার গুলো আপনার মধ্যে অনুভূতির সঞ্চার করত আজ সেগুলা আপনার মধ্যে কোন প্রতিক্রিয়া তৈরী করছে না। তো আপনি কি নিজেকে সফল ভাববেন ? একসময় আপনার জীবনে এমন এক জন তো অবশ্যই আসবে যার কাছে আপ্নিই সর্বোচ্চ গুরুত্ত্বের, হয়ত সে হবে আপনার স্বামী, স্ত্রী, অথবা আপনার সন্তান। তখন হয়ত এমন হবে যে আপনাদের দাম্পত্য জীবনের ছোট ছোট খুশির মুহূর্তগুলো আপনার মধ্যে কোন প্রতিক্রিয়া তৈরী করছে না। নামাজে দাড়িয়েছেন, সৃষ্টিকর্তার কাছে কিছু একটা খুব করে চাচ্ছেন, কিন্তু আপনার চোখে পানি আসছে না। আপনার স্বামীর ছোট্ট অনুরোধ টাকে আপনার কাছে শাসন মনে হচ্ছে, স্ত্রীর মেয়েসুলভ অভিমানটাকে ন্যাকামি মনে হচ্ছে … এমন অনুভূতিহীন হয়ে কার লাভটা হবে ??? চিন্তা করতে পারছেন যে অতীতের একটা অমানুষের থেকে ধাক্কা খেয়ে আপনি ভবিষ্যতের কতগুলো গুরুত্ত্বপূর্ণ মানুষের সাথে অবিচার করতে চলেছেন ??
আপনি মানুন আর না মানুন এই পৃথিবীটা টিকে আছে, আমরা মানুষরা টিকে আছি, সামাজিক জীব হিসেবে নিজেদের জাহির করছি শুধুমাত্র আমাদের মধ্যে আবেগ-অনুভুতি আছে বলেই। হ্যা,,,,পৃথিবী আপ্নার ইমোশোন নিয়ে খেলবে, আপনি আমি সুযোগ করে দিলে কেউই ছেড়ে দিবে না। কারন ঢিলা সবসময় ভালো ফল দেওয়া গাছ টাতেই মারা হয়, শৈবাল এর গায়ে ঢিল পড়ে না। এখন সেজন্য আমগাছ বাদ দিয়ে শৈবালের চাষ করতে যাওয়া কি বুদ্ধিমান এর কাজ হবে??
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:৩২