somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার,অনেকের হৈচৈ এবং কিছু উত্তর

০৬ ই জানুয়ারি, ২০১০ বিকাল ৩:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইদানীং আমাদের দেশে 'থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার' নামক একটি চলচ্চিত্র নিয়ে খুব বেশী আলোচনা এবং তার চেয়ে বেশী সমালোচনা হচ্ছে।
এই বিষয় নিয়ে কিছু কথা বলা জরুরী মনে করছি ।

কোনো চলচ্চিত্রকে আমরা প্রধানত: দুটো আঙ্গিক থেকে বিবেচনা করতে পারি -
১। শিল্প সৃষ্টির দিক থেকে
২। সামাজিক দায়বদ্ধতার দিক থেকে

যদিও প্রথম দিকটাই শিল্পের ক্ষেত্রে অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ তবুও বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষিতে দ্বিতীয় প্রসঙ্গটার আলোচনাই জরুরী বলে মনে হচ্ছে ।
কারণ আমাদের সামাজিক মানুষেরা এই ছবির নানাবিধ অসামাজিক কার্যকলাপ আর একেবারেই সহ্য করতে পারছেন না ।


তাদের এত হইচই এবং দুর্ভাবনার কারণ হচ্ছে - এই ছবিতে 'লিভ টুগেদার' নামে একটি চরম নির্লজ্জ অপসংস্কৃতির চর্চা দেখানো হয়েছে এবং
আমরা যেহেতু সবসময় খারাপ বিষয়গুলোই স্বার্থকভাবে গ্রহণ করতে পারি , তাই ভয় এটাই যে - খুব শিগগিরই আমরা আমাদের জীবনব্যবস্থার মাঝে এটা গ্রহণ করে ফেলব।

গত এক দশকে আমাদের সমাজের অনেককিছু পাল্টেছে । পাল্টানোর প্রধান অনুসঙ্গ মানুষের সাথে মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ।
যে কোনো পরিবর্তন সমাজের মানুষের জীবনাচরনে নানারকম পরিবর্তন নিয়ে আসে। সে পরিবর্তন ভালো বা খারাপ দুটোই হতে পারে ।
একজন শিল্পীর দায়িত্ব হলো সেই পরিবর্তনের স্বরুপ(ভালো এবং খারাপ দিক) মানুষের সামনে তুলে ধরা যাতে মানুষ বুঝতে পারে এই পরিবর্তন তার
সমাজের জন্য গ্রহণযোগ্য বা মঙ্গলজনক কি না এবং যাতে এটা বোঝার পর সে অনুযায়ী মানুষ সিদ্ধান্ত নিতে পারে ।

অবশ্য পরিবর্তন চেপে যাওয়া,তাকে স্বীকার না করার অনেক উদাহরণ আমাদের সামনে আছে । আমাদের সরকার একসময় গলা উঁচিয়ে বলেছিলেন আমাদের দেশে কোনো জঙ্গি নেই ।
আমরা ভালো আছি ।
অনেকগুলো নিরীহ লোকের মৃত্যুর পর তারা যখন সগৌরবে নিজের অস্তিত্বের জানান দিলেন তখন সরকার না মেনে আর থাকতে পারলেন না।

এরকমভাবে আমাদের মাঝে যারা 'থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার' নিয়ে বিক্ষোভ করে বলছেন যে আমাদের সমাজে নেই এমন একটা কনসেপ্ট (লিভ টুগেদার) কে এখানে দেখিয়ে
আমাদের উন্নত নৈতিক চরিত্র একেবারে ধসিয়ে দেয়া হচ্ছে তাদের একটা ব্যক্তিগত পরিসংখ্যান দেই।

আমার বয়সী যাদের সাথে আমার সামনাসামনি বা ফোনে যোগাযোগ আছে এরকম লোকের সংখ্যা কম-বেশী ৫৬ জন ( যাদের সাথে হাই-হ্যালোর সম্পর্ক না ) । সংখ্যাটা বলা একটা কারনে জরুরী।
পরে সেকথায় আসছি ।

আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের একজনের(ধরা যাক তার নাম X) কথা বলছি । আমাদের এক সিনিয়র ভাই বিয়ে করে বউ দেশে রেখে বিদেশে পড়াশোনা করতে গেছেন ।
বউ কোন এক বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী (বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম বলা জরুরী মনে করছি না)। তো উনার এবং X এর মাঝে যোগাযোগ হলো ।
বলা দরকার X এরও একটি বালিকাবন্ধু(girlfriend) ছিলো। যাই হোক নতুন বউয়ের একাকীত্ব এবং X এর শারীরিক চাহিদা এই দুইয়ের কারণে তারা নতুন
এক সম্পর্কের সূচনা করলেন । কোনো দায়বোধ,ভবিষ্যৎ ভাবনা ছাড়া নিখাদ শারিরীক সম্পর্ক ।

X বর্তমানে ফেসবুকে 'বিয়ে করার আগে সেক্স বা জেনা করা হারাম' টাইপের একটা গ্রুপের সদস্য এবং সে খুব জোর গলায় বলে যে এটা অবশ্যই করা উচিত না;
এটা আমাদের সংস্কৃতির পরিপন্থী ।

এবার একটা কথা এসেই যায় - সিনেমার লিভ টুগেদার দেখে আন্দোলন কারা করতে পারে এবং তারা কেন করে ?

আমি 'থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার' ছবিটা তিনবার হলে গিয়ে দেখেছি । এরমাঝে একবার আমরা ১৪ জন বন্ধু হলে গিয়েছিলাম ।
সিনেমা শেষে হল থেকে বের হবার সময় ১৪ জনের একজন বললো সে এমন একজনের ঘটনা জানে যার জীবনের ঘটনা মোটামুটি সিনেমার লিভটুগেদারের মতো।

আমার ৫৬ জনের তালিকায় আরও একজন আমাকে এর কাছাকাছি একটা ঘটনা বলেছে । অবশ্য সেখানে সরাসরি লিভ টুগেদারের লেবেল ছিলো না।

তাহলে ৫৬ জনের মাঝে সম্ভাবনাটা দাঁড়ালো - ২/৫৬ । (বন্ধুর পরিচিতজনকে হিসাব থেকে বাদ দিলাম)

এবং এই সবগুলো ঘটনা ঘটেছে ছবিটি প্রকাশিত হবার অনেক আগে ।

এবার আরেকটা দিক দেখা যাক । এত কিছুর পরেও সিনেমায় লিভ টুগেদার এর বিষয়টাকে উৎসাহিত করা হয়েছে কী না ।
প্রথমে এই ছবিতে একটা স্বীকৃতিহীন সহাবস্থান (লিভ টুগেদার) এর যে নেগেটিভ চিত্রগুলো দেখানো হয়েছে সেগুলো দেখি -

১। রুবাকে শ্বশুরবাড়ি থেকে বের করে দেয়া হলেও সে কোনো প্রতিবাদ করতে পারেনি তার সামাজিক অধিকার না থাকার জন্য যা তার
অবস্থানজনিত জটিলতা তৈরী করে ।

২। রুবার স্বামী মন্টু সবসময় জেলের মাঝে তার বৌকে নিয়ে অনিশ্চয়তায় থেকেছে যেহেতু তার বৌ একা একা থাকে।

৩। মন্টুর এই অনিশ্চয়তা এবং সন্দেহ ও রুবার সামাজিক অবস্থানহীনতা তাকে তার পুরনো বন্ধুর সাথে অন্তরঙ্গ হতে উৎসাহিত করেছে যা পরবর্তীতে
রুবার জীবনে অসহনীয় জটিলতা সৃষ্টি করে ।

৪। মন্টু জেল থেকে ছাড়া পাবার পর সব জেনেও রুবাকে ভালোবাসার অধিকার নিয়ে তার সাথে থাকার জন্য জোর করতে পারেনি,শুধু সামাজিক অধিকার না থাকার কারনে।

অপরদিকে লিভ টুগেদার করে তারা বাক-বাকুম সুখে ছিলেন সিনেমার কোথাও এমন কোনো দৃশ্য দেখানো হয় নি।
দর্শক কোথাও দেখে থাকলে সেটা তার উর্বর মস্তিষ্কের কল্পনায় ।

এত সমস্যা দেখানোর পরও যদি কেউ এই আচরনকে বা এই সম্পর্ককে নিজের জীবনে অধিগ্রহণ করতে চান সেটা নিতান্তই তার ব্যক্তিগত পছন্দের ব্যাপার।
তার জন্য ঘেউ ঘেউ করে একটা সিনেমাকে দায়ী করার কোনো কারন দেখি না ।

সমাজের উপাদান থেকেই একজন শিল্পী তার বিষয় খুঁজে নেন ; মানুষকে জানাবার জন্য যাতে মানুষ তার বিবেচনাবোধ দিয়ে বিষয়ের ভালো বা খারাপ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে ।

এই বিষয়ে একটা কথা না বললেই না । আজ থেকে তিন-চার বছর আগেও ধর্ষণের দৃশ্য প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে অনেক বাংলা ছবিতে উপস্থিত ছিলো।
তখন আমাদের জ্ঞানী সমাজ এতটা উত্তেজিত হন নি সমাজকে বাঁচানোর জন্য ।

ধর্ষণ কী তাদের কাছে সঠিক মনে হয়েছিলো ?
নাকি আজকে নিজেদের জীবনের সত্য কথাটা বলাতেই ফোস্কাটা বেশী পড়ছে ?

এই সিনেমার শিল্পমান নিয়ে পরবর্তী কোনো পোস্টে লেখার চেষ্টা করব ।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জানুয়ারি, ২০১০ রাত ১১:১৪
১৯টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×