somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এক গুচ্ছ কবিতা

২৮ শে আগস্ট, ২০১৫ সকাল ৯:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভালোবাসা ভিখারী করেছে
লেখক - শ্যামল সোম

কেন, কেন তুমি, এতটা ভালোবেসে ছিলে ?
নিঃসঙ্গ রেখে,  অবহেলে তুমি চলে গেলে ?
চেনা লাগে আমাকে, যে এখন অপেক্ষায়
আছে মরণের ।
হায় ! আমার পঞ্চাশ বছর
মনামী আমার প্রাণ আমার মন, তোমাকে
ভালোবাসে আজ কাঙালের বেশে ফিরছি,
দূরে দূরে  দ্বারে দ্বারে ভিক্ষা করে ফিরি এক
মুঠো ভালো ভালোবাসা যা হারিয়ে ছিলাম
ঝিলামের ধারে ।
পঞ্চাশ বছর আগে ঐ ঝিলামের জলে তুমি
হাত ধরে নিয়ে গিয়ে ছিলে স্নানে, জলপরী
তুমি আমাকে বুকে নিয়ে ভেসে ভেসে এ কি ?
এ কোথায় আনলে, আশ্চর্য নীলাভ আলোয়
লতা, গুল্ম, জলজ উদ্ভিদ, প্রবাল, শঙ্খ, শামুক
ঝিনুক, মনি মুক্ত  খচিত প্রাসাদের এ আমি
কোথায় এলাম ?
বিশাল প্রাসাদে কেউ কোথাও নেই,  একা এই
নির্জন পুরীতে ।
" মনামী ! মনামী ! " চিৎকার করে ডাকছি
সে ডাক প্রতিধ্বনি হয়ে ফিরছে, দিন গেলো ।
রাত এলো একা ভয়ংকর ভাবে একা একা বছরের
পর বছর অপেক্ষায় থেকে ভীষণ ক্লান্ত, অবসন্ন,
বিষাদে, বিষন্ন হয়ে চলে গেলো এতগুলো বছর ।
আজ একা পঞ্চাশ বছর পেরিয়ে এসে অপেক্ষায় আছি l



আমার স্বপ্নে নামে রাত পরী আমার মৌমিতা

শ্যামল সোম

জ্যোৎস্নার আলোয় ঐ চিক মিক করছে -মধুমতী নদীর জল, রাতে নদীর পারে
হাতটি ধরে আনলো মেয়ে, সে রাত পরী।
তখন ঘুম রয়েছে চোখে, এই শিশির ভেজা, ঘাসের পরে পাশে বসিয়ে মেয়ে চেয়ে থাকে
আমার মুখের পানে, রূপসীর কালো চোখের তারা, কি যেন করে ইশারা, আমি অবাক চোখে
চেয়েআছি, এক ভালো লাগায় ভরে উঠলো মন।
ঝাঁপিয়ে এলো ঝর, এখন ঐ শন শনিয়ে বহিছে, বাতাস; ঝরের মাতন সে এক পাগলা নাচন, দুলছে গাছ, উড়ছেপাতা, ভাঙছেডাল, রাত পরী ঝরের মাঝে উঠলো নেচে, " হৃদয় আমার নাচে রে আজিকে ময়ুরের মতো নাচেরে।"
ভেসে আসছে গান, মেয়ের আপন হাতের দোলায় দুলে উঠলো প্রাণ, কাঁপিয়ে বৃষ্টি নামলো অঝরে ঝরে বৃষ্টির জলে ভিজে আমাকে দু- হাতে ধরে, কোমর জড়িয়ে নাচছে, নাচে সে নেচেই চলে।
হাতটা ধরে দৌড়ে গিয়ে এক বিশাল অশ্বত্থ গাছের, তলায় আসি আমরা দুজনে, দুজনে দুজনের দিকে অপলক চোখে চেয়ে আছি, আকুল ধারায় বৃষ্টি ঝরছে।
বৃষ্টির শব্দ ভাসিয়ে নিয়ে চলছে কোথায়, আনন্দ স্বর্গের উদ্যানে।
রাত পরীর কাঁধে রেখে হাত, মুগ্ধ দৃষ্টি মেলে,
এই শরীরের নিবিড় আকর্ষণে দৃঢ় আলিঙ্গনে, তৃষিত চুম্বনে নরম ভিজে ঘাসের শয্যায়, ভেসে যাই অকুল দোরিয়ায়, হালভাঙা, ছেঁড়া পাল, নৌকো টালমাতাল, ভেসে চলি অনন্ত এক অজানা যাত্রায়।

সখী সংবাদ

শ্যামল সোম

আয় সখী আয় আমরা দুজনে এই নিরালায় বসে
আয় সখী আজ এই নির্জনে ঘাটে জল আনতে এসে
এই খানে দুজনে একটু বসি, ও সই তোর মনের দুখের
কথা বল?

কি আর বলবো সই, সোয়ামীর মন পেতে কাল রাতে,
সেজে রঙিন শাড়ী পরে, চোখে সুর্মা, দুহাতে রঙিন
বাহারী চুড়ি, কত অধীর আগ্রহে স্বামীর জন্য বিনিদ্রায়
রাত যাচ্ছে, জোছনভরা আকাশে সাথে জাগছিল তারারা।

ও বুঝেছি ! বৃথা রাত গেল, ফিরলো না সে, ফজরের আযান
ভেসে এলো, আকাশ ভোর হয়ে আসছে, বসলি প্রার্থনায়!

সখী এবার তোর কথা বল?

বলতে সরম লাগে,

ঢঙ, আমার কাছে লজ্জা লাগে?

মনের ব্যথা সখী তোরে ছাড়া করে কই?
সোয়ামী রাতে কাজের শেষে ফিরলো ঘরে
পানি আনলাম, গামছা দিলাম, গোসল করে
এলো সে, কত সময় নিয়ে সেজে গুজে এত
আশা নিয়ে ওর পানে চাইলাম, যদি একটু
জড়িয়ে আদর করে, হায় পোড়া এ কপাল
ফিরেও একবার ক্ষণিকের জন্য চোখ মেলে
দেখলো না, খেতে চাইলো রাতের খাবার
খেয়ে সাতটি তাড়াতাড়ি বিছানায় শুয়ে
নাক ডাকছে, মন পুড়ছে, দাউ দাউ করে
জ্বলছে আগুন, ফাগুন মাসে, শীতল হলাম
কই? বুকের মাঝে শুধু কষ্ট মুখ বুজে সহি।






আমার প্রাণের আবদুল

শ্যামল  সোম

আবদুল মাঝি কথা দিয়ে ছিলে তুমি আজ ভোর রাতে
নৌকা ভাসিয়ে আড়িয়াল খাঁ গাঙের জলে বৈঠা বেয়ে
ভেসে ভেসে এসে উঠবো পদ্মার চরে,  কুমীরের ডিম
ফেটে বেড়িয়ে আসে কুমারের ছানা একে একে তারা।
আবদুল চাচা তুমি কথা রাখ নাই, বৈঠা বেয়ে সজনে
খালির হয়ে ভেসে যাওয়া, সেই  হবি গঞ্জে  চুনার ঘাট।
কথা ছিলো তোমার বাড়ির দাওয়াত এ যাওয়ার, ইলিশ
মাছের ডিম ভাজি দিয়া চাট্টি চিকন ধানের ঘরে ভাজা
মুড়ির লগে, ধান লঙ্কা। তোমার নাতনী ঐ মুক্তা মুখে
আঁচল চাপা, চোখে তার ঝিলিক খেলে, কেবলি হাসে।
বেড়ার আড়ালে, ও কেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে।
সে ডাক আজও দীর্ঘ পঞ্চাশ বছর পরেও রাতে শুনি চাচা।
আবদুল চাচা বড় সাধ হয় আর এক বছর ফিরে যাই, দেখে
আসি আমার বড় সাধের প্রিয় জন্মভূমি, পূর্ণ পিতৃভূমি
আমার আর এক অভিমানী জননী সোনার দেশ বাংলাদেশ।
এপারে এত বিষন্নতার মাঝে, খবর আসে জানি গুজব কিনা?
কেউ লিখছে " জ্বলছে আগুন পুড়ছে দেশ, তোমার আমার
বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের হৃদয় হতে উঠছে আর্তনাদ, ক্রন্দনরতা ক্রন্দসী
জননী আমার, হে আমার মণি মুক্তা দেশ, কেঁদো না মা তোমার
আমার সহ্য হয় না,  ঈশ্বর সহায় আছেন, এক দিনসব শান্ত হবে,
শান্তি বর্ষনে, ঈশ্বরের দান বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়বে, এ দাহ শীতল হবে।



১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×