somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এখন বৃষ্টির দিন, ক্যামেরা ও লেন্সের যত্ন নিন

২৩ শে আগস্ট, ২০০৮ বিকাল ৪:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

না না সাইজের ডেসিকেটর, বেছে নিন আপনার প্রয়োজন মতো


এখন বর্ষাকাল। আরো গাছ লাগান। এ কথাটি জনপ্রিয় করেছিলেন কৃষি উন্নয়ন কর্মী শাইখ সিরাজ। ফটোগ্রাফারদের জন্য স্লোগানটি একটু ভিন্ন রকম হবে- এখন বৃষ্টির দিন, ক্যামেরা ও লেন্সের যত্ন নিন।

যারা প্রফেশনালি ফটোগ্রাফি করেন তারা একাধিক ক্যামেরা বডি, বেশ কয়েকটি লেন্স, অনেক ফিল্টার, ফ্ল্যাশগান, রিচার্জেবল ব্যাটারি, ট্রাইপড, ক্যামেরা ব্যাগ- সব কিছু মিলিয়ে রাজ্যের যন্ত্রপাতি নিয়ে বসেন। এতো যন্ত্রপাতির দামও অনেক হয়। ফলে ওইসব যন্ত্র দিয়েই যেহেতু কামাই-রোজগারটিও হয় তাই এগুলোর যত্নও হতে হয় প্রফেশনাল পর্যায়ের।

অপরদিকে যারা শখের ফটোগ্রাফার, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায় তাদের ক্যামেরাটি আলমারির তাকে বা বাসার অন্য কোনো জিনিসপত্রের সঙ্গে মিশে থাকে। আর এই কাজটি করতে গেলেই বিপদ। আপনার সুতি কাপড়টি হয়তো বাতাসের আর্দ্রতাকে কেয়ার করে না, তবে ক্যামেরাটি করে। বদ্ধ ভেজা স্থানে আপনার ক্যাসেট প্লেয়ারটি হয়তো মাইন্ড করবে না, যেমনটা করবে আপনার ক্যামেরার লেন্স।

প্রথমে আপনি এর কিছুই হয়তো বুঝবেন না কিন্তু কয়েকদিন পড়েই খালি চোখে ধরা পড়বে ছত্রাক এসে সংসার শুরু করে দিয়েছে আপনার ক্যামেরার লেন্সের ভেতর। প্রথমদিকে খালি চোখে দেখা ছত্রাক আপনার ফটোর কোয়ালিটির ওপর তেমন একটা প্রভাব হয়তো ফেলবে না কিন্তু ধীরে ধীরে একে আর আপনি এড়াতে পারবেন না। ক্যান্সারের মতো এ ছত্রাক বা ফাঙ্গাস আপনার গোটা লেন্সটি আক্রান্ত করে ফেলবে। শ্রেফ ফেলে দিতে হবে লেন্সটি।

এখন প্রশ্ন হলো এই ছত্রাক বা ফাঙ্গাস এড়ানোর উপায় কি? সোজাসাপ্টা উত্তর হচ্ছে আর্দ্রতা নেই এমন শুকনো স্থানে লেন্সটি রাখা। তেমন স্থান কই? একটি সমাধান হতে পারে সাহারা মরুভূমিতে কোথাও লেন্সটি রেখে দেয়া, দরকার মতো এনে কাজ করে আবার রেখে আসা। এক্ষেত্রে অবশ্য আপনার রক্ষণাক্ষেণ প্লাস পরিবহন খরচ খানিকটা বেশিই হবে, আর সেই টাকায় ডজন ডজন লেন্স কিনে নেয়া সম্ভব।

বিকল্প সমাধান হচ্ছে আপনার বাড়িতেই সাহারা মরুর মতো খটখটে শুকনো পরিবেশ তৈরি করে নেয়া।

আপনিই একমাত্র ফটোগ্রাফার নন, এই সমস্যায় আরো অনেকে নিশ্চয়ই পড়েছেন। ফটোগ্রাফার কেবল নন, সায়েন্টিফিক বিভিন্ন কাজেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে অবশ্যই আর্দ্রতামুক্ত পরিবেশ লাগে। কাজেই চিন্তিত হবেন না। এর সমাধান আছে। কি সেই সমাধান- উত্তর হচ্ছে ডিহিউমিডিফায়ার (dehumidifier) অথবা ডেসিকেটর (desiccator)

ডিহিউমিডিফায়ার হলো এমন এক যন্ত্র যা বাতাস থেকে জলীয় বাষ্প শুষে নেয়। ফলে আশপাশের বাতাস থাকে শুষ্ক। তাই কোনো ঘরে ডিহিউমিডিফায়ার রেখে দিলে সে ঘরের বাতাস শুকনো থাকবে। এখানে একটি যদি আছে। যদি সে ঘরটি এয়ারটাইট করে (যেমনটি করা হয় এসি লাগানো ঘরে) রাখা যায় তবেই ডিহিউমিডিফায়ারের সুবিধাটুকু পুরোপুরি আপনি পাবেন। মূলত ডিহিউমিডিফায়ার তাদের জন্য ভালো যাদের অনেক যন্ত্রপাতি নিয়ে কাজ করতে হয়। অনেক বলতে এতোটাই যে সেগুলো রাখতে একটা ছোটখাটো ঘর দরকার পড়বে।

প্রশ্ন হলো, আমরা যারা একটা ক্যামেরা সঙ্গে দু-একটি লেন্স নিয়ে যাত্রা শুরু করেছি তারা তো আর বাসায় দাবি করতে পারবো না যে আমাকে গোটা একটা ঘর ছেড়ে দাও। কেন? না, আমি ডিহিউমিডিফায়ার বসাবো। ভাংচুর করে রাজনৈতিক দাবি আদায় করা সম্ভব বলে কেউ কেউ ভাবতে পারেন, তবে একটা দুটো লেন্সের জন্য গোটা ঘরের চিন্তা না করাই ভালো। এর জন্য যা দরকার তা হচ্ছে ডেসিকেটর।

সোজা ভাষায় ডেসিকেটর হচ্ছে একটি এয়ারটাইট কাচের জার, যার ভেতরে থাকে দুটি চেম্বার। এর একটিতে থাকে এমন কিছু কেমিকাল যার কাজ হচ্ছে বাতাস থেকে জলীয় বাষ্প শুষে নেয়া। অপর চেম্বারে যাকে জলীয় বাষ্পমুক্ত রাখতে হবে সেই জিনিসটি থাকবে, অর্থাৎ লেন্স। সাধারণত কেমিকাল হিসেবে থাকে সিলিকা জেল।

যারা এতোক্ষণ ধরে লেখাটি পড়েছেন তারা সম্ভবত এখন দুম করে প্রশ্ন করে বসবেন, ঢাকায় কোথায় ডেসিকেটর কিনতে পাওয়া যাবে? উত্তর হচ্ছে সায়েন্টিফিক এক্সপেরিমেন্টের যন্ত্রপাতি পাওয়া যায় এমন দোকানে আপনি ডেসিকেটর পাবেন। ঢাকায় হাটখোলা রোডে অনেক সায়েন্টিফিক ডিভাইসের দোকান আছে, সেখানেও ডেসিকেটর পাওয়া যাবে। আর পাওয়া যাবে ফটোগ্রাফিক ইকুইপমেন্ট বিক্রি করে এমন দোকানে। পল্টন, বায়তুল মোকাররম বা এলিফ্যান্ট রোডের কিছু দোকানে পাওয়া যাবে ডেসিকেটর।

একই দোকানে সিলিকা জেলও পাবেন, তবে সস্তায় পাওয়া যাবে পুরনো ঢাকার মিটফোর্ড রেডের কেমিকাল মার্কেটে। এক কেজি সিলিকা জেলের দাম পড়বে প্রায় চারশ’ টাকা। সিলিকা জেল দুই রকম হয়, একটি পানি শুষে নেয়ার পর রং বদলে ফেলে, অপরটি বদলায় না। স্বাভাবিকভাবেই যে সিলিকা জেল রং বদলে ফেলে সেটি কেনা বুদ্ধিমানের কাজ। এ সিলিকা জেলের রং সাধারণত হয় গাঢ় নীল।

সিলিকা জেল যখন ক্ষমতার শেষ পর্যন্ত পানি শুষে ফেলে তখন এর রঙ সাদা ক্রিস্টালের মতো হয়ে যায়। এ সাদা সিলিকা জেল অল্প আঁচে তাওয়ায় ভেজে নিলে পানি বাষ্প হয়ে উড়ে আবার নীল হয়ে যায় এবং আবারো ব্যবহার করা সম্ভব হয়।

একটা ক্যামেরা বডি আর দুটি লেন্স রাখার জন্য ৯ ইঞ্চি বা ১২ ইঞ্চি ডায়ামিটারের ডেসিকেটরের দাম পড়বে দোকান ভেদে দেড় থেকে দু হাজার টাকা।

এবার একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় খেয়াল রাখুন। দীর্ঘদিনের জন্য ডেসিকেটরে কোনো লেন্স রেখে দেবেন না। তিন-চার দিন লেন্স রেখে দেয়ার পর অন্তত দুই-তিন ঘণ্টার জন্য লেন্সটি বের করে রাখুন। নইলে অতিরিক্ত শুষ্কতার জন্য লেন্সের ভেতরের ইলেকট্রিক সার্কিট উঠে আসতে পারে বেজ থেকে। ফলে যে লেন্সটি ভালো রাখার জন্য এতো কাঠখড় পোড়ালেন, শেষে কেবল ছাইটুকুই জুটতে পারে কপালে।
----------------------------------------------------------------------------
লেখাটি প্রথম ছাপা হয়েছিল যায়যায়দিনের ক্যামেরা পাতায়, আজ বৃষ্টি দেখে মনে হলো এমন দিনেই এ বিষয়টি মনে করিয়ে দেয়া দরকার।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে আগস্ট, ২০০৮ বিকাল ৫:০৭
২৫টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

×