somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিবর্তনবাদ তত্ত্ব নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা – ৬

০৩ রা নভেম্বর, ২০০৯ রাত ১১:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইতোমধ্যে বেশ কিছু অখণ্ডনীয় যুক্তির সাহায্যে দেখিয়ে দেয়া হয়েছে যে, বাস্তবিক দৃষ্টিকোণ থেকে একটি প্রজাতি থেকে ভিন্ন একটি প্রজাতি ধাপে ধাপে বিবর্তিত হওয়া সম্ভব নয়। তথাপি কেউ যদি সম্ভব বলে দাবি করেন তাহলে সেরকম জোরালো যুক্তি-প্রমাণ উপস্থাপন করতে হবে। যেমন একটি অণুজীব থেকে সবগুলো প্রজাতি বিবর্তিত হতে হলে বিবর্তনের কোনো এক পর্যায়ে অস্তন্যপায়ী প্রাণী থেকে স্তন্যপায়ী প্রাণী বিবর্তিত হতেই হবে। ধাপে ধাপে এই ধরণের বিবর্তন কীভাবে সম্ভব – সেটা অকাট্য যুক্তি-প্রমাণ সহকারে ব্যাখ্যা করতে হবে। অন্যথায় বিজ্ঞানের নামে এই তত্ত্ব বা মতবাদ প্রচারের যৌক্তিক ও নৈতিক অধিকার কারো থাকার কথা নয়।

যাহোক, এই পর্বে বানর জাতীয় লেজওয়ালা প্রাইমেটস থেকে লেজবিহীন মানুষের বিবর্তনের পক্ষে বিবর্তনবাদীদের "বৈজ্ঞানিক প্রমাণ" নিয়ে আলোচনা করা হবে। তারা আসলে "বৈজ্ঞানিক প্রমাণ" বলতে কী বোঝেন সেটাও এই লেখা থেকে পরিষ্কার হওয়ার কথা। রায়হান আবীর নামে এক বিবর্তনবাদী লেজওয়ালা প্রাইমেটস থেকে লেজবিহীন মানুষের বিবর্তনের পক্ষে আধুনিক বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে যুক্তি-প্রমাণ উপস্থাপন করেছে। বলাই বাহুল্য যুক্তি-প্রমাণগুলো তার নিজের নয়, বিবর্তনবাদী গুরুদেরই যুক্তি-প্রমাণ। তার উপস্থাপিত যুক্তি-প্রমাণগুলো একে একে দেখা যাক।


রায়হান আবীরের প্রমাণ-১: মানুষের আদি পূর্বপুরুষ প্রাইমেটরা গাছে ভারসাম্য রক্ষা করার জন্য লেজ ব্যবহার করতো। গাছ থেকে নীচে নেমে আসার পর এই লেজের প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়েছে। কিন্তু আমাদের শরীরে মেরুদন্ডের একদম নীচে সেই লেজের হাড়ের অস্তিত্ব পাওয়া যায়।

জবাব: হাহ্‌-হা! তাদের যুক্তি হচ্ছে মানুষের আদি পুরুষদের প্রথমে লেজ ছিল না। তারপর বনে-জঙ্গলে যেয়ে প্রয়োজনে লেজ গজিয়েছে! পরবর্তীতে গাছ থেকে নীচে নেমে আসার পর যেহেতু লেজের প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়েছে সেহেতু লেজও লোপ পেয়েছে! তাহলে মানুষের আদি পুরুষদের লেজ লোপ পেয়েই মানুষ হয়েছে! নির্দিষ্ট কোনো প্রাইমেট থেকে ধাপে ধাপে বিবর্তিত হয়ে মানুষ হয়নি! তার মানে মানুষ আবার গাছে গাছে বিচরণ করা শুরু করলে নতুন করে লেজ গজাবে! বিবর্তনবাদীরা চেষ্টা করে দেখতে পারেন! এইটা কিন্তু পরীক্ষা করে প্রমাণ করা সম্ভব! তবে তাদের কেউ এই পরীক্ষা দিতে রাজি হবেন বলে মনে হয় না! মিলিয়ন ডলার চ্যালেঞ্জ থাকলো। মানুষের প্রয়োজনেই যদি শরীরে বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ গজায় তাহলে আজ থেকে বিবর্তনবাদীরা যদি মাথার পেছন দিকে দুটি চোখের প্রয়োজন মনে করা শুরু করে তাহলে একদিন-না-একদিন তাদের মাথার পেছনে দুটি করে চোখ গজাবে! এমনকি শিং-এর প্রয়োজন মনে করা শুরু করলে একদিন-না-একদিন তাদের মাথায় শিংও গজাবে! বেশ মজার কাহিনী তো! বিজ্ঞানের নামে বিবর্তনবাদীদের এই সব কল্পকাহিনী শুনে কুসংস্কারে বিশ্বাসীরা তাদের বিশ্বাসকে আরো বেশি করে আঁকড়ে ধরার চেষ্টা করবে! আর হ্যাঁ, গাছ থেকে নেমে এসে বিবর্তনবাদীরা হয়ত ভুলেই গেছেন যে, গাছে ভারসাম্য রক্ষার জন্য লেজ ব্যবহার না করলেও অনেক পশুরই লেজ আছে! এগুলো নাকি বৈজ্ঞানিক যুক্তি-প্রমাণ! বিবর্তনবাদী প্রাইমেটসরা বলে কী! তবে শিশু বাচ্চাদের জন্য বিনোদনমূলক কিছু হলে অবশ্য অন্য কথা!


রায়হান আবীরের প্রমাণ-২: প্রকৃতিতে মাঝে মাঝেই লেজ বিশিষ্ট মানব শিশু জন্ম নিতে দেখা যায়। এছাড়াও পেছনে পা বিশিষ্ট তিমি মাছ, ঘোড়ার পায়ে অতিরিক্ত আঙ্গুল কিংবা পেছনের ফিন যুক্ত ডলফিন সহ শরীরে অসংগতি নিয়ে প্রাণীর জন্মের প্রচুর উদাহরণ পাওয়া যায়। এমনটা কেন হয়। এর উত্তর দিতে পারে কেবল বিবর্তন তত্ত্বই। বিবর্তনের কোন এক ধাপে অংগ লুপ্ত হয়ে গেলেও জনপুঞ্জের জীনে ফেনোটাইপ বৈশিষ্ট্য হিসেবে ডিএনএ সেই তথ্য রেখে দেয়। যার ফলে বিরল কিছু ক্ষেত্রে তার পূনঃপ্রকাশ ঘটে।

জবাব: পাঠক! গুগল সার্চ দিয়ে বিবর্তনবাদীদের হারিয়ে যাওয়া লেজ দেখে নিতে পারেন! বেশ মজা পাবেন! তাদের যুক্তি হচ্ছে প্রকৃতিতে যেহেতু লেজ বিশিষ্ট মানব শিশু জন্ম নিতে দেখা যায় সেহেতু লেজ বিশিষ্ট প্রাইমেটস থেকে মন্থর গতিতে (?) মানুষ বিবর্তিত হয়েছে! এগুলো নাকি বৈজ্ঞানিক প্রমাণ! হায় হায়! খোঁজ নিলে সাত বিলিয়ন মানুষের মধ্যে থেকে লেজ বিশিষ্ট শিশুর মতো আরো অনেক ধরণের অস্বাভাবিক কিছু খুঁজে পাওয়া সম্ভব। যেমন: কেউ কেউ একাধিক মাথা নিয়ে জন্মায়; কারো কারো লিঙ্গ সুপ্তাবস্থায় থাকে; ইত্যাদি। এ-রকম আরো অনেক উদাহরণ আছে। ফলে লেজের মতো কিছু একটা নিয়ে হঠাৎ দু-একটি শিশু জন্মায় বলে কোন ভাবেই প্রমাণ হয় না যে, লেজওয়ালা প্রাইমেটস থেকে লেজবিহীন মানুষ বিবর্তিত হয়েছে! অন্য কোনো কারণেও এই ধরণের অস্বাভাবিক ‘লেজ’ গজাতে পারে।


রায়হান আবীরের প্রমাণ-৩: আমরা লোমশ প্রাইমেটদের থেকে বিবর্তিত হয়েছি বলেই আমাদের গায়ে লোম রয়ে গেছে।

জবাব: পাঠক! তাদের যুক্তিটা এরকম: ডারউইন ও ছাগল উভয়েরই যেহেতু দাড়ি আছে সেহেতু ছাগল থেকে ডারউইন কিংবা ডারউইন থেকে ছাগল বিবর্তিত হয়েছে! ডারউইন ও ছাগল উভয়েরই দাড়ি আছে – সত্য। কিন্তু এখানে উপসংহারটা ভুল। তাছাড়া মানুষ ও বানর জাতীয় জন্তুদের গায়ের চামড়া ও লোম এক রকম নয়। আর কী বলার থাকতে পারে!

রায়হান আবীরের প্রমাণ-৪: বিবর্তন তত্ত্ব অনুযায়ী পুর্ব বিকশিত অংগ-প্রত্যঙ্গ থেকেই নতুন অঙ্গের কাঠামো তৈরির হয়। বিভিন্ন মেরুদন্ডী প্রাণীর সামনের হাত বা অগ্রপদের মধ্যে তাই লক্ষ্যনীয় মিল দেখা যায়! ব্যাঙ, কুমীর, পাখি, বাদুর, ঘোড়া, গরু, তিমি মাছ এবং মানুষের অগ্রপদের গঠন প্রায় একই রকম।

জবাব: বিভিন্ন মেরুদন্ডী প্রাণীর মধ্যে কিছু মিল থাকা মানে এই নয় যে, একটি প্রাণী থেকে অন্যান্য প্রাণী বিবর্তিত হয়েছে। ফলে এটিও কোন প্রমাণ নয়। স্রেফ অনুমান আর কল্পনা। কারণ একটি প্রজাতি থেকে অন্যান্য প্রজাতি বিবর্তিত না হয়েও তাদের মধ্যে প্রকৃতিগতভাবেই কিছু মিল থাকতে পারে।

রায়হান আবীরের প্রমাণ-৫: পৃথিবীতে অগুনিত প্রজাতি থাকলেও সবচে মজার ব্যাপার হলো, ভেতরে আমরা সবাই প্রায় একই। আমরা সবাই “কমন জিন” শেয়ার করে থাকি। পূর্বপুরুষের সাথে যত বেশি নৈকট্য বিদ্যমান, শেয়ারের পরিমানও তত বেশি। যেমন, শিল্পাঞ্জি আর আধুনিক মানুষের ডিএনএ শতকরা ৯৬% একই, কুকুর আর মানুষের ক্ষেত্রে সেটা ৭৫% আর ড্যাফোডিল ফুলের সাথে ৩৩%।

জবাব: একই ধরণের কু-যুক্তি। প্রকৃতিগতভাবেই প্রজাতিগুলোর মধ্যে ‘কমন জিন’ ও আরো কিছু ‘কমন বৈশিষ্ট্য’ থাকতে পারে। প্রজাতিগুলোকে এভাবেই সৃষ্টি করা হয়ে থাকতে পারে। কেন নয়? মানুষ ও কুকুর উভয়েরই একটি মাথা, দুটি চোখ, ও দুটি কান আছে মানে এই নয় যে, মানুষ থেকে কুকুর কিংবা কুকুর থেকে মানুষ বিবর্তিত হয়েছে। কুমড়া ও তরমুজ দেখতে অনেকটা একই রকম এবং উভয়ের মধ্যেই প্রায় ৮০-৯০% পানি আছে মানে এই বুঝায় না যে, একটি থেকে অন্যটি বিবর্তিত হয়েছে। অর্থাৎ দুটি প্রজাতির মধ্যে কিছু সাদৃশ্য থাকা মানেই প্রমাণ হয় না যে, একটি থেকে অন্যটি বিবর্তিত হয়েছে। বিবর্তিত হতেও পারে আবার না-ও পারে। তবে বিবর্তিত হওয়া যে সম্ভব নয় – তা ইতোমধ্যে দেখিয়ে দেয়া হয়েছে। অতএব, এটিও কোনো প্রমাণ নয়। এমনকি কোনো যুক্তিও নয়!

রায়হান আবীরের প্রমাণ-৬: পরিসংখ্যান থেকে পাওয়া যায়, পৃথিবীর আটভাগ মানুষের শরীরে ত্রয়োদশ হাড়ের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। যেটি কিনা গরিলা ও শিল্পাঞ্জির শারিরিক বৈশিষ্ট্য। মানুষ যে, এক সময় প্রাইমেট থেকে বিবর্তিত হয়েছে এই আলামতের মাধ্যমে সেটিই বোঝা যায়।

জবাব: উপরের জবাব দ্রষ্টব্য। স্রেফ অনুমান আর কল্পনা, কোনো প্রমাণ নয়।

রায়হান আবীরের প্রমাণ-৭: পাথুরে অস্ত্রপাতি আর আগুনের ব্যবহার জানার আগে মানুষ মূলতঃ নিরামিশাষী ছিলো। তখন তাদের আক্কেল দাঁতের প্রয়োজনীয়তা থাকলেও আমাদের তা নেই, যদিও আক্কেল দাঁতের অস্তিত্ব এখনও রয়ে গেছে।

জবাব: স্রেফ অনুমান আর কল্পনা। মানুষের আক্কেল দাঁত আছে বলে প্রমাণ হয় না যে, গরিলা বা শিম্পাঞ্জি জাতীয় কোনো প্রাণী থেকে ধীরে ধীরে মানুষ বিবর্তিত হয়েছে। বড়জোর এটুকু হয়ত বলা যেতে পারে যে মানুষের খাদ্যাভাস পরিবর্তনের কারণে আক্কেল দাঁতের প্রয়োজনীয়তা বা কার্যকারীতা কমে গেছে।

রায়হান আবীরের প্রমাণ-৮: আমাদের পূর্বপুরুষ প্রাইমেটরা ছিল তৃনভোজি। তৃণজাতীয় খাবারে সেলুলোজ থাকে। এই সেলুলোজ হজম করার জন্য তাদের দেহে এপেনডিক্সে বেশ বড় ছিল। ফলে সিকামে প্রচুর পরিমান ব্যাকটেরিয়ার থাকতে পারতো যাদের মূল কাজ ছিল সেলুলোজ হজমে সহায়তা করা। সময়ের সাথে আমাদের পূর্বপুরুষদের তৃনজাতীয় খাবারের উপর নির্ভরশীলতা কমতে থাকে, তারা মাংসাশী হতে শুরু হলে। আর মাংসাশী প্রাণীদের অ্যাপেন্ডিক্সের কোন প্রয়োজন নেই, প্রয়োজন বৃহৎ পাকস্থলীর। ফলে অপেক্ষাকৃত ছোট অ্যাপেন্ডিক্স এবং বড় পাকস্থলীর প্রাণীরা সংগ্রামে টিকে থাকার সামর্থ লাভ করে, হারিয়ে যেতে থাকে বাকিরা। পূর্বপুরুষের স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে সেই অ্যাপেন্ডিক্স আমরা এখনও বহন করে চলছি।

জবাব: প্রথমত, এখানে তো মনে হচ্ছে যোগ্যতমের টিকে থাকার কথা বলা হচ্ছে। বিবর্তন কোথা থেকে ও কীভাবে হবে! দ্বিতীয়ত, অ্যাপেন্ডিক্স এর কোনো কাজ নাই বলে যে প্রচারণা চালানো হচ্ছে সেটি একটি মিথ্যাচার। সায়েন্স ডেইলি থেকে প্রমাণ দেখুন। তৃতীয়ত, অ্যাপেন্ডিক্স এর কোনো কাজ বিজ্ঞানীদের জানা নেই মানে এই নয় যে অ্যাপেন্ডিক্স এর সত্যি সত্যি কোনো কাজ নেই। বিজ্ঞান কিন্তু ধীরে ধীরে এগোয়! ফলে অ্যাপেন্ডিক্স এর প্রকৃত কাজ একদিন হয়তো বের হয়ে যাবে। চতুর্থত, যদিও অ্যাপেন্ডিক্স এর কাজ যে আছে তার পক্ষে প্রমাণ দেয়া হয়েছে তথাপি অ্যাপেন্ডিক্স এর কোনো কাজ না থাকা মানেও প্রমাণ হয় না যে অন্য কোনো প্রাণী থেকে মানুষ বিবর্তিত হয়েছে। ফলে এটিও কোনো প্রমাণ নয়, স্রেফ অনুমান আর কল্পনা।


রায়হান আবীরের প্রমাণ-৯: রক্তকে জমাট বাঁধতে দিলে একধরণের তরল পদার্থ পৃথক হয়ে আসে, যার নাম সিরাম। এতে থাকে এন্টিজেন। এই সিরাম যখন অন্য প্রাণীর শরীরে প্রবেশ করানো হয় তখন উৎপন্ন হয় এন্টিবডি। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, মানুষের সিরাম যদি আমরা খরগোশের শরীরে প্রবেশ করাই তাহলে উৎপন্ন হবে এন্টি হিউমান সিরাম। যাতে থাকবে এন্টিবডি। এই এন্টি হিউমান সিরাম অন্য মানুষের শরীরে প্রবেশ করালে এন্টিজেন এবং এন্টিবডি বিক্রিয়া করে অধঃক্ষেপ বা তলানি উৎপন্ন হবে। যদি একটি এন্টি হিউমান সিরাম আমরা যথাক্রমে নরবানর, পুরোন পৃথিবীর বানর, লেমুর প্রভৃতির সিরামের সাথে মেশাই তাহলেও অধঃক্ষেপ তৈরী হবে। মানুষের সাথে যে প্রানীগুলোর সম্পর্কের নৈকট্য সবচেয়ে বেশি বিদ্যমান সেই প্রানীগুলোর ক্ষেত্রে তলানির পরিমান বেশি হবে, যত দূরের তত তলানীর পরিমান কম হবে। তলানীর পরিমান হিসেব করে আমরা দেখি, মানুষের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি তলানী পাওয়া যাচ্ছে, নরবানরের ক্ষেত্রে আরেকটু কম, পুরানো পৃথিবীর বানরের ক্ষেত্রে আরেকটু। অর্থাৎ অনুক্রমটা হয়- মানুষ- নরবানর- পুরোন পৃথিবীর বানর- লেমুর। অঙ্গসংস্থানবিদদের মতে উল্লিখিত প্রাণীদের মধ্যে সর্বাধিক আদিম হচ্ছে লেমুর, আর সবচেয়ে নতুন প্রজাতি হচ্ছে মানুষ। তাই মানুষের ক্ষেত্রে তলানির পরিমাণ পাওয়া যায় সবচেয়ে বেশি আর লেমুরের ক্ষেত্রে সবচেয়ে কম। দেখা যাচ্ছে বিবর্তন যে অনুক্রমে ঘটেছে বলে ধারণা করা হয়েছে রক্তরস বিজ্ঞানের ‘অ্যান্টিজেন এন্টিবডি’ বিক্রিয়াও সে ধারাবাহিকতাকেই সমর্থন করে।

জবাব: ৫ নং-এর জবাব দ্রষ্টব্য। এটিও কোনো প্রমাণ নয়। একটি বনের মধ্যে অনেক গাছ-পালা থাকে। কেউ ইচ্ছে করলে সেই গাছ-পালার মধ্যে কিছু সাদৃশ্য-সহ একটি পর্যায়ক্রমও খুঁজে পেতে পারেন। কিন্তু তার মানে প্রমাণ হবে না যে, একটি গাছ থেকে বাকিগুলো বিবর্তিত হয়েছে। অনুরূপভাবে, উপরে যে তথ্য দেয়া হয়েছে সেখানে থেকেও কেউ জোর দিয়ে দাবি করতে পারবেন না যে, বান্দর জাতীয় প্রাইমেটস থেকে মানুষ বিবর্তিত হয়েছে। প্রাণীগুলোকে কিছু সাদৃশ্য ও পর্যায়ক্রম-সহ সেভাবেই সৃষ্টি করা হয়ে থাকতে পারে।

পাঠক! এতগুলো ‘আধুনিক বৈজ্ঞানিক যুক্তি-প্রমাণ’ এর মধ্যে একটিও সিদ্ধান্তমূলক কোনো প্রমাণ নেই! এমনকি জোরালো কোনো যুক্তিও নেই! সবই অনুমান আর কল্পনা। অথচ এগুলোকেই গাছ থেকে ভূমিতে অ্যাপেল পড়ার মতো সত্যের সাথে তুলনা করে নিজেদের মস্তক ধোলাই করে অসচেতন লোকজনেরও মস্তক ধোলাই করা হচ্ছে। মজার ব্যাপার হচ্ছে বানর জাতীয় লেজওয়ালা প্রাইমেটস থেকে ধীরে ধীরে লেজবিহীন মানুষের বিবর্তনের মধ্যে ‘আধুনিকতা ও প্রগতিশীলতা’র যে কী আছে সেটাও কিন্তু বোঝা যায় না!

উপরোল্লেখিত প্রমাণগুলোর মধ্যে কিন্তু আণবিক জীববিদ্যা ও জেনেটিক্স থেকেও আছে (৫ ও ৯ নং দ্রষ্টব্য)। অথচ আণবিক জীববিদ্যা ও জেনেটিক্স এর নামে সাধারণ মানুষের মনে এক ধরণের আতঙ্ক সৃষ্টি করা হয়েছে। আণবিক জীববিদ্যা ও জেনেটিক্স না বুঝলে নাকি বিবর্তনবাদ তত্ত্বের কিছুই বোঝা যাবে না – আর এটিকেই বলা হচ্ছে নিও-ডারউইনিজম! ভাবখানা এমন যে, আণবিক জীববিদ্যা ও জেনেটিক্স বুঝলে বিবর্তনবাদ তত্ত্ব এমনি এমনি সত্য হয়ে যাবে!

যাহোক, বিবর্তনবাদ তত্ত্ব অনুযায়ী পরিবেশগত কারণে টিকে থাকার জন্য এক প্রজাতি থেকে ভিন্ন প্রজাতি বিবর্তিত হওয়ার যে কাহিনী শুনানো হয় সেটি পুরোপুরি ভুল ধারণা। কারণ একটি বনে একাধিক প্রজাতির মধ্যে পরিবেশগত কারণে কিছু প্রজাতি টিকে থাকতে না পারলে সেই সকল প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যায়। বাকিগুলো বেঁচে থাকে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, বেঁচে থাকা প্রজাতিগুলো থেকে নতুন নতুন প্রজাতির উদ্ভব হয়!

সহজ-সরল ভাষায় বিবর্তনবাদ তত্ত্বের সারমর্ম এরকম: কিছু বাঙ্গালীকে দীর্ঘদিন ধরে আমেরিকাতে রেখে দেয়া হলে পরিবেশগত কারণে তারা এক সময় ভিন্ন প্রজাতিতে রূপান্তরিত হয়ে যাবে! অথবা, আমেরিকানদের সাথে প্রতিযোগীতায় টিকে থাকতে না পেরে বাঙ্গালীরা এক সময় বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি আমেরিকানরা নতুন কোনো প্রজাতিতে রূপান্তরিত হবে!

স্পষ্টতই দেখা যাচ্ছে যে, বিবর্তনবাদ তত্ত্ব বৈজ্ঞানিক তো নয়-ই বরঞ্চ পুরোপুরি ভ্রান্ত ও সেকেলে একটি মতবাদ। তাহলে এই ভ্রান্ত ও সেকেলে একটি মতবাদকে এখনও বিজ্ঞানের নামে প্রচার-প্রসার করা হচ্ছে কেনো? এর জন্য ডারউইনকে দায়ি করা যাবে কি-না? উত্তর হচ্ছে, না। কারণ ডারউইন কখনোই বলেননি যে, চাপাবাজি ও প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে জোর করে হলেও তার মতবাদকে প্রমাণ করতেই হবে।

তাহলে কারা এই ভ্রান্ত ও সেকেলে একটি মতবাদকে বিজ্ঞানের নামে প্রচার-প্রসার করছেন তার ব্যাখ্যা প্রথম পর্বে দেয়া হয়েছে। বিবর্তনবাদীরা নিজেরাই বুঝে গেছেন যে, বিবর্তনবাদ প্রকৃতপক্ষেই ভ্রান্ত ও সেকেলে একটি মতবাদ ছাড়া কিছুই নয়। কিন্তু বিজ্ঞানের নামে তাদের নাস্তিক্য ও বস্তুবাদী বিশ্বাসকে সমর্থন করার জন্য এর বিকল্প কিছুও তাদের হাতে নেই। ফলে তারা জেনেটিক্স এর উপর ভিত্তি করে নিও-ডারউইনিজম প্রচারে নেমেছেন। কিন্তু সাধারণ মানুষ পড়ে গেছেন বিপদে। সাধারণ লোকজনের কাছে জেনেটিক্স যেহেতু দূর্বোধ্য একটি বিষয় সেহেতু তারা হয়ত মনে করছেন জেনেটিক্স এর মধ্যেই প্রমাণ লুকিয়ে আছে! কিন্তু ব্যাপারটা যে মোটেও তা নয় সেটা তো দেখিয়েই দেয়া হলো। ডিএনএ’র তথ্যের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন প্রজাতির মধ্যে কিছু সাদৃশ্য ও অনুক্রম দেখিয়ে একটি প্রজাতি থেকে ভিন্ন একটি প্রজাতি বিবর্তিত হয়েছে বলে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। কিন্তু এটি কোনো প্রমাণ নয়।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১১:৪৩
৫৫টি মন্তব্য ৩০টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×