somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাবাকে নিয়ে অসাধারণ এক মুভি My Father and My Son : অন্য দূরবীনে বাবা আর সন্তানের গল্প

২৫ শে জুন, ২০১০ রাত ১২:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


Babam ve Oğlum (My Father and My Son)
Director : Çagan Irmak
IMDb Rating: 8.7



বাবা দিবস চলে গেল কিছুদিন আগেই।ভেবেছিলাম বাবাকে নিয়ে তৈরী করা কোনো মুভির কথা তখন শেয়ার করবো।সামুতে ইতোমধ্যে এই থিমের উপর ভিত্তি করে যেসব অসাধারণ মুভি নির্মিত হয়েছে,প্রায় সবগুলোর নামই চলে এসেছে।তাই ইচ্ছে ছিল,তুলনামূলকভাবে স্বল্প পরিচিত মুভি নিয়ে পোস্ট দিবো।কিন্তু ব্যস্ততা আর বিশ্বকাপের কারণে ঠিক সময়ে পোস্টটি দিতে পারিনি।

মুভি দেখতে আমার খুব ভালো লাগে।ঠিকমতো সময়,সুযোগ ও সাবটাইটেল পেলে যে কোনো ভাষার মুভি দেখতে বসে যাই।সেভাবেই তুর্কি পরিচালক কাগান ইরমাক (Çağan Irmak) এর কাজের সাথে পরিচয়।এ কৃতিত্বটি পুরোটাই ব্লগার মে ঘ দূ ত এর।তার একটি পোস্ট পড়ে ইরমাকের একটি মুভি (Issız Adam) দেখি।দেখে পুরা মুগ্ধ!বুঝতে পারি,এই পরিচালকের বাকি কাজগুলোও চেখে দেখতে হবে।সে সুত্রেই Babam ve Oğlum (My Father and My Son) দেখি।

শিরোনামে শীর্ষেন্দুর "দূরবীন" উপন্যাসের কথা লিখেছি।দূরবীনের মতো Babam ve Oğlum-ও প্রজন্মের গল্প।সাদিক (Fikret Kuskan) সম্ভ্রান্ত গৃহস্হ হুসেইন আঘার স্বপ্নের সন্তান।বড় ছেলে মানসিকভাবে কিছুটা সরল হওয়ায়,হুসেইন ছেলে সাদিককে শহরে পাঠায়।ইচ্ছা ছেলে এগরিকালচারাল ইন্জিনিয়ার হয়ে পারিবারিক ব্যবসায় যোগ দিবে,বিয়ে করবে তার পছন্দের মেয়েকে।কিন্তু,সাদিক সাংবাদিকতা নিয়ে পড়তে চায়।স্বাভাবিকভাবেই এতে তার বাবা রাগ হয়,বাড়ি ছাড়তে হয় সাদিককে।পাশ করে বামপন্হী রাজনীতিতে যোগ দেয় সাদিক।চাকরী নিয়ে,অন্য এক নারীকে বিয়ে করে ইস্তাম্বুলে স্হায়ী হয়।কিন্তু তার জীবনে ঝড়ের শেষ হয়না,বরং শুরু হয়।এক রাতে সন্তানসম্ভবা স্ত্রীকে হাসপাতালে নিতে গিয়ে হতভম্ব হয় সাদিক।সারা শহর জুড়ে কবরের নিস্তব্ধতা।কারণ সে রাতেই ক্ষমতা হাতে তুলে নেয় সামরিক বাহিনী।তারা আর হাসপাতালে পৌঁছাতে পারেনা।পথেই জন্ম নেয় সাদিকের একমাত্র সন্তান-ডেনিয।ভোরবেলা সেনাসদস্যরা কোলে রক্তাক্ত সন্তানসহ সাদিককে আবিষ্কার করে।পাশেই শুয়ে ছিল তার মৃতা স্ত্রী আইসুন।

জেলে যেতে হয় সাদিককে।তিন বছর তার উপর চলে অকথ্য নির্যাতন।মুক্তির কয়েকবছর পর হঠাৎ করেই সাদিক সিদ্ধান্ত নেয়,গ্রামে নিজের বাড়িতে ফিরে যাবে।নিজের কল্পনার জগৎ নিয়ে বাবার সাথে রওনা হয় ডেনিয (Ege Tanman)।তার সেই কল্পনার জগতে, সে অসীম সাহসী আর তার বাবা মহা বীর।গ্রামে গিয়ে সবার ভালবাসায় সিক্ত হয় সাদিক-ডেনিয।কিন্তু বাবা হুসেইন আঘা (Çetin Tekindor) ব্যতিক্রম।

একসময় এসে মনে হচ্ছিলো,আর দশটা মুভির মতো পরিণতি হবে।একদিন হুসেইন আঘার অভিমানের বরফ গলবে,সাদিক তার বাবার পছন্দের মেয়েটিকে বিয়ে করবে।অতঃপর তাহারা সুখে-শান্তিতে...।কিন্তু তা হয়নি।এক রাতে সকলের আড়ালে সাদিক তার বাবাকে জানায়,সে ফিরে এসেছে তার ছেলের জন্য একটি আশ্রয়ের ব্যবস্হা করতে।কারণ,বন্দী জীবনের নির্যাতনের ফলে তার জীবনীশক্তি শেষ।সাদিক আর বেশিদিন বাঁচবে না।তবে,তার বাবা সারাজীবন মনের ভেতরে সাদিকের পথপ্রদর্শক হয়ে থেকেছে।কারণ, "সন্তান তার বাবাকে সেভাবেই মনে রাখে,যে ভাবে সে চায়।"

অবশেষে সাদিকও মারা যায়।ছেলের লাশ নিয়ে ফিরতে গিয়ে পথে থমকে যায় হুসেইন।এই পথ দিয়েই একদিন বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিল সাদিক।দু হাত প্রসারিত করে হুসেইন চীৎকার করে বলে,"সেদিন যদি এই হাত দিয়ে,এভাবে আমার ছেলেকে বাধা দিতাম,তবে আজ তার লাশ নিয়ে ফিরতে হতো না"।
এই দৃশ্যটি দেখে অশ্রু সামলানো মুশকিল।আমি সে বৃথা চেষ্টা করিনি।

বাবার মৃত্যুর পর নিশ্চুপ হয়ে যায় ডেনিয।এক "বৃষ্টি আসি আসি" করা ভোরে,ডেনিয তার বাবার দেখা পায়।সে বুঝতে পারে,এটাই তাদের শেষ দেখা।কারণ, "মাণুষ যত বড় হতে থাকে,তার স্বপ্নও তত ছোট হতে থাকে।" ডেনিয জীবনের অমোঘ সত্য মৃত্যুকে স্বীকার করে নেয়।

অল্পকথায় এই হলো Babam ve Oğlum মুভির গল্প।চমৎকার গল্প,সুন্দর অভিনয় এর সাথে বোনাস হলো হৃদয়ছোঁয়া আবহসঙ্গীত (এটা অবশ্য বরারবরই ইরমাকের ট্রেডমার্ক)।তবে,বেশ ভালো লেগেছে শট টু শট ট্রানজিশনের স্টাইলটি।মুভিটির আরেকটি প্লাস-পয়েন্ট হলো এর শক্তিশালী ক্যামেরাওয়ার্ক।বিশেষ করে হ্যান্ডহেল্ড ক্যামেরার ব্যবহার খুব অ্যাপ্রোপ্রিয়েট লেগেছে।তবে,আবেগী দৃশ্যের পরপরই কমিক রিলিফ দেওয়ার প্রবণতাটা দৃষ্টিকটু লেগেছে।

সব মিলিয়ে বলতে হয়,বাবা-সন্তানের সম্পর্কের স্বরূপ দেখা গিয়েছে এমন মুভির হিসেব কষতে গেলে,Babam ve Oğlum-এর সাথে তুলনীয় মুভি পাওয়া ভার।তুরস্কের গল্প হয়েও এটি যেন সারা বিশ্বের বাবা-সন্তানের কথাগুলো বলে।


ডাউনলোড লিন্ক
প্রিন্ট তেমন ভালো না।তবে কাজ চলে যায়।

যাদের প্রিন্ট বিষয়ক অ্যালার্জি আছে (আমার আছে),তাদের জন্য Rapidshare লিন্ক

সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জানুয়ারি, ২০১১ সকাল ১১:২৩
১৩টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামাত কি দেশটাকে আবার পূর্ব পাকিস্তান বানাতে চায়? পারবে?

লিখেছেন ঋণাত্মক শূণ্য, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২৮

অন্য যে কোন সময়ে জামাতকে নিয়ে মানুষ যতটা চিন্তিত ছিলো, বর্তমানে তার থেকে অনেক বেশী চিন্তিত বলেই মনে করি।



১৯৭১ এ জামাতের যে অবস্থান, তা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×