জগৎ তস্কর পরিবৃতময়। খাঁটি বাংলায় যাহাকে বলা হয় ‘চোর’। কী বিভীষিকাময়, তাই না! যাহা যাহা এ চর্মচক্ষু পরিদর্শন করে তথা তথা স্থানে একটি করিয়া যেন তস্কর উৎপন্ন হইয়া উঠে।
কিন্তু জগদীশ্বর পরম লীলাময়। তিনিই তস্কর উৎপন্ন করিয়াছেন, আবার তাহাদের আহারের ব্যবস্থাও তিনিই করিয়া দিয়াছেন। তস্করেরও শ্রেণিবিভাগ বর্তমান। এস্থলে তস্করের পরিবর্তে ‘চোর” শব্দ ব্যবহার অধিক শ্রুতিমধুর বিবেচনাবোধ হয়। যাহা বলিতেছিলাম তথায় প্রত্যাবর্তন করি। চোর দিগকে অনেক শ্রেণিতেই বিভক্ত করা যায়। তন্মধ্যে ছিচকে চোর অতি নিম্ন মানের। ইহাদের কথা পরিতজ্য।
তবে কুলীন চোরও বিদ্যমান। যখন মন্ত্রী-পরিষদ মণ্ডলী চৌর্য কার্যে প্রবৃত্ত হন তখন তাহারা যে সম্মান লাভ করেন তাহাই কৌলিন্য।
আবার যে সম্মানীয় সহায়ক মন্ডলী, মন্ত্রী পারিষদ বর্গকে অর্থযোগে সহায়তা তথা সমৃদ্ধি দান করেন তাহারা ‘কুখ্যাত’ চোরের সম্মানীয় স্থানের অধিকারী। ইহার জনগনের কষ্টার্জিত অর্থ চৌর্য সহযোগে লাভ করিয়া পরম প্রীতিবোধে ও কখনো কিঞ্চিৎ জোর পূর্বক ভীতিবোধে জর্জরিত হইয়া কুলীন চোরদিগকে দান করিতে বাধ্য হন। যেহেতু ইহা দান তাই ইহাতে চৌর্যের পাপ দূরীভূত হয়। তাই ইহারা কুলীন চোরের স্থান লাভ করিতে না পারিলেও তদাপেক্ষা কিঞ্চিৎ নিম্নে অবস্থান করেন। কারণ কখনো কখনো মন্ত্রী পরিষদ বর্গ নিজ অঙ্গ প্রক্ষালন করিবার নিমিত্ত অর্থদান গ্রহণ করিবার পর ইহাদের ধৌত করিয়া থাকেন আইন সহযোগী করিয়া ইহাদেরকে কারাগারে নিক্ষেপের মারফতে। ইহারই কারণে ইহারা কুখ্যাত চোর বলিয়া খ্যাত।
তথাপি আমারা আর একধরণের চোরও লক্ষ্য করিয়া থাকি। তবে ইহারা উদরের ক্ষুধা নিবৃত্তির জন্য চোর্যবৃত্তি করিয়া থাকেন না। ইহারা মানসিক ক্ষুধানিবৃত্তির নিমিত্ত চৌর্যবৃত্তি অবলম্বন করিয়া থাকেন। বর্তমান বিশ্বে বই কিনিয়া না পড়িয়া ইহার নেট হইতে পুস্তক আহরণ করিয়া থাকেন। ইহাতে দেশ ও দশের বিশেষ ক্ষতি না হইলেও লেখককুল ও প্রকাশককুল কিঞ্চিৎ ক্ষতিগ্রস্থ হইয়া থাকেন।
ঈশ্বর নাকি জীবের মধ্যে বর্তমান। জীবের মধ্যে তিনি নিজেকে আস্বাদন করিয়া থাকেন। ইহাতেই নাকি তাহার হ্লাদিনী শক্তির প্রকাশ ঘটিয়া থাকে। ইহারই ফলস্বরূপ আমার ‘অহম্’ সত্তার মধ্যে সেই বইচোরকে উপলব্ধি করিতে পারি। তাহারই লীলা স্বরূপ বিভিন্ন নেট সাইট হইতে আমি পুস্তক আহরণ করিয়া থাকি। তাহাকে আত্মস্থ করিয়া থাকি। দামি বই হইলে বিনা পয়সায়( ইন্টারনেট পরিষেবার অর্থ ব্যতীত) তাহাকে ধারণ করিতে পারিয়া পরম উল্লাস বোধ করিয়া থাকি। তথাপি ইহা ভাবিয়া চক্ষু হইতে করুণা ধারা বিগলিত হয় –ইহাও আসলে তো আমার মধ্যে পরম ঈশ্বরের উল্লাসেরই বিচিত্র প্রকাশ। অন্যকে এই পুস্তক দান করিয়াও আমোদিত হই(পরের ধনে পোদ্দারি হইলেও)। আমার দ্বারা একটি নির্দিষ্ট কুলপ্রবাহ(লেখককুল) ক্ষতিগ্রস্থ হইলেও বিশেষ কেহ বিশেষ ক্ষতিগ্রস্থ হইবার সম্ভাবনা নাই। আর হইলেও বা কি ? দরিদ্রকুল ক্ষতিগ্রস্থ হইলেই বা কী। দরিদ্র, সরকার পরিত্যজ্য।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই আগস্ট, ২০১৬ রাত ২:৪৩