মনে করুন অঝোর বর্ষনস্নাত কোনো রাতে আবছা অন্ধকার ঘরে ঘুমিয়ে আছেন,হঠাত কাছেই কোথাও ভীষন শব্দে বাজ পড়ল।আপনি ঘুম ভেঙ্গে চমকে উঠলেন।বুকের হার্টবিট একটু কমে আসতে না আসতেই আপনি যা দেখলেন তাতে আপনার হৃদপিন্ড প্রায় থেমে যাওয়ার যোগার।সামনের চেয়ারটাতে সাদা চাদর গায়ে দিয়ে কে বসে???কোনো অশরিরী আত্মা?নাকি কোনো প্রেত?দোয়াদরুদ যা জানেন তা পড়ার পরও যখন তা যায় না তখন হয়ত ভয়ে আপনার দাঁত কপাটি লেগে গেল।সকালে জ্ঞান ফেরার পর দেখলেন আরে ভুত প্রেত কই ওটা তো চেয়ারে এলোমেলো করে রাখা কাপড় তোয়ালে ইত্যাদি।আর চেয়ারের পেছনে ঝুলিয়ে রাখা আপনার সাদা শার্টকেই আধো অন্ধকারে দেখে ভেবেছেন বুঝি কোনো প্রেত ড্যাবড্যাব করে আপনার দিকে চেয়ে বসে আছে।এমন ঘটনা প্রায় মানুষের জীবনেই কখনো না কখন ঘটে।এটা এক ধরনের চোখের ধাঁধাঁ বা অপ্টিক্যাল ইলুশন।বাস্তবে যা নয় অন্ধকারে দেখে তাই বলে মনে হয়।আলোছাঁয়ার কারসাজি এর পেছনে দায়ী আর পরিবেশ যদি একদম খাপ খেয়ে যায় তবে আর দেখতে হবে না রজ্জুকে(দড়ি) সর্প ভেবে চিতকার করে আপনি ঠিকই পাড়া মাথায় তুলবেন।
এতে আপনার অবশ্য দোষ নেই কারন আলো ছায়ার কারসাজি এমন হতে পারে যাতে আপনার মস্তিষ্ক আপনাকে এমন কিছুর অনুভুতি দেবে যা আসলে বাস্তব নয়।আমার এই ব্লগটি এমন কিছু ছবি বা প্যার্টান নিয়ে সাজিয়েছি যা আপনার মাথা ঘুরিয়ে দিতে বাধ্য।এগুলোকে বলা হয় অপটিকাল ইলুশন।যেখানে ছবিগুলো স্থির কিন্ত দেখলে মনে হবে তা যেন জীবন্ত।আবার এমন কিছু ছবি আছে যা একেক দিক থেকে দেখে একেক রকম মনে হয়।অনেক বিখ্যাত শিল্পীর এমন আর্ট আছে যা এমন ইলুশন তৈরী করে।বর্তমানের জনপ্রিয় থ্রি-ডি আর্টও এক ধরনের ইলুশন যা ত্রিমাতৃক গভীরতার অনুভুতি সৃষ্টি করে।
অপ্টিক্যাল ইলুশন তৈরী করার জন্য রং,জ্যামিতিক প্যার্টান আরো ছায়ার অনুভুতি দায়ী।সাধারনত পাশাপাশি সাদা এবং কালো অথবা অন্যসব পরিপূরক উজ্জ্বল রঙ ব্যবহৃত হয়।জ্যামিতিক প্যার্টানগুলো হয় খুব সূক্ষ্মভাবে পরিমাপ করা।আকার,আকৃতি উজ্জ্বল রঙ আর একই প্যার্টানের বারবার ব্যবহারের ফলে চোখে এক ধরনের ধাঁধাঁ তৈরী হয়।কারন চোখে দেখা এই ছবিগুলো ব্রেন একটু অন্য ভাবে ব্যখ্যা করে আর এমন অনুভুতি দেয় যা আসলে বাস্তব নয়।
অপ্টিক্যাল ইলুশন প্রধানত দুই প্রকার।ফিজিওলজিক্যাল(physiological)আর কগনিটিভ(cognitive).ফিজিওলজিক্যাল ইফেক্ট হয় রং,জ্যামিতিক প্যার্টান ইত্যাদি থেকে।যা একটা স্থির ছবির জীবন্ত রূপ দেয়।যেমন এই ছবিটি-
"আমার সোনার বাংলা আমি
আমি তোমায় ভালবাসি" চিরচেনা এই লাইনটি লক্ষ্য করুন।এখানে কোনো শব্দের বেশি ব্যবহার আছে কি?অনেকের চোখেই নিশ্চয় ব্যাপারটা এড়িয়ে গেছে।হ্যাঁ এটাই হচ্ছে ২য় ধরনের ইলুশন যা চেতনা বা জ্ঞানলব্ধ।আপনি যা জানেন সেই ব্যাপারটি আপনার ব্রেন আপনাকে আগে থেকে দেখায়।যেমন জাতীয় সঙ্গিতের এই পরিচিত লাইনটি আপনি এটি পড়া শুরু করা মাত্রই পুরো লাইন মাথায় চলে আসে তাই আপনি এর ভুল দেখতে পান না।ছবিটির গাছটি লক্ষ্য করুন,সত্যিই কি এটা শুধুই গাছ আর কিছু কি দেখা যায় না?
এবার এই ছবিগুলি দেখুন কি মনে হয়?সাপগুলি কি কুণ্ডলী পাকাচ্ছে?
ছবিগুলি কি নড়েচড়ে?
এই প্যাঁচানো পথে কি হারিয়ে যাওয়া যায়?
ফুলগুলো কি ফুটছে?
দেখুন তো এই প্যারাডক্স কাঠামোগুলোর শেষ কোথায়?
এটাকি শুধুই বিড়াল না আড়ালে একটা ইঁদুর লুকিয়ে?
গাছের আড়ালে কোনো প্রেমিক যুগল লুকিয়ে নেই তো?
আপনি বলবেন এখানে দুটো মুখ আর আমি বলব এখানে আসলে একটা ফুলদানি।এর নাম রুবিন্স ভাস।
খরগোশ না হাস?
হাতির কয় পা?
বুড়ি না তরুণী?
সাদা লাইনগুলোর জয়েন্টে যে কালো ডট দেখা যাচ্ছে তা কি গোনা যায়?এগুলো আসছে আর যাচ্ছে মনে হয়।
আহা বেচারার মাথাটা বুঝি কাটা পড়েছে!
ছবিতে যা দেখা যাচ্ছে আসলেই কি তাই?তবে এই বুড়ো ভদ্রলোক কি করছে?
এখানে দেয়ালের মাঝে খাজ না দেয়ালের প্রান্ত?
স্পাইরাল টা বেশ সুন্দর তাইনা?আরে এটা কি আসলেই স্পাইরাল?!!
সাদাকালো বার গুলো একটা অন্যের উপর হেলে আছে।আসলেই কি তাই?
দেখুন ভাল করে মাঝের দুটি ডটের মধ্যে কোনটা বড়।ডানেরটা তাইনা?আসলে দুটি ডটই সমান।আশেপাশের বৃত্ত গুলোর সাথে তুলনা করছি বলেই ডানেরটা বড় মনে হচ্ছে।
এই ছবির প্যাটার্নগুলো কিন্ত মোটেও কুঁচকানো নয়।
ছবিটিকে আস্তে আস্তে দূরে নিন মনে হবে ভেতরের ডটগুলো পানির ভেতর ভাসছে।
বাদুরের দিকে একভাবে তাকিয়ে দেখুনতো ওড়ে কিনা?আমি অবশ্য এক্ষেত্রে ফেইল।
এই ভদ্রলোক কে তো সবাই চেনেন।এবার একটা কাজ করুন ছবিটা স্থির রেখে ১০-১৫ ফুট দূরে গিয়ে আবার দেখুন।কি অবাক হচ্ছেন?আলবার্ট আইনিস্টাইন নিমেষেই পরিনত হলেন সোনালি চুলের লাস্যময়ী মেরেলিন মনরোতে।
ইলুশন নিয়ে আরও জানতে উইকিপিডিয়া দেখুন।সবাই ভাল থাকুন।
তথ্য ও ছবি: ইন্টারনেট
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জুলাই, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৪৬