দেশের দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনীতিতে আশা জাগানিয়া দুইটি বৃহৎ উন্নয়ন প্রকল্প পদ্মা সেতু ও পায়রা সমুদ্রবন্দরের কাজ এগোচ্ছে দ্রুতগতিতে। এর সঙ্গে তাল মিলিয়ে এতদাঞ্চলে বাড়ছে শিল্পায়ন ও ব্যবসা-বাণিজ্যের গতি। শিল্প-কারখানা স্থাপনে বিপুল পরিমাণ জমি কিনছেন ব্যবসায়ীরা। গড়ে উঠছে নতুন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। আসছে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ব্যবসায়ী-শিল্পপতিরা তাদের নতুন শিল্প-কারখানা স্থাপনের জন্য পায়রা বন্দরে জমি কিনতে শুরু করেছেন। জমির দামও এরই মধ্যে ২০-২৫ গুণ বেড়ে গেছে। ১০ হাজার টাকার জমি এখন ২ থেকে ৫ লাখ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। শিল্পের জন্য প্রধান প্রধান সড়কের পাশে যে ধরনের জমি দরকার, তাও কিনে রাখছেন ব্যবসায়ীরা। আবার দেশের কোনো কোনো শীর্ষস্থানীয় শিল্পপতি ও ব্যবসায়ী পায়রায় শিল্প স্থাপনের জন্য স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। নাভানা, গাজী, পারটেক্স, মদিনা, আজমত গ্রুপের মতো প্রায় অর্ধশত বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পায়রা, কুয়াকাটাসহ আশপাশে জমি কিনেছে। ইতিমধ্যে পদ্মা সেতুর দুই পাশে বিশাল এলাকা ঘিরে দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে ক্ষুদ্র শিল্প। অনেক শিল্পপতি আর পুঁজিপতি ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার আলোকে শিল্প-কারখানা স্থাপনে বিশাল এলাকা জুড়ে জমি কিনে রেখেছেন। গড়ে উঠছে অনেক স্থাপনা। সব মিলিয়ে পদ্মা সেতুর সুফল কাজে লাগিয়ে পুরোদমে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু হলে দেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হার ১ দশমিক ২ শতাংশ বাড়বে। বহু প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতু নির্মিত হলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে লাগবে গ্যাস। আর এ দুটো নিশ্চিত হলেই বাড়বে ব্যাপক কর্মসংস্থান, কমবে দেশীয় পরিমন্ডলে আয় বৈষম্য। মংলা বন্দরেও আসবে গতিশীলতা। কুয়াকাটার বন্দর সচল হলে বাণিজ্য সম্প্রসারণেও মাইলফলক হবে পদ্মা সেতু। গ্রামীণ অর্থনীতির উৎপাদনশীলতা হয়ে উঠবে রপ্তানিমুখী। দারিদ্র্য নিরসন এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নেও ভূমিকা রাখবে পদ্মা সেতু। পাশাপাশি পাটশিল্প তার হারানো ঐতিহ্য ফিরে পাবে। বর্তমানে পায়রা বন্দর এলাকায় বন্দর, জেটি, কনটেইনার টার্মিনাল, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণের পাশাপাশি চলমান ‘পায়রা কাস্টমস হাউস’-এর জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে দ্রুতগতিতে। পটুয়াখালী ও ভোলায় অর্থনৈতিক অঞ্চল করতে যাচ্ছে সরকার। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনার আলোকে উপকূলীয় জেলা পটুয়াখালী ঘিরেও মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করা হয়েছে - বঙ্গবন্ধু উপশহর-কাম-আবাসিক এলাকা উন্নয়ন’ প্রকল্প। বঙ্গবন্ধু উপশহরে যেমন থাকবে লাখো মানুষের আবাসনের জন্য উন্নত নাগরিক জীবনের সব সুবিধা, তেমনি গলাচিপা উপজেলাসহ আশপাশ এলাকার হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে গড়ে উঠবে বিশাল শিল্পাঞ্চল। বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলতে এখানে জমির অভাব নেই। সম্ভাবনা আছে পোশাক শিল্পনগরী গড়ে তোলারও। মাঝের চরের মতো অজপাড়াগাঁয়ে সরকার গড়ে তুলতে চাইছে তথ্যপ্রযুক্তির বিশাল সম্ভার বা আইটি পার্ক। আরও আছে স্কুল, কলেজ, স্টেডিয়াম, শিশু পার্ক। সব মিলিয়ে সাগরকন্যা পটুয়াখালীর গলাচিপা এখন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে উল্লম্ফন দিতে যাচ্ছে। উন্মোচিত হতে যাচ্ছে লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের নতুন দিগন্ত।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জুলাই, ২০১৭ বিকাল ৪:৩৭