somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শেখ হাসিনাঃ গনতন্ত্রের অতন্দ্র প্রহরী এক নেত্রী

২৩ শে জুলাই, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথম কথা: পাঠক, দয়াকরে সম্পুর্ণ পোস্ট না পড়ে কমেন্টস করবেন না, রেটিংও দেবেন না, সেক্ষেত্রে বিপত্তি ঘটতে পারে। আমি বিদিশা নামক ব্লগারের “খালেদা জিয়া বিশ্বের সবচেয়ে দেশপ্রেমিক রাজনীতিক” পোস্টটি পড়ে এই পোস্ট লিখতে অনুপ্রাণিত হয়েছি। আমি মনেকরি শেখ হাসিনাকে নিয়েও এমন একটি পোস্ট হওয়া উচিৎ। সেই ভাবনা থেকেই এই পোস্ট লেখা।

শেখ হাসিনা বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী নাম। এই একটি নামের সাথে জড়িয়ে আছে বাংলাদেশের সমগ্র ইতিহাস। জন্ম ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বরের এক শুভ লগ্নে এক বনেদি ধর্ম নিরপেক্ষ মুসলিম পরিবারে, শেখ বংশে, বাংলাদেশে যাদের আগমন হয়েছিলো বাঘের পিঠে চড়ে, আরব দেশ হতে (সূত্র:১)। তার হাত ধরে বাংলাদেশের গনতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে। শেখ হাসিনা ওয়াজেদ বিবিসির জরিপে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, খলিফাতুল মোসলেমীন (সূত্র:২), শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা। তার মাতার নাম বেগম ফয়জুন্নেসা। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধী চক্র এক সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশের সর্বাধিক জনপ্রিয় রাষ্ট্রপতি তার পিতাকে তার মাতা ও ভাইদেরসহ হত্যা করে। হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানা বাদে তার পরিবারের সকল সদস্য পচাত্তরের ১৫ আগস্টে সামরিক অভ্যুত্থানে নিহত হন। তারা সেইসময় পড়াশুনার জন্য পশ্চিম জার্মানীতে অবস্থান করছিলেন বলে প্রাণে বেঁচে যান।

নিহত হওয়ার আগ পর্যন্ত তার পিতা ছিলেন বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাষ্ট্রপতি এবং তিন বছরের অধিককাল তিনি দেশ শাসনকরার সুযোগ পেয়েছিলেন। এই তিন বছরে তিনি বাংলাদেশের জনগনের বহুদিনের লালিত স্বপ্ন ও বহু কষ্টার্জিত স্বাধীনতার মাধ্যমে অর্জিত গনতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেন বাকশাল নামক একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করে। তার জনপ্রিয়তার প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে কল-কারখানায়, ঘাটে-বন্দরে তথা দেশের বিভ্ন্নি স্থানে স্বাধীনতা বিরোধীরা প্রতিবাদের নামে আন্দোলনের মাধ্যমে ষড়যন্ত্র করছিলো। তার শাসন আমল(১৯৭২-৭৫) ছিলো বাংলাদেশের ইতিহাসে এক স্বর্ণযুগ। এসময়ে বাংলাদেশের কোথাও একটি মানুষও না খেয়ে মারা যায়নি। যারা সন্ত্রাস ও সরকারের বিরুদ্ধে কাজ করেছে তিনি তাদেরকে দক্ষতার সাথে দমন করে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখেন। এজন্য তিনি সব ধরনের প্রবিতবাদ মিটিং মিছিল নিষিদ্ধ করেন, গনতন্ত্র তথা জাতির বৃহত্তর স্বার্থের কথা চিন্তা করে সরকার নিয়ন্ত্রিত চারটি ছাড়া সব পত্রিকা নিষিদ্ধ করেন। তিনি দক্ষতার সাথে দেশে জাসদের সন্ত্রাস দমন করতে পেরেছিলেন। দেশে প্রতিষ্ঠিত হয় সত্যিকারের শান্তি ও শৃঙ্খলা। বাংলাদেশের গনতন্ত্রমনা জনগনের স্বার্থে মাত্র সতোরে মিনিটে তিনি জাতীয় সংসদে বাকশাল (বাংলাদেশে কৃষক শ্রমিক আওয়ামী জনতা লীগ) আইন পাস করেন তথা নতুন গনতন্ত্রের দিক উন্মোচন করেন। (সূত্র:৩)।

১) শেখ মুজিবুর রহমান ও তার ছেলেদের মৃত্যুতে নেতৃত্বশূন্য আওয়ামী লীগকে পথের দিশার সন্ধ্যান দেওয়ার জন্য এবং বাঙালি জাতিকে রক্ষার এক মহান দায়িত্ব নিয়ে ১৯৮১ সালে শেখ হাসিনা তার দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আসেন । অথচ রাজনীতির প্রতি তার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু দেশ তার কাছে ছিল পরিবারের চেয়েও বড় কিছু। তাই মানুষের ডাক তিনি উপেক্ষা করতে পারেননি। টানা ২৯ বছর তিনি উপমহাদেশের একমাত্র “ধর্ম নিরপেক্ষ” রাজনৈতিক সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

২) ১৯৮২ সালে জেনারেল এরশাদের ক্ষমতায় আরোহনকে অবৈধ ঘোষনা করেন (অবশ্য তার সাবেক ব্যক্তিগত হাউজ সেক্রেটারী মতিউর রহমান রেন্টু তাকে হেয় করার জন্য ১৯৯৯ সালে একটি বই লিখে তাতে ভিন্ন তথ্য দিয়ে জাতিকে বিভ্রান্ত করেছে, এবং প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন শেখ হাসিনা কর্তৃক মতিউর রহমানকে অবাঞ্ছিত ঘোসনার মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে রেন্টুর করা সব অভিযোগই অসত্য! উল্লেখ্য এই পোস্টে আমার ফাঁসি চাই থেকে কোন রেফারেন্স দেওয়া হয়নি)। ১৯৮৬ সালে শামরিক শাসক এরশাদ নির্বাচন ডাকলে অপরাপর রাজনৈতিক দলের সাথে একাত্মতা ঘোসণা করে নির্বাচন বয়কটের পক্ষে অবস্থান নেন। এমনকি নির্বাচনের মাত্র ৪৮ ঘন্টা আগে তিনি ঘোসণা করেন যারা এরশাদের অধীনে নির্বাচন করবে তারা হবে জাতীয় বেঈমান। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাঙালি জাতির বৃহত্তর স্বার্থ ও গনতন্ত্রের কথা চিন্তা করে তিনি তার অব্স্থান পরিবর্তন করতে বাধ্য হন। অন্য কোন রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলেও তিনি এরশাদের অধীনেই নির্বাচনে যান এবং পূর্ব সমঝোতার ভিত্তিতে এরশাদের পার্লামেন্টে বিরোধীদলের আসন অলংকৃত করেন। এটাই ত্যাগের মহত্ব, অপার সৌন্দর্য্য। তার মতো এমন ত্যাগ খুব কম রাজনীতিকই দেখাতে পেরেছেন। ১৯৯০ সালে সকল রাজনৈতিক দলের সমবেত আন্দোলনের কাছে নতি স্বীকার করে এরশাদ ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন।

৩) ১৯৯০ সালের নির্বাচনে শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগকে “সুক্ষ” কারচুপির মাধ্যমে পরাজিত করা হয় এবং তিনি বাঙ্গালি জাতির বৃহত্তর কল্যাণের কথা চিন্তা করে বিরোধী দলে তার অবস্থান মেনে নিতে চাননি। তাই চেষ্টা করতে থাকেন কিভাবে এই সুক্ষ কারচুপির মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা বিএনপি সরকারকে উৎখাত করা যায়। তিনি শুরু করেন হরতালের রাজনীতির নতুন দিগন্ত। এটি সম্ভব হয়েছে দেশপ্রেম, জাতি ও গনতন্ত্রের প্রতি তার অপার ত্যাগের কারণে।

৪) তার দেশ প্রেমের আরো বিরল দৃষ্টান্ত বাঙালি দেখতে পায় ১৯৯৪ সালে যখন তিনি বাঙালি জাতিকে তৎকালীণ বিএনপি সরকারের হাত থেকে রক্ষার জন্য তিনি যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত জামায়াতের সাথে রাজনৈতিক জোট করেন। শুধুমাত্র গনতন্ত্র ও বাঙালি জাতির স্বার্থেই তিনি তৎকালীন অন্যান্য বিরোধীদলসহ যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমের সাথে একই টেবিলে বসে বিএনপির অপশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে অবতীর্ন হন। তিনি গোলাম আযমের পা ছুয়ে কদমবুসি করে তার দোয়া নেন।



(সূত্র: ৪) আহাঃ কি ত্যাগ! পারস্পরিক সৌহার্দের এমন নমুনা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। তিনি সফলতার সাথে এই মেয়াদের বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে ১৭৩ দিন হরতাল করতে সক্ষম হন।

৫) ১৯৯৬ সালের জাতীয় নির্বাচনে তার দল একক সংখ্যা গরিষ্টতা না পেলেও (১৪৭ আসন ) সাবেক সামরিক শাসক এরশাদকে তার দলে আনতে সক্ষম হন। তাকে নিয়ে তিনি কোয়ালিশন সরকার গঠন করেন। সরকারে এসে তিনি দেশ উন্নয়নের জোয়ারে ভাসিয়ে দেন। এসময় দেশে কয়েকবার বন্যা হলেও বন্যার জোয়ার উন্নয়নের জোয়ারের কাছে ছিলো খুবই সামান্য। দেশে আইন-শৃঙ্খলার অভূতপূর্ব উন্নতি সাধিত হয়। চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, খুন, জখম, গুম, হত্যা, লুন্ঠন, ধর্ষণ, সন্ত্রাস চিরতরে বিদায় নেয়। এসময় ফেনীর জয়নাল হাজারি, আবু তাহের, নারায়নগঞ্জের শামীম ওসমান, ঢাকার হাজী সেলিম, ডা. ইকবাল নিজ নিজ এলাকাসহ সারাদেশে ব্যাপক শান্তি কায়েম করেন। বাংলাদেশ হয়ে যায় এক টুকরো সোনার দেশ। দ্রব্যমূল্য চলে আসে সাধারণ মানুষের একেবারে নাগালের মধ্যে। দেশে ৭৫ পূর্ববর্তী সময়ের মতো সত্যিকারের শান্তি স্থাপিত হয়। মানুষ সুখে-শান্তিতে বসবাস করতে থাকে। এছাড়াও তিনি এসময়ে শন্তু লাড়মা নামক এক ব্যাক্তির সাথে পার্বত্য চট্টগ্রামে এক মহান শান্তি চুক্তি করে দেশে শান্তির জোয়ার নিয়ে আসেন। সরকারের জনপ্রিয়তা আকাশ ছুয়ে যায়। এজন্য তার শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাবার কথা ছিলো। কিন্তু দেশে স্বাধীনতা বিরোধী তৎকালীন বিরোধীদলের ষড়যন্ত্রের কারণে তখন তার এই পুরস্কারটি পাওয়া হয়ে ওঠেনি।

৬) ২০০১ সালে নির্বাচনের আগে তিনি তার করা সকল উন্নয়ন কাজের ফিরস্তি দিয়ে টেলিভিশন ভাষণে জাতির কাছে ভোট ভিক্ষা চেয়ে বলেন আমাকে আরেকটিবার আপনাদের সেবা সুযোগ দিন। এই ভোট ভিক্ষা চাওয়াটাও বাংলাদেশে কোন রাজনীতিক প্রথম করেছেন। বস্তুত: বাংলাদেশে এমন কোন সেক্টর নেই যা তিনি প্রথম করেননি। জনগন তাকে ভোট ভিক্ষা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিলো। তারপরও এই নির্বাচনে তার দলকে হারানোর নতুন কৌশল নেওয়া হয় এবং ২০০১ সালের সাধারন নির্বাচনে তার দলের পাওয়া ভিক্ষার ভোট “স্থুল” কারচুপি করে তাকে পরাজিত করা হয়। তার দলকে অন্যায়ভাবে মাত্র ৬২ টি আসন দিয়ে চার দলীয় জোটকে বাকি সব আসন দিয়ে দেয়া হয়।

৭) নির্বাচনের আগে তিনি সংসদ ভবনে দাড়িয়ে সংসদ হরতালে আশু ক্ষতির দিকটি চিন্তা করে জাতির কাছে এই বলে ওয়াদাবদ্ধ হন যে তার দল বিরোধীদলে গেলেও আর কোন দিন হরতাল করবে না। যেহুতু নির্বাচনে তার দলকে অন্যায়ভাবে কম আসন দেয়া হয় তাই তিনি তার আগের অবস্থান থেকে ফিরে আসেন এবং জনগনকে সাথে নিয়ে দেশ রক্ষার জন্য ‍আবারো হরতাল শুরু করেন। এই মেয়াদের বিএনপি সরকারের বিরদ্ধে দেশ ও গনতন্ত্রের স্বার্থে তিনি মোট ১৩০ দিবস হরতাল করেন। তিনি এসময় ২০০১ থেকে ২০০৪ এর জুন পর্যন্ত গনতন্ত্রের স্বার্থে সংসদ বর্জন করেন (সূত্র:৫)।

৮) ২০০৬ সালে জোট সরকারের ক্ষমতা ছাড়ার দিনক্ষণ এবং নতুন সংসদ নির্বাচন যতোই এগিয়ে আসতে থাকে তিনি ততোই দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক মহীরুহুতে পরিনত হন তার অদম্য মানসিকতার দ্বারা। গনতন্ত্রের প্রতি তার যে অগাধ ভালোবাসা তার প্রকাশ পাওয়া যায় জনগনকে সাথে নিয়ে ২৮ অক্টোবরের লগি-বৈঠা কর্মসূচি গ্রহনের মধ্যে দিয়ে। এদিন তার কর্মীরা ২৮ জন ষড়যন্ত্রকারীকে ঢাকার রাজপথে পিটিয়ে হত্যা করে রক্তে রঞ্জিত করে রাজপথ, উচিৎ শিক্ষা দেওয়া হয় তাদের, লাশের ওপর নর্তন-কুর্দন করে বিশ্ববাসীকে আরেকবার দেখিয়ে দিয়েছে বাঙ্গালি বীরের জাতি। তিনি বিশ্ববাসীকে জানিয়ে দিয়েছেন আওয়ামী লীগ কোন ভীরুদের দল নয়।



(সূত্র৬, ইউটিউব দেখুন)


৯) তার অনমনীয় অবস্থান এবং উদ্ভুত পরিস্থিতিতে দেশে মঈন গং ক্ষমতায় আসে এবং তিনি মঈনকে স্বাগত জানান। সে দেশের অভাবনীয় উন্নতি সাধন করে। মঈন দ্রব্যমূল্যকে সাধারণ মানুষের একেবারে কাছে নিয়ে আসে। যদিও মঈন বেঈমানি করে তাকেও জেলে পুরে। তারপর মঈনের কাছ থেকে মঈনকে ক্ষমতায় বসানোর শুভেচ্ছা উপহার স্বরুপ বিদেশ সফরের প্রস্তাব পান, সমঝোতাও হয় এবং আমেরিকা চলে যান ভ্রমণপ্রিয় হাসিনা। বিদেশ হতে দেশে ফিরে এসে গনতন্ত্রের স্বার্থে বিমান বন্দরে নেমেই ঘোসণা করেন তার দল ক্ষমতায় গেলে মঈন সরকারের সব কাজের বৈধতা দেবে। এটিও তার গনতন্ত্রের প্রতি ভালোবাসার এক বিরল নমুনা।


১০) ২০০৯ সালে নির্বাচন পূর্ববর্তী সময়ে শেখ হাসিনার সাথে সাবেক স্বৈর শাসক এরশাদের সাথে এক গভীর ভাই-বোনের সম্পর্ক তৈরি হয়। এরশাদ প্রকাশ্য জনসভায় ঘোসণা করেন হাসিনা আমার বোন, আমি হাসিনার ভাই। জাতীয় রাজনীতিতে এমন ভাই-বোনের সম্পর্কের নজির ও ইতিহাসে প্রথম। এক্ষেত্রেও হাসিনা পথিকৃৎ এর ভূমিকা পালন করেছেন।

১১) ২০০৯ সালের ডিসেম্বরে নবম সংসদ নির্বাচনে জনগনের ভোটের মাধ্যমে মহান মঈন আলামীন তার দলকে এক ভূমিকম্প বিজয় উপহার এনে দেয়। পৃথিবীর ইতিহাসে তিনিই প্রথমবারের মতো প্যারোলে মুক্ত থাকা অবস্থায় এবং আদালতে প্রায় ১৫ টি বিচারাধীন মামলার বোঝা মাথায় নিয়েও দেশের সরকার প্রধান হিসেবে শপথ নেন। এতে আইন তার জন্য কোন প্রকার বাঁধা হতে পারেনি। এটিও একটি রেকর্ড। ইতিপূর্বে কেউ করে দেখাতে পারেন নি। সরকার গঠনের পর সরকারের আইন প্রতিমন্ত্রী কর্তৃক তার অধিকাংশ মামলা তুলে নেওয়ার মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে, তার বিরুদ্ধে আনা সকল মামলাই ছিলো “ভিত্তিহীন”।

১২) সরকার গঠনের পর থেকে দেশে পচাত্তর পূর্ববর্বতী শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে কাজ করে চলেছেন। তার নেতৃত্বাধীন ছাত্রলীগ, যুবলীগ, সহ দলের সকল স্তরের নেতা-কর্মীরা কাজ করে চলেছে। এদের মাধ্যমে দেশে ব্যাপক কর্মসংস্থান করেছেন। নিদেনপক্ষে ছেলেরা বেকার থাকছেনা, কলেজে, বিশ্ববিদ্যালয়ে যে যেখানেই আছে কিছুনা কিছু করছেই। দেশের কোথাও কোন সন্ত্রাস-চাদাবাজি, টেন্ডারবাজি নেই, দ্রব্যমূল্য রয়েছে মানুষের ক্রয় ক্ষমতার ‍নাগালেরও নীচে। কারো কারো মতে দেশে এখন পচাত্তর পূর্ববর্তী সোনলি যুগ ফিরে এসেছে।

১৩) শেখ হাসিনা গনতন্ত্র ও মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের রাজনীতিতে বিশ্বাস করেন। তিনি নিজে একাত্তুরে যুদ্ধ করতে পারেননি কারণ তিনি তখন অন্তঃসত্তা ছিলেন। এছাড়া তাকে পাক আর্মির কড়া প্রহড়ায় গৃহবন্দী থাকতে হয়েছে যুদ্ধের প্রায় পুরোটা সময়। তাই যুদ্ধে তিনি তেমন কোন অবদান রাখতে পারেননি। সুযোগ থাকলে তিনি রনাঙ্গণে যুদ্ধ করতে যেতেন। এজন্য তার আফসোসও করে থাকেন। তথাপি মুক্তিযুদ্ধ ও গনতন্ত্রের আদর্শ থেকে কখনো বিচ্যুত হননি। তার কাছে ব্যাক্তি, দলের চেয়ে দেশ ও আদর্শ সবসময়ের জন্য বড়। এই আদর্শকে ধারন করেই তিনি ১৯৯৪ সালে বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে জামায়াতের সাথে রাজনৈতিক জোট করেন এবং ১৯৯৬ সালে সাবেক শামরিক শাসক এরশাদের সাথে কোয়ালিশন সরকার গঠন করেন।

১৪) শেখ হাসিনা ধর্ম নিরপেক্ষ রাজনীতি করলেও তিনি নিজ ধর্ম পালনেও যথেষ্ট মনোযোগী। তিনি একজন ধর্মভীরু নারীও বটে। প্রতিবার নির্বাচনী প্রতিযোগিতায় নামার পূর্বে তিনি পবিত্র হজ্জ‌ ব্রত পালন করেন, কিছু দিনের জন্য নেকাব পড়েন, এবং কাবা হতে তসবিহ হাতে দেশে ফিরে আসেন। এছাড়া তিনি অন্য ধর্মের প্রতিও যথেষ্ট সহনশীল এবং সমানভাবে তা-ও পালন করার চেষ্টা করেন। ১৯৯৬-২০০১ কালে পশ্চিম বঙ্গে একটি রাষ্ট্রীয় সফরে গিয়ে মাথায় সিঁদুর পড়ে বাঙালি সংস্কৃতির মহত্ব বাড়িয়ে দেন বহুগুনে। নিজের ছেলের বিয়ে দেন এক ইহুদি ধর্মাবলম্বী কনের সাথে। সকল ধর্মের মেল বন্ধন কেবল তার পরিবারের মাঝেই খুজে পাওয়া যাবে।


১৫) তিনি একজন স্বামী ভক্ত স্ত্রী-ও বটে। তার ‍স্বামীর জীবদ্দশায় তিনি যথা সম্ভব তার স্বামীর হুকুম মেনে চলতেন। ড. ওয়াজেদ মিয়াকে তিনি কোনদিন কোনভাবে কষ্ট দেননি। স্বামীর মৃত্যুর পর রাষ্ট্রীয় সম্মানে তাকে সমাহিত করানর ব্যবস্থা করেন। এতেই প্রমাণিত হয় তিনি তার স্বামীকে কতোটা ভালোবাসতেন।

১৬) হাসিনা এক পুত্র এক কন্যা সন্তানের জননী। হাসিনা একজন সন্তান বৎসল জননীও বটে। তার সন্তান বাৎসল্যের উত্তম দৃষ্টান্ত ‍হলো তার একমাত্র মেয়ে পুতুল কে তিনি বিয়ে দেন এক উত্তম ঘরে, ফরিদপুর অঞ্চলের বিখ্যাত মুক্তিযোদ্ধা নুরার নাতি এবং মুক্তিযোদ্ধা মোশারফ হোসেনের পুত্রের কাছে। তার একমাত্র পুত্র বিদেশ ‍বিভুইয়ে ইহুদি ধর্মাবলম্বী ক্রিস্টিনা ওয়ালিককে বিয়ে করলে তিনি মায়ের স্নেহে তা মেনে নেন। সকল ধর্মের প্রতি তার অগাধ ভালোবাসার অনন্য নজির স্থাপন করেন তিনি ছেলেকে ইহুদি কনের সাথে বিয়ে মেনে নিয়ে। এছাড়া তার পূত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ই তার উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করে থাকেন, এতে রাষ্ট্রীয় সম্পদের ব্যাপক সাশ্রয় সম্ভব হয়েছে, কৃচ্ছ্রতা সাধন করছেন হাসিনা, যা অন্য কেউ করতে পারেননি।

১৭) তার সর্বোচ্চ শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পর্কে তার মরহুম স্বামী ড. ওয়াজেদ মিয়ার দেয়া তথ্য অনুযায়ী যা জানা যায় তা হলো তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে ১৯৭৩ সালে বিশেষ বিবেচনায় স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন। হাসিনা একজন ব্যস্ত রাজনীতিক হলেও সাহিত্য ভালোবাসেন। কাজের ব্যস্ততাকে ছাপিয়ে বই লিখেছেন কয়েকটি যা বাংলা সাহিত্যের অমুল্য সম্পদ হিসেবে আজ পরিগনিত। তিনি একজন উচ্চ মাপের একজন গবেষকও বটে। তার গবেষণার স্বীকৃতি স্বরুপ এ যাবৎকাল পর্যন্ত তিনি ১২টির বেশী অনারারি ডিগ্রী লাভ করেছেন। কোন বাংলাদেশি রাজনীতিক হিসেবে এটিও একটি রেকর্ড। এ যাবৎ কোন রাজনীতিক এই কৃতিত্ব অর্জন করতে পারেননি। ভবিষ্যতেও কেউ তাকে স্পর্শ করতে পারবেন তারও সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। জানা যায় বহু বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয় তাকে আরো ডজনখানেক অনারারি ডিগ্রী দেওয়ার জন্য প্রস্তুত আছে, সময় করতে পারছেন না বলে ডিগ্রীগুলো তার নেওয়া সম্ভব হচ্ছেনা।

১৮) ১৯৯৬-২০০১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকাকালীন একবার আদালত হাসিনাকে তার ‍অনমনীয় কথা বার্তার প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে “রং হেডেড লেডি” বলে অপবাদ দেওয়ার ধৃষ্টতা দেখিয়েছিলো। হাসিনা তাই সরকারে আসার পর আদালতের ব্যপক সংস্কারের উদ্যেগ নিয়েছেন। নিবেদিত প্রাণ ছাত্রলীগ কর্মীরাই যাতে বিচাররক হিসেবে নিয়োগ পেতে পারেন, তিনি সেটি নিশ্চিত করছেন।

তার অমৃত বচন: দেশে কোন রাজকার নেই।
আমি দেবর-ভাবীর ব্যাপার স্যাপার বুঝি না।
আমরা একলা খাবো না, সবাইকে নিয়েই খাবো।


আসুন আমরা সবাই মিলে দোয়া করি যেন এই মহীয়সী নারী আজীবনকাল বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী পদে আসীন থেকে দেশ সেবা করে যেতে পারেন। তিনি চিরজীবি হোন।

সূত্র সমুহ:
১। জনৈক আওয়ামী ওয়েব সাইট ও পরবর্তীতে ২০০০ সালে ঐ ওয়েব সাইটের সূত্র দিয়ে যায়যায়দিন পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ)।
২। কুরআন ও হাদীসের আলোকে খলিফাতুল মোসলেমীন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, লেখক: হায়দার হোসেন
৩। মুক্তিযুদ্ধ ও তারপর লেখক: বিশিষ্ট আওয়ামী সাংবাদিক ‍গোলাম মুর্শিদ
৪। ছবি দেখুন
৫। উইকিপিডিয়া দেখুন
৬। ইউটিউব দেখুন
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জুলাই, ২০১০ রাত ১১:২৩
৩৬টি মন্তব্য ২০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পানির অপচয় রোধ: ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা এবং সমকালীন বিশ্বের গভীর সংকট

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৬

পানির অপচয় রোধ: ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা এবং সমকালীন বিশ্বের গভীর সংকট



পানি জীবনের মূল উৎস। এটি ছাড়া কোনো প্রাণের অস্তিত্ব সম্ভব নয়। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন:

وَجَعَلۡنَا... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে shoot করে লাভবান হলো কে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:২৪


শরিফ ওসমান হাদি যিনি সাধারণত ওসমান হাদি নামে পরিচিত একজন বাংলাদেশি রাজনৈতিক কর্মী ও বক্তা, যিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে গঠিত রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত। তিনি ত্রয়োদশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×