ঘটনা
“মাদক কে না বলুন”। বহুবার শোনা, বারবার দেখা একটা স্লোগান। টিভির পর্দায়, রাস্তার ব্যানারে, গণসচেতনতামূলক অনুষ্ঠানে, বিজ্ঞাপনে, কনসার্টে, মঞ্চ নাটকে বহুশতবার এই স্লোগান আমাদের বলে মাদক কে না বলতে। শুনি বুদ্ধিজীবীর মুখে, শুনি লাস্যময়ী নায়িকার মুখে, ক্রিকেটাররা বলেন, বলেন ব্যান্ড তারকারা। শুনি, দেখি, এর বেশি আর কিইবা করার আছে।
ঘটনার পিছের ঘটনা
আমার এক বন্ধু, নাট্য কর্মী, এক নাট্যদলের উঁচু পদমর্যাদার মানুষ। বন্ধু আমার চরম প্রতিভাবান, অভিনয়, নাটক, গান সবকিছুতেই। কিন্তু মাদক ছাড়া তার একদিনও চলেনা। গাঁজা ছাড়া একটা দিন পার করা তার পক্ষে অসম্ভব। তার দলের নাট্যোৎসবে বেশ বড় এক কর্পোরেট কোম্পানি বড় অংকের টাকা দেয়, শর্ত একটাই, বানাতে হবে মাদক বিরোধী নাটক। বন্ধু আমার চরম প্রতিভাবান, গাঁজা খাইয়া লেখে মাদক বিরোধী নাটক, অসাধারণ একটা নাটক। সুন্দর একটা গানও লেখে। আমরা গাঁজা খাইয়া সেই নাটক দেখতে যাই। গান শুইনা কাঁদি। এইরকম ঘটনা ঘটে রোজ রোজ, ঘটে সেই কতকাল আগে থেকে, গাঁজা খাইয়া জেমস উঠতো মাদক বিরোধী কনসার্টের স্টেজে, আর ডাইল খাইয়া আমরা মাঠের মইধ্যে ধুলা উঁড়াইতাম, সেই তখন থেকে এখন পর্যন্ত।
ঘটনার পরের ঘটনা
বন্ধু আমার ক্রিকেট খেলতো, অসাধারণ। ছিলো অলরাউন্ডার। কি জানি, খেলতে থাকলে আজ হয়তো হতো আরেকজন সাকিব উল হাসান। তার বাপ মায় অবশ্য তা চায় নাই, তারা চাইছে তাদের ছেলে ভালো ছাত্র হোক, হোক ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার। বন্ধু আমাদের মতো খারাপ খেলোয়ার কিন্তু ভালো ছাত্রদের সাথে চলতো বাধ্য হয়েই, নাইলে বাপ মায় চ্যাতে। বন্ধু আমার আজ অনেক বড় হয়েছে, ডাক্তার হয় নাই, ইঞ্জিনিয়ারও না। সাকিব উল হাসানও না, হইছে বন্ধুদের মধ্যে সবচেয়ে বড় নেশাখোড়। আমরা যখন ঠোকর মেরে ভাগি, বন্ধু তখন ঠোকর ভালোবেসে বাকি সব ভালোবাসা বাকির খাতায় তুলে রেখে ডিজিটাল (ডাইল গাঁজা টাল) স্বপ্নের ঘোড়ে বসে থাকে বাসার ছাঁদে। বন্ধু আমার বাকি সব ভালোবাসা যখন তুলে রেখেছে বাকির খাতায়, কেউ তখন ব্যাবসা করছে মাদক উৎপাদনের, কেউবা পাচারের, আর কিছ শুয়োরের বাচ্চা করে চলেছে “মাদক কে না বলা”র ব্যাবসা।
দুর্ঘটনা
আমার খেলার মাঠ কই? কংক্রিটের এই শহরে আমার ইচ্ছার বাগানই বা কই? আমাকে ইস্কুলে যেতে হবে, কোঁচিং এ যেতে হবে, পড়তে হবে বাসার ‘স্যারে’র কাছে। আমাকে ভর্তি যুদ্ধে নামতে হবে। আমাকে চাকরি যুদ্ধে নামতে হবে। আমার দাদা যে বয়সে সারা দিন ক্ষেতের পরিশ্রম শেষে বিকেলে বন্ধুদের আড্ডায় হুকা টেনে বয়াতির গানে দিয়েছে তাল, সন্ধ্যা রাতে সন্তান নিয়ে আদিখ্যেতা করে গভীর রাতে বঊয়ের সাথে করেছে প্রেম, সেই বয়সে পর্ণো ছবি আর মাদক ছাড়া দুদন্ড শান্তি আমাকে আর কে দেবে? আমার প্রেমিকাকে আমি চুমু খেতে পারবোনা রাস্তায়, ঘরের দরজা বন্ধ করে আদরও করতে পারবোনা। রাস্তায় বেরোলে আমি তাই ওড়নার ওপর দিয়েই দেখি নারীর বুক, ঘরের দরজা বন্ধ করে বিকৃত যৌনতার মানসে দেখি পর্ণো ছবি, নেই মাদক।
আমাকে মাঠ দাও। আমাকে সংগঠন দাও, সম্মিলন দাও। আমি নিজেকে প্রমান করতে চাই, মানুষ নামের একটা প্রাণি ঠিক যে ধরণের সুস্থ্য প্রতিযোগিতার মাধ্যমে নিজেকে প্রমান করতে পারে, তেমনি ভাবে নিজেকে প্রমান করতে দাও। একটা মাংস পিন্ড না, সম্পত্তি না, মানুষ হিসাবে কাউকে ভালো বাসতে দাও। সৌন্দর্য আর যৌনতা নিয়ে বানিজ্য বন্ধ করো। তারপর মাদক কে’না বলো।
তার আগে বললে, “শুয়োরের বাচ্চা, থাবরাইয়া তোর দাঁত খুইলা ফালামু”।
(বিঃদ্রঃ-১- এই লেখা নেহায়েতই একটা গদ্য, কোন ঘটনা কারো জীবনের সাথে খাপে খাপ মিলা গেলে যদি কেউ মাইন্ড করে তাইলে কিছু করার নাই, আর যদি গদ্যের মর্মকথাটুকু বুঝতে পারেন তাইলে ধন্যবাদ)
(বিঃদ্রঃ-২- যেই নেশার বস্তুটায় আসলেই নেশগ্রস্ত ছিলাম, সিগারেট, ছাইড়া দিছি মাস দুই আগে, তারপর থেইকা ব্লগ লিখতাছি।)