somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইভটিজিং লইয়া ইহা কোন আলগা আলোচনা না। অপ্রিয় সত্যের আঘাতে আহত হইতে পারেন। (পর্ব-২)

০৪ ঠা আগস্ট, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথম পর্ব এইখানে

কোর্টশিপ ডিজঅর্ডারঃ
শুরুতেই কোর্টশিপ বলতে কি বোঝায় সেটা ব্যাখ্যা করা দরকার। ব্যাবহারিক অর্থে কোর্টশিপ বা কোর্টশিপ রিচুয়াল বলতে বোঝায় যৌনসঙ্গি, মেট বা জীবনসঙ্গি খুঁজে নেওয়ার এবং তার মন জয় করার কিছু রীতি নীতি। উপযুক্ত যৌনসঙ্গি বা লাইফ পার্টনার খুঁজে বের করার রীতি নীতি এবং তার মন জয় করার কার্যক্রমকেই বলে কোর্টশিপ রিচুয়াল। এইসব রিচুয়াল শুধু যে মানুষের মধ্যেই আছে তাই না, বরং বহু প্রাণীর মধ্যেই আছে। তবে বেশিরভাগ সমাজেই মানুষ মনোগোমাস হওয়ায় এইসব কোর্টশিপ রিচুয়াল অনেক জটিল সামাজিক রূপ ধারণ করে। কোর্টশিপ রিচুয়ালের উদাহরণ হচ্ছে ফুল দেয়া, উপহার দেয়া, চিঠি দেয়া, কবিতা লেখা, গান শোনানো, এক সাথে নাচা ইত্যাদি। ইউরোপে এবং বাংলাদেশের আদিবাসী সমাজগুলোতে এখনো এই কোর্টশিপ রিচুয়াল এর পুরনো চেহারার অনেকটাই ধরে রেখেছে। বিভিন্ন সামাজিক উৎসব, পার্টি কোর্টশিপ রিচুয়ালের জন্য একটা উপলক্ষ্য হিসাবে কাজ করে। প্রাচীন বাঙালি সমাজেও এর অস্তিত্ব একেবারে স্বাভাবিক রুপেই ছিল। উৎসব এবং নারী পুরুষের নৃত্য ছিল যৌন সঙ্গি বা জীবন সঙ্গি খুঁজে নেয়ার স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ায় প্রথম কিছুটা পরিবর্তন আসে গুপ্ত যুগে, প্রায় হাজার দুয়েক বছর আগে। এসময় সীমিত আকারে পারিবারিকভাবে পিতা মাতার ইচ্ছায় বিয়ের চল চালু হয়। তারপরেও আরো প্রায় হাজার বছর ধরে কোর্টশিপ রিচুয়ালের প্রচলন ছিল। যার প্রমাণ আছে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সাহিত্যে, নারীদের স্বয়ংবরের (নিজের ইচ্ছায় স্বামী পছন্দ করে নেয়া) কথা এখনো আমাদের লোক সাহিত্যে টিকে আছে। এই ব্যাবস্থায় বড় পরিবর্তন আসে সেন আমলে। সেন আমলের পর নারীদের স্বয়ংবরের কোন কাহিনী শোনা গেছে বলে আমার অন্তত জানা নাই। সেন আমল থেকেই নারী পুরুষের নিজেদের উদ্যোগে জীবন সঙ্গি খুঁজে নেয়ার প্রক্রিয়ার অনেকটাই ইতি ঘটে। এই সময় থেকেই বাংলাদেশে পিতা মাতায় সন্তানের হয়ে কোর্টশিপের কাজটা করে দিচ্ছেন। অপেক্ষাকৃত অল্প বয়সেই পিতা মাতা সন্তানের বিয়ের ব্যবস্থা করায় অবদমিত যৌনতা থেকে যৌন বিকার কখনই মহামারী রূপ লাভ করে নাই। আর এই প্রচলিত ব্যাবস্থায় যাদের মন বসে নাই, তারা নিজেরাই প্রেমের পথে পা বাড়িয়েছে, এরাই মধ্যযুগের সাহিত্যের নায়ক নায়িকা। এর বাইরে আরেকটা গোষ্ঠী সবসময়ই ছিল। প্রচলিত সামাজিক ব্যাবস্থাকে পা দিয়ে মাড়িয়ে হাজার বছর ধরেই টিকে ছিল বাঙলার নিজস্ব হিপ্পি, পাঙ্করা। এদেশে এরা সহজিয়া, বৈষ্ণব, বাউল এহেন নানান নামে পরিচিত।
আমার কাছে সবসময়ই মনে হয়েছে স্বাভাবিক কোর্টশিপের অনুপস্থিতি বাংলদেশের ইভটিজিংএর পেছনে অন্যতম কারণ। পূর্বের ভিন্ন অর্থ ব্যবস্থা এবং অপেক্ষাকৃত কম বয়সে বিয়ের কারণে স্বাভাবিক কোর্টশিপের এই অনুপস্থিতি কোন সমস্যা হয়ে দাঁড়াতে পারে নাই। কিন্তু এখন পরিবর্তিত সামাজিক পরিস্থিতিতে এ অঞ্চলের পুরুষদের কোর্টশিপগত আচরণের এক ধরনের বিকৃত বিকাশ ঘটেছে, যার একটা রূপ হচ্ছে “ইভটিজিং”। অল্পকিছুদিন আগেও এটা আমার কাছে স্রেফ একটা ধারণা ছিল, পেছনে উপযুক্ত “সাইকোলজিকাল থিওরী” ছিল না। তবে এই লেখা শুরু করার আগে সাইকোলজিতে কোর্টশিপ বিষয়ে সামান্য খোঁজ করতে গিয়ে নিজের প্রত্যাশার চেয়ে অনেক বেশি তথ্য পেয়ে গেলাম। সবচেয়ে বড় কথা হলো “কোর্টশিপ ডিজঅর্ডার” নামে আধুনিক সাইকোলজিতে নতুন একটা রোগের নামই অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। সাইকোলজিতে এই কোর্টশিপ ডিজঅর্ডার অবশ্য সামাজিক সমস্যা না বরং ইন্ডিভিজুয়াল ব্যক্তির মানসিক রোগ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে বাংলাদেশে “ম্যাস কোর্টশিপ ডিজঅর্ডার”এর অস্তিত্ব রয়েছে অর্থাৎ বিশেষ এই মানসিক রোগে সমাজের একটা বড় অংশই আক্রান্ত। ব্যাপারটা মেনে নিতে আরো সহজ হবে কোর্টশিপ ডিজঅর্ডার নিয়ে কিঞ্চিত আলোচনা করলে। কোর্টশিপ ডিজঅর্ডার বলতে আসলে ঠিক একটা রোগ বোঝায় না, বরং বেশ কয়েকটা রিলেটেড যৌন বিকৃতি জনিত মানসিক রোগ আছে যেগুলোকে “কোর্টশিপ ডিজঅর্ডার” বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। মনোবিজ্ঞানীরা কিছু প্যারাফিলিক যৌন বিকৃতিকে এই কোর্টশিপ ডিজঅর্ডারএর অন্তর্ভুক্ত করেছেন। এই প্যারাফিলিক যৌন বিকৃতগুলির মধ্যে রয়েছে এক্সিবিশনিজম, ভয়ারিজম, টেলিফোন স্কাটোলজিয়া, ফ্রটারিজম এবং বায়াস্টোফিলিয়া। এগুলোর অর্থ এবং বৈশিষ্ট্য আলোচনা করলে অনেকেই চমকে উঠতে বাধ্য।

এক্সিবিশনিজম (Exhibitionism): এক্সিবিশনিজম বা “প্রদর্শনেচ্ছা” হচ্ছে নিজেকে অন্য কারো সামনে বা জনসম্মখ্যে নগ্নভাবে উপস্থাপন করা। পোশাক উন্মুক্ত করে শরীরের কিছু অংশ প্রদর্শন করে বা পুরো শরীর নগ্ন ভাবে উপস্থাপন করে যৌন তৃপ্তি লাভ করতে চায় একজন এক্সিবিশনিস্ট। প্রকৃত এক্সিবিশনিজম পুরুষের চেয়ে নারীর ক্ষেত্রেই বেশি দেখা যায় আর পুরুষের ক্ষেত্রে দেখা যায় এক্সিবিশনিজমের ভিন্ন কিছু রূপ। আমাদের ইভটিজিং বিষয়ক আলোচনায় প্রকৃত এক্সিবিশনিজমের চেয়ে আমাদের আলোচ্য বিষয় হবে এক্সিবিশনিজমনের ভিন্ন কিছু রূপ।
ভয়ারিজম (voyeurism): ভয়ারিজম বিষয়টার সাথে আমরা বেশ পরিচিত। বাঙলায় লাম্পট্য বলতে যে যৌন বিকার গুলো বোঝায় তার মধ্যে একটা ভয়ারিজম। ভয়ারিজম বলতে বোঝায় গোপনে কারো নগ্নতা বা যৌন মিলন লুকিয়ে লুকিয়ে দেখা, তার ছবি তোলা, ভিডিও ধারণ করা ইত্যাদি। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলদেশে ভয়ারিজম যে কত ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে সেই বিষয়ে নিশ্চয় সবাই সচেতন আছেন। রাস্তাঘাটে নিয়মিত অপরিচিত মেয়দের ছবি তোলা হচ্ছে, ভিডিও ধারণ করা হচ্ছে। একের পর এক হিডেন ক্যাম ভিডিও পাওয়া যাচ্ছে। ইন্টারনেটে এমএমএস এবং হিডেন ক্যাম ভিডিও কি পরিমাণ খোজা হয় সে বিষয়ে নিঃসন্দেহে অনেকেরই ধারণা আছে। ভয়ারিজম নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের ইভটিজারদের অন্যতম মানসিক বিকার।
টেলিফোন স্কাটোলোজিয়া(Telephone scatologia): এটা এক ধরণের এক্সিবিশনিজম। পুরুষদের মধ্যে এর প্রবনতা বেশি। টেলিফোনে অপরিচিত মানুষের কাছে নিজেকে নগ্ন এবং নোংরা ভাবে উপস্থাপন করে যৌনতৃপ্তী লাভ করে এই রোগের রোগী। বাংলাদেশে এই রোগের প্রাদুর্ভাব কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে তা নারী মাত্রই বলতে পারবেন। এ বিষয়ে তাই বাড়তি আলোচনার প্রয়োজন দখি না।
ফ্রটারিজম(Frotteurism): এই যৌন বিকারে আক্রান্ত রোগী বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নিজের যৌনাঙ্গ অথবা অন্য কোন অংশ অপরিচিত এবং অনিচ্ছুক ব্যক্তির শরীরে ছোঁয়া লাগিয়ে বা ঘর্ষনের মাধ্যমে যৌন তৃপ্তি লাভ করেন। এই কাজটা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সে করে পাবলিক প্লেসে। রোগী বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পুরুষ, আর ভিকটিম বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নারী। খেয়াল করে দেখুন, আমাদের দেশের সবচেয়ে নোংরা ইভ টিজিংগুলো এই ফ্রটারিজমের গন্ডির ভেতরে পরে। বায়াস্টোফিলিয়া(Biastophilia): এইক্ষেত্রে রোগী একজন ধর্ষনেচ্ছু বা সেডিস্ট। কিন্তু সাধারণ ধর্ষনেচ্ছার সাথে এই রোগের পার্থক্য হলো এই রোগী একেবারেই অচেনা অজানা কাউকে আক্রমণ করতে আগ্রহী এবং ভিকটিমের অনিচ্ছা, প্রতিবাদ, নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টাই হচ্ছে তার মূল আকর্ষনের বিষয়। প্রতিবাদের মাত্রার সাথে সাথে তার যৌন উত্তেজনা বারে। প্রথমত, বাংলাদেশে রেপ ভিডিওর প্রতি একটা বড় সংখ্যক পুরুষই আগ্রহ প্রকাশ করে। এই চাহিদা মেটাতে এমনকি স্বাধারণ চলচ্চিত্রেও অন্তত একটা ধর্ষণ দৃশ্য রাখেন অনেক পরিচালক। সাম্প্রতিক সময়ে এই জাতীয় ভিডিওর সার্চ ইন্টারনেটে কি পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে তা সার্চ ইঞ্জিনের রেকর্ড দেখলেই বোঝা যায়।

ওপরে কোর্টশিপ ডিজঅর্ডারএর অন্তর্ভুক্ত যেই যৌন বিকারগুলোর কথা আলোচনা করলাম সেগুলোর মধ্যে একটা বাদে বাকি কোনটাই ঠিক ভার্বাল বা মৌখিক নির্যাতনের মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয় না। আর টেলিফোনে ইভটিজিং হলো ইভটিজিংএর একটা অফশুট। অন্যদিকে বাংলাদেশে শারীরিক ইভটিজিংএর বদলে মৌখিক ইভটিজিংএর অস্তিত্ব এবং প্রাদুর্ভাব বেশি। ওপরের রোগগুলোর মাধ্যমে বাংলদেশের মূল ইভটিজিং অর্থাৎ পথে ঘাটে মৌখিক ইভটিজিং আমি কিভাবে ব্যাখ্যা করবো সেই প্রশ্ন উঠতে পারে। তবে এক্ষেত্রে আমাদের পরবর্তী দুই চাপ্টার আসল ভূমিকা পালন করবে। পরবর্তী দুই চাপ্টারে এমন কিছু সামাজিক এবং রাজনৈতিক কারণ নিয়ে আলোচনা করা হবে যা এই ভাষিক নির্যাতনের পেছনে বিশাল ভূমিকা পালন করে। সেই সাথে উপরে উল্লেখিত যৌন বিকারগুলো বিশেষ করে এক্সিবিশনিজম আর বায়াস্টোফিলিয়া কিভাবে মৌখিক রূপ লাভ করে তা নিয়েও আলোচনা করা হবে। পরবর্তী অধ্যায়ের আলোচনা ছাড়া সেটা সম্ভবও না। পাঠকদের শুধু একটা ব্যাপার মাথায় রাখতে বলবো তা হচ্ছে উপরেউল্লেখিত প্রত্যেকটি বিকারে আক্রান্ত রোগিরই প্রথম পছন্দ অপরিচিত ভিকটিম। এইটা মাথায় রাখলে পরবর্তিতে বুঝতে সুবিধা হবে।

কোর্টশিপ ডিজঅর্ডার ঠিক কিভাবে তৈরি হয় তা নিয়া একটু আলোনা করি। কোর্টশিপ ডিজঅর্ডার বিষয়ক গবেষনার গুরু মানা হয় যাকে তার নাম কুর্ট ফ্রিউন্ড। কুর্ট ফ্রিউন্ডের চিন্তা ভাবনা ব্যাখ্যা করার আগে কোর্টশিপের ধাপগুলো নিয়ে একটু আলোচনা করা দরকার। মনবিজ্ঞানীরা কোর্টশিপকে ৪টা ধাপে বিভক্ত করেছেন। এই ভাগ গুলা হলো-
১। এই ধাপে একজন তার উপযুক্ত যৌনসঙ্গীর খোঁজ করে এবং বিভিন্ন পন্থায় যাচাই বাছাই করে।
২। এই ধাপ শুরু হয় খোঁজার ধাপ শেষ হওয়ার পর, অর্থাৎ খুঁজে পাওয়র পর। এই ধাপে স্পর্শহীন যোগাযোগের মাধ্যমে সঙ্গীকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করা হয়। হাসি, সুন্দর কথা, ঘ্রাণ, ফুল, উপহার এইসবের মাধ্যমে যোগাযোগ তৈরি করা হয়।
৩। এই ধাপে শারীরিক যোগাযোগ স্থাপিত হয়। হাত ধরা, জড়িয়ে ধরা এই ধাপের অন্তর্ভুক্ত।
৪। চতুর্থ ধাপ হচ্ছে যৌন মিলন।

এখন, কুর্ট ফ্রিউন্ড প্রথম দেখান যে, ভয়ারিজম আসলে কোর্টশিপের প্রথম ধাপ অর্থাৎ খোঁজার ধাপের অস্বাভাবিক এবং বিকৃত বিকাশ থেকে সৃষ্ট। দ্বিতীয় ধাপ অর্থাৎ স্পর্শহীন যোগাযোগের ধাপে সমস্যা থেকে তৈরি হয় এক্সিবিশনিজম এবং টেলিফোন স্কাটোলজিয়া। অন্যদিকে শারীরিক যোগাযোগের সহজ স্বাভাবিক বিকাশ ব্যাহত হলে তার বিকৃত রুপ থেকে তৈরি হয় ফ্রটারিজম এবং বায়াস্টোফিলিয়া।

আগেই উল্লেখ করেছি, আমাদের দেশে এই কিছুদিন আগেও কোর্টশিপ রিচুয়ালের ভেতর দিয়ে জনসাধারণকে যেতে হতো না। পিতা মাতাই একেবারে কিশোর/তরুণ বয়সেই বিবাহের মাধ্যমে কোর্টশিপ রিচুয়ালকে অনেকাংশেই অদৃশ্যে পরিণত করেছিলেন। কিন্তু এখন সমাজ পরিবর্তিত হয়েছে। ৩০ বছর বয়সের আগে কোন পুরুষের পক্ষে বিয়ে করা সম্ভব না বললেই চলে। আবার বিবাহপূর্ব যৌনতারও স্বীকৃতি নেই আমাদের সমাজে। ছেলে মেয়েদের প্রেম করা বা নিজের সঙ্গি বেছে নেয়াও পিতা মাতা মেনে নিতে শুরু করেছে অল্প কিছুদিন হয়। কোর্টশিপ রিচুয়ালের পূর্ব অস্তিত্ব না থাকায় পুরো ব্যাপারটাই নতুন করে গড়ে উঠছে। বেশিরভাগ ছেলেই যানেনা একটা মেয়ের সামনে নিজেকে কিভাবে প্রকাশ করতে হবে। চারটা ধাপের একটা ধাপও কিভাবে করতে হবে সেই বিষয়ে তার পিতা মাতা এবং শিক্ষালয় তাকে কিছুই শেখাই নাই। তার উপর আবার আছে টিভি মিডিয়ার মাধ্যমে বিভিন্ন রকম কোর্টশিপ রিচুয়াল স্টাবলিশমেন্ট করার চেষ্টা। যেসব সমাজে কোর্টশিপ রিচুয়ালের অস্তিত্ব আছে সেসব সমাজে মূলত পিতা মাতার অনুমতি নিয়েই এই রিচুয়ালগুলো করা হয়। ইউরোপে এখন কিছুটা পরিবর্তন হলেও ৩ নম্বর বা ৪ নম্বর ধাপে এসে নিজের পিতা মাতার সাথে সঙ্গিকে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয় এবং এক্ষেত্রেও পিতা মাতার মতামত যথেষ্ট গুরুত্বের সাথেই নেয়া হয়। মোদ্দাকথা কোর্টশিপ রিচুয়ালের স্টাবলিস্ট পদ্ধতির মধ্যেই যেখানে কেউ বেরে ওঠে সেখানে তার কোর্টশিপ ডিজঅর্ডারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। কিন্তু বাংলাদেশে প্রথমত নাই কোন প্রচলিত নিয়ম, দ্বিতীয়ত গড়ে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে টিভি মিডিয়া বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে। এহেন পরিস্থিতিতে কোর্টশিপ রিচুয়ালে ডিজফাংশন করা তাই একটা তরুনের পক্ষে খুবই স্বাভাবিক। একদিকে অবদমিত যৌন কামনা আর অন্যদিকে কোর্টশিপ রিচুয়াল সম্বন্ধে অশিক্ষা এবং ৩ এবং ৪ নম্বর ধাপের স্বাভাবিক স্বতসিদ্ধ নিয়ম না থাকায় তার মধ্যে “কোর্টশিপ ডিজঅর্ডার” জন্ম নেয়। শহুরে তরুনদের একটা বড় অংশই জানে না একটা মেয়ের সাথে সহজ স্বাভাবিক ভাবে কিভাবে কথা বলতে হয়, সম্পর্কের কোন পর্যায়ে শারীরিক একটা যোগাযোগ তৈরি হতে পারে। নারী জাতির সাথে সামাজিক দূরত্ব এবং পূর্ব মানসিকতা (প্রথম চাপ্তারে উল্লেখিত) মিলিয়ে দিলে ডিসফাংশনাল কোর্টশিপ তৈরি হতে বাধ্য। বেশিরভাগ ইভটিজারই মেয়দের সাথে সহজ স্বাভাবিক ভাবে মিশতে পারে না। ইভ টিজিং না করে কিছু সহজ স্বাভাবিক উপায় (কোর্টশিপের দ্বিতীয় ধাপ) অবলম্বন করলে যেখানে একটা মেয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যায়, সেখানে ঐ সহজ স্বাভাবিক উপায় অবলম্বনের ব্যার্থতা থেকেই ইভটিজিং করে ইভটিজারদের একটা বড় অংশ। এর উপর মরার উপর খাড়ার ঘা হয়ে আসে নাটক, সিনেমা, বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে যেসব কোর্টশিপ রিচুয়াল শেখানো হয় তা। পরিবার এবং শিক্ষালয়ে এই বিষয়ক শিক্ষার অভাবে তরুনরা নির্ভর করে নাটক, সিনেমা, বিজ্ঞাপনের উপর। সেখান থেকে তারা শেখে একটা চকোলেট দিয়ে একটা মেয়ের ভালবাসা পাওয়া যায়, গার্লস স্কুলের সামনে গিয়ে প্রতিদিন নায়িকার পেছনে পেছনে বখাটেপনা করলে প্রেম হয়ে যায়, মোবাইল ফোনে একসাথে বহু মেয়ের সাথে কোর্টশিপ চালানো যায় ইত্যাদি। স্যাটেলাইট আর মোবাইল ফোনের বিকাশের সাথে সাথে আমাদের এই অঞ্চলে ইভ টিজিংএর পরিমাণ বেড়েছে এ কথা অস্বীকার করার উপায় নাই।
এখনো সব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায় নাই। অনেক যায়গায় ফাক ফোকর খুজে পাওয়া যেতে পারে। এই সব ফাঁকফোকর খোজা হবে পরবর্তী পর্বে।

(চলবে)
৪৬টি মন্তব্য ৩০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×