জেনারেল হওয়ার পরপরই ঠিক করেছিলাম, যতদিন জেনারেল থাকবো ইভটিজিং নিয়েই পোস্ট দেবো। ইভটিজিং বিষয়ক পোস্টে ইভটিজিংএর প্রতিবাদ করতে গিয়ে জেনারেল হওয়াতেই এই সিদ্ধান্ত। এমনিতে ইভটিজিং বিষয়ক আমার নিজস্ব কিছু চিন্তা ভাবনা ছিল, যা আলসেমির কারণে কখনো লেখা হয় নাই। এই সুযোগে এই চিন্তা ভাবনাগুলোকেই লিখে ফেলার সিদ্ধান্ত নিলাম। বাংলাদেশে ইভটিজিং বিষয়ে পত্র পত্রিকায় সবসময়ই যেসব লেখালেখি হয় সেগুলোকে বরাবর আমার কাছে আলগা আলোচনা বলে মনে হয়েছে। এই বিষয়ক বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে একেবারেই উপরিভাগ থেকে যা দেখা যায় যা বোঝা যায় তাই নিয়েই আলোচনা সীমাবদ্ধ থেকেছে। আমি বিষয়টার গভীরে যেতে চাই। সেই ক্ষেত্রে মূল বিষয়টা খানিকটা কঠিন হয়ে যেতে পারে। এমনিতেই আমার বিরুদ্ধে কিছু সহব্লগারের অভিযোগ আছে যে আমি সহজ করে এবং ছোট করে লিখি না। এই পোস্টে যথাসাধ্য চেষ্টা করবো সহজ করে লেখার। আর পর্বগুলোও যতদুর সম্ভব ছোট আকারে করবো।
ইভটিজিং আর যৌন নির্যাতনের পার্থক্যঃ
ইভ টিজিং আর যৌন নির্যাতনের মধ্যে কিছু সম্পর্ক থাকলেও এই দুইটা এক জিনিস না। অনেকেই ইভ টিজিংকে একধরণের যৌন নির্যাতন হিসাবে চিহ্নিত করলেও ইভ টিজিংএর বেশকিছু স্বকিয় বৈশিষ্টের কারণেই একে আলাদা একটা "সাবজেক্ট" হিসাবে বিবেচনা করা যেতে পারে। আরো একটা মজার ব্যাপার হচ্ছে, সামাজিক সমস্যা হিসাবে ইভটিজিং শব্দটা শুধু ভারতীয় উপমহাদেশেই ব্যবহৃত হয়। পাশ্চাত্যে যৌন নির্যাতন বলে যা আছে তার সাথেও আমাদের এই "ইভ টিজিং" এর কিছু মৌলিক পার্থক্য আছে। সেই হিসাবে ইভ টিজিং অনেকটাই আমাদের এ অঞ্চলের সাম্প্রতিক সময়ের একটা সামাজিক সমস্যা। যৌন নির্যাতনের সাথে ইভ টিজিংএর যেসব মৌলিক পার্থক্য আছে তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্যটা হলো "মাত্রাতিরিক্ত ভার্বাল এবিউজ" এর ক্ষেত্রে। ইভ টিজিংএর জগৎটার বেশিরভাগ অংশ জুড়েই আছে নানা রকম "ভাষিক নির্যাতন"। শরীরের চেয়ে এইখানে মুখটাই বেশি চালায় নির্যাতকরা। আমার ইভটিজিংএর আলোচনায় তাই "ভাষিক নির্যাতন"এর প্রশঙ্গটাই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাবে। এছাড়াও ইভটিজিংএর অন্যান্য রুপ যেমন শারীরিক লাঞ্চনা, টেলিফোন এবিউজ, প্রদর্শন, গোপনীয়তা প্রকাশ এইসব প্রসঙ্গ নিয়েও আলোচনা থাকবে। পড়াশোনা করতে গিয়ে খানিকটা আটকে গেছি এবং অবাক হয়েছি বেশ কয়েকটা যায়গায়। যেমন ইভটিজিং যৌন নির্যাতনের চেয়ে আলাদা বিষয় হলেও ইভ টিজিং এর বিভিন্ন রুপ আবার যৌন বিকৃতি এবং সেক্সুয়াল এবিউজমেন্টএর বিভিন্ন শাখা প্রশাখার সাথে মিলে যায়। আলোচনার সুবিধার্থে এবং মূলত স্থানিক সামাজিক সমস্যা হওয়ায় "ইভটিজিং"কে আমাদের এই আলোচনায় যৌন নির্যাতনের চেয়ে ভিন্ন বিষয় হিসাবে উপস্থাপন করলেও মাঝে মাঝেই তা যৌন বিকৃতি এবং যৌন নির্যাতনের কিছু কিছু এলাকায় প্রবেশ করবে।
ইভটিজিং এর কারণ সমূহঃ
ইভটিজিংএর পেছনের কারণগুলো কি কি হতে পারে তা নিয়াই বোধহয় সবচেয়ে বেশি আলগা আলোচনা হয়। আমি বিষয়টার গভীরে ঢুকতে চেয়েছি। আমার মূল আগ্রহ সামাজিক স্তর বিন্যাস, সমাজ পরিবর্তন, এবং ইভটিজিংএর মনস্তত্ত্ব। আপাতত যেই সমস্যাগুলোকে আমি চিহ্নিত করেছি সেগুলো নিন্মরুপ-
১। বাঙালী মধ্যবিত্ত্বের নারী বিষয়ক ধারণা।
২। কোর্টশিপ ডিজঅর্ডার।
৩। বাঙালী মধ্যবিত্ত্বের ক্ষমতার স্তর বিন্যাস।
৪। অবদমিত এবং অনিয়ন্ত্রিত ভায়োল্যান্স।
৫। উপনিবেশ, গ্লোবালাইজেশন এবং অনিয়ন্ত্রিত সামাজিক পরিবর্তন।
আলোচনার সুবিধার্থে ওপরের প্রতিটা পয়েন্ট নিয়ে আমি আলাদা আলাদা আলোচনা করবো। কিন্তু এই প্রতিটা পয়েন্টের মধ্যেই আবার পারস্পরিক কিছু সম্পর্ক আছে এবং একটা পয়েন্ট আবার আরেকটা পয়েন্টের পরিপূরক। একটা পয়েন্টকে বুঝতে গেলে আরেকটা পয়েন্টের সহযোগিতার দরকার হবে। তাই আলাদা আলাদা আলোচনা করলেও একটার ভেতর আরেকটার আলোচনা ঢুকে যেতে পারে। প্রাথমিক প্রচেষ্টা হওয়ায় এই সমস্যা অতিক্রম করা খুব বেশি সম্ভব হবে বলে মনি করি না। আবার পাঠকের কাছে মূল বক্তব্য পৌঁছে দেয়ার সুবিধার্থে অনেক টার্মের বিস্তারিত ব্যাখ্যাও করতে পারবো না। এই ক্ষেত্রে আগেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। কোন লেখায় সবার উপযোগী করে লেখা যায় না। কিন্তু জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয় হওয়ায় প্রাণপণ চেষ্টা করবো মূল বক্তব্য সবার কাছে পৌঁছে দিতে।
বাঙালী মধ্যবিত্ত্বের নারী বিষয়ক ধারণাঃ
শুরুতেই বলে নেই ঠিক কি কারণে বাঙালি মধ্যবিত্ত্বকেই বেছে নিলাম, যদিও ইভটিজিং শুধুমাত্র মধ্যবিত্ত্বের মধ্যে সীমাবদ্ধ না। এক্ষেত্রে বলে নেই যদিও বর্তমানে ইভটিজিং অন্যান্য সামাজিক স্তরে এবং গ্রাম শহর সব যায়গাতেই বিস্তার লাভ করলেও এর উৎপত্তি মূলত শহুরে মধ্যবিত্ত সমাজেই। সাম্প্রতিক সময়ে গণমাধ্যম এবং যোগযোগ ব্যাবস্থার ব্যাপক বিকাশের কারণে মধ্যবিত্ত্বের মনস্তত্ত্ব এবং সমস্যা সর্বস্তরে এবং সর্বস্থানেই ছড়িয়ে পরেছে। বাঙালি মধ্যবিত্ত্বের নারী বিষয়ক ধ্যান ধারণা ইভটিজিংএর মূল কারণ না বরং সাম্প্রতিক এই সামাজিক মহামারির পেছনের প্লাটফর্ম হিসাবে কাজ করেছে। বিষয়টা অনেকটা টাইম বম্বের মতো, যা সাম্প্রতিক সময়ের গ্লোবালাইজেশন, স্যাটেলাইট সংস্কৃতি আর অনিয়ন্ত্রিত এবং দ্রুত সামাজিক পরিবর্তনের ফলে বিস্ফরিত হয়েছে। বাঙালী মধ্যবিত্ত্বের নারী সম্পর্কে ধারণা মোটামুটি এইরকম, “নারী দুর্বল, নারী দাস, নারী স্বল্পজ্ঞানী, নারী নির্ভরশীল, নারী অবলা ইত্যাদি”। নারী বিষয়ে বাঙালী মধ্যবিত্ত্বের এই ধারণাগুলো মূলত নারীদের নেগেটিভ ইমেজ গড়ে তোলে। অন্যদিকে নারীদের পজিটিভ ইমেজ যেই ধারণাগুলোর মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠে সেগুলো হচ্ছে “নারী মা, নারী মমতাময়ী, নারী সেবিকা, নারী গৃহলক্ষী” ইত্যাদি। পজিটিভ অথবা নেগেটিভ যেটাই হোক বাঙালি মধ্যবিত্ত্বের নারী বিষয়ক ধারণায় নারী কখনোই বাগ্নি, সাহসী, ক্ষমতাবান, কর্মঠ, জ্ঞানী, স্বনির্ভর, শক্তিশালী কিছু না, শ্রম এবং জ্ঞানের বিকাশে তার অবস্থান নাই। বাগ্নি নারী মানে মুখরা, সাহসী নারী মানে উগ্র, কর্মঠ নারী মানে নগ্ন বা উন্মুক্ত, জ্ঞানী নারী মানে কূটনি এবং স্বনির্ভর নারী মানে বেহায়া, কূলটা, চরিত্রহীন ইত্যাদি। অনেকে প্রশ্ন তুলতে পারেন যে এইসব ধারণা তো আপামর বাঙলার সব সমাজ এবং সব স্থানে প্রচলিত, বিশেষভাবে বাঙালী মধ্যবিত্ত্বকে কেনো টানছি। এক্ষেত্রে আমি একটু উল্লেখ করতে চাই যে নিন্ম শ্রেনীতে এবং গ্রামে গঞ্জে ঘরের বাইরে মাঠে ঘাটে কর্মঠ এবং পরিশ্রমী নারীকে মোটেও উন্মুক্ত মনে করা হয় না। কৃষি নির্ভর গ্রাম বাঙলায় নারী চিরকাল কৃষি নির্ভর উৎপাদন এবং অর্থ ব্যাবস্থায় পুরুষের মতোই ঘরের বাইরেও বিভিন্ন কাজে অংশগ্রহণ করেছে। একেবারেই সাম্প্রতিক সময়ে এসে বাঙালি মেয়েরা কাজের প্রয়োজনে ঘরের বাইরে বেরহচ্ছে এই ধারণাটা তাই ভুল। বরং আরো সঠিক হয় যদি বলি যে একেবারেই সাম্প্রতিক সময়ে এসে শহুরে মধ্যবিত্ত্ব বাঙালি মেয়েরা ঘরের বাইরে কাজ করতে বের হচ্ছে।
এখন, শিক্ষা এবং কাজের প্রয়োজনে ঘরের বাইরে বের হওয়া এই মেয়েরাই ইভটিজিংএর মূল শিকার। প্রথমত বাঙালী মধ্যবিত্ত্ব এবং দ্বিতীয়ত এই মধ্যবিত্ত্বের সাংস্কৃতিক মান অনুযায়ী গড়ে তোলা শহরের অন্যান্য শ্রেনীতে, এবং তৃতীয়ত গ্রাম এবং মফস্বলেও এই ঘরের বাইরে বের হওয়া মেয়েদের “নগ্ন, উন্মুক্ত, অশালীন, ছিনাল” হিসাবে গণ্য করা হয় বলেই এত সহজে একজন পুরুষ তাকে ইভটিজিংএর শিকার বানায়। চিন্তাটার সূত্রপাত হয়েছিল মধ্যবিত্ত্বের মাঝেই এবং এখন তা ছড়িয়ে পরছে সর্বত্র, কারণ গণমাধ্যমের কারণে মধ্যবিত্ত্বের মনমানসিকতাই সর্বত্র ছড়িয়ে পরছে। এখন কথা হচ্ছে, যেইখানে উৎপাদন এবং অর্থনীতিতে এই কৃষি ভিত্তিক বাঙলায় নারীর অংশগ্রহনকে স্বাভাবিক হিসাবেই গণ্য করা হতো সেইখানে সেই বাঙলাতেই আধুনিক যুগে জন্ম নেয়া মধ্যবিত্ত শ্রেণী নারীকে কেন ঘরের বাইরে দেখতে চায় না? অনেকেই এইক্ষেত্রে ধর্মীয় মূল্যবোধকে দায়ী করেন। ধর্মীয় মূল্যবোধ যে একেবারেই দায় এড়াতে পারবে তা না। কিন্তু গ্রামীণ সমাজের উৎপাদন ব্যাবস্থায় এই ধর্মীয় মূল্যবোধতো মেয়েদের ঘর থেকে বের হওয়ায় কোন বাধা সৃষ্টি করে নাই। শহরে তাহলে এই বাধাটা তৈরি হচ্ছে কোথায়? আসলে বাঙালী মধ্যবিত্ত্বের জন্ম ব্রিটিশ উপনিবেশের অধীনে, ভিক্টোরিয়ান যুগে। নারী বিষয়ক ভিক্টোরিয়ান মনমানসিকতা অবদমন এবং নির্যাতনমূলক। ভিক্টোরিয়ান মনমানসিকতা নারীকে ঘরের ভেতর বন্দি করে এবং যৌনতাকে বানায় নিষিদ্ধ বস্তু। আর তথাকথিত বাঙালী রেনেসার শিক্ষিত মধ্যবিত্ত বাঙালী বলতে আমরা যা বুঝি তা হল ভিক্টোরিয়ান সংস্কৃতিমনা বাঙালী। যেখানে বাঙালির নিজস্ব লোক সাহিত্যে মহুয়া, মলুয়া, বেহুলার মতো সাহসী, কর্মঠ, বুদ্ধিমান নারীদের জয় জয়কার করা হয়েছে সেখানে মধ্যবিত্ত্ব বাঙালির সাহিত্যে, গানে সব জায়গায় করা হয়েছে দুর্বল, পতিব্রতা, অবলা নারীদের আদর্শায়ন। এই মধ্যবিত্ত্ব বাঙালির কাছে “যৌনতা” হলো একটা নোংরা বিষয়। যৌনতা নামক কর্মটাই একটা অপরাধ বিশেষ, এমনকি স্বামী স্ত্রীর মধ্যে সম্পর্কটাও। এই জিনিস আমাদের মধ্যে থাকলেও তার অস্তিত্ব অস্বীকার করাই আমাদের দৈনন্দিন সতর্কতা গুলোর একটা। মধ্যবিত্ত্বের কাছে নারী এবং যৌনতা এই দুইটাই ঘরের ভেতর আটকে রাখার জিনিস, বাইরে গেলেই তা কলুষিত হয়। ঘড়ের বাইরে যে নারী থাকে সে “পতিতা” বা “সিলান”। ইউরোপে ভিক্টোরিয়ান যুগের একটা প্রতিষ্ঠিত ধারণা ছিল নারীদের যৌনতার দিক থেকে পেসিভ হিসাবে গণ্য করা। ভিক্টোরিয়ান মননে কোন নারী যৌনতা নিয়ে আগ্রহ বা নিজের যৌন কামনা প্রকাশ করলে তাকে “স্লাট” মনে করা হতো। ভিক্টোরিয়ান আমলেই ইউরোপে নারীদের অর্গাজমের মতো সাধারণ একটা ঘটনাও পুরোপুরি বিস্মৃত হয়েছিল। অন্যদিকে ভিক্টোরিয়ান মনমানসিকতার আগমনের পূর্বে আমাদের গ্রাম বাঙলায় নারীদের যৌন চেতনাকে খুব স্বাভাবিক একটা বিষয় হিসাবেই গণ্য করা হতো। নদের চাদের সাথে মিলনের আকাঙ্খায় মহুয়ার উক্তি “তুমি হও উজান গাঙ, আমি ডুইবা মরি”, কিংবা অজানা কোন নারী শিল্পীর “আমার মাটির গাছে লাউ ধরেছে, লাউযে বড় সোহাগী” এখনো নারীদের যৌন চেতনা এবং যৌন কামনা প্রকাশের সেই স্বাভাবিকতার সাক্ষ্য বহন করে। কিন্তু ভিক্টোরিয়ান সংস্কৃতিতে শিক্ষিত বাঙালি মধ্যবিত্ত্ব নারীদের যৌন চেতনাকে মোটেই স্বাভাবিক ভাবে মেনে নিতে পারে না, পারে না ঘরের বাইরে নারীকে সমান তালে তার সাথে উৎপাদন ব্যাবস্থায় পাল্লা দিতে দেখতে। এখানে শুধু এই মনমানসিকতার বিষয়টাই কাজ করেণা, কাজ করে এক গভীর রাজনৈতিক সচেতনতা। বাঙালি মধ্যবিত্ত্ব পুরুষ ঘরের বাইরে নির্যাতিত এবং শোষিত হয়, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই উচ্চপদস্থ ব্যক্তি, রাজনৈতিক সিস্টেম, চাকুরি ব্যবস্থা ইত্যাদির দ্বারা। বাঙালি মধ্যবিত্ত্ব পুরুষ নিজের ক্ষমতাকে সঠিক ভাবে প্রয়োগ করতে চায় না, এই ক্ষমতা সে প্রয়োগ করতে চায় ঘরের ভেতরে নারীদের উপর। বিষয়টা হয়তো পরিষ্কার হচ্ছে না, তবে এই রাজনৈতিক সচেতনতা নিয়ে আমরা বাঙালী মধ্যবিত্ত্বের ক্ষমতার স্তর বিন্যাস” চাপ্টারে বিস্তারিত আলোচনা করবো। মোদ্দা কথ বাঙালি পুরুষ স্বাভাবিক প্রবৃত্তির কারণেই নারীকে আকাঙ্ক্ষা করে, কিন্তু কোন নারী যদি তার কাছে ধরা দেয় তবে তাকে মনে করে স্লাট বা সিলান, এটা তার পূর্বোক্ত মন মানসিকতার সমস্যা। ভালো, ভদ্র, শালীন নারীর যে সংজ্ঞা শিখে আমাদের দেশের একটা ছেলে বড় হয় পুরুষদের সাথে পাল্লা দিয়ে বেরানো রাস্তার নারীদের সে তার শিক্ষার সাথে মিলিয়ে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই স্লাট বলে চিহ্নিত করে, এক পর্যায়ে ইভটিজিংএর অন্যান্য যে কারণগুলোর কথা বলেছি সেগুলোর প্রভাবে একসময় তা সর্বগ্রাসী রূপ ধারণ করে। তখন রাস্তায় বের হওয়া যে কোন পোশাকের, যে কোন স্বভাবের নারীই হয়ে ওঠে তার আগ্রাসনের শিকার। নারীদের সম্মানের সাথে দেখার ট্রাডিশন এই অঞ্চলে অনেক পুরনো। অথচ বাঙালি মধ্যবিত্ত্ব সংস্কৃতি ইতিহাসের যে কোন সময়ের চেয়ে নারীদের উপর অবদমন চাপিয়েছে সবচেয়ে বেশি। যখনি এই অবদমন থেকে নারীরা সামান্য হলেও বেরিয়ে এসেছে তখনি সে তাদের চিহ্নিত করেছে স্লাট হিসাবে। দ্রুত গতিতে পরিবর্তিত সমাজ পরিস্থিতিতে “নারীদের প্রতি সম্মান”এর অনুশীলন এবং অনুশাসন পুরোপুরি ভেঙে পরেছে। আর একারণেই পথে বের হওয়া যে কোন নারীই হয়ে যায় তার ইভটিজিংএর শিকার, ছলে বলে যে কোন উপায়ে সে চেষ্টা করে প্রেমিকার সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের, আর সফল হওয়ার সাথে সাথেই নিজের প্রেমিকাকে ভাবতে থাকে স্লাট, নিজের পূর্ব ধারণার কারণেই। পরিবর্তিত সমাজ পরিস্থিতির এই বিষয়টা পরিষ্কার ভাবে উপলব্ধি করা যায় একটা ব্যাপারে খেয়াল করলেই। যদিও ইভটিজিংএর জন্য কিশোর এবং তরুনদের দায়ী করা হয় বেশি কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সবচেয়ে নোংরা এবং ব্যাপারোয়া ইভটিজিং গুলো করে মধ্যবয়স্ক এবং বয়োবৃদ্ধ ব্যক্তিরা। সাম্প্রতিক সমাজ পরিবর্তনের সময়টায় নতুনে জেনারেশনের সব মেয়েই তাদের চোখে স্লাট। মধ্যবিত্ত বাঙালির মনন ব্যাখ্যা আপাতত আমি এখানেই ক্ষান্ত দেব। শুধু এই মন মানসিকতা দিয়েই সবকিছু ব্যাখ্যা করা যাবে না, কিন্তু এটা অন্যতম একটা কারণ, এবং অনেকটা ইভটিজিংএর প্লাটফর্ম হিসাবে কাজ করে।
তবে ইভটিজিংএর বহিঃপ্রকাশ এবং “মানসিক রোগ” হিসাবে ইভটিজিংএর চুড়ান্ত রুপ বোঝা যাবে “কোর্টশিপ ডিজঅর্ডার” নিয়ে আলোচনা করলে। এ বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে দ্বিতীয় পূর্বে। ইভটিজিং যে শুধুমাত্র একটা সামাজিক সমস্যা না বরং একটা “massive psychological disorder”ও তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে দ্বিতীয় পর্বে।
(চলবে) দ্বিতীয় পর্ব এইখানে
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা আগস্ট, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:৩৬