somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে থাকুক বা না থাকুক, চোখ রাখি; ঘুম থেকে উঠা ঘুম ঘুম চোখে চশমা ছাড়া ঠিকমতো কিছু দেখি বা নাই দেখি, তবুও চোখ রাখি। বহুদিনের অভ্যাস। গত ২২ তারিখ সকালে এমনিভাবেই চোখ রেখেছিলাম। একটা শিরোনামে চোখ আটকে গেলো। ''নোংরা মৌলবাদীরা মাহির লেজটা খাইয়া দিল''। পোষ্টের শুরুতেই একটা মেয়ের ছবি (মাহিকে চিনি না, সম্ভবতঃ তারই ছবি); চক্ষু বন্ধ করা বিষাদ মাখা সুন্দর একটা মুখ। খুবই স্বাভাবিক। লেজ খাইলে তো আনন্দিত হওয়ার কিছু নাই, বিষাদগ্রস্ত হওয়াটাই দুরস্ত। ভাবলাম, কি সর্বনাশের কথা! আসলে একটা না, দুইটা সর্বনাশ!! এক তো মাহির লেজ আছে, তাই জানতাম না। জানতাম না ঠিক আছে, তবে সেই লেজ কিনা নোংরা মৌলবাদীরা আবিস্কার কইরা খাইয়া দিল? এই লেভেলের অনাচার আসলে সহ্য করা যায় না। করা উচিতও না। দেশটায় হচ্ছে টা কি?

তেতো মুখে মোবাইল রেখে উঠলাম। দীর্ঘদিনের অভ্যস্ততায় রোবটের মতো আমার দিন শুরুর রুটিন কাজগুলো একে একে সারলাম। তবে সারাক্ষণ মনের মধ্যে অশান্তিটা উকি-ঝুকি মারতে থাকলো; একটা কথাই ক্রমাগত ঘুরতে থাকলো, নোংরা মৌলবাদীরা এইটা একটা কাম করলো? নাস্তা শেষে কফির কাপ হাতে বিষয়টা দেখার জন্য ল্যাপটপ খুললাম।

যাক..............খুশীর খবর হলো চশমা ছাড়া চোখে ভুল দেখেছি। লেজ ঠিক আছে; আসলে পেজ, মানে পেইজ খাইয়া দিয়াছে। এই খুশীর মধ্যে কেন জানি একটা গান মনের মধ্যে ঘুর্নিবায়ুর মতো ঘুরপাক খেতে থাকলো, ''রেললাইনে বডি দেবো, মাথা দেবো না''; বডি যায় যাক, মাথা বাচাতে হবে আগে!!! গুন গুন করতে করতে রেডি হলাম অফিসে যাওয়ার জন্য। বাসা থেকে বের হয়ে গাড়ির কাছে এসে খুশী ভাবটা উবে গিয়ে মেজাজ পুরাই খিচড়ে গেল। গত রাতে আমার পছন্দের জায়গায় গাড়িটা রাখতে পারি নাই। রেখেছিলাম এক গাছের নীচে। বজ্জাত পাখিগুলো আমার সাধের গাড়িটাকে একেবারে টাট্টিখানা বানিয়ে ছেড়েছে। এই দেশে পশু-পাখীর উপর নির্যাতন করা যায় না, নয়তো দু'একটাকে নিশ্চিত কতো ধানে কতো চাল বুঝিয়ে দিতাম! কাজ বাড়লো। কার-ওয়াশে যেতে হবে আগে। আমি আবার আমার সাধের গাড়ির এই ধরনের বেইজ্জতি বরদাশত করতে পারি না।

প্রায় চল্লিশ মিনিট দেরী করে অফিসে পৌছে দেখি ক্রিস আমার অপেক্ষায় বসে আছে। ঘটনা সংক্ষেপে একটু খুলে বলি। রাশেদ ভাইয়ের হার্ট এ্যটাক হয় গত বছরের সেপ্টেম্বরের ২২ তারিখে। উনাকে হাসপাতালে দেখে এসে বাসায় ফেরার পথেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলাম, বিড়ি খাওয়া ছেড়ে দিবো। তবে আমার প্রতিজ্ঞায় একটা ফাক রেখেছিলাম। প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, বিড়ি ছাড়বো ঠিকই, তবে বন্ধু-বান্ধবরা অফার করলে খাবো। অর্থাৎ কিনে খাবো না, কিংবা বলা যায় বিড়ির পেছনে আর এক পেনিও খরচ করবো না। ফলাফল হলো, ক্রিসের সাথে সকালে একটা, লাঞ্চে একটা খাওয়া হয়। আর ডিনারের পর হাটতে বের হয়ে আমার প্রতিবেশী এক বন্ধুর সাথে খাওয়া হয়। আগে যেখানে দিনে ১২ থেকে ১৫টা খাওয়া হতো, এখন সেখানে সাকুল্যে খাওয়া হয় তিনটা। তবে কারো উপরই আমার কোন জবরদস্তি নাই।

তো যা বলছিলাম.........বিড়ি না খাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ার পর ক্রিসকে যখন বিষয়টা বিশদ ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে বললাম, সে ডাঙ্গায় তোলা কাৎলা মাছের মতো খাবি খেতে খেতে বললো, 'তুমি তো দেখি বিরাট ধান্ধাবাজ!! তোমারে আমি ছাড়া আর বিড়ি অফার করবো কোন হালায়? এইসব ছাড়ো। বিড়ির যেই দাম!! আমি তোমারে মুফতে বিড়ি খাওয়াইতে পারুম না।' ওর কথা সত্যি। এখানে বিড়ির দাম ভয়াবহ রকমের। আমাদের যেই ব্র্যান্ড, অর্থাৎ বেনসন এন্ড হেইজেস গোল্ড, তার ২০টা স্টিকের প্রতি প্যাকেটের দাম ১৭.৩০ পাউন্ড। আমি বললাম, 'অফার করিস না। তোরে তো আমি রিকোয়েস্ট করতাছি না। আমার এই সিদ্ধান্ত বিড়ি ছাড়ার প্রথম সাহসী পদক্ষেপ। তুই অফার না করলেই বরং আমি খুশী'!! এ্যজ এক্সপেক্টেড, সেদিনই লাঞ্চের পরে ক্রিস আমতা আমতা করতে করতে বিড়ি অফার করলো। বললো, 'একলগে বিড়ি খাওয়ার এতো বছরের অভ্যাস। সকালে বিড়ি টাইনা কোন আনন্দই পাই নাই। লও একটা.......তোমার ধান্ধাবাজির পালে একটু হাওয়া দেই'!!!

এখন প্রত্যেকদিন আমাকে দুইটা বিড়ি খাওয়ানো ওর কর্তব্য হয়ে দাড়িয়েছে। এই ধাক্কায় বেচারা B&H Gold থেকে B&H Blue তে নেমে এসেছে। Blue'র প্যাকেটের দাম ১৩ পাউন্ড। আমি অবশ্য মানুষ খারাপ না, ওর এই ত্যাগকে খানা-খাদ্য দিয়ে পুষিয়ে দেই।

ফিরে আসি সেদিনের কথায়। ক্রিসকে বসে থাকতে দেখে বললাম, 'তুই যতো যত্ন কইরা আমারে বিড়ি খাওয়াস, তোর ভাবী তো এতো যত্ন কইরা আমারে ভাতও খাওয়ায় না'। ক্রিস একটা দেতো হাসি দিয়ে বললো, 'থাউক......আর পাম দেওন লাগবো না। মরিচ বিরিয়ানী কবে খাওয়াইবা, সেইটা কও'!!

অফিস শেষ করতে না করতেই সুমনা ভাবীর ফোন চলে আসলো। যারা জানেন না তাদের বলছি, এই সুমনা ভাবী হলো রাশেদ ভাইয়ের বউ। সুমনা ভাবীর কথা বলতে গেলেই সুপ্রিয় ব্লগার মা.হাসানকে মনে পড়ে যায় আমার। যাই হোক, ভাবী চরম একটা সুখবর দিলো..........'ভাই, বাসায় গিয়েই সবাইকে নিয়ে চলে আসেন। আপনার পছন্দের ইলিশ-পোলাও রান্না করেছি আজ'!!! শুনেই আমার মুখ লালায় ভরে গেল। বহু আগেই আমার সিদ্ধান্ত নেয়া, বেহেশতে কোনমতে যদি একবার এই বডিটা নিয়ে ফেলতে পারি, দিন-রাত পদ্মার ইলিশ আর চিনিগুড়া চাউল দিয়ে রান্না করা ইলিশ-পোলাও খাবো!!!

রাত নয়টার সময়ে গলা পর্যন্ত ইলিশ পোলাও খেয়ে ভাবীর হাতের সুগন্ধী মালাই চায়ের জন্য অপেক্ষা করছি। মনে মনে ভাবছিলাম, মিনিট দশেক হেটে আসলে মন্দ হতো না। এক কাপ চা ঢোকাবো কোথায়? জায়গাই তো নাই। চা যদি গলা পর্যন্ত গিয়ে বাই এনি চান্স বাউন্স ব্যাক করে, তাহলে সর্বনাশ হয়ে যাবে। রাশেদভাইকে বললাম, খাওয়া একটু বেশী হয়ে গেছে। চলেন ভাই, দু্'কদম হেটে আসি। উনি আমার দিকে চেয়ে বিরস বদনে বললেন, ক্ষুধা পেটে হাটতে যাওয়ার কোন ইচ্ছা নাই আমার!! কথা অবশ্য মিথ্যা না। ভাবী উনাকে দিতেই চায় নাই, বেশ কিছুটা কথা চালাচালি আর মান-অভিমানের পর এক চামুচ পোলাও আর ছোট্ট এক টুকরা মাছ দিয়েছে। ফলে রাগ করে উনি উনার জন্য বরাদ্দ অন্য খাবারও খান নাই।

রাশেদ ভায়ের দুঃখটা বুঝতে পারছিলাম। উনি খেতে পান নাই, সেখানে উনার সামনেই বসে একজন যদি প্রমাণ সাইজের তিন পিস ইলিশ আর দু'প্লেট পোলাও উড়িয়ে দেয় তাহলে তা সহ্য করা বেশ কঠিনই বটে!! কিভাবে উনাকে চাঙ্গা করা যায় ভাবতে ভাবতে আজ সকালের ''মাহির লেজ খাওয়া'' বিষয়ক ঘটনাটা সবিস্তারে বর্ণনা করলাম। উনি ফিক করে হেসে দিয়েই আবার তাড়াতাড়ি দুঃখী চেহারার অভিনয়ে ফিরে গেলেন।

বুঝলাম, বাইপাস সার্জারী হওয়া একজন হৃদরোগীর এখন এই অভিনয় করা ছাড়া আর বিকল্প নাই। এই চেহারা আরো খানিকক্ষণ ধরে রাখতে পারলে আমি নিশ্চিত, আমরা যাওয়ার পর ভাবী উনাকে আরো খানিকটা ইলিশ পোলাও বরাদ্দ করবেন।

অন্য বিড়িখোরদের প্রতি এই প্রায়-সাবেক বিড়িখোরের উপদেশ............যতোদিন বেচে থাকবেন ততোদিন যদি প্রিয় খাবারগুলো খেতে চান, তাহলে বিড়ি খাওয়া ছেড়ে দেন। আমি বলছি না যে, অধুমপায়ীদের হৃদরোগ হয় না; তবে এটা ঠিক, বিড়িখোরদের চান্স অনেক অনেক বেশী থাকে। কাজেই সময় থাকতে সাধু সাবধান!!!

আপনার হৃদয়ের কাটাছেড়া কিংবা জোড়া লাগানোর দায়িত্ব সার্জন না, বউদের হাতেই থাকুক।


ছবিসূত্র।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৪
৫৫টি মন্তব্য ৪৯টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আজ ২৫শে বৈশাখ। ১৬৩তম রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে আমার গাওয়া কয়েকটি রবীন্দ্রসঙ্গীত শেয়ার করলাম। খুব সাধারণ মানের গায়কী

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ০৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০৫

আপনারা জানেন, আমি কোনো প্রফেশনাল সিঙ্গার না, গলাও ভালো না, কিন্তু গান আমি খুব ভালোবাসি। গান বা সুরই পৃথিবীতে একমাত্র হিরন্ময় প্রেম। এই সুরের মধ্যে ডুবতে ডুবতে একসময় নিজেই সুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্ব কবি

লিখেছেন সাইদুর রহমান, ০৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৭

বৈশাখেরি পঁচিশ তারিখ
কবি তোমার জনম
দিন,
বহু বছর পার হয়েছে
আজও হৃদে, হও নি
লীন।

কবিতা আর গল্প ছড়া
পড়ি সবাই, জুড়ায়
প্রাণ,
খ্যাতি পেলে বিশ্ব জুড়ে
পেলে নভেল, পেলে
মান।

সবার ঘরেই গীতাঞ্জলী
পড়ে সবাই তৃপ্তি
পাই,
আজকে তুমি নেই জগতে
তোমার লেখায় খুঁজি
তাই।

যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্যারিস্টার সুমন দায়মুক্ত , চু্ন্নু সাহেব কি করবনে ?

লিখেছেন শাহাবুিদ্দন শুভ, ০৮ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২৭


দেশে প্রথম কোন সংসদ সদস্য তার বরাদ্ধের ব্যাপারে Facebook এ পোষ্ট দিয়ে জানিয়ে থাকেন তিনি কি পেলেন এবং কোথায় সে টাকা খরচ করা হবে বা হচ্ছে মানুষ এসব বিষয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। শিল্পী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৮










চিত্রকলার কোন প্রথাগত শিক্ষা ছিলনা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের। ছোট বেলায় যেটুকু শিখেছিলেন গৃ্হশিক্ষকের কাছে আর পাঁচজন শিশু যেমন শেখে। সে ভাবে আঁকতেও চাননি কোন দিন। চাননি নিজে আর্টিস্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাহান্নামের শাস্তির তীব্রতা বনাম ইসলামের বিবিধ ক্ষেত্রে অমুসলিম উপস্থাপিত বিবিধ দোষ

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৪



জাহান্নামের শাস্তির তীব্রতার বিবেচনায় মুমিন ইসলামের বিবিধ ক্ষেত্রে অমুসলিম উপস্থাপিত দোষারোপ আমলে নেয় না। আমার ইসলাম সংক্রান্ত পোষ্ট সমূহে অমুসলিমগণ ইসলামের বিবিধ ক্ষেত্রে বিবিধ দোষের কথা উপস্থাপন করে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×