somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ধর্ম অধর্ম

১২ ই অক্টোবর, ২০১০ রাত ১০:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তত্ত্বগত দিক থেকে ধর্ম একটা আদর্শবাদী মতবাদ যা মানুষের নৈতিক এবং আধ্যাত্বিক জীবনাচার নিশ্চিত করে। মূলত নৈতিকতা, আধ্যাত্বিকতা, আচার অনুষ্ঠান, রাজনীতি এইরকম বেশকিছু জিনিস মিলে যেই জীবনাচরন বা লাইফস্টাইল গড়ে ওঠে তাই ধর্ম। সেই হিসাবে আধুনিক যুগে একটা ইশ্বরহীন লাইফস্টাইলও ধর্মে রুপ নিতে পারে। নৈতিক অবকাঠামো যেমন প্রত্যেক মানুষের জীবনেই জরুরি তেমনি স্পিরিচুয়ালিটি বা আধ্যাত্বিকতাও মানুষের জীবনে কম বেশি কার্যকর। এইখানে আমি আধ্যাত্বিকতা বলতে অলৌকিক কিছুর ইংগিত করছি না। স্পিরিচুয়ালিটি মূলত মানুষের বিভিন্ন রিচুয়াল, প্রেক্টিস এবং সৃষ্টিশীলতার সাথে সম্পর্কিত। নামাজ, কাওয়ালী, ওয়াজ, ভাষন, তেলাওয়াত বা পঠন, সঙ্গিত, চিত্রকলা, জেহাদ বা শ্রেণী সংগ্রাম ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ের মধ্য দিয়ে মানুষ তার স্পিরিচুয়াল আপলিফটিং বা ইমোশন অনুভব করে, নিজের আধ্যাত্বিক অবস্থান বোঝে।

এখন, আগের যুগের ধর্মগুলোর সমালোচনার মধ্য দিয়ে আসলে নতুন ধর্মের অবকাঠামোও নির্মান হওয়ার কথা। সেটাই স্বাভাবিক, অতীতেও তাই হয়েছে। ভারতে ব্রাক্ষন্যবাদী ধর্মের সমালোচনা করে বৌদ্ধ ধর্মের আবির্ভাব, আরবে পৌত্তলিকতার সমালোচনা করে ইসলামের আবির্ভাব ইত্যাদি উদাহরণ হতে পারে। মূলত একটা ক্ষমতা কাঠামো ভাঙতে গেলে আরেকটা ক্ষমতা কাঠামো তৈরি হয়ে যায়, এটা ধর্মীয় এবং রাজনৈতিক দুই ক্ষেত্রেই সত্য।

ব্লগে বা ব্লগের বাইরে ধর্ম সমালোচনা বলে যা হচ্ছে তাতে ভিন্ন কোন ধর্ম কাঠামো দাঁড়াচ্ছে বলে আমি মনে করি না। গত দেড়শ বছরে এহেন ঘটেনা ঘটতে পারে নাই, বেশ কয়েকবার ঘটা শুরু হয়েছিল যদিও। এর পেছনে কারণ হচ্ছে ইউরোপিয়দের ধর্ম শব্দটার লিমিটেড ব্যাখ্যা। প্রকৃতপক্ষে ইসলাম সমালোচনা হতে পারে, খ্রিষ্টান বা হিন্দু ধর্মমতের সমালোচনা বা যুগোপযোগিতা প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে, কিন্তু ধর্ম শব্দটাকে বা ধর্ম কনসেপ্টটাকে সমালোচনা করা অর্থহীণ। ইউরোপে এনলাইটেনমেন্টের সমকাল থেকেই আদী দুনিয়ার সকল জীবনবিধান বা জীবনাদর্শকে মোটামুটি একটা শব্দ "ধর্ম" দিয়ে আবদ্ধ করে এই শব্দটার এমনি এক সাধারণিকৃত ধারণা তৈরি করা হয়েছে যা বেঠিক, এবং আমরাও ধর্ম শব্দের সেই বেঠিক ব্যবহারই করে থাকি। বাস্তবে, ধর্মগুলোর মধ্যে অনেক তফাৎ আছে, ইশ্বরহীন ধর্ম আছে, একেশ্বরবাদী আছে, বহুত্ত্ববাদী আছে, প্রকৃতিবাদী আছে। ধর্ম, আধ্যাত্বিকতা, ইশ্বর এইসব এককরে দেখার অথবা এক সাথে গুলিয়ে ফেলার একটা প্রবণতা বর্তমান আধুনিক যুগে দেখা যায়।

এত কথা বলার কারণ একটাই। কারণ আপনারা ধর্ম শব্দটাকে যেই অর্থে ব্যাবহার করেন আমি সেই অর্থে করি না। ইসলাম না থাকতে পারে, খ্রিষ্টানিটী না থাকতে পারে, কিন্তু ধর্ম কাঠামো জিনিসটা মানব সমাজের খুব স্বাভাবিক একটা বিষয়, এটা টিকে থাকবে। এমনকি ইশ্বরের কনসেপ্ট বিলুপ্ত হয়ে গেলেও ধর্ম কাঠামো টিকেই থাকবে, নানা রুপে, পরিবর্তিত আকাড়ে। এই কারণে যারা পুরনো ধর্মগুলোর সমালোচনা করেন, তারা নিজেদের অজান্তেই হোক বা জেনেশুনেই হোক নতুন ধর্মমতের কাঠামো নির্মানের কাজ শুরু করেন। কিন্তু ঐযে আগেই বলেছি, এই কাজ এখন ঠিকঠাক হচ্ছে না। কারণ ধর্ম কাঠামো টিকিয়ে রাখতে যেমন বর্তমান যুগের অনিহা তেমনি নয়া ধর্ম কাঠামো তৈরি করতেও এই যুগের অনিহা আছে। এই অনিহা আস্তিক, নাস্তিক নির্বিশেষে সবারি আছে। ভুলে গেলে চলবেনা যে এহেন পরিস্থিতি পূজিবাদের স্বার্থের অনুকূল বলেই তা টিকিয়ে রাখতে বর্তমান দুনিয়ার ক্ষমতা কাঠামো সদা ক্রিয়াশীল। একজন আস্তিক নিজের ধর্মকে আদর্শবাদী অবস্থান থেকে পালন করতে যেমন আগ্রহী না এখন, তেমনি নাস্তিকও নয়া ধর্মের আদর্শবাদী কাঠামো নির্মানে পথহারা অবস্থায় আছে। আমার ধর্ম শব্দের ব্যাবহার নিয়া যদি কারো কোন আপত্তি থাকে তবে ধর্ম শব্দের স্থলে আদর্শবাদী জীবনবিধান লাগিয়ে নিতে পারেন।

এইরকম অবস্থায় যেমন সুস্থ্য বিতর্ক হতে পারেনা তেমনি এসব অসুস্থ্য বিতর্ক আসলে কোন সমস্যার সমাধান করতে পারে না। আমি ইসলামের যতই সমালোচনা করি না কেন, সাধারণ মানুষ সবচেয়ে বেশি ভোগে আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে। এই আইডেন্টিটি ক্রাইসিসের কারণেই ইসলাম ধর্মের খুবি যৌক্তিক সমালোচনা হলেও সবচেয়ে অধার্মিক মুসলমানও ইসলাম শব্দটাকে প্রবলভাবে আকড়ে ধরতে চায়। যেই ব্যাক্তি প্রভার ভিডিও ডাউনলোড করার জন্য নির্লজ্জ আচরণ করতে দ্বিধা করেনা, নামাজ পড়ার বালাই যার জীবনে নাই, নাস্তিক সমালোচনায় স্বিয় আইডেন্টিটি রক্ষার্থে সেও হয়ে যায় ইসলামের প্রবল সৈনিক। এহেন অবস্থায় সে আক্রমনাত্বক যুদ্ধে নামবে, যুক্তির ধার না ধেরে গালাগালি করবে, এইটাই স্বাভাবিক। অন্যদিকে যেহেতু বর্তমান যুগের নাস্তিক ব্যক্তিবর্গ মূলত সমালোচনায় যতটা পারদর্শি বিকল্প জীবনবিধানের পথ প্রদর্শনে অতটা পারদর্শিতা লাভ করতে পারেন নাই, তাই তারাও অনেক ক্ষেত্রে পথ প্রদর্শকের বদলে আস্তিকের শত্রু হিসাবে আবির্ভুত হন। বাস্তবে বর্তমান ধর্মধারীরা নামেই ধর্মধারী, এরা ধার্মিক না, এদের বেশিরভাগের জীবনেই ধর্মের আদর্শের লেশমাত্র নাই। নাস্তিকরা তাদের কোন ক্ষতিই করে নাই, বরং আধুনিক পূজিবাদী জীবনব্যাবস্থা তাদের ধর্মকে খুন করে ফেলেছে অনেক আগেই। তাদের নিজ নিজ ধর্মের পচা লাশের গন্ধ ছুটে যাওয়ার পরও এই সত্য তারা এখনো আবিস্কার করতে সক্ষম হয় নাই। নাকে রুমাল বেধে অধার্মিক জীবনযাপন করে ঐ লাশির জন্য নাকি কান্নাই তাদের জেহাদ। ব্লগিয় জেহাদ এহেন নাকি কান্নার উৎকৃষ্টতম উদাহরণ। তবে নাস্তিকদের সমালোচনাধর্মী আক্রমনে আস্তিকদের মধ্যে অন্তত সমালোচনার জবাব দিতে গিয়ে পড়াশোনার বাসনা যাগে, এইটা পজিটিভ। অনেকে যৌক্তিক উত্তর দিতে গিয়েই পড়াশোনা করার চেষ্টা করেন। এতে মুক্তচিন্তার পালে কিছুটা হলেও হাওয়া লাগে।

ধর্ম, অধর্ম আর আস্তিকতা নাস্তিকতা নিয়া এতসব ভ্রান্তি আর সীমাবদ্ধ ধারণা পাশ কাটিয়ে এইসব বিষয়ে আলোচনা করা গেলে অন্তত মৌল বিশ্বাস নিয়ে না হলেও ইস্যু ভিত্তিক যুগোপযোগী অবস্থানে অন্তত এই প্রজন্মের বড় একটা অংশ পৌছতে সক্ষম হতো।

মূলত এই পোস্টে একটা মন্তব্য করেছিলাম। করার পরে মনে হলো এইটা নিয়া ডিসকাশন ভিত্তিক একটা পোস্ট হতে পারতো, তাই কিছু বাড়তি লাইন যুক্ত করে ডিসকাশনের মানসিকতা নিয়া পোস্ট দিলাম।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই অক্টোবর, ২০১০ রাত ১০:৪৯
১৭টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সাজানো ভোটে বিএনপিকে সেনাবাহিনী আর আমলারা ক্ষমতায় আনতেছে। ভোট তো কেবল লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:২২



১০০% নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এবং আওয়ামী স্টাইলে ক্ষমতা চালাবে। সন্ত্রাসী লীগকে এই বিএনপিই আবার ফিরিয়ে আনবে।সেনাবাহিনী আর আমলাদের সাথে ডিল কমপ্লিট। সহসাই এই দেশে ন্যায়-ইনসাফ ফিরবে না। লুটপাট... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজনীতির পন্ডিত, ব্লগার তানভীর জুমারের পোষ্টটি পড়েন, জল্লাদ আসিফ মাহমুদ কি কি জানে!

লিখেছেন জেন একাত্তর, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:৪৯



সামুর রাজনীতির ডোডো পন্ডিত, ব্লগার তানভীর ১ খানা পোষ্ট প্রসব করেছেন; পোষ্টে বলছেন, ইউনুস ও পাকিসতানীদের জল্লাদ আসিফ মাহমুদ ধরণা করছে, "সেনাবাহিনী ও ব্যুরোক্রেটরা বিএনপি'কে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নীল নকশার অন্ধকার রাত

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:১৬


কায়রোর রাস্তায় তখন শীতের হিম হাওয়া বইছিল। রাত প্রায় সাড়ে এগারোটা। দুইটা বড় সংবাদপত্র অফিস: আল-আহরাম এবং আল-মাসরি আল-ইয়াউম—হঠাৎ করেই আগুনে জ্বলে উঠলো। কিন্তু এই আগুন কোনো সাধারণ দুর্ঘটনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদি ভাই, ইনসাফ এবং একটা অসমাপ্ত বিপ্লবের গল্প

লিখেছেন গ্রু, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৮



ইদানিং একটা কথা খুব মনে পড়ে। হাদি ভাই।

মানুষটা নেই, কিন্তু তার কথাগুলো? ওগুলো যেন আগের চেয়েও বেশি করে কানে বাজে। মাঝেমধ্যে ভাবি, আমরা আসলে কীসের পেছনে ছুটছি? ক্ষমতা? গদি? নাকি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৩২

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে[

স্বাধীন সাংবাদিকতার কণ্ঠরোধে রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা, মব-রাজনীতি ও এক ভয়ংকর নীরবতার ইতিহাস
চরম স্বৈরশাসন বা ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রেও সাধারণত সংবাদমাধ্যমের কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার সাহস কেউ করে না। কারণ ক্ষমতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×