এইচ এস সির সেকেন্ড ইয়ারে থাকার সময় প্র্রথম সাহসটা করেই ফেলেছিলাম। তার কিছুদিন আগে এক সেলেরন ৬৬৭ এর বিরাট গর্বিত দাস হয়েছি। পিসি কেনার পর তখন কম্পু নিয়ে সম্ভাব্য সকল প্রকার টেকি-শিল্পকলার বিকাশে আমার আগ্রহের কোন কমতি ছিল না।
আমার প্রায় সারাটা দিন তখন বিল্লু মিয়ার জানালা ৯৮ এ কাটে। এর মাঝে বুয়েটে পড়া এক বড়ভাই ছুটিতে বাড়ী গিয়ে এক বড়ই আজিব গল্প সাথে প্রমান হিসেবে কিছু বই পত্রিকা আর দুটো সিডি দিলেন। জানলাম কম্পু দুনিয়া শুধু এই জানালায় শেষ না। জানালার ওইপারে এক মস্ত পৃথিবী আছে। সেই ছিল আমার প্রথম লিনাক্স দর্শন এর প্রারম্ভ। চার পাশের সবার থেকে আলাদা হয়ে লিনাক্স টেকি হবার (অতি)উৎসাহে আমি ভয়ংকরী সল্প জ্ঞান সম্বল করে দিলাম লিনাক্স সেটাপ।
.... ... পরের ইতিহাস এর সাক্ষি আমার মনে হয় অনেকেই আছেন।
গল্প উপন্যাসে যেমন মৃত দেহ নিয়ে প্রিয়জন নির্বাক হয়ে যায়। কম্পুর শক্ত-চাকতি নিয়া আমি অধিক শোকে ইস্পাত হয়ে গেলাম। ইস্পাতের মত নিস্প্রান, শক্ত আর ঠান্ডা। কম্পুতে হার্ড-ডিস্কে মামার বহুত জরুরী কিছু ফাইল, আমার ধারকর্জ করে যোগার করা চুরি করা সফটওয়ার এর খনি। বহুত কষ্ট করে স্ক্যান করা ছবির বিশাল ভান্ডার .....সব নাই হয়ে গেছে। আমার হার্ড ডিস্ক আমাকে হার্ডশক দিয়া পাত্থর বানিয়ে দিয়েছিল। মনের বিরান ভূমিসম দুঃখ্যের বোঝা নিয়ে লিনাক্স এর সিডি বের করে তওবা পড়ে উইন্ডোজের কাছে ফিরে এসেছিলাম লিনাক্স এর ডজ খেয়ে।
এরপর সময় কেটে গেছে বেশ কিছুদিন। বিল্লুমিয়ার একাউন্টে টাকাও জমা হয়েছে বেশুমার। আমিও নিলর্জ্জ চোর হয়ে চোরাই উইন্ডোজের ব্যবহারকারী হয়ে আছি। ইউনিভার্সিটিতে দেখি আশেপাশে অনেক টেকি। অনেক-কেই লিনাক্স ব্যবহারকারী এবং বিশেষজ্ঞ হয়ে যেতে দেখলাম। কেই সোলারিস এর জ্ঞানি। তবে আমি অধম বিশেষ-অজ্ঞ হয়েই রইলাম। সম্বল সেই সেলেরন ৬৬৭ । ধরাটা খেলাম থার্ড ইয়ার এর প্রথমে এসে। ডেটাবেজ কোর্সে সত্যিকার কোন কোম্পানির সাথে প্রজেক্ট করতে হবে। সালাদিয়া গেটস কোং জাতীয় কিছু করলে বিশুদ্ধ এফ এর নিশ্চয়তা পেলাম ফ্যাকাল্টির কাছ থেকে। তো গ্রুপমেট এর যোগাযোগ ভাল থাকায় এক মোবাইল কোম্পানির খুব ছোট একটা প্রজেক্ট পেলাম। ...খুশিতে বাক-বাকুম অবস্থা। কারণ ক্লাসের মধ্যে আমরাই সবথেকে ভাল কোথাও(!) চান্স পেয়েছি।
অধিক শোকে এবার ২য় বার টাইটেনিয়াম হয়ে গেলাম যখন শুনলাম ডেভেলাপমেন্ট পরিবেশ হচ্ছে লাল-টুপি এন্টারপ্রাইজ (রেড-হ্যাট এন্টারপ্রাইজ)। গ্রুপের সবাই কম্পু-মিসতিরি মেজর এর। আমি গাধাই একমাএ অন্য মেজর এর। অন্যরা সবাই এই বিখাউজ লিনাক্স এর পুরান পাপী। কোর কোর্সের বাইরের এই আজাইরা কোর্স করতে এসে ধরা খাওয়ার মত অবস্থা আমার।
...তখন দেখা পেলাম এক চমৎকার লিনাক্স গুরুর। ভাইয়া বুয়েটের ছিলেন। ওই কোম্পানির একজন ডাটাবেজ এডমিন। কোন কারণ নেই আমাদের হেল্প করার। ...তার পরেও কেমন করে যেন ওনার সাথে পরিচয় হয়ে গিয়েছিল। আর আমার লিনাক্স মূর্খতার কথা শুনে প্র্রথম কারো সহমর্মিতা আর সাহায্য পেয়েছিলাম। "...আরে মিয়া এইডা কোন বিষয় হইল? ..ফান হিসেবে নাও। দেখ কত কি করা যায়।" এই রকম উৎসাহ বাণীর সাথে আমি ন্যারা ২য় বার বেল তলায় গিয়েছিলাম।
আল্লার রহমতে সেইবার আমার কাজ ডিজাইনেই বেশি থাকায় খুব একটা লিনাক্স মিয়ার সাথে গুতাগুতি করতে হয়নি। তবে শিখেছিলাম কিছু। আর আত্নবিশ্বাস পেয়েছিলাম। মানুষই লিনাক্স ব্যবহার করে। ইহা কোন ব্যাফক কঠিন কর্ম নহে।
...এর পর যখন টিউশনি আর কামলা খাটার অর্থ একটা বহনযোগ্য কম্পু কেনার মত সংখ্যা গঠন করল... তখন প্রথম কেনা ল্যাপটপে ২য় দিনের মাথায় বন্ধুর কাছ থেকে ধার করা উবুন্টু "হাড্ডি মিয়া" (হার্ডি হেরণ) ইন্সটল করেই ফেললাম। আর এর মাঝে আরেক জনের ব্লগে একটা চমৎকার লেখা " লিনাক্স দুনিয়া দেখবেন নাকি একবার ব্যবহার করে" ঢোলে বাড়ির কাজ করল।
.....যারা এখনো বসে আছেন চোরাই জানালার বন্দিশালায়। তাদের বলি ...প্লিজ একবার.... দেখুন না ব্যবহার করে। ....ইন্সটলেশন অনেক সোজা, কোনো ঝামেলা নেই। চমৎকার গ্রাফিক্স। ভাইরাস নামক দুঃসপ্ন থেকে জাগরন। অ--সংখ্য সফটওয়ার যার প্রায় সবই বিনামূল্যে। যে কোন সমস্যার জন্য আছে দুনিয়র সবপাশে একঝাক চমৎকার মানুষের দল। ...আরো অনেক কিছু। সব তো আমি নিজেই এখনো আবিস্কার করায় ব্যাস্ত। আর নিজেও কিছু খুজে বের করুন। জীবণে সারপ্রাইজ খুবই দরকার।
ব্যবহার করেই দেখুন। জানালার বাইরে না বেরোলে... বুঝতেও পারবেন না দুনিয়াটা কত বিশাল।
আর আজকে (২১/১১/২০০৮) বিকাল ৪টা থেকে ছিল উবন্টুর নতুন ভার্সন ৮.১০ ইন্ট্রাপিড আইবেক্স এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। কিছু মানুষ তাদের স্বেচ্ছাশ্রমে নিজেদের মূল্যবান সময় ব্যবহার করে যে এধরণের কাজ করে বেড়ান সেজন্যে প্র্রথমেই ...হ্যাটস অফ টু দেম।
তবে সাধারণ দর্শক হিসেবে কঠিন সমালোচনার দুঃসাহস দেখাব। কারণ আমি এর ভাল চাই আর চাইব ভব্যিষ্যতে যেন আমার দৃষ্টিতে যেগুলো খারাপ মনে হয়েছে সেগুলো যৈক্তিক হলে যেন এড়ানো যায়।
প্রথমেই বলব প্রস্তুতির খারাপ অবস্থার কথা। আয়োজকদের উচিৎ ছিল একটা ভাল প্রস্তুতি নিয়ে আয়োজন করা। যেমন আমি ৩.৪০ এর পরে যখন গিয়েছি তখনও দেখেছি ল্যাপটপ আর প্রজেক্টর নিয়ে যুদ্ধ করা। যেটা অনুষ্ঠানের আরম্ভকে বেশ অনেকটা ম্যাড়মেড়ে করে দিয়েছে। এই প্রস্তুতিটা মনে হয় অনুষ্ঠানের বেশ আগেই করে ফেলা যেত। আর ভেন্যু আর সাউন্ডসিস্টেম একেবারেই বেমানান হয়ে গিয়েছে, আর এসি মহাদয় মনে হয় শুক্রবারের ছুটিতে ছিলেন। অনুষ্ঠান থেকে ভয়াবহ মাথাব্যাথা নিয়ে বের হয়েছি।
আর যারা কথা বলেছেন তাদের স্লাইড এর অবস্থা খুব খারাপ ছিল। ওপেন সোর্স নেটওয়ার্ক এর আগের বেশ কিছু প্র্রোগাম এ গিয়েছি... আজকের টা খুবই করূণ ছিল । প্রথম যিনি কথা বলেছেন ...তিনি মুখস্ত বলার ছন্দ আর গতিতে বলে গিয়েছেন। স্লাইড এর সাথে অনেক কথারই সংলগ্নতা ছিল না। তার পর যিনি বলেছেন ...তিনি বেশ সামলে উঠেছিলেন। কিন্তু উন্সটলেশন নিয়ে যিনি বলতে উঠলেন ...তিনি পার্টিশনিং বোঝাতে গিয়ে খুব সহজ একটা বিষয় কে ভয়াবহ রকম জটিলতায় নিয়ে গেছেন। আজকের অনুষ্ঠানে শতকরা ৯০ জন ছিলেন এমন ...যারা কখোনোই উবন্টু ব্যবহার করেননি। তারা অনেকেই ভবিষ্যতে না ব্যবহার করার উৎসাহ পেয়েছেন ওনার প্রেজেন্টেশন এ। খুব ভাল হত একটা উইন্ডোজ বেজড পার্টিশন আছে এমক কোন সিস্টেম ব্যবহার করলে বা ভাল কিছু স্লাইড ব্যবহার করলে। শেষে যিনি বলেছেন ...তিনি তার যা বলবার কথা ছিল তার কাছাকাছি কিছুক্ষণ থেকে তারপর তাল হারিয়ে ফেললেন। আর এক অতি উৎসাহি দর্শক প্রশ্নোত্তর পর্বের অপেক্ষার তোয়াক্কা না করেই অফটপিক প্রশ্ন করা আরম্ভ করায় উনিও অফটপিক আলোচনা আরম্ভ করেন।
ভাইরে আমি খুব জ্ঞানি কেউ না। তাই এক সাধারণ ব্যবহারকারির অনুভূতি নিয়ে বলছি আপনারা একটা চমৎকার আর সহজ বিষয়কে ....যতদুর সম্ভব বোরিং আর জটিল করেছেন। ভাল্লাগেনাই। এর থেকে ওনাদের নিজেদের সাইট http://www.ubuntu-bd.org/ থেকে বাংলা মান্যুয়েল টা সবাইকে অন্তত সফ্যট কপি ধরিয়ে দিলে অনেকেই ভরসা পেত। কারণ আশে পাশের অনেককেই বলতে শুনেছি... এই বস্তু আমার জন্য না। আয়োজকদের আরেকটু সতর্ক আর প্রস্তুত হয়ে আয়োজন করতে অনুরোধ করব। প্রেজেন্টেশন ম্যাটেরিয়াল গোছানো হওয়া খুব দরকার ...অডিয়েন্স এর পজিটিভ ফিডব্যাক এর জন্য।
তবে মাঝখানে যখন একবার লাভলুদাকে উঠিয়ে দেয়া হল কিছু বলার জন্য ...তখন মজা লেগেছে। আচ্ছা ...এই তাহলে সামহোয়ারইন এর লাভলুদা। ...মজা পাইছি। ওনার ব্লগ পড়ে মনে হয়েছিল উনি একজন গুরুটাইপ টেকি। আজকে দেখলাম কবি টাইপ আউলা ঝাউলা মানুষ। একটা কথা বলার পর পজ দিয়ে উপর-নিচে কোন এক অদৃশ্য মনিটরে বাকি স্কৃপ্ট দেখে তার পর বলেন। তবে ওনার "শিট" বলার উসটাইল এ মজা পাইছি। আর ওনার সবার প্রশ্ন শুনে যেভাবে ঝাপিয়ে পড়ার মত সাহায্য করার মনোভাব দেখলাম তখন বুঝলাম ...লিনাক্স ফর হিউমেন বিং (ওলসো ব্যাং ) এর মানে কি। এর পর আরেক টেকি উন্মাতাল তারুণ্য ভাইকেও কুল লাগল। বুঝলাম এই গ্রুপ টা আসলেই তারছেড়া। নিজেদের চিন্তা না করে সবাইকে সাহায্য করতে প্রস্তুত।
...এগেইন ...হ্যাটস অফ গাইস। ....আবার দেখা হবে।
কিছু থিম দেখুন উবুন্টু এর... যারা লিনাক্স এর শোকাবহ চেহারার কথা বড়গলায় বলতে পছন্দ করেন।
Click This Link
http://ubuntusatanic.org/screenshots.php
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে নভেম্বর, ২০০৮ দুপুর ১:২৭