somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গ্রামীণ ও বাংলার গল্প সংকলন।

২৩ শে নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গ্রামীণ গল্প বিচিত্রা ।
********
গ্রাম বাংলার গল্প বিচিত্রা**********
গ্রাম বাংলার গল্প বিচিত্রা

এম , জি , আর মাসুদ রানা
কবি ও সাহিত্যিক ।

লেখকের কথা
**************
ঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁ
মাটি ও মানুষের ভালবাসা বাঙ্গালী জাতীর রক্তে প্লাবিত ইতিহাস ঐতিহ্য ও জীবন থেকে নেওয়া
আমার কথা মালা ,আমার ভাষার ফুল নিশ্চয় সময়ের স্রোতে জীবন্ত এক কাব্য ।গ্রাম বাংলার সহজ সরল মানুষের জীবন চিত্র এ গল্প গ্রন্থে তুলে আনা হল । বইটির নাম ‘ গ্রাম বাংলার গল্প বিচিত্রা ।
পাঠকের দৃষ্টিতে আমার এ সৃষ্টি , কথার ব্যাঞ্জনা কেমন লাগবে জানিনা । পাঠক নন্দিত হলে
সাহিত্যর সার্থকতা ।

সবাইকে আন্তরিক অভিবাধন
উৎসর্গ , সকল পাঠকের মুক্ত হৃদয় পানে ।
লেখক ।
**************
ঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁ

লেখক পরিচিতি ।।
পিতা ঃ মোঃ দেওয়ান আলী মিয়া । মাতা ঃ মোছা শামছুন্নাহার মাহমুদ
জন্মতারিখ ১০/ ৬ / ১৯৭৭ ইং ।
গ্রাম সৈয়দ পুর ।
ইউনিয়ন সেলবরষ । পোস্ট + উপজেলা ধরমপাশা ।
জেলা সুনামগঞ্জ । বিভাগ সিলেট । ঢাকা বাংলাদেশ ।

কবি ও সাহিত্যিক / সংঘঠক আহবায়ক বাংলাদেশ সাহিত্য সংসদ ।
সম্পাদক একুশে ম্যাগাজিন উদঘাটন। সম্পাদক ত্রৈমাসিক সুচেনা ।
উপদেষ্টা বাংলাদেশ সাম্রাজ্যবাদি ছাত্র এক্য সংসদ ।
কবিতা , গান , নাটক ,গল্প , উপন্যাস , ইসলামী গবেষণা গ্রস্থ সহ সাহিত্যর সকল শাখায় লেখার প্রয়াস ।
****************
ঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁ

সুচিপত্র
*************
• বাধভাঙ্গা
• ভূতের ভয়
• দখলদার
• ভানবাসি
• সলিল সমাধি
• কদিনের কথা
• সেবা
• জমিদার পতন
• স্বাধীনতা অর্জন
• একটি ঝরা ফুল
• জীবন মৃত্যুর মাঝামাঝি
• একলা জীবন
• হাওড়ে শিতের পাখি
• টুকাই
• বাঘ শিকারি




রচনায় মোঃ জিল্লুর রহমান মাসুদ মি য়া
গল্প এক* বাঁধভাঙ্গা
১ ,
গাঁয়ের একটি কুঁড়েঘর । বৃদ্ধ করিম ছেলের পানে তাকায় , ক দেহি বাপ ধান পাকল কিনা , কি হালচাল । এ বছর খুব ভালা ফলন, ক্ষেতের বায় চাইলে ঘরে আইবার
মন লয়না বাজান । ছেলের কথা শুনে স্বস্তি বোধ করে করিমসেখ । _ সব আল্লার ইচ্ছা বুঝলে । গেলবছর
তো এক মুট ধান ঘরে আনবার পারিনাই । কি কষ্টে যে দিন গেল –বাপ বেটার কথা থামিয়ে
দেয় গৃহিণী ছমিরন । এমন দিনে হা হুতাশ বাদ দিয়া কামে যাও । গেল বছরের ক্ষেতি এইবার সুদে আসলে তুলতে অইব । এইবার ভালা ফলন অইলে মাতবরের বন্ধক জমি ছুডামু । ঘরে সুমত্ত মাইয়া রাবেয়ার একটা বিহিত করমু । স্বামী স্ত্রীর কথার মধ্য ফুরন কাটে ছোট ছেলে অনু “ বাজান আমাগো লাল গাইডা আনবানা । ____ আনমু বাজান আনমু । এবার হাত তালি দেয় অনু কি মজা কি মজা ,আচ্ছা বাজান
আমারে একটা লাল জামা কিইনা দিবানা । ____ দিমু লগে বই দিমু স্কুলে ভর্তি কইরা
দিমু ঐ সবদর মাস্টরের পোলার মত বুঝলে । _____ হাছা কইছ বাজান আমি ইশকুলে

যামু হুররে । পানের ডিব্বা লয়ে ছমিরন স্বামীর পাশে বসে । ক্ষেতে গেলে কিষাণির বাও এই লও পান।
২ ।
গ্রীষ্মের আকাশে ঘন কাল মেঘ । বাতাসের জুড় ক্রমশ বাড়ে । বিষণ্ণ মনে বাড়ী ফিরে করিমসেখের বড় ছেলে ।
ছেলের মুখের পানে তাকিয়ে বাপের বুকটা কেঁপে উটে । বাজান কি খবর । ___ বাজান ভাইংগা গেছে টগার হাওড়ের বান । ছব মানুষ হেইদিকে যাইতাছে উড়া কুদাল লইয়া বাধ বাধার লাগি । আরে কয় কি পোলা , গামছাটা গাড়ে ফেলে মতবর বাড়ির দিকে ছুটে করিমসেখ, যাই দেহি কোন
বিহিত অয় কিনা । করিমসেখের হনহন ছুটে যাওয়া দেখে নছিমন মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে উঠানে ।
অনু ধির ধিরে মায়ের কাছে ভিড়ে মা ক্ষিদা লাগছে খাওন দেও ।মা ছেলেকে ধমক দেয় , দূর হু অভাগা
মায়ের বকুনি খেয়ে রান্না ঘরে ছুটে অনু । এই বুবু মার মন খারাপ কেন বাজানে
কি হেরে বকা দিল ।অনুর কথা শুনে বোন রাবেয়া বলল , না তবে পানি তে তলাইয়া গেছে ধান বুঝলে এখন খাবি আয় ।
চোখ বড় বড় করে ভাত গিলতে থাকে অনু হঠাৎ প্রস্ন করে আপু এত পানি কই
থাইকা আহে । ঐ যে নীল পাহাড় দেহা যায় ওইটার ওপাশে বিরাট একটা দেশ ।
হু অইহানে বুঝি খালি পানি আর পানি ।এবার রাবেয়া ধমকায় চুপ করেন পণ্ডিত মশাই । তারাতারি খাওয়া দাওয়া সেরে আব্বাজনের খবর লন ।
। রাবেয়ার বুক থেকে একটা
রঙ্গিন সপ্ন মিলিয়ে যায় ।গত বছর তার বিয়ে ভেঙ্গে গেছিল পাত্রপক্ষকে যৌতুক
দিতে না পারায় ।
মাতবর জহিরুল্লা জনা কয়েক লোক নিয়ে শলা পরামর্শে রত। ঝড়ের বেগে করিমসেখ উপস্থিত _______ ছালাম দিয়ে জিজ্ঞাসে মাতবর সাব বাধ ভাঙ্গলে সব শেষ অইয়া যাইব । একটা
হতাশার ছাপ গ্রামের সব কৃষাণের চোখে মুখে ।মারবর এতক্ষন হুক্কা খাচ্ছিল , এবার মাথা উচু করে কাশতে বলল কাশতে বল্ল, বহ মিয়া মাথা ঘরম কইবানা আল্লারে ডাহ দেহি হুগলে
মিইলা কিছু করবার পারি কিনা । মাতবর কাঁচা পাকা দাড়ি তে হাত বুলায় , দ্রস্তে ছুটে আসে রবি চাষি হুজুর সর্বনাশ আমাগো ঠগার বাধ ভাইংগা গেছে । খবর টা শুনে করিমের মাথায় যেন বাজ পড়ল । পরক্ষনেই তার সংজ্ঞা হীন দেহটা লুটিয়ে পড়ল মাটিতে । এবার করিমসেখকে ঘিরে দেখা দিল একটা জটলা ।গ্রাম্য ডাক্তার নাড়ী পরিক্ষা করে হাসপাতালে পাঠানোর পরামর্শ দিল ।তখন ছমিরনের মুখে করুন বিলাপ সর্বনাশা বাধভাঙ্গন হায়রে আমাগো সব স্বপ্ন ভাসাইয়া লইয়া গেল ।
মাসুদ রানা , রচনা ৩/৩/২০১২ইং ।
গ্রাম বাংলার গল্প বিচিত্রা
গল্প ২* ভুতের ভয় ।
আষাঢ় মাস । বর্ষায় পানি চারিদিকে থৈ থৈ । সবে সন্ধ্যা আকাশে তারকার মিটিমিটি হাসি ।সৈয়দ পুর গ্রামের একটি উঠানে মজুম আলী তার ছেলেকে তাগদা দেয় ।বাপ লাইট টা জ্বালা আইজ আউল্লারা দিতে অইব ।বাজান লাইটের
তেল নাই , দূর বোকা সেলবরসের বাজার থাইকা আইজকা আনলাম দেখ তোর
মায়ের নিকট । হু আন তাছি
অনেক চেষ্টায় পাম্প করে লাইট ধরায় বাপ পুত ।কয়েকটা ছোট ছোট ছেলে মেয়ে আলোটাকে ঘিরে খেলা করে ।ছোট গনি বাবার গাঁ ছুয়ে আবদার রাখে বাজান আমিও যাব ।না বাপ আইজকা না
আরেক দিন । আইজকা ঝড় আইব । মোহন ভয় দেখায় আমরা যেইহানে যামু হেইহানে থাহে ইয়া বড়
রাক্ষস ।কথা শুনে গনির আবদার মাটি হয়ে যায় ।
বৈঠা লয়ে হাল ধরে পড়শি মবুল । গ্রাম থেকে ধিরে ধিরে নৌকা এগিয়ে যায় পশ্চিমে ।
পাশেই খালিজানা নদী । তীরে কাশবন আর সারি সারি পাট ক্ষেত । ক্ষনে ক্ষনে নিশাচর পাখিরা ডেকে উটে । মকবুল হটাৎ চি ৎ কার করে ভাইজান সামনের জলা ডা য় পানি দাব্রাইতাছে মনে অয় বড় মাছ ।টিক আছে নায়ের বাতা এই দিকে ফিরা ।
নিঝুম রাত । কুঁচ টা সর্বশক্তিতে পানির মধ্য ছুড়ে শিকারি । একটা বিশাল রুই মাছ উঠে আসে নির্জলা পানি ছিটিয়ে । মোহন খুশিতে লাফায় । ছোট বড় বেশ কয়েক টা মাছ ধরা পড়ে । নৌকার ভিতরে সামান্য পানিতে শব্দ হয় চড়চড় । এক সময় ওরা জলা বিল নদী পেরিয়ে বহুদুরে চলে আসে । আকাশের দিকে মুখ তুলে বাজখাই গলায় মকবুল
ডাকে ভাইজান সারা আসমান জুড়ে কালা সাজ ঝড় আইব ।হা তাই ত ফিরতি পথ ধরতে অইব নাও ঘোড়া । মকবুল প্রান পনে বৈটা চালায় অদুরে জলারভিতর থেকে
পেঁচার কর্কশ শব্দ ভেসে আসে ।হটাৎ ঘন আধারে ছেয়ে যায় পৃথিবী শুরু হয় ঝড়।
ঢেউয়ের ধাক্কায় বারবার দুলে উটে নৌকা । ঝমঝম নামে বৃষ্টি ।খেকিয়ে উটে মোহন বাজান এখন উপায় ।প্রচণ্ড বাতাসে দপ করে নিভে যায় আলো । এক জলার দ্বারে নাও
ভিড়িয়ে আধারে তিনজন ছাতা মাতায় বসে থাকে । বহুক্ষন ঝড় বৃষ্টির তাণ্ডব চলে । একসময় ধিরেধিরে প্রলয় নাছন থেমে যায় । জীবনে এত আধার দেখেনি ওরা ।চেষ্টা করে মজুম
আলী বাতিটা জালাতে কিন্তু কিছুতেই জ্বালানো যাচ্ছেনা । এদিকে সব কটা ম্যাচের কাঁটিও প্রায় শেষ ।
আবার ও ঝোপের ভিতর থেকে বিশ্রী ঘর্ঘর শব্দ কানে আসে । ভয়ে অজানা আশংকায় শিহরিত হয় তিন জনই । মজুম আলী তাঁগিদ দেয় হে মকবুল আল্লার নাম লইয়া এবার রয়ানা দেই কেমুন । কি কন ভাইজান আন্ধাইরের মধ্য ত কিছুই দেহা যায়না । মোহন খেয়াল করে তাদের সামনেই বেশ কিছুটা দূরে একটা আলো দেখা যায় । বাজান এই দেহ একটা লাইট । হু তাই তো । আমিও লক্ষ্য করছি , নিশ্চই ওরাও আমাদের মতই মাছ শিকারি ।
।আলোটা ধিরেধিরে ওদের দিকে এগিয়ে আসে। মকবুল চেচায় ভাইজান ভয় নাই বাত্তির ফসরে টিক মত এবার পথ দেহুম । বৈটা সামনে চলে। জলে শব্দ উটে ঝপাৎ ঝপাৎ । প্রকৃতি নিরব , চলার যেন বিরাম নাই । নাও থেকে একটা মাছ হটাৎ লাফিয়ে পড়ে পানিতে শব্দ হয় ঝুপ । বাজান বাজান বড় মাছটা ত ছইলা গেল

দূর ছাই রাখ তর মাছ দেহছ না কেমন বিপদ আল্লাহুর নাম ল । মকবুল নড়েচড়ে বসে কি অলক্ষন কার মুখ দেইখা যে আইলাম বুঝবার পারিনা । এবার সামনের
লাইট টা দপ করে নিভে যায় । এবার আবছা আধারে একটা নিকষ কাল মুখ পানির উপরে দাঁড়িয়ে ভেংচি কাটে । মকবুলের হাত থেকে বৈটা পড়ে যায়
মোহন চিৎকার দিয়ে উটে বাজান ভুত/ বুকটা শুকিয়ে কাক হয়ে যায় মজুম আলীর
ভোরের আলো ফোটার সাথে সাথে নরম শিশিরের ছোঁয়ায় ওদের জ্ঞান ফিরে ।
[ সেস্থান থেকে ওদের বাড়ী ফিরে ভয় কাটাতে সময় লেগেছিল বহু দিন ]
নাসুদ রানা , রচনা ২/১০/২০১২ইং ।




গ্রাম বাংলার গল্প বিচিত্রা
তিন * দখলদার
মনু রাখাল । তার পরনে তেল ছিট ছিটে জামা ।হাতে কাস্তে ও কাঁচা । সোনা ঝরা রোদ টিকরে পড়ে সকালের শিশির ভেজা ঘাসে । তার প্রিয় লাল গাইটি কচি নরম
ঘাসে মুখ ডুবিয়ে চিবোয় আর বাছুর টি পাশেই তিরিং বিরিং লাফায় ।এই নতুন অথিতি বিচিত্র পৃথিবীকে উপলব্দি করছে আপন মনে ।নীল আকাশে ঝাকে ঝাকে পাখিরা ডানা মেলে উড়ে বেড়ায় মনের সুখে । পাশেই বৃহৎ বৃক্ষ সুশীতলে রুদ্র
ছায়ার খেলা । গুনগুন সুরে গান গেয়ে ঘাস কাটে সে ।
নিরবতা ভেদ করে একটা কর্কশ কণ্ঠ । চমকে উটে মনু। কে আমার ক্ষেতে ঘাস কাটিস এত বড় সাহস । জি চাচা ঘাস ত হগলেই কাটে তাই আমিও ‘’’’’’’ চুপ এই জমি এহন আমার । এইহানে আর কেউ ঘাস কাট তে পারবনা বুঝলে । যা এক্ষনি জায়গা ছাইড়া চইলা যা । হটাৎ হাতটা ছেপে ধরে গজ গজ করতে করতে বাড়ীর দিকে ছুটে মনু। উঠানে খেলা করছিল ছোট বোন শিলা । মনুকে দেখে ছুটে দৌড়ে আসে সে , ভাইয়া তোমার হাতে লাল রঙ কেন আমাকে একটু দাও না ।উঃ পাগলি ওটা রঙ নয় রক্ত কেটে গেছে বুঝলে । ইস মা মা দেখ না ভাইয়ার হাত কেটে ফেলেছে । গনুর মা হালিশা রান্না ঘর থেকে ছুটে আসে কই দেহি । তরে বেবাক সময় কই সাবধান থাকতে তুই হুনস না তুই কি অহন ছুডু । শিলা লতা পাতা খুজে আনে ছেঁচে হাতে লাগায় । আর মা ন্যাকড়া দিয়ে বেধে দেয় কাঁটা স্থান ।
নদীর নাম কংস। তীরে দাঁড়িয়ে গনু । দুপুরের রোদ টিকরে পড়ে গাঁয়ে ।কত স্মৃতি মনে
জাগে । বন্ধুদের লয়ে মাছ ধরা । সাতার কাঁটা । গাছের ডালে বসে আপন মনে বাঁশি বাজানো । দুলির সাথে মাটির পুতুল নিয়ে খেলা আরও কত কি । এখন মরা নদী ।

মনু খেয়াল রাখে কখন নদীর পাহারাদার আসবে । ওরা পাহারাদার কে ফাঁকি দিয়ে মাছ ধরে । আবার হুররে হুররে চেচামেচিতে কানে তালা লাগে ।
অনেকেইমাছ ধরে । ওরা হাঁটু পানিতে নেমে এক সারিতে দ্বারায় এবং কাদা সরিয়ে ছোট ছোট গর্ত করে । মাথা নিচু করে দুহাত দিয়ে পানি পেছনে ঠানে ফলে গর্তে প্রচুর টেংরা পুঁটি ও ছোট মাছ জমা হয় । হাতের মুট ভরে ভরে যারযার ছোকরায় তুলে । হইরল হইরল সাবধান কণ্ঠ শুনে সবে ত্বরা করে নদী থেকে উটে পড়ে । মনুর ভাগ্য মন্দ হইরল চান্দু এসেই ওর ছোকরা জালি আটক করে । এই নবাবের পুত গাং কি তোর বাপ দাদার । হু আমার বাপ দাদারই দে আমার ঢেক জালি দে । না দিমুনা ,।
মনুর রাগ চরমে উটে একটা ডিল ছুড়ে ও পাহারাদারের কপালে । ডিল টা খেয়ে অজ্ঞান হয়ে ডলে পড়ে পাহারাদার আর মনু ভয়ে কাপতে কাপতে বাড়ীর দিকে ছুটে ।
মা রাহেলা গনুর দিকে তাকিয়ে চমকে উটে তর এই হালত কেন মাছ কিছু পাইছস ।
না তয় এক কাম করছি বিলের হইরল আমার জালি খাইরা নিবার চাইছিল
হেরে এক ঘায় মাটিত হুয়াইয়া ধিছি । সর্বনাশ অহন আমরার কি অইবরে বাজান
উঠানে গলা ভেজে রহমতউল্লাহ । ভাবিছাব ,কি আর অইব ভাতিজা যে কাজ কইরা আইল
নির্ঘাত জেল । গনুর মা মাথায় হাত দিয়ে কাঁদে হায় আল্লাহু এহন আমাদের কি উপায় হবে গো । রহমত উল্লাহ পরামর্শ দেয় শুন গনুর মা , পুলিশের তারা আর জেলের ভাত খাইতে না চাইলে গনুরে এক্ষনি বাড়ি থাইকা বাইর কইরা দিতে অইব । হু যা ভালা অয় তাই কর আমি আর কিচ্ছু বুঝিনা ভাই ।
গনুর মা চিন্তা কইরনা আমার পরিচিত লোক আছে চাঁদ পুরে ঐখানেই গিয়া গনু কিছুদিন থাকুক
ভেজাল শেষ অইলে পরে নিয়া আইমুনে কেমন । কিন্তু যাওয়ার খরছ সাথে ত একটা পয়সাও নাই । তা আমি দেখছি । মুখ ভার করে গনু বোবা কান্নায় ভেংগে পড়ে । সেই সাথে কাঁদে তার মা রাহেলাও ছোট বোন শিলা ।
বাড়ী থেকে বের হয় গনু একটা ঝাপসা স্মৃতি ভেসে উটে তার মনে । রহমতউল্লাহর দুচোখে খেলা করে কুটিল; এক ছবি । ঘাস কাঁটার সময় যে ধমক দিছিল । লাল গাই ও তার বকনা বাছুর
তাকে দেখে হাম্বা হাম্বা ডাকে। দূরে গাছের ছায়ায় দেখে দুলির সেই মিষ্টি মুখ ভারাক্রান্ত ।
। গাড়ির হুইসেলের সাথে সাথে তার হৃদয়েও বেজে উটে সব হারানোর বিলাপ বাঁশী ।
মাসুদ রানা রচনা ২/৭/ ২০১২ ইং সোমবার ঢাকা মির পুর সময় রাত ১১ঘ ,


গ্রাম বাংলার গল্প বিচিত্রা
চার , ভানবাসি
মা মা ভাত দে ভাত দে চিৎকার করে কাঁদে ছোট শিশু । বাড়ির উঠানে থই থই বন্যার পানি । ভাংগা বেড়ার ফাঁক গলে বাতাসের ঝাপটায় শিষ আসে ঘরে । ছালার ছট দিয়ে ঘর মেরামতে ব্যাস্ত গৃহিণী লক্ষ্মী । মেয়ের কান্নায় বিরক্তি বোধ করে , পাশ ফিরে টাস করে তার গালে বসায় ধুম চর ।বান্দরনি এত খাই খাই করস কেন মরবার পারস্ না আর কত জালাবি ক । আরও জুড় সুরে মাটিতে পড়ে কাদে অবুজ শিশু । অনেকক্ষণ কাজ করে মা আর মেয়ে কাদতে কাদতে ঘুমিয়ে পড়ে । কলার বেলায় চড়ে আসে ছেলে বসু ডাকে মা এহনি লও পশ্চিম পাড়ায় । কেন রে আবু কি ব্যাপার ।
চেয়ারম্যান সাব চিরা মুড়ি ডাইল হজ্ঞলরে দিতাছে শেষে গেলে পাইবানা ।হাছা কইছস বাজান ,মাইয়া আমার প্যাডের জালায় গুমাইয়া গেল তয় খাড়া আমি এহনি
আহি ।
ঘুমন্ত মেয়েকে কুলে লয়ে মা ছেলে ছুটে মিয়া বাড়ীতে । অনেক মানুষের হৈ হল্লা শুনা যায় ।
মেম্বার রতন চৌকিদার কে নির্দেশ দেয়, সব যেন লাইনে খাঁড়ায় নইলে রিলিফ
বন্ধ করে দেওয়া হবে । দুতিন জন চৌকিদার বাঁশি বাজায় অনবরত। মাঝে
মাঝে লাটি দিয়ে আঘাত করে কার ও গায়ে কিন্তু কে শুনে কার কথা । যারা রিলিফ বিলানোতে ব্যস্ত তারা বিরক্তি বোধ করে । কেউ যৎসামান্য পায় আবার কেউ না পেয়ে অশ্রাব্য গালি দেয় । চেচা মেচি শুনে কুলের শিশুটি জাগে । মাগো খিদা লাগছে , এই দেহ কুত্তায় খাইতাছে আমারে দিবানা । কুকুর ও কাকের খাওয়া দেখে মা ধমকে উটে । বসু খারাইয়া রইছস কেন , বেবাক মাইনসে সব লইয়া গেল আর আমাগো ভাগ্য অহন ও
একটা দানাও মিলল না । বসু হটাৎ খেয়াল করে । জটলার মধ্য থেকে দুতিন জন লোক রিলিফের বস্তা লুকিয়ে তারাতারি সরে পড়ে । দাতে দাত কাটে সে । তখন ওর মুখে একটা শব্দ ফুটে চুর চুর চুর ।
মাসুদ রানা , রচনা ৬/১/২০১২ইং ।




গ্রাম বাংলার গল্প বিচিত্রা
পাচ । সলিল সমাধি
[১৪ টি পরম আত্মীয় এক সারিতে ধরম পাশা হাসপাতালের জমিনে । হাজারও মানুষের মৌনতা । সবে নির্বাক । ওরা বাদশা গঞ্জ পাবলিক হাই স্কুলের শিক্ষার্থী ] ওরা আর কখন ও কারও সাথে কথা বলবে না ।
প্রতিদিনের মত বাদশাগঞ্জ পাবলিক হাই স্কুলের শিক্ষার্থিরা একত্রিত হয় খেয়াঘাটে । হাওরের মুক্ত বায়ু প্রান জুড়ায় ।জনি সম্পা তারিনা হালিমা চৈতি বাবুল রাকেশ আর ও অনেকেই । ট্রলার ঘাটে ভিড়লেই নিত্য হুড়মুড় করে ওরা উটে পড়ে । প্রতিদিন শিক্ষার্থীরা পানির উপর দিয়ে ভাসতে ভাসতে ছুটে যায় তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাদশাগঞ্জ পাবলিক হাই স্কুলে ।
ইঞ্জিন চালিত নৌকা ঘাটে আসার আগে শিক্ষার্থীরা রঙ্গ তামাশায় লিপ্ত । একজন সহপাঠীকে ডেকে বলল স্কুলের সময় হয়ে গেল এখন ও ট্রলার আসছেনা কেন । গাঁড় নাড়ে জনি আসবে আসবে এক্কেবারে জন্মের আসা আসবে ।এবার সে আকাশের দিকে আঙ্গুল তুলে সহ পাঠিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তোরা দেখ
মজার এক কাণ্ড । আকাশের দিকে তাকায় সবে দেখে এক ঝাক পাখি এক খণ্ড মেঘ ছুয়ে ছুয়ে
ওড়ে যাচ্ছে গাড়ু পাহাড়ের দিকে ।চৈতি টিস্পনি কাটে ,কই আমি ত কিছুই দেখছিনা । সম্পা জবাব দেয় তর
চোখে ব্যরাম দেখবি কেমনে । কথা শুনে আর সব খিল খিল হাসে । বটবট শব্দে
একসময় ট্রলার ঘাটে ভিড়ে । মানুষের ভিড় । তিল পরিমান জায়গা নেই পা ফেলার । গাদা গাদি করে সবে উটে পড়ে ইঞ্জিন বোটে । গ্রামের নাম বালি জুড়ি । সারা আকাশ জুড়ে ভাসমান মেঘ মালা । পশ্চিমে একটা লাল বিজলী শিখা ধিরে ধিরে মিশে যায় হিমালয় পাহাড়ের পাদদেশে । বাতাসের ঝাপটায় ঢেউয়ের ক্ষনা আঁচড়ে পড়ে নায়ে । মাঝে মধ্য পানির বাস্পকনা আঘাত হানে ওদের নিস্পাপ
শরীরে ।আঁশপাশ দিয়ে ছুটে যায় জেলেদের ছোট ছোট নৌকা । ওরা জাল ফেলে মাছ ধরে আর তাজা তাজা ছোট বড় নানান জাতের মাছ নায়ে লাফায় । জলায় কত গুলো হাস সাতার কাটে । এইসব দৃশ্য দেখে দেখে ও রা এ গিয়ে যায় ।
নিরবতা ভাঙ্গে মাহিনা আইজ স্কুলে যাইতে আমার মন ছাইছিলনা তবুও তোদের সবার কথা মনে হতেই চলে আসলাম । তারিনা হু আমারও মন খারাপ ছিল, ভাবলাম স্কুলে বান্ধবীদের সাথে কাটালে হয়ত ভাল লাগবে । বাবুল বলল আমি স্বপনে দেখলাম এক টা বিরাট জংগলে ছুটছি কিন্তু কোন
পথ খুজে পাচ্ছি লাম না । সেই থেকে আমার মনটা ভালনা । ধমক দেয় জনি দূর বোকা স্বপন আবার সত্য হয় নাকি । হাওড়ের বুকে বাতাসের সো সো গর্জন । পর্বতের সমান একেকটা ঢেউ কেটে এগিয়ে যাচ্ছে ইঞ্জিন চালিত নৌকা ।
হটাৎ ইঞ্জিনের বিকট শব্দে কানে তালা লাগে সবার ।কেঁপে উটে ছাত্র ছাত্রিদের বুক । ওরা প্রান পন চেষ্টা করে ইঞ্জিনের খুলের ভিতর থেকে বেড়িয়ে আসার । পথ খুজে পায়না । চারিদিকে শুধু পানি আর পানি । নৌকা একসময় ডুবে যায় হাওড়ের অতল গহ্বরে । ঢেউয়ে ঢেউয়ে শুনা যায় ওদের আত্তবিলাপ ।
সলিল সমাধি লাভ করে ওরা ।স্কুলের গন্তব্য আর ওরা কোনদিন পৌছবেনা । ওরা চলে গেছে দূর সিমানায়
সেখান থেকে আর কোন দিন আমাদের স্বপ্নলোকে ফিরবেনা । ওদের বন্ধু বান্ধবীরা হাওড়ের প্রতিটি ঢেউ গুনে প্রতিক্ষার প্রহরে তাকিয়ে রয় । স্কুলের শিক্ষকেরা মৌনতা লয়ে উদাস দৃষ্টি মেলে দুচোখ ভিজায় । লেখকের ভাষা হয় সেথা নির্বাক ।
[সত্য ঘটনা অবলম্বনে নাম ও কথা রূপক ]
মাসুদ রানা , রচনা ৬/৭/২০১২ ইং শুক্রবার





গ্রাম বাংলার গল্প বিচিত্রা
ছয় । দিনের কথা ১
গ্রামের নাম কদম দেউলি বারহাট্যাঁ সদর ইউনিয়ন থেকে ২ কি মি পশ্চিমে । অনেকদিন পর বেড়াতে আসা , ভাগ্নে নিপন চিৎকার জুড়ে দিল , আম্মু আম্মু দেখ এসে মামা আইছে । আমাকে দেখে খুশিতে কেঁদে ফেলল বড় আপা এতদিন পর আমাদের কথা স্বরন হল বুঝি । বাড়ীর সব কে কেমন ইত্যাদি ।আরও অনেকেই ঘিরে ধরল ধিরে ধিরে জবাব দিলাম ।দুলাভাই কোথেকে এসে কান টেনে ধরল
শালা এতদিন পর ,ইস কান চিলে নিল ,ভঙ্গি দেখে সবে হেসে উটল ।
বন্ধু নয়নের সাথে গ্রামের ভিতরে বেড়াতে যাই, রেল ক্রসিং, পায়ে চলা পথ , পথের
উভয় পাশে সারি সারি গাছ ।পাখির কিচির মিচির শব্দ , জমিতে শাখ সবজী ও সবুজ ফসলের কেশর হাওয়ায় দুলে ।হটাৎ নয়ন ইশারা করে, দেখ দুষ্ট খুদে বেবি
অর সাথে কথা ক , কাছে ডাকতেই সামনে আসে সে পরনে লাল জামা । আমি তাকে কুলে তুলে নিয়ে আদর করলাম ।খুকি তোমার নাম কি? জুনিয়া । বেশ সুন্দর নাম । তা তোমার গ্রামের বাড়ি কোথায়? এই যে এখানে “””” আব্বু আম্মু আপু আর আমি থাকি । ঝটপট জবাব আমাকে আঙ্গুল উচিয়ে দেখাল ঐ যে আপু ডাকে ।একটা মেয়েলি কণ্ঠ নয়ন ভাই মেহমান কে নিয়ে বেড়াইয়া জান। আমরা ওদের বাড়ী গেলাম ।
মেঝে মাদুর বিছিয়ে দেয় মেয়েটি । আমার দিকে তাকিয়ে বলল আমার নাম সুজাতা ।
আপনাকে আমি ভাল করে চিনি । আপনি শান্তা ভাবির ভাই তাইনা । বহুদিন পর এলেন সেই কবে আপনাকে দেখেছি ।
আমি ওর শৈশব স্মৃতি চারনে সায় দিলাম হু তাই ত । নয়ন ওর দিকে চেয়ে
রইল ।পাখা মেলে এক জুড়া কবুতর উড়ল উঁঠানে ।জুনিয়া একটা খাতা লয়ে আকা
আকিতে ব্যস্ত । ওকে ডাকলাম ছবি একে দিলাম । সুজাতা উটে গেল তোমরা বস
আমি চা নিয়ে আসি ।
বিকেলের আকাশে তখন স্নিগ্ধতা রাঙ্গা রবির অপরুপ ঝলক ।

কেন্ত্র বারহাট্যাঁ সি কে বি উচ্চ বিদ্যালয় , নেত্রকোনা ।চলছে ম্যাট্রিক পরিক্ষা । আমরা যথা সময়ে যে যার রুমে উপস্থিত । ঘণ্টার বেল বাজতেই প্রত্যকের সামনে এসে গেল প্রস্ন পত্র ।
সেদিন ইতিহাস পরীক্ষা । একদম দরজার পাশেই পড়ল আমার বসার স্থান । লিখে যাচ্চি মাথা নিচু করে । দায়িত্ব প্রাপ্ত ম্যাজিস্টেট কে দেখলাম সামনে এক টুকরা কাগজ হাতে । আমাকে লক্ষ্য করে বলল বাবু দ্বাড়াও । আমি ত লিখছি
স্যার । আমার দিকে তাকিয়ে বলল তোমার খুব সাহস । জি আমাকে আরও লিখতে হবে সময় কম প্লিজ । বেশ লিখ তিনি বেরিয়ে গেলেন মাথা নিচু করে ।

সমস্ত বিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রি শিক্ষক গনের উৎসুক দৃষ্টিতে বেশ উৎসাহ পেলাম । হৈ হল্লা ,আড্ডা বেড়ানো এই ভাবে কাটালাম বেশ কয়েকটা দিন । পরিক্ষা শেষে দুলাভাইকে সঙ্গে নিয়ে রওয়ানা হলাম বাড়ীর উদ্দেশ্য । সঙ্গে নয়ন ও আবীর ।ট্রেন আসেনি তাই আমরা পায় চারি করছি এদিক ওদিক । দুলাভাই বললে অপেক্ষা কর
আমি এক্ষুনি আসছি। আবীর বলল কবি ভাই আমাদের এলাকা কেমন ? কি দেখলেন ? দেখলাম অনেক কিছু মানুষের জীবন চিত্র বড় ই বিচিত্র । সব যদি লিখে
যাই একটা বিরাট কাব্য হবে ।
নয়ন তা আমাকে নিয়ে কিছু লিখবেন । লিখব । আমি নয়ন কে বললাম ঐ যে ছুটে আসে দেখ তর মনের হরিনী খবর রাখিস । চমকে উটে নয়ন । সুজাতা ও বান্ধবীরা মিলিত হয়ে আমার নিকট আসে । সুজাতা বলল কবি
ভাই অটগ্রাপ চাই । সবে নোট প্যাড এগিয়ে দেয় । কথা না বাড়িয়ে সবার আবদার মিটিয়ে দিলাম । ওরা চলে গেল । ডাক বাংলার সামনে বেশ কিছু তরুণ আমাকে ঘিরে ধরল । কবি সাহেব আমরা আপনার স্বরচিত গান শুনতে চাই। আবির দমকে
উটে ফাজলামু । আমি আবির কে বুঝিয়ে ওদের সময় দিলাম কিছুক্ষন ।
এবার মুখ তুলে তাকাতেই দেখি সবিক দাঁড়িয়ে । কবি ভাই তুমি । হু বোনের বাড়ী
বেড়াতে আসছিলাম আজি ফিরব । তাত বুঝলাম । কিন্তু কিভাবে যাবেন । কেন ট্রেনে । ট্রেন আসবেনা । বাংলা স্টেশনে আটক । লাইন চুতি হল বুঝি , হু । সবিক রা শ্যাম গঞ্জ থেকে কাট সংগ্রহ করে মোহন গঞ্জ যাচ্ছিল । মুহূর্তে দুলাভাইও উপস্থিত । সবিক এর কথায় সায় দিয়ে আমরা তার ট্র্যাকে জায়গা নিলাম ।
ব্যস্তময় সড়ক কত যানবাহন ছুটে একের পর এক । আমরাও ছুটছি সম্মুখে । হটাৎ
আমার বুকটা কেঁপে উটল একটা ভ্যন আর লেগুনা মুখুমুখি । ট্র্যাক পাশ কাঁটাতে গিয়ে বিগড়ে গেল । সম্মুখে পথ রুদ্ধ । ট্যাঁ ট্যাঁ করে ট্র্যাক টি একটা ওয়াক সোপের দোকানে গিয়ে ধাক্কা খেল । বিকট শব্দে কানে তালা লাগল । ঘটল অনাকাঙ্গিত দুর্ঘটনা । মুহূর্তে
হাজারও মানুষের চিৎকার চেচা মেচি ভেসে আসে কানে । যখন নিজেকে আবিস্কার
করলাম জনতার ভিড়ে তখন ভোঁতা বিবেকে টনক নড়ল আমি অক্ষত । বহুসময়
পর দুলাভাই আবির নয়ন সবিক ওরা ও ফিরে এল । সবিকের মাথায় ব্যান্ডেজ পৃথিবীটা বড় বিষণ্ণ মনে হল /
মাসুদ রানা , রচনা ৭/৭/২০১২ ইং শনিবার ।

গ্রাম বাংলার গল্প বিচিত্রা
সাত সেবা মোঃ মাসুদ রানা রচনা ১২, ৭, ২০১২ ইং
আধার রাত ।
ঘরে শম্পা সাদিক আবুল পড়া থামিয়ে গল্প করছিল । ধমকে উঠে মহিন । এই বই বন্ধ করে ফাজলামু হচ্ছে না । জি ভাইয়া আমরা এতক্ষন পড়ছিলাম আম্মা ত হাসপাতালে। কেন কার আবার কি আপদ । ঐ উত্তর পাড়ার বেলুয়া ভাবির বাচ্ছা অইব । বুঝলাম তাইলে ঘুমিয়ে পড় । ছোট বোন শম্পা আবদার করে ভাইয়া একটা গল্প বলনা । হুম বলব , তা কিসের গল্প শুনতে ভাল লাগবে ।
সাদিক বলল ভাইয়া ভুতের কিচ্ছা কও । আবুল বলল নাভাইয়া রাক্ষসের । শম্পা বলল না ভাইয়া ওদের কথা শুনবানা শিয়ালের টা কও । বলছি বলছি এক দেশে ছিল এক রাজা । রাজ্য কোন কিছুর অভাব ছিলনা। মন্ত্রি শাস্ত্রি পাত্র মিত্র দাসদাসি সে এক এলাহি কাণ্ড। রাজার ছিল এক বিচিত্র খেয়াল । ছোট্ট শিশু বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা দেয়া । সম্পা বলল কেন সে দেশে কি বড় মানুষ নাই । প্রশ্নটা শুনে দাঁত খেলিয়ে হাসে
কাজের লোক গনি । থাকবনা কেন, না থাকলে আমরা ও কিছুদিনের মধ্য চইলা যামু। হেই দেশে ত আর অভাব নাই । চিৎকার করে শম্পা ভাইয়া মুট কোটা কথার মধ্য বের লাগায় । বাইরে থেকে হটাৎ একটা চিৎকার ভেসে আসে ওদের
কানে ।গনু বিষয় টা কি একটু দেখনা এগিয়ে । ভাইজান পুবের আসমান ডা ফসর দেহা যায় মনে অয় আগুন লাগছে । আবির ও মনু কলসি লয়ে ছুটে আগুন নিবানোতে । একদল সমবয়সী কিশোর পড়ে ওদের সামনে , নয়ন ব্যপার কি এদিকে হইহল্লা কেন ।আবির ভাই মেম্বরের পোলা বাকিম তুহিনদের ডাব চুরি করতে গিয়া ধরা খাইছে । ভালাই অইল অহন মেম্বর বুঝক কথায় কথায় মাইনসেরে দুষ ধরবার পরিনতি । টিক গনু ভাই টিক কইছ , আবির এবার সবাই কে ইশারা করে । যা হবার হোক , তোমাদের কি মনে আছে সামনের দিন কার কি দায়িত্ব ।
বেলির বিয়ার কথা আর কি । বাপ লেংড়া গরিব মানুষ । কাল তোমাদের এমনিতেই স্কুল বন্ধ তাই না । সকলে জি । তাহলে সবাই এসে পড় গ্রামের মান ইজ্জত ত রক্ষা করতে হবে। সকলে জি । এবার আস । সবাইচলে যায়
আবির ভাই’ মতলব কি কিছু বুজলা ,হু ওরা পোলাও পাক করব । এই বয়সে আমরা কত কি করছি তাই না । সর্বনাশ বাকি গল্প না শুনে ওরা ঘুমুবেনা চল চল
হা চল ।






গ্রাম বাংলার গল্প বিচিত্রা
জমিদার পতন ৮
এম ,জি , রহমান মাসুদ মিয়া ।
মিয়া বাড়ীর বৈঠক ঘর । প্রায় সময় এখানে দেন দরবার ,গানের আসর একটা না একটা লেগেই থাকে । ঘরমের দিন । বাড়ির কর্তা অনেক সময় ধরে হুক্কা ঠানে । তাল পাতার পাখা দিয়ে
বাতাস করে বৃদ্ধ চৌকিদার । তামাক শেষ হতে না হতেই নতুন করে হুক্কা সাজায় সে হটাৎ প্রশ্ন করে ভাইজান একটা কথা কমু । হু একটা কেন দশ টা ক । জি মানে খালেক সাব আইব জানি কিজবাই করুম গরু না খাসি । আগে আসুক বুঝলে খুশিদ । বুঝলাম কিন্তু মন্ত্রি বাজিসটার হেগ খাওনই ত আলাদা মিয়াঁ ভাই । চিন্তার কোন কারন নাই সুলতান কে দিয়া পুকুর থাইকা কয়ডা বড় মাছ ঊটাবি আর যা লাগে সব লিখে দেই বাদশাগঞ্জের বাজার থেকে তরিগরিনিয়া আসবি । জি আচ্ছা ।

ঘাটে ভিড়ে বাউল্ল্যা ডিঙ্গি । সব মানুষের ভিড় থেকে চওড়া সুটাম দেহি মন্ত্রি বাড়ির
কর্তা কে জড়িয়ে আলিঙ্গন করে , গিয়াস উদ্দিন মিয়াঁ কেমন আছ । ভাল আছি আল্লাহুর রহমতে । আরও আত্মীয় স্বজনেরা দেখেই এগিয়ে আসে । বাড়িতে খুশির আমেজ দুই বন্ধুর মিলনে । একজন পাকপাকিস্তান পার্লামেন্ট সেক্রেটারি জেনারেল আর অন্যজন পঞ্চায়েত সরকার । তাদের কে ঘিরে হাজারও মানুষের উৎসুক দৃষ্টি ।
আলোচনার টেবিলে দুবন্ধু । গিয়াস মিয়া মনে পড়ে সেই সব দিন যখন জমিদারদের আভিজাত্যর ভয়ে আমারা পালিয়ে গিয়েছিলাম কলখাতা ।
জি ভাই সাহেব সেই দিন গত হল বেশি সময় তো নয় । এইতো ১৯৪১ সালের কথা ।
আমরা ভর্তি হলেম গিয়ে কলকাতা প্রেসিডেন্সিয়াল কলেজে । তখন ২য় বিশ্ব যুদ্ধের
বিভীষিকা।
কবি কাজী নজরুল ইসলাম , কমরেড মুজাফফর , সুভাস চন্দ্র বসু তাদের ডাকে আমরা সবাই ব্রিটিশ বিরুধি আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েছিলাম । আমাদের ছিল দৃঢ় মনোবল ।
সুলতান আসে , মামাজান আপনাদের খাবার তৈরি । বাড়ীর কর্তা
গিয়াস উদ্দিন সাহেব সায় দেয় যাও তোমার মামিকে বল সব তৈরি রাখতে ।
আচ্ছা খালেক ভাই জনগণের দুঃখ দুর্দশা অভাব গুলু নিয়ে আমাদের ভাবনার সময় এসেছে । তুমি আজ পাকিস্তান পার্লামেন্টের একজন জাঁদরেল মন্ত্রী । আমাগো দেশের গরীব অসহায় মানুষের জন্য
কি কিছু ভেবেছেন বা কোন পরিকল্পনা আছে কিনা ।
গিয়াস মিয়া রক্তের সাথে নাড়ীর যেমন টান আমারও দেশের মানুষের প্রতি এত টুকু মহব্বত । তুমি ২/৩ শত গরিব মানুষের একটা লিস্ট দাও আমি এদের লন্ডন পাঠাবার ব্যবস্থা করি । পরে ওদের মাধ্যমে আরও বেকার মানুষের কর্ম সংস্থান করা যাবে ।
উত্তম চিন্তা দ্বারা। আমি আজকালের মধ্য তা সংগ্রহ করব চলুন এবার পেঠ পুজা
করা যাক ।

২য় পাঠ
জমিদারদের অতাচারে অতিষ্ঠ জনগন । জমিদার দের অন্যায় নিরবে ওঁরা সহ্য করত নয়ত কেহ তাদের বিরুদ্ধাচরন করলে জমিদার রা সাধারন মানুষদের ধরে নিয়ে যেত । খুঁটির সাথে বেধে চাল চামড়া তুলে লবন লাগাত । মাথা ছিলে গুল ঢেলে
নেংটু করে বেইজ্জতি করত । মহিলাদের ধরে নিয়ে উপভোগ করে দাসি বাঁধি বানিয়ে রাখত । ঘর বাড়ী ভেঙ্গে দিত । ক্ষেতের পাকনা ফসল পশু বা সৌখীন জিনিস লুট করে নিয়ে যেত ।
সাদেক চৌধুরীর পত্র পড়ে বৈঠকে বসে আব্দুল রাজ্জাক চৌধুরী ও গিয়াসউদ্দিন মিয়া ।
রাজ্জাক ভাই এখন যদি এই সুযোগ হারাই ভবিষ্যতে মন্ত্রী খালেক মিয়ার নিকট আর কিছুই আমাদের চাওয়ার থাকবেনা ।
সেটা তো বুঝলাম গিয়াসউদ্দিন ভাই । কিন্তু মুল সমস্যা তো এখানে নয় ।জমিদার রা সাধারন প্রজাদের নিকট পাইক পেয়াদা পাঠিয়ে উল্টো বুঝাচ্ছে যে , আমরা নাকি যরযন্ত্র করে
সাধারন মানুষদের বিদেশ পাঠানোর কথা বলে ওদের সাথে প্রতারনা করছি । বিদেশ গিয়ে তারা নাকি আর দেশে ফিরতে পারবেনা ইত্যাদি ইত্যাদি ।
এখন উপায় কি ? আবার সাধারন মানুষদের বুঝানো যে এসব জমিদারদের ডাহা মিথ্যা কথা ।
গিয়াস মিয়া অনেক কেই বুঝালাম কিন্তু কেউ রাজি হচ্ছেনা। সবারই মনে ভয় । পরদিন জমিদার দের দুরভিসন্দি
হাজারও মানুষের কানে কানে রটে যায় । মন্ত্রী খালেক মিয়া এসব শুনে দেশের মানুষের প্রতি যার পরনাই দুঃখিত হলেন ।
তিনি সিলেট থেকে লোক পাঠালেন লন্ডনে । তিনি বললেন এলাকার মানুষ জমিদারদের মিথ্যাচারে বুঝলনা । ওরা যদি লন্ডনে যেতে রাজি হত তাহলে ভবিষ্যতে এই জায়গাটাই ২য় লন্ডনে পরিনত হত ।
পঞ্চায়েত গিয়াসউদ্দিন মিয়া প্রস্তাব রাখে “””””” রাজ্জাক ভাই খালেক সাহেবকে প্রধান অথিতি রেখে জনতার মঞ্চে জমিদারদের মিথ্যাচার এর জবাব দেয়া চাই নয়ত আমাদের কে মানুষ ভুল বুঝবে ।
যেই পরিকল্পনা সেই বাস্তবায়ন । ঐতিহাসিক বাদশাগঞ্জ খেলার মাঠে হাজারও জনতার ভিড় । মঞ্চে বক্তব্য রাখেন মন্ত্রী খালেক সাহেব । প্রিয় দেশবাসী আমি আপনাদের সেবায় নিয়োজিত । বড় কষ্ট করে বহু সংগ্রাম করে আজ আমি একজন মন্ত্রি । জমিদাররা এলাকার কোন মানুষ কেই উচ্ছ শিক্ষার সুযোগ দিতনা । কারন শিক্ষিত হয়ে যদি তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে বসে । তাই আমরা লুকিয়ে চাপিয়ে কলখাতা গিয়ে শিক্ষা অর্জন করে আপনাদের সেবার ব্রত নিয়েছি । আমরা ব্রিটিশ দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছি । জমিদার প্রথা এখন প্রায় বিলুপ্ত । আমরা এখন ব্রিটিশদের গোলাম নই জমিদারদের রায়ত নই । আমরা এখন মুক্ত । আমরা শিক্ষার আলো জ্বালায়ে দূর করব সমাজের সব রোগ । আমি বাদশাগঞ্জে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ঘোষণা দিলাম । আপনাদের সহযোগিতা ফেলে বাদশাগঞ্জু থেকে মোহনগঞ্জ নেত্রকোনা মহাসড়ক প্রতিষ্ঠিত হবে । ইত্যাদি ইত্যাদি । জমগন খালেক সাহেবের অগ্নিভাষন শুনে সব রুষে উটে এবং জমিদার বাড়ীর বাজার বাংলো সব পাথর মেরে আগুন জ্বালিয়ে ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয় । জমিদারের দর্প অহংকার সেই সাথে পতন হয় ।
গিয়াসউদ্দিন মিয়া , আ রাজ্জাক চৌধুরী প্রমুখ নেতৃবৃন্দ মন্ত্রী খালেক মিয়ার সহযোগিতায় ধিরে ধিরে এলাকার উন্নয়নমুলক কর্মকাণ্ডে মনোনিবেশ করে ।

স্বাধীনতার স্বপ্ন ।। গল্প
************


সুনামগঞ্জ জেলার কংস নদীর তীর ঘেঁষা ধরমপাশা একটি থানা শহর । উত্তরে হিমালয় পাহাড় , বনাঞ্চল হাওড় বেষ্টিত লোকালয় যেন এক অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি ।।
কংস নদীর দক্ষিন অংশ থেকে জেলা শহর নেত্রকোনা পর্যন্ত মুল রাস্তা বিশ্রিত । আবার মোহনগঞ্জ থেকে নেত্রকোনায় রেল যোগাযোগ বিশ্রিত সারাদেশের সাথে ।। ৭১ এ পাক হানাদার বাহিনী যখন সারা দেশে চালায় নারকীয় বর্বর হত্তাযজ্ঞ । তখন ছাত্র জনতা , কৃষক শ্রমিক সহ সর্বস্তরের জনতা দেশের স্বাধীনতা রক্ষায় মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয় ।।
গ্রামের নাম রাজনগর , ঘরের দাওয়ায় বসে আছে মাতবর ফজলুল হক । চাকর আবুল হোসেন প্রতিদিনের মত হুক্কায় তামাক সাজিয়ে দেয় , মিয়া ভাই হুনলাম দেশে মেলেটারি আইছে , হমানে মানুষ কুত্তার লাহান গুলি কইরা মারতাছে
যদি এইহানে আইয়ে তয় আমরা কি বাচুম , আমাগো কি অইব ।
ঘর থেকে যুবতি মেয়ে কথার মধ্য বাগড়া দেয় । কি আর অইবেক , মরন ছাড়া আর গতি কি ।
এবার মৌনতা ভেঙ্গে বৃদ্ধ গলা সাধে , হুকায় ঠান দেয় , শব্দ আসে গর গর ।। হ্যারে
মা দেশে শকুন আইছে এরা যা ইচ্ছা তাই করতাছে । রক্ত চুষার মত হমানে মানুষ মারতাছে । বাড়ি ঘর জালাইয়া দিতাছে । আমি কই কি মা , তোমরা আবাতত আজকেই নানা বাড়ি চইলা যাও ।
বাজান এরা কি এইহানেও আইব ্‌ হা মা যা বললাম তাই কর । এখানে আসলে আর কারও নিস্থার নাই ।
আবুল তুমি আজকেই এদের লয়ে রয়ানা হও । বাজান তুমি যাইবানা , না মা , আমার গুরুত্ব পূর্ণ মেলা কাজ । না বাজান তুমি এইখানে নিরাপদ নও, । সে আমি দেখব এবং আমি অবশ্যই তোমাদের সাথে মিলিত হব ।। ওরা পরিবারের বেশ কয়জন সদস্য সহ চলে যায় পাহাড়ের পাদদেশ ঘেরা গ্রাম মহেশ খলায় । যুদ্ধের এক পর্যায়ে হাজার হাজার মানুষ ছুটে শহর ছেড়ে গ্রামে ।।
মৃত্যুর ভয়াল খবরে মানুষ আতঙ্কিত । বাঙালী মুক্তিযুদ্ধাদের প্রতিরোধ সংগ্রাম আর পাকিস্থানিদের সাথে সংঘর্ষ একের পর এক লোকালয় থেকে সব সময় আসে গুলির আওয়াজ ।ফজলুল হক সবে বেরিয়ে পড়ে ঘর ছেড়ে । , ৮ / ১০ জন লোক আসে তার বাড়ী । তাদের আলখাল্লা ও গেরুয়া বেশ বসন অতি সাধারম । আবার দুএকজনের নিকট দ৩খা যায় বন্ধুক । ঐ লোক দের সর্দার ছালাম দেয় তাকে । ছালামের উত্তর দেয় বৃদ্ধ । কি খবর আরমান হায়াত । আমি তোদের অপেক্ষাতেই ছিলাম এতক্ষন আর তোরা যথা সময়ে উপস্থিত বেশ এখন জরুরী কিছু বল ।
আজ সাবুচান ভাই যে সংবাদ নিয়ে এল তাতে আমাদের মুহূর্ত ক্ষন বিলম্ব করা
উচিৎ নয় । শুধু আপনার পরামর্শের অপেক্ষায় ।।
আচ্ছা সাবুর সংবাদ টা তাহলে সবিস্তার খুলেবল ।
স্যার , পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী মোহনগঞ্জে ঘাটি গেড়েছে । টিক আলকদিয়া গ্রামের ওপারে । এখানে বধ্যভুমি বানিয়ে নির্বিচারে হত্তা করা হয়েছে মোহন গঞ্জ এর বিশিষ্ট নেতা বুদ্ধিজীবী সহ অনেক সাধারন মানুষ কে । ওরা সম্ভবত আজ কালের মধ্যই আমাদের ধরম পাশায় কংস পেরিয়ে চলে আসবে ।।
পায়চারি করে ফজলুল হক । সকলের উদ্দেশ্য তিনি বলেন । বেশি সময় নেওয়া যাবেনা আমাদের ১১ জনের মধ্য বন্ধুক মাত্র ২ টি
আমাদের এবারের মিশন হবে খুবই জুড়াল । গেরিলা আক্রমন করা চাই খুবই সাবধানে ।
কংশের সব যোগাযোগ বন্ধ করে দাও । আজ রাতেই আমরা সংঘটিত হয়ে একটা শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলব ।
আমাদের সাথে সদ্য নতুন ট্রেনিং প্রাপ্ত বেশ কিছু তরুণ আজকেই যোগ দেবে ।।
জি স্যার ।।
কথাগুলু বলে একটু দম নিলেন গেরিলা কমান্ডার ফজলুল হক ।। মুক্তিযুদ্ধা আজম খান বলল
স্যার এদের চর রাজাকার , আলবদর আলছামস রা গ্রাম থেকে পালিয়ে লুকিয়ে
মুক্তি যুদ্ধাদের গোপন সংবাদ ক্যাম্পে পৌঁছে দেয় । টাকার বিনিময়ে
নারী দের সম্ভ্রম পর্যন্ত এদের হাত থেকে নিস্তার পায়না ।।
রাগে জ্বলে উটে গেরিলা কম্যান্ডার এর দুটি লাল চক্ষু ।।
না না আর ওদের ক্ষমা নয় । এরা দেশের শ্ত্রু মানবতার শ্ত্রু এদের কে যেখানে পাওয়া যাবে সেখানেই সব কয়টা হারামির গাঁয়ের চামড়া ছিলে লবন লাগাতে হবে ।। এরা মানুষ নয় এরা
মানুষ রূপী এক একটা জানোয়ার ।।
সবাই কথা কয়টা হজম করে আবার মাথা তুলে দ্বিগুণ রুষে নেতার দিক নির্দেশ এ এগিয়ে যায়
সম্মুখ পানে । আজ সবারই চোখে স্বাধীনতার অবারিত স্বপ্ন বুকে অজেয় সাহস ।।

২ ,

গেরিলারা ছদ্দবেশ ধারন করে । কেহ চাষা , লাঙ্গল কাঁধে আর কেহ দিন মজুর , অথবা পথের ভিখারি । এক পেরিওয়ালা নির্ভয়ে ডুকে পড়ে পাকিস্থানি হানাদার ক্যাম্পে । এক পাকিস্থানি নওজোয়ান রক্তচক্ষু শাসিয়ে বন্ধুকের বেয়নেট চেপে ধরে তার গলায় ।।
হল্ট হল্ট , পিচ্ছি
কামুশ ,
পিচ্ছির বুকটা প্রানভয়ে ধক করে উটে । অজানা আশংকায় থর থর করে কেঁপে উটে তার সারা গাঁ ।। তবুও দমে যায়নি সে , চিৎকার দিয়ে বলে স্যার কলা কিনবেন , কলা ।। বস্তুত এক পাকনা কলার
কাঁদি তার মাথায় ,
কলা , হা হা হা
কটাক্ষ কুটিল হাসি দিয়ে একটা কলা ছিড়ে নেয় খান সেনা আরও সঙ্গি এসে জুটে সেই হাসির সাথে ।।
একেক জন একেক টা কলা মুখে পুড়ে আর হাসে । হা হা হা । কিছুটা
ভয় কাটে সুমনের । এবার তার জানা চাই, ক্যাম্পের ভিতরে কি আছে । তড়িৎ চোখ বুলায় এবং কলা কিনবেন কলা কিনবেন বলে চেচায় । সবাই কলা গিলছে । সুমন বলল স্যার আরও লাগবে ।
নেতা গোছের লোকটি এবার চিৎকার করে উটে বুনু ষাঁড়ের মত । হল্ট হল্ট শালা বাঙাল পিচ্ছি এদেক মে আয় ।।
আবারও ধক করে উটে সুমনের বুক । ইশ কলার দাম চাওয়া টা মনে হয় উচিৎ হয়নি ।।
বিরাট বড় ইয়া মুছ ঝুলফির মত নাকের ডগায় ।।
লোকটি চোখ বড় বড় করে তাকায় তার খুন রাঙা ব্যাঙ্গ হাসি যেন সারা হল ঘর থরথর করে কাঁপে ।। শালা বাঙাল তুম মুক্তি হ্যায় ।
বন্ধুকের বাট দিয়ে টাঁস করে আঘাত করে পিচ্ছি সূমনের মাথায় ।
জ্ঞান হারিয়ে লুটায়ে পড়ে সে মাটিতে ।।
এবার বুট দিয়ে তার ঘিলু তে আঘাত করার জন্য যখন পা উচু করল টিক তখন তার জুনিয়র অফিসার এসে বলল স্যার এক হুর মিলতা হায় ।। বহুত আচ্ছা হে , আওরৎ হুর
হুর , তুম বহুত সাচ্ছা আদমে হায় ।
হুর এর সন্ধানে ছুটে নারকীয় যালিম অশ্লিল এক জানোয়ার তার যজ্ঞ কক্ষে ।।
অতর্কিত আক্রমনে দিশেহারা পাকিস্তানী হানাদার । কলা খেয়ে অনেক আগেই ঘুমের ঘুরে অচেতন বেশ কয়জন ।
যারা কৃষক শ্রমিক আর বিক্ষুক বেশ ধারন করে আশে পাশে ছিল , তারা সবাই এখন সসশ্র মুক্তিযুদ্ধা । তাদের গাঁয়ে জীর্ণ বসন , আরেক দল পালকী লয়ে বড় যাত্রী বেশে বধু নিয়ে যায় তাদের সামন দিয়ে নেছে গেয়ে আর আনন্দ উৎসবে মেতে উটে । পাকিস্তানি পাক সেনারা সে আনন্দে মজা পায় । বউ কে ধরে নিয়ে যেতে চাইলে অপ্রস্তুত খান সেনারা মুহূর্ত পরিমান সময় পায়না । গেরিলাদের গুলির আঘাতে টাঁস টাঁস করে মারা পড়ে সব কজনখান সেনা ।।
৩ ,

সেতু পেড়িয়ে গ্রামের দিকে যাবে খান সেনারা । হাজার হাজার মানুষের লাশ ফেলে । রক্তের বন্যায় দ্বারীয়ে পাকিস্থানি পশুরা আজ জানোয়ার ।
সুমন সমবয়সী অনেক বালক কিশোর দের নিয়ে বুদ্ধি করে । কলাগাছ আর জারমুনি বা কচুরি পানা দিয়ে নদী পেরুনোর রাস্তা বানায় ।গ্রামের সমস্ত নারী শিশুদের আগেই সরিয়ে নেয় তারা নিরাপদ স্থানে ।।
পাকিস্থানি সেনারা গাড়ী লয়ে যেই রাস্তা পেরুনোর উদ্দেশ্য এগোয় অমনি সব নদীর মধ্য ডুবে হাবুডুবু খায় আর মুক্তিবাহিনী অতর্কিত হামলা চালায় ।।

সুমন এমন বহু অপারেশন সার্চ এ অংশ নেয় এবং সাফল্যার সাথে প্রত্যক টা মিশনে সে ছিল দূরদর্শী ।।
৮ ই ডিসেম্ভর পাক সেনাদের গুলিতে নিহত হন গেরিলা কমান্ডার ফজলুল হক । তাকে কবরস্ত করে মুক্তি বাহিনীর সদস্যরা কটুর পন করে । রক্ত শপথ লয়ে শেষ লড়াই এর জন্য পাকিস্থানি ক্যাম্পে হামলা চালায় মুক্তি গেরিলারা ।।
রাস্তায় বড় বড় বৃক্ষ কপিকলে আটকানো আংটায় ঝুলিয়ে রাখে এবং খান সেনারা এদিক
দিয়ে যখন আসে তখন বৃক্ষের ওপর প্রান্ত থেকে রশি কেটে দেয় । সাথে সাথে খান সেনারা ভারী গাছের চাপায় পড়ে এক্কেবারে মাটিতে পিশে যায় ।।
একের পর এক হামলায় অনেক পাকিস্থানি হানাদার এর লাছ পড়ে থাকে শিয়াল কুকুরের ভক্ষনের জন্য । মুক্তিযুদ্ধাদের প্রতিরোধে পিছু হটতে থাকে বাকি পাকিস্থানি সেনারা ।।

সবার সাথে পিচ্ছি সাহসি সুমন । তার হাতে এখন স্টেনগান । আগে প্রাথমিক সময়ে তার কোণ অশ্র ছিলনা । সে গেরিলা কমান্ডার ফজলুল হকের সাথে থাকত এবং নানা খবরাখবর এক স্থান হতে অন্য স্থানে সাহসের সাথে তড়িৎ পৌঁছে দিত ।। বর্তমানে অনেক সঙ্গি সাথি কে সে হারিয়েছে যুদ্ধে । সে আজ ৩০ জনের গেরিলা দলের কমান্ডার ।।
আজ ক্যাম্প থেকে একটা মেয়েকে উদ্ধার করল ওরা ।।
পাশবিক নির্যাতনে মেয়েটির অবস্থা খুবই আশংকা জনক । জ্ঞান ফিরে এলে সুমন তাকে দেখে ভুত দেখার মত চমকে উটে ।
তুমি কনক আপু না ।।
হা , তুমি
আমি সুমন , ঐ যে ফুজলুল হক কাকার মেয়ে রুমেনা , আপনি তার বান্ধবি না । হু
তা তুমি আমাকে চিনলে কেমন করে , কেন ঐ যে মহেশ কলার মেলায় আমরা
যবনভোজনে অংশ নিয়েছিলাম মনে পড়ে ।।
ও হা তাই ।।
আপু তুমি সুস্থ হওঁ , আমাদের আরও অনেক কাজ বাকি ।।
সুমন ভাই আমার , আমি সুস্থ হলে আমাকে তোমাদের মত ট্রেনিং শেখাবে ।।তোমাদের সাথে নেবে , অন্তত যুদ্ধাহত যারা
তাদের সেবা তো করতে পারব ।।

অবশ্যই আপু তোমার সব ইচ্ছাই আমরা যথাসাধ্য
মিটাতে চেষ্টা করব । সুমনের নয়নে তখন অশ্রু আর তার সহপাঠীদের বুকে জ্বলে প্রতিশোধের আগুন । তাদের বুকে কঠিন পন ।।
এক বিন্দু রক্ত থাকতে স্বাধীনতা পশুদের নিকট ভুলুন্টিত হতে দেয়া যাবেনা ।।
ইথারে ভেসে আসে স্বাধীন বাংলার গান
মোরা একটি ফুল কে
বাচাব বলে যুদ্ধ করি , মোরা একটি '''''''''''''''''

দেশ হানাদার মুক্ত হয় ১৪ ই ডিসেম্ভর ।। ঘরে ফিরে মানুষ / সারা বাংলায় তখন লাছের স্তূপ । যারা বেচে আছে তাদের বুকে করুন আর্তবিলাপ স্বজন হারানোর ব্যাদনা। অনেক মুক্তিকামী মানুষেরা নির্বাক নিজ পরিবারের সদস্যদের হারিয়ে । কেহ পাগলের মত খুজে ফিরে তাদের হারানো স্বজনদের । কেহ একটি বিকৃত লাছের ভিড়ে খুজে স্বজন হারাদের প্রিয়মুখ ।
কিশোর সুমন রা স্বাধীন বাংলায় আবার মুক্ত মানুষের প্রান চঞ্চলতায় ফিরে এসেছিল কিনা সে কথা আজও অজানা ।।
সত্য ঘটনার ছায়া অবলম্ভনে ।।
এম ,জি, আর মাসুদ রানা
১ । ১২ । ২০১৩ ং
রচনা ঢাকা মিরপুর ১২
রাত , ১১ ঘটিকা ।।









একটি ঝরা ফুল । গল্প
২৪ শে জুন, ২০১৪ রাত ৯:৪৯ |
void(0);
একটি প্রেমের ফুল

********* এক
জুঁই আর সাগর সহপাঠী । প্রতিদিন একই কলেজে ওদের দেখা হয় ।
চেনাজানা স্কুল জীবন থেকেই ।
জুঁই ভাঁটি অঞ্চলের মেয়ে । তাদের গ্রামগুলু বর্ষাকালে মনে হয় সাগরের মধ্য দ্বীপের মত । আর সাগরের ঢেউ কেটে কেটে ইঞ্জিন চালিত নৌকা দিয়ে এখানে ওখানে যেতে হয় ।
ওদের প্রথম কাছাকাছি হবার মুহূর্তে ঘটনা
একদিন সাগর বর্ষাকালে স্কুলে আসে । পথিমধ্য নামে ঝমঝম বৃষ্টি । ছাতা নেই ভিজে একেবারে টুই টম্ভুর । সাগর অসহায়ের
মত এদিক ওদিক তাকায় মনে মনে ভাবে বইগুলুকে যদি বৃষ্টির হাত থেকে রক্ষা করা যেত্ , যদি একটা উপায় মিলত ।
হটাৎ একটা মেয়েলি ডাকে চমক ভাঙ্গে তার । পাশ ফিরে দেখে জুঁই তার মাথার উপর লেডিস ছাতা ।
সাগর এস আমার ছাতার নিচে অন্তত তোমার বইগুলু ভিজবেনা । যদিও একই ক্লাশে পড়ে এর আগে কখনও জুঁই এর সাথে কথা হয়নি সাগরের ।
বৃষ্টিতে ভিজে সাগর এখন রিতিমত যুবুথুবু । জুঁই এর ছাতা
একসময় সাগর কে বৃষ্টির উৎপাত থেকে আড়াল করল ।
সাগর এই বৃষ্টির দিনে তোমার ছাতা ছাড়া বের হওয়া উচিৎ হয়নি । অন্তত বইগুলির কথা তো আপনার চিন্ত৬য়া করার উচিৎ ছিল ।
ছিলই তো , কিন্তু সকালে দেখলাম আকাশ একদম পরিস্কার ।
এমন ভুল করা আপনার উচিৎ হয়নি , এই যে ক্লাশের বইগুলি প্রায় ভিজেই গেছে , ছাতার অভাবে কতবড় ক্ষতি হল ।।
আসলে আমি একটা ইয়ে মানুষ । ছাতা হাতে রাখলে কোথায় আবার ভুলে ফেলে যাই খেয়াল থাকেনা । এর আগে ছয় ছয় টা ছাতা হারিয়ে ফেলেছি ।।
টুকটাক কথা বলতে বলতে ওরা এগিয়ে যায় স্কুলের দিকে ।
সাগর জুঁই এর শরীর থেকে গন্ধ পায় । আচ্ছা জুঁই তুমি কি সেন্ট
ব্যাবহার কর ।
কই নাত ।
তাহলে
এবার জুঁই মুচকি হাসে ।
সাগর খুজে পায় সেই মধুভরা হাসিতে রাজ্যর বিস্ময় ।।
দুই
************
সাগরের গ্রাম মুল শহর থেকে ২ কি, মি দূরে । গ্রামের কাঁচা মেঠূ পথ পেরিয়ে যে ছোট নদী , সেই নদীর ওপারে
কলেজ ।
নদীর পাড়ে প্রতিদিন মিলিত হয় সাগর আর জুঁই ।
জুঁই এর জন্য সাগরের জীবনটাই পাল্টে যায় । সাগরের বাবা দিন
মজুর , সংসারে ৬ জন সদস্য ।
একসময় মেট্রিক পরিক্ষা দিতেই তার দায় ছিল । জুঁই লক্ষ্য করল
ইদানিং সাগরের মন খারাপ ।
জুঁই , এই সাগর ইদানিং দেখছি আগের মত চঞ্চল হাসিখুশিটি তুমি নেই , কেন কি হল আপন হিসাবে কি আমাকে খুলে বলা যায়না ।
কেন জানবেনা, হা তাই তো ।
চল ঐ যে কদম গাছ টা আছেনা এর নিচে গিয়ে বসি ।
ওরা খুব কাছাকাছি হয় ।
জান জুঁই আমার আর পড়ালেখা হবেনা
কেন , কেন
আমার পরিবার থেকে লেখাপড়ার কোন খরচ দেবেনা ।
তুমি তো স্কুলের ব্রিলিয়ান্ট ছাত্র , কেন দেবেনা ।।
সত্যি বলতে কি আমরা খুবই গরিব , আর গরিব মানুষের লেখাপড়ার এত উচ্ছ আশা থাকেনা ।
ভেরি সরি সাগর , কিন্তু তোমাকে বসে থাকলে চল্বেনা , আমি যদি
তোমার কিছু উপকারে আসি আমার দান কি তুমি ফিরিয়ে দেবে ।
সেটা আবার কি রকম জুঁই
এই ধর আমি তোমার ফ্রম ফিলাফের টাকাটা দিয়ে দিলাম । তুমি
পাশ করে একটা কিছু করে না হয় আমার টাকাটা .........।
থাক থাক আর করুণা করতে হবেনা ।
জুঁই এর গাল ফুলে গেল , সাগর দেখল সে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে আছে ।
আরে এযে দেখলাম না চাইতেই বৃষ্টি , আচ্ছা টিক আছে আমরা না হয় এক সাথেই পরীক্ষা দেব ।
জুঁই তুমি কি জান লক্ষ্মীটি , আমার ছোট ছোট তিন ভাই বোনদের গ্রামে টিউশনি করে ওদের লেখাপড়া চালিয়েছি । দুই বোন সমাপনি পরিক্ষায় ১ম হয়েছে আর ভাইটি এইটে পড়ে ।।
জুঁই এবার চিৎকার করে বলল এজন্য তুমি সেরা ।
প্রমিজ আই লাভ ইউ সাগর ।
সাগর এর হাত জুঁই এর কপাল স্পর্শ করল । মুখ ফুটে বের হল একটি কবিতা ।।

************
হাত বারিয়ে দাও গো প্রিয়
একটু ছুঁয়ে যাই
মন হারাবার দিন যে এল
কোথায় খুঁজি টাই ।
পাহাড় , সাগর , অরন্য , মাঠ
যেথায় যত দেখি
সব খানেতেই ভেসে বেড়াও
তুমি হয়ে আমার আঁখি ।
নীল দিগন্ত ছুঁয়ে তুমি
কাল মেঘে ফিরে আস
শিশির ঝরা ভোরের মত
আমায় কত ভালবাস ।
সন্ধ্যা তারা হাতছানি দেয়
দেখি তুমি জাগ সেথা
আপন জেনে নাও গো টেনে
এই মনে আর দিওন ব্যাথা ।।

কদম গাছ হতে কদম ফুলের রেনু পড়ে ওদের গাঁয়ে ।।
দুটি হলদে পাখি উড়াল দেয় সোনালী ডানা মেলে দূর অজানায় ।
***********
তিন

সাগর আর জুঁই দুটি যেন কলেজ এর প্রান । সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান , নাটক , কলেজের নবীন বরণ , বৈশাখী মেলা , সব ক্ষেত্রেই তাদের কে অগ্রে পাওয়া যায় । এবার জুঁই কলেজের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্য নাছ এবং কবিতা আবৃতি তে পেরেছে ১ম পুরস্কার আর সাগর এর গানের গলা চমৎকার । সেও পেয়েছে ১ম
পুরস্কার ।।
অনুষ্ঠান শেষে দুজন হাত ধরাধরি করে সেই কদম গাছটার তলায় গিয়ে বসে ।
জুঁই ডাকে ।
সাগর
হু
এই যে আমরা যখন পুরস্কার আনতে গেলাম দেখলি কত মানুষ আমাদের দিকে দিকে হা করে তাকিয়ে ছিল ।
তাই ত মনে হয় গিলেই খাবে ।
আচ্ছা সাগর তুমি কি আমাকে ভুলে যাবে
হটাৎ এ প্রশ্ন কেন জুঁই ।
না এমনিতেই ।
ধর বিধাতা যদি চায় চিরদিন পাশে থাকব আর যদি কপালে অন্য কিছু লেখা
থাকে হয়ত হারিয়ে যাব অন্য কোন অজানায় ।
চিৎকার করে জুঁই, না সাগর আমি বেঁচে থাকতে তোমাকে আমি হারিয়ে বাচতে পারবনা ।
তুমি আমাকে বুঝি খুব বেশি ভালবাস জুঁই ।
জুঁই হটাৎ পাগলের মত ছুটে যায় নদীর পাড়ে বেড়া দেওয়া কাঁটা তারের পাশে ।
হাত ডুকিয়ে দেয় কাঁটায় । হাত কেটে রক্ত ঝরে । সাগর ব্যাপার টা লক্ষ্য করে
চিৎকার জুড়ে ওর হাত ধরে ফেলে । ইশ একাজ কেন করতে গেলে জুঁই ।
অনেকটা কেটে গেছে ।
আমি রক্ত দিয়ে আমার বুকে লিখে রাখব তোমার নাম ।
রক্ত গড়িয়ে পড়ছে দেখে সাগর জুঁই এর হাতটা নিয়ে নিজের মুখে জিব্বা দিয়ে
চেটে চেটে পরিস্কার করে ।
প্রিয় তোমার পবিত্র রক্ত আমি কোথাও ফেলে দিতে পারিনা তাই হজম করে
নিলুম ।। এবার চল লক্ষ্মীটি কংসের দ্বারে গিয়ে কিছুক্ষন হাওয়া খেয়ে আসি ।
কংস নদীটি ধরম পাশা উপজেলা সদর ছুঁয়ে চলে গেছে সুদুর পুবে এবং একসময় ভাটি বাংলার হাওড় বাওর এলাকা ছাড়িয়ে মিশেছে সুরমার সাথে ।
প্রতিদিন নদী পথে লঞ্চ , ইঞ্জিন চালিত নৌকা সহ নানা রকম যান বাহন চলে । নদীর জল কেটে কেটে যান গুলু চলে দেখতে ওদের ভালই লাগে ।।
জুঁই দেখ দেখ ঐ যে তোমাদের নৌকা এসে গেছে এবার বিদায় নিতে হবে ।
আরে না আমাদের নৌকা আসবে আরও ঘণ্টা খানেক দেরি করে ।
হয়ত আমারই চোখের ভুল , তুমি এখানটায় বস আমি না হয় কিছু বাদাম কিনে আনি ,সময়টাও ভাল কেটে যাবে । কলেজ ছুটির পর প্রতিদিন জুঁই কে
সাগর নৌকায় তুলে দিয়ে সে নিজে বাড়ীর দিকে পা বাড়ায় ।
বাদাম আনতে গিয়ে ফিরে এসে দেখে ৩/৪ টা পোলা পান জুঁই কে ঘিরে ।
জুঁই সাগর কে দেখেই গুমরে কেঁদে ফেলে । আরে কাদছ কেন কি হয়েছে সেটা বল তো ।
ঐ যে ওরা আমাকে অপমান করে কথা কয় । কি কয়
কয় হেরার সাথে নাকি আমার যাওয়া ভাল ।
সাগর গর্জে উটে , কুত্তার বাচ্ছারা তগ এত্তবড় সাহস । পাশেই ছিল একটা
কাটের চেলা সেটা দিয়ে ধুম ধাম পিটায় ।
ঘটনা কি , হইছে কি জনগনের হইহল্লায় বখাটেরা পালায় ।।
এক বখাটের আঘাতে বাম হাতে ছুট পায় সাগর ।।
জুঁই আর সাগর একসময় সরে আসে এখান থেকে ।

চার

সাগর শেষতক কোন উপায়ান্তর না পেয়ে হকারের চাকরি নেয় । সময় মত সকাল বিকাল পত্রিকা বিক্রি করে । এই ভাবে কষ্টে সৃষ্টে কোন ভাবে সংসার চালায় । বৃদ্ধ বাবা আগে যৎসামান্য রোজগার করত এখন
টাইপয়েটে ভুগছে ।
বাবার চিকিৎসার টাকা জুগার করবে কি করে । এখন সে মহাভাবনায় পড়ে তার একমাত্র সাইকেল টি বিক্রি করে দেয় ।
তার বই টেবিল সখের জিনিস সব বিক্রি করে বাবাকে ডাক্তার দেখায় ।
বাবা রমজান আলী এখন সুস্থ কিন্তু সে অসুস্থ ।
তার চাচাত ভাই ফাহিম কাঠ মেস্তরি । ফাহিম একদিন এসে বললে কি হে সাগর , এভাবে বসে বসে ভাত গিললে তো খাবার আসবেনা , আমার কাঠের
দোকানে আয় , মাঝে মধ্য কাজ কর । কিছু পয়সা পাতি মিলবে আর কাজও
শেখা হয়ে যাবে ।।
লেখা পড়া তো কতজনই করেছে , দেখছি চাকরি আজ সোনার হরিন ।
যে এর পিছনে হাঁটবে তার ধংশ ছাড়া আর কোন পথ খোলা নাই । আই এ
বিয়ে পাশ দিয়েও লক্ষ লক্ষ টাকা লাগে ঘুষ । আর গরিবের জন্য তো ফেলনা
ছাড়া কিছুই নয় । যার উপড়ে মামা চাচা খালু আছে হেরার চাকরিও আছে ।
ফাহিম ভাইয়ের কথাগুলু মনের মধ্য গেঁথে ফেলে সাগর , সেদিন থেকেই কাঠের মিশ্রি হিসাবে কাজে লেগে যায় সে ।।
তিন চার মাস কাজ করে ভালই উপার্জন হয় তার । কাজের ফাঁকে ফাঁকে যখন
তার জুঁই এর কথা মনে হয় , বুকটা হাহাকার করে উটে ।
ফাহিম ডাকে সাগর , হাতল টা লইয়া আয় তো
জি আসছি ভাইয়া ।
অলক্ষ্য যেই পা বাড়াবে অমনি একটা কাটে বিঁধানো ঘাতক লোহা ডুকে যায় তার বাম পায়ে ।
রক্তের বন্যা নামে তার পা থেকে , সাগর কে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় । তিন
চার মাস পড়ে থাকে হাসপাতালের ব্যাডে ।
উন্নত চিকিৎসার জন্য সাগরকে এক সময় নিয়ে আসা হয় ময়মনসিংহ চড়পারা হাসপাতালে ।
ডাক্তার পরীক্ষা নিরীক্ষা করে রায় দেয় তার পায়ে সেফটি হয়ে গেছে । পা কেটে ফেলতে হবে ।
একদিন জুঁই এর হাতে গিয়ে পৌঁছে সাগরের চিঠি ।
জুঁই ,
তুমি পবিত্র , তুমি মহৎ , তোমার ভালবাসা আমার হৃদয়ে ফুটিয়েছিল আনন্দ কুসুম । কিন্তু আজ আমি জীবনের যুদ্ধে এক পরাজিত সৈনিক ছাড়া আর কিছই নই । আমি না পারলাম তোমার কথা রাখতে আমি না পারলাম তোমার
নিরেট ভালবাসার মর্যাদা দিতে ।
আজ আমি ভাগ্যর নির্মম পরিহাসে না ফেরার দেশের এক যাত্রি । যদি আবার দেখা মিলে প্রিয় তোমাকে দেবার সম্ভল করে রেখেছি কিছু সঞ্চিত অশ্রুকনা । আর যদি দেখা না মিলে তবে সেই কদমের গাছ হতে আমার সমাধিতে এনে দিও কিছু পুস্প মালা । প্রিয় আমি শুধুই তোমার ক্ষমার পূজারী । ইতি
সাগর
চিঠি টা পড়ে মাথা ঘুরে পড়ে গেল জুই
জুই এর মামি এসে ধরল , আরে কি হল আবার পাগলিটার ।
এক সপ্তাহ পর জুই তার মামাকে নিয়ে এল শিং পুর গ্রামে । সাগর দের বাড়ীতে ।
নিস্তব্দ নিরবতা বাড়ীতেই।
এক মধ্যবয়সি মহিলা উঠানে , বোবাকান্নায় তার বুক যেন ফেটে যাচ্ছে , জুই বলল আনটি সাগর কোথায় ।
একটা অজানা আশংকায় কেঁপে উটল জুই এর মন ।
এবার মধ্যবয়সী মহিলা নদীর দ্বারে আঙ্গুল তুলে দেখিয়ে বলল, মারে আমার
সাগর চিরদিনের জন্য ঘুমাইয়া গেছে , আমি কতবার ডাকলাম সাগর বাবা
রাগ করিছ না , না খাইয়া ঘুমাইয়া গেলে যে শরীরে অসুখ অইব ।
ঘর থেকে বের হল সাগরের বোন শিলা শিপ্লু আর ভাই নহর
নহর ডাকে ,নিশ্চই আপনি জুঁই আপি ।
ভাইয়ার পায়ে সেফটি হইছিল সে খবর এক সপ্তাহ আমরা গোপন রেখেছিলাম ।
কিন্তু কি করে যেন জেনে যায় সে পরের দিনেই সাগর ভাইয়া গলায় রশি দেয় ।।
জুঁই প্রতিবছর আসে সাগরের সমাধিতে ফুল দিতে । তখন তার গণ্ড দেশ বেঁয়ে পড়ে টুপ টুপ বৃষ্টির মত লোনা জল ।।
একটা পাথরে খোদাই করে জুঁই লিখল
পূর্ণ প্রেমের ফুল দিয়ে অনলে সাজালাম হৃদয়বাসর
আজ কেন তুমি অন্তহীন গন্তব্য বাধলে এ সমাধির ঘর ।




জীবন মৃত্যুর মাঝামাঝি , গল্প
০২ রা আগস্ট, ২০১৪ সকাল ৮:৫২ |

জীবন মৃত্যুর মাঝামাঝি ।। গল্প
***********
সাগর আর মিলির বিয়েটা হয়েছিল প্রেমের মাধ্যমে । মিলির সাথে সম্পর্কটা কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলনা সাগরের বাবা ছমিরউল্লা । তাই পালিয়ে বিয়ে করে ওরা । একটা ছোট খাট বাসা বাড়া নিয়ে ওরা শহরেই থাকে । সাগর বিয়ে পাশ করে একটা এঞ্জিও তে কাজ করে আর মিলি দুচারটা ছাত্র পড়ায় । ভালই কাটছিল ওদের সাংসারিক দিনগুলি ।
এক বছরের মাথায় ওদের ঘর আলোকিত করে জন্ম নেয় তাদের সন্তান । নাম রাখে সজীব । সাগর ডাকে “””
সজীবের মা শুনছ
কেন কি হল “”””” আমি তো রান্না ঘরে ।
তোমার ছেলে আমার পাঞ্জাবিটা শীষ দিয়ে নস্ট করে ফেলল যে ।
কি বললে ছেলে শুধু আমার তোমার নয় । আজ থেকে সব কিছুর অংশিদার তুমি । আজ শিষ দিল কাল গায়ে ইয়ে করবে ।
আচ্ছা সোনা এবার আমায় মুক্তি দাও । আমাকে আবার এক্ষুনি বেরুতে হবে ।
কোথায় যাবে শুনি । তোমার তো আর মনে থাকেনা । আগামী শুক্রবার আমাদের বাবুর প্রথম জন্মবার্ষিকী কিন্তু । ঘটা করে অনুষ্ঠান করব ।
তাই তো আমার একদম মনেই ছিলনা ।
ও হা বলতে ভুলেই গিয়েছিলাম , আগামীকাল আমাকে একটু চিটাগাং যেতে হবে । রাতের ট্রেনেই ফিরব । ওখান থেকে ফিরে বাবুর জন্মদিনের ব্যাপারটা
দেখব ।
তুমি বিয়ের পর কেমন হয়ে গেছ শুধু কাজ নিয়ে পড়ে থাক । আমি বলি কি শুন , তোমার সাথে আমাকে চিটাগাং বেড়াতে নিয়ে যাবে । দূর পাগলী আগে অফিসের কাজ সেরে নেই , সময় মত সে আশাও আর অপূর্ণ থাকবেনা ।
সাগর চিটাগাং এর উদ্দেশ্য রওয়ানা দিল তার সাথে ছিল আরও দুতিন জন ।
অল্পের জন্য ট্রেন মিস করে বাসে চড়ে ওরা রওয়ানা দিল । চিটাগাং মুল শহর পেরিয়ে পাহাড়ি চড়াই উত্রাই রাস্তা । যে কোন মুহূর্তে মনে হয় এই বুঝি বাস উল্টে একদম খাদে ।
কয়েকবার এমন হল যে বাসের সবাই রিতিমত আতংকে । ব্যাগ থেকে পত্রিকাটা বের করে পড়ার মনোযোগ দিল সাগর । প্রথম পাতায় শিরোনাম , নিয়ন্ত্রন হারিয়ে বাস উল্টে খাদে , নিহত ৭ / আহত ৪০ । সাগর এর মনে ভয় জাগল । মুহূর্তে মিলি এবং বাবুর মুখটা বারবার চোখের পর্দায় ভেসে উটল । নিয়তি যা থাকে কপালে তাই ঘটে । এখানেও তার ব্যাতিক্রম নয় । কিছুদুর যাওয়ার পর বাসটি সত্যি সত্যি নিয়ন্ত্রন হারাল এবং পাহাড়ের উপর থেকে গড়িয়ে এক্কেবারে খাদে এসে পড়ল ।
ভয়াল চিৎকার হুরুহুরি আর আতংকে বাস টি যেন এখন একটি মৃত্যু পুরী । এখানে ওখানে দলিত মলিত রক্তস্নাত লাছ । অসংখ্য লাছের ভিড়ে সাগর এর দেহটাও নির্বাক ।

কতদিন পর ঘুম থেকে জাগল সাগর সে চেতনা তার নেই । ঘুটঘুটে অন্ধকার ছাড়া হাতের লোম পর্যন্ত দেখা যাচ্ছেনা । ঠাহর করতে পারছেনা এখন সে কোথায় আছে । আসলে তার কি হয়েছিল তাও মনে পড়ছেনা । হাত পা আড়ষ্ট টাণ্ডায় জমে যাবার উপক্রম । হাত পা নড়াচড়া করার জন্য সে প্রানান্ত চেষ্টা করে । বুঝা গেল তাও সম্ভব নয় মনে হচ্ছে কারা যেন তাকে বেধে রেখেছে ।
অনেক কষ্টে আড়মোড়া ভেঙে বসার জন্য মন ছটপট করতে লাগল । দম যেন বন্ধ হয়ে আসতে চাইল । আবদ্ধ স্থানে নিঃশ্বাস নিতে তার ভারী কস্থ লাগছে । হটাৎ একটা খসখস আওয়াজ কানের কাছেই মনে হয় । ভয় জাগল ।
এবার তার মনে পড়ল তার বাসটি দুর্ঘটনা ঘটেছিল । সব যাত্রির সাথে স্বাভাবিক ভাবে সেও মারা যাওয়ার কথা ।
খসখস আওয়াজ টি আরও নিকটে মনে হল । মনে হয় মৃত্যুর পরবর্তী জীবনে এখন সে । কবরে ছয়াল জওয়াব হবে । মুঙ্কার নাকির ফেরেস্তা আসবে । ভাল আমলনামা হলে এখান থেকেই বেহেস্তি সুখ আর মন্দ আমলনামা হলে চিরজাহান্নাম ।
হিংস্র আওয়াজ টি এক্কেবারে মুখের উপর । তার গোল গোল চোখ দুটি যেন টর্চ লাইটের চাইতেই তিক্ষ দেখতে । ভয়ে রক্ত হিম হয়ে এল । শরীরের সমস্ত শক্তি একত্রিত করে সাগরের মুখ থেকে বের হল আরেকটি আওয়াজ বাঁচাও ।
সাগরের জ্ঞান ফিরল টাণ্ডা পানির স্পর্শে । সারা শরীর পানিতে ভেজা । কোথায় আছে
সে এখনও পরিস্কার নয় । কোন ভাবে উটে বসল । হাতের বাধন খুলল । বাধন তো নয় কাপড়ের গিট । উটে দাঁড়াবে চাঁদে মাথা টেকে গেল । এখনও দুচোখে রাজ্যর অন্ধকার । ছিদ্র দিয়ে বাইরের কিছুটা আলো ভিতরে দেখা যায় ।
আবদ্ধ জায়গা খুড়ে সাগর এখন মুক্ত আকাশের নিচে । সে আবিস্কার করল তার পরনে এবং সারা শরীরে সাদা কাফনের কাপড় দিয়ে ডাকা । এবার নিশ্চিত হল সাগর আসলেই সে মৃত ।
একসময় আকাশে যে ক্ষিন আলোটা ছিল তাও এখন আর নাই আবার নিকষ কালো আধারে ছেয়ে গেল জঙ্গল এবং পাহাড়ি জায়গা । আকাশ ভেঙ্গে নামল
সপাৎ সপাৎ বিজলী আর প্রচণ্ড ঝড়বৃষ্টি । হায়হায় এ আবার কোন কেয়ামত না পুলছিরাত মনে প্রশ্ন জাগে তার । ঝমঝম বৃষ্টি তে সে ভিজে একাকার ।
ক্ষিদেয় পেঠ জ্বলছে । রাতের আধার চলে যেতেই আবার মাঠির পৃথিবীতে ফিরে এল সাগর । সূর্য উটা দেখে অবাক হল সে । হায় খোদা তাহলে আমি এখনও বেচে আছি ।
কাছেই ধুপ ধাপ শব্দ হল । সাগর থাকিয়ে দেখে দুই বালিকা কলসি জড়ায়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে ।
এবার সাগর নিজেকে ধিক্কার দিল । তার সর্বাঙ্গে পেছানো কাফনের কাপড় । নিশ্চই ওরা পুকুর থেকে পানি সংগ্রহ করতে এসেছিল । হটাত সাগরের মত আস্ত কাফন মানব আবিস্কার করে এদের এই হাল অবস্থা ।
তিন
পরের দিন স্থানীয় হাসপাতালে গেল চিকিৎসা নিতে । সাগর ডাক্তারের রুমে ডুকে ডাক্তারের দিকে দৃষ্টিপাত করল । অমনি ডাক্তার তাকে দেখেই চেয়ার থেকে ঢলে পড়ল । ডাক্তার অজ্ঞান হওয়ার পরই সে অনুমান করল আসলেই
সে মানুষ নয় হয়ত আস্ত একটা ভুত । সে হাসপাতাল থেকে পালাল ।
ক্ষিদেয় পেঠ ছু ছু করছে । চুপি চুপি মুখটা ডেকে এক গ্রামের দিকে রওয়ানা দিল । দেখল পাশেই রাস্তার দ্বারে এক বাড়ীতে মিলাদ অনুষ্ঠান । বহু মানুষের জমায়েত । ইমাম সাব কোরআন হাদিস থেকে আলোচনা করছিল । মনে মনে সে খুশিই হল । ভাল মন্দ খাওয়া হবে পেঠের খিদেটাও এবার মেটানো যাবে ।
সবার সাথে অযু সহকারে মিলাদে অংশ নেয় সাগর । দোয়ার জন্য সবাই হাত ঊটায় । ইমাম সাব তাকায় তার পানে । সাগর দেখে ইমাম সাব তার দিকে তাকিয়ে অজ্ঞান হয়ে গেল । সাগর নিশ্চিত হল সে আসলেই একটা ভুত ।
সে এখান থেকে পালিয়ে গেল বাজারে । খাবারের দোকান থেকে খাবার ছিনতাই করতে গিয়ে ধরা পড়ে পুলিশের হাতে । পুলিশ সাগরকে থানায় নিয়ে যায় । পুলিশের বড়কর্তা সাগর কে দেখেই ওদের মতই অজ্ঞান হয়ে যায় ।।
সাংবাদিক রা নেমে পড়ে রহস্য উদ্ঘাটনে ।
সাগরের নিকট থেকে বিভিন্ন তথ্য ভিত্তিক সত্য প্রতিবেদন বেরিয়ে আসে সাংবাদিকের কলামে ।।
দুর্ঘটনার পর সবার সাথে মৃত সাগর কে জানাজা পড়িয়ে কবরস্ত করা হয় । যারা সাগরের মৃত্যু পূর্ব সময়ে জড়িত ছিল সেই অজ্ঞান ডাক্তার যে কিনা সাগরের মৃত্যু নিশ্চিত করেছিল । সেই ইমাম যিনি সাগর কে জানাযা দিয়েছিলেন । সেই অছি যিনি সাগরের লাছের পোষ্ট মরডেম রিপোর্ট করেছিল । দুর্ঘটনায় সাগর অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল আসলে সে মরেনি কিন্তু দুর্ঘটনায় যারা মারা গিয়েছিল তাদের লাছের সাথে ভুল ক্রমে সাগর কে কবরস্ত করা হয় । যার ফলে একটার পর একটা আশ্চর্য ঘটনার সুত্রপাত হয় ।



কিছুদিন পর সুস্থ হয়ে সাগর বাড়ী ফিরে আসে । তার বউ মিলি ও পড়শিরা ঘটনা শুনে অবাক হয় ।
আর তার নিস্পাপ আদরের দুলাল জড়িয়ে ধরে চুমু খায় । কচি কোমল হাত দিয়ে আনন্দে ভরিয়ে দেয় তার বাবার শরীর । মিলি চোখের জল ফেলে বলল আজ আমাদের বাবুর জন্মদিন । সাগর বলল সে জন্যই তো আল্লাহ্‌আমাকে এখনও রেখেছে বাঁচিয়ে ।


একলা জীবন [ গল্প ]
************ এম , জি, আর মাসুদ রানা

নিঝুম রাত । নীলাভ আকাশ জুড়ে তারাদের মিটিমিটি হাসি । মানিকের চোখে ঘুম নেই । ইটের বালিশ । ছেড়া একটা চাদর বিছিয়ে সেথায় শুয়ে থাকে স্কুল ঘরের বারান্দায় । পাশে রাতের নির্জনতা ভেদ করে ঘেউ ঘেউ করে চিৎকার করে কুকুরের দল । পাশেই বড় রাস্তাটা । হর্ন বাজিয়ে চলে নানা পন্য বুঝাই ট্রাক বা নানা রঙের দামি গাড়ী । অদুরে বাজে সিকিউরিটি সীস বা বাঁশী , সাবধান । এসব তার নিত্যদিনের রুটিন । প্রথম প্রথম অসুবিধা হলেও এখন যেন আর তার খারাপ লাগেনা । দীর্ঘ বার বছর হল জীবনের সাথে তার এই যুদ্ধ । একলা চলা জীবন । কেউ দান করলে খায় নয়ত আধ পেটা
উপোষ ভাবেই কাটিয়ে দেয় দিনের পর দিন । অথচ তার মুখের হাসিটা যেন লেগেই থাকে অন্যর চোখে । যখন হাসে আকাশের তারাদের মতই তাকে অনেক সুখি মনে হয় ।
লেখকের সাথে একদিন মানিকের দেখা ।
লেখক , আচ্ছা আপনার পরিচয় বা জীবনের গল্প কি একটু জানা যাবে ।
মানিক , অবশ্যই জানবেন । বসেন মানিক তার গাঁয়ের চাদরটা বিছিয়ে দিল দূর্বাঘাসের উপর ।
লেখক ------ আরে দূর্বাঘাসেই তো আরাম আবার চাদর কেন ।
মানিক --- না এখানেই বসেন আপনারা হলেন জাতীর আলোকবর্তিকা , জ্ঞানের ভাণ্ডার ঝরে আপনাদের লেখনীতে । আপনারা হলেন সমাজের পথ প্রদর্শক ।
লেখক ---- বা সুন্দর কথা জানেন তো , তা আপনার লেখাপড়া কতদুর ।
মানিক --- ৮২ এ আমি মিরপুর গভমেন্ট স্কুল থেকে ফাস্ট ক্লাশ পেয়ে মেট্রিক এবং ৮৪ এ মিরপুর কলেজ থেকে আই এ পাশ করি । আমার আব্বা মিরপুর টি এন টি অফিসে সামান্য বেতনে ক্লার্কের কাজ করত । আমরা এক ভাই এক বোন । বোনকে ছুট বয়সে বিয়ে দিয়ে দেন আমাদের পরিবার । আমি এতে রাগান্নিত হয়ে বাড়ী থেকে বের হয়ে গিয়েছিলাম । ২ বছর
ছিলাম চত্রগ্রাম শিপে । রোজগার ভালই ছিল । কিছু পয়সা জমিয়ে বাড়ী চলে আসি ।
বাড়ী আসার কতেকদিনের মধ্যই আমার আদরের বোনটি বাচ্ছা প্রসব করতে গিয়ে মারা যায় । এই শোকে আমার মায়ের
অবস্থা প্রায় পাগলের মত । মাকে উন্নত চিকিৎসা করাই । ডাক্তারের পরামর্শ ও চিকিৎসায় আমার মায়ের সুস্থতা ফিরে আসে । এবার মায়ের আবদার আমাকে বিয়ে করতে হবে ।
যথাবিহিত শুরু হল বউ পছন্দের উটকো ঝামেলা । অনেক বাচাইয়ের পর আমাদের পাঁশের গ্রামের মেয়ে নাম ছবি । তার সাথে আমার দেখা হয় । প্রথম দেখাতেই সে আমার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ে । আমরা কাছাকাছি হই । মাস ছয়েক চলে আমাদের হৃদয় বিনিময় । এবার বিয়ে টা শুধু বাকি । আমি একদিন জানতে পারি ছবি নাকি এর আগেও আরেক খানে বিয়ে হয়েছিল কিন্তু তিনদিনের বেশি সময় গড়ায়নি বিয়েটা ওরা ভেঙ্গে দেয় । যাই হোক সব কিছু জেনেও ছবির সাথে আমার
বিয়ে হয় মহা ধুমধামেই । এদিকে আব্বা চাকুরিকালিন মেয়াদ শেষ করে একটা দোকান খুলে বসেন । আব্বার পেনসনের টাকা পেয়ে আমি সিদ্ধান্ত নেই বিদেশ পাড়ি দেওয়ার । আমার বউ বসে নেই সেও তার বাবার নিকট থেকে টাকা এনে পাড়ি জমায় কাতার ।
ভাগ্যর নির্মম পরিহাস । আমরা ১২০ জন বাঙালি গিয়ে নামলাম সৌদি এয়ারওয়েজে । সেখান থেকেই আমাদের ফিরিয়ে দিল সৌদি কাস্টম কারন আমাদের ভিসা ছিল জাল । কোম্পানি ছিল নকল । ধরা খেয়ে আমি একেবারেই পথের ফকির ।
আব্বা এসব শুনে হার্ডফিল করলেন । এই যে তিনি বিছানায় পড়লেন আর উটলেন না ।
কথাগুলু বলে দম নিলেন মানিক । একটানা কথা বলায় মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসল লালা । বাম হাত দিয়ে লালা মুছে পকেট
থেকে একটা বিড়ি বের করে ধরালেন । ----- স্যার কিছু মনে করবেন না , এটা মাঝে মধ্য খাই ।
লেখক ----- আচ্ছা , তারপর ।
মানিক -------- এর মধ্য আমাদের তিন সন্তান এর জন্ম হয় । ২ ছেলে এক মেয়ে । আমি ওদের স্কুলে ভর্তি করে দেই । সংসারে বড় টানাটানি । নাই চাকরি , বউ বিদেশ । বড় কষ্ট করে চলছিল দিনযাপন । আমার এহেন ধন্য দশা দেখে স্কুলের প্রধান শিক্ষক আমাকে পিয়নের চাকুরীটা করতে বলেন । আমি যেন মাটি পেলাম । বেশ কয়েক বছর কেটে গেল আম্মাও জান্নাত বাসী হলেন ।
একদিন স্কুলের ঘড়িটা চুরি হল । সবাই সন্দেহ করে বসল আমাকে ।
আসলে কি নতুন এক পিয়ন স্কুলে ডুকতে চায় । আমাকে ফাঁসানোর জন্য ঘড়িটা আমার রুমে ওরা রেখে আসে । পরদিন পুলিশ ঘড়ি সহ আমাকে গ্রেফতার করে । সহজেই আমার চাকুরীটা চলে যায় । কি আর করা রিক্সা চালিয়ে কোন ভাবে বাচ্ছাদের ভাত কাপড়ের ব্যাবস্থা করি ।
লেখক ----- আপনার বউ কি টাকা পয়সা পাটায়নি ।
মানিক ------ না , ছবি দেশে ফিরে আসে কিন্তু আমাদের মধ্য বনিবনা হয়নি ।
লেখক ----- তাহলে ছেলে মেয়েরা কার নিকট থাকে ।
মানিক ---- ছেলে মেয়েরা তার মায়ের সাথেই আছে আর আমি একা ।
লেখক ------ কেন ? এখনও তো সময় আছে দুজনাতে মিল হয়ে যান , দেখবেন আপনারা কত সুখি ।
মানিক – সে চেষ্টা করা হয়েছে বারবার কিন্তু কোন ফল আসেনি ।
লেখক ------------ ছবি কি অন্য কোথাও ।
মানিক ----- না না সেকথা বলবেন না ছবি খুবই অনেস্টি ।
রাতের আধার ফালফালা করে একটা নিশাচর পাখি উড়ে গেল নীল দিগন্তে ।
লেখক দেখল মানিক চলে গেছে আগুনের ধুয়ার নিকট । প্রতিদিন এভাবেই কাগজ পুড়িয়ে ধুয়া বানায় আর সেই ধুয়ার আবরণের মধ্য দিয়ে চেয়ে থাকে
আকাশের তারাদের পানে ।





শিতের পাখি

বিশ্রিত হাওড় অঞ্চল । বর্ষায় গ্রামগুলিকে মনে হয় সাগরের মধ্য ভাসমান তরি ************
হিমালয় গাড়ু পাহাড়ের পাদদেশ ঘিরে সুনামগঞ্জের বিকটি বিরাট অংশ হাওড় বেষ্টিত । মাঝেমধ্য বিশ্রিত হাওড় বাঁওড়ের কুল ঘেঁষে রয়েছে সবুজে ঘেরা বনাঞ্চল । প্রকৃতি যেন সেথা ঢেলে দিয়েছে অনন্য রূপের এক নান্দনিক শোভা ।
শিতের শুরুতেই সেথায় আগমন ঘটে ঝাঁকে ঝাঁকে অথিতি পাখিদের ।
তেমনি সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওড় সংলগ্ন রোয়াক গ্রামে , ভোরে পাখিদের বিচিত্র কলগুঞ্জনে ঘুম ভাঙ্গে মনিরের । ম্যাম্ভার কাকার ছেলে মোহিত কে সঙ্গে লয়ে বেরিয়ে পড়ে নতুন কিছু দেখার অভিপ্রায়ে ।
মনির সপ্তাহ খানেক থাকবে এই অজপাড়াগায়ে । সে একজন প্রকৃতি প্রেমি এসেছে শিতের অথিতি পাখিদের নিয়ে একটি গবেষণা মুলক থিসিস তৈরির লক্ষ্য । সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জীব বৈচিত্র্য ও প্রাণী গবেষণা অনুষদের শেষ বর্ষের ছাত্র ।
মেঠূ পথ ধরে ওরা এগিয়ে যায় হাওড়ের কুল ঘেঁষা বনাঞ্চল এর দিকে । হাতে
মিনি দূরবীক্ষণ এবং শক্তিশালী ক্যামেরা ।
গাইড মোহিত হটাৎ হাত উঁচু করে চিৎকার করে উটে স্যার দেখেন দেখেন
পরীর মত একটা কি সুন্দর মাইয়া ।
মনিরের চোখে বিস্ময় ,যেন স্বর্গের কোন অস্পরা । মেয়েটির হাতে কতগুলু নাম না জানা বুনু ফুল । গাঁ এর বরন দুধে আলতা , চুল যেন আকাশের ঘন
কাল সাঝ । গাঁয়ে পেছানো রেশমি শাড়ি ।
মেয়েটির মিষ্টি কথার চমকে যেন ধ্যান ভাঙ্গে ওর

---- আরে সাহেব যেতে দিন ,
পথ আগলিয়ে রাখলে যামু ক্যামনে ।
---- ও হা তাই তো । ভুলেই গিয়েছিলাম যে ওটা একটা পথ ।
------- আবারও খিলখিল হাসির রোল বনময় ছাড়িয়ে গেল । যেন দূর বহুদুর পর্যন্ত গিয়ে ঝংকারিত হল । সাহেব আপনি কি আমাগো এলাকায় নতুন আইছেন ।
------- হু ।
তা সাবধানে চলাফেরা কইরেন , আপনার ভালা চাই বইলা কইলাম ।
-------- তা মেঘ বালিকা তোমার নামটা জানি কি ?
--------নাম দিয়া কি কইরবেন । আপনি কি এঞ্জিও লোক । টাকা দিবেন ।
---- এইসব কিছুই না খুকি , আমি তোমাদের অঞ্চল টা কেমন , দেখার জন্য
এলাম ।
-------- তা সাহেব কি দেখলেন , কতদিন হল এলেন ।
------- কিছুই দেখেনি খুকি , আজ এই প্রথম তাও কোন প্রাণীকে নয় তোমাকে দেখেছি ঢের ।
চারটি চোখের ভিতর যেন বিদ্যুৎ খেলা করে ।
ওদের মাথার উপর দিয়ে অবারিত ডানা মেলে একঝাক পাখি উড়ে বেড়ায় ।

স্যার স্যার বাজারে যাবেন না । মোহিতের ডাকে মনিরের তন্দ্রা ভাঙ্গে , আসছি
তা খুকি তোমরা থাক কোথায় ।
ওই যে জংগলের ওপাশে বড় একটা বটগাছ সেখানেই থাকি । বাবা ,মা , ২ ভাই আর আমি ।
এখানে তো আর কোন বাড়ী ঘর দেখতে পাচ্ছিনা । শুধু তোমরা একা থাক ।
--------- হু ।
বিদেশি বন্ধু আজ মেলা কাজ আছে কাল না হয় একবার এস সব জানতে পারবে ।
ও হা তাই ভাল ।
মনির এবার সামনে পা বাড়ায় ।।

পরদিন কাকা বাবুর সাথে মনির চাপান করতে করতে কথাটা তুলল । আচ্ছা
কাকা ,ঐ যে হাওড় এর পাশে বটবৃক্ষের ওখানটায় একটা পরিবার থাকে ওদের আসল বাড়ী কি এখানেই না অন্য কোথাও । কাকা বাবু মুখ তুলে সিগারেট ফুকতে ফুকতে বলল । বাবা কত পরিবারই মাঝে মধ্য এখানে এসে কিছুদিন বাস করে আবার অথিতি পাখিদের মত একদিন হুট করে চলেও যায় ।
-------- কেন তোমার কোন অসুবিধা হলনা তো ।
-------- না আংকেল ।
-------- টিক আছে কোন অসুবিধা দেখা দিলে আমাকে সাথে সাথে জানাতে ভুলবানা ।
এবার প্রসঙ্গ পালটে গল্প শুরু করে দিল কাকা বাবু । বুঝলেন মনির সাহেব ঐ যে হাওড় টা আছেনা দেখ যার কোন কুল কিনারা নাই । এই টাঙ্গুয়ার হাওড়ে নয় কুঁড়ি বিল আর ছয় কুঁড়ি কান্দা আছে । আমাদের পূর্ব পুরুষেরা সেইসব কান্দায় মহিষের পাল রাখত । একেকটা মহিষের পালে হাজার খানেক মহিষ থাকত । মহিষ এর দেখ ভালের জন্য এক ডজন কাজের রাখাল সারাদিন মাঠে মাঠে মহিষ ছড়াত । মহিষের দুধ দিয়ে হাড়ি ভর্তি ঘি মাখন প্রস্তুত করা হত । কে কত খাবে অনেকেই মহিষের দুধ দিয়ে গোসল করে শরীর পাক করত ।
আর ঐ যে পাহাড় দেখা যায় তার কুল থেকে হাওড় পর্যন্ত জমিতে ধান চাষ করা হত । শত শত মহিষের গাড়ি দিয়ে ধান গোলাঘরে সংরক্ষন করা হত । বিল থেকে বড় বড় রুই বোয়াল চিতল কাতলা প্রভৃতি মাছ যখন তখন উটানো হত ।
মাংসের স্বাদ নিতে বন্ধুক দিয়ে এক গুলিতেই কয়েক শত পাখি মারা যেত । বাচাধন সে যুগে কোন কিছুরই অভাব ছিলনা ।
কাকাবাবুদের ঐতিহ্য বহন করে এখনও কাটের দু তালা বাংলো বাড়ীটা টিকে আছে কোনমতে । বড় ধরনের ঝড় এলে যেন ভেঙ্গে ছুঁড়ে পড়েই যাবে । ঘর থেকে
খাবারের ডাক এলে কাকাবাবু গল্প থামিয়ে মনিরের দৃষ্টি আকর্ষণ করল । চল চল বাপু দেরি হলে তোমার চাচি আবার আমাদের কপালে খাদ্য বন্ধ করে দিতে পারে ।
কাকাবাবুর একমাত্র মেয়ে শায়লা পড়ে ক্লাশ নাইনে । এখানকার মেয়েরা লেখাপড়ায় বেশিদুর অগ্রসর হতে পারেনা কারন একমাত্র হাই স্কুল ও কলেজ বহুদুরে ।
কাকাবাবু শায়লাকে পড়াবার ইচ্ছা থাকলেও একমাত্র আদরের মেয়েকে কাছ ছাড়া করতে নারাজ ।
কাকাবাবুর ধন সম্পদের তো অভাব নেই । এখনও তিনি দুটু বড় বড় বিলের ইজারাদার । বছর শেষে ব্যাংকে জমা হয় কোটি কোটি টাকা ।
শায়লা খাবার টেবিলে ওটা খান এটা দেই , কেমন লাগছে আমাদের অজপারা গা , নানা প্রশ্ন করে মনিরের কান ঝালাপালা করে তুলল । সে কটার উত্তর দেবে । নিরবে খায় আর হাসে । আর ভাবে কটা দিন এখানে তার ভালই কাটবে ।।

পরদিন মনির একা একা ছুটে মেঘ বালিকার সন্ধানে । বটবৃক্ষের নিচে দেখে ছোট একটা কুঁড়েঘর । ঘরটি মাটির দেয়াল ।
পাশেই মাটির টিবি , রান্নাঘর , মাটির কলস । বহুদিন যাবত মাটির কলস কেমন মনির ভুলতেই বসেছিল , আজ যেন দিব্য দর্শনে মনে পড়ল এই মুহূর্তে ওটা যদি মেঘবালিকার কাকে শোভা পেত কতইনা সুন্দর লাগত ।

মুহূর্তের নিরবতা ভেঙ্গে দিল মেঘবালিকা । আরে সাহেব আপনি , এ যে দেখছি গরিবের বাড়িতে হাতির পা ।
মনির দেখল মেয়েটির কাঁকে মাটির কলসি । গ্রাম্য বধুর মত মাথায় ঈষৎ ঘোমটা , নাখে ঝুলছে একটা নথ ।
সাহেব কি দেখছেন ওমন করে ।
ও হা , না মানে আসলাম আরকি । তা আর কাউকে দেখছিনা যে ।
বাবা ঘরেই আছে বিছানায় অসুস্থ মানুষ । আর দু ভাই গেছে জাল দিয়ে মাছ ধরতে । আর মা রান্না বান্নায় ব্যাস্ত ।
কলসি নামিয়ে ঘর থেকে একটা সুন্দর বেতের চেয়ার এনে দিল বালিকা বসেন প্লিজ সাহেব । অবাক নয়নে চেয়ারটায় বসল মনির , এত সুন্দর সুক্ষ শিল্প কারুকাজে বানানো বনেদি বসন ।
কে বানাল এই চেয়ায় ।
কেন , আমি বানিয়েছি । প্রশংসা না করে পারছিনা খুব সুন্দর হয়েছে ।
মাটির ঘরে কৌতূহল বসত চোখ বুলিয়ে নিল মনির । কি নেই ঘরে
বেতের চেয়ার টেবিল , বিছানা পত্র আসবাবপত্র সব যেন কুটির শিল্পের সুক্ষ
হাতের অসাধারন কাজ ।
একটা পাত্রে পানি আর অন্য পাত্রে পুঁড়া আলো এনে দিল বালিকা । খান গরিব মানুষ তো তাই মাঝেমধ্য এসব খেতে হয় ।
অগ্যতা পুঁড়া আলো মুখে দিয়ে চিবুতে চিবুতে মনির জিজ্ঞাসে সত্য বলত মেঘ
আসলে তোমরা কি এখান কার অধিবাসি ।
নিশ্চই তোমরা অন্য কোথাও থেকে এসেছ ।
মেঘ বালিকা এগিয়ে এসে পাশে বসল । আমাদের গ্রাম ছিল ওই যে হাওড় তার পূর্ব পাশে সোনাডাঙ্গায় । আমার আব্বা ছিল একজন সাদাসিধা কৃষক ।
আমার দাদার দুই সন্তান । বড় জন লেখাপড়া জানত আর আব্বা আছিল মূর্খ । দাদার মৃত্যুর পর চাচা আব্বাজানের সম্পত্তি নিজের নামে লিখে নেন এবং সম্পত্তি দখল করে বাড়ী থেকে বের করে দেন । আমাদের তিন ভাই বোন কে লয়ে আব্বাজান বহুকষ্টে মায়ের হার বিক্রি করে , নৌকা আর জাল কিনে হাওড়ে মাছ ধরে সংসার চালায় । আমাদের আবার ঘর হয় । আমি ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত ্পড়েছি ।
একদিন হটাৎ আমির হোসেন ইজারাদার এর লোকেরা এসে আমাদের বাড়ী ঘর পুড়িয়ে দেয় । আব্বাজান কে ঘরে নিয়ে যায় । পরে তাঁকে হাত পা ভাঙ্গা
অবস্থায় উদ্ধার করা হয় । বহু চিকিৎসা করার পর ও আজও সে পঙ্গু ।

--- আমির হোসেন ইজারাদার তোমার বাবার শত্রু হল কেন ?
--- টাঙ্গুয়ার হাওড় পাড়ের কয়েক হাজার জেলে মাছ ধরে তারা জীবিকা নির্বাহ করে ।
আমীর হোসেন ইজারাদার অবৈধ ভাবে বেশ কয়েক বছর যাবত হাওড় দখলে
রাখে । জেলেরা মাছ ধরতে গেলে প্রয়োজনে ইজারাদার এর লোকেরা ছেলে দের নানা ভাবে হয়রানী নির্যাতন চালায় । আমার আব্বা হেকমত আলী এর প্রতিবাদ করলে এই পরিনতি হয় আমাদের । সেই থেকে আমরা যাযাবরের মত ।

একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মনির । এমন একটা বদলোক এই আমীর হোসেন এর নিকট অথচ আজ সে তারি মেহমান ।
মনে মনে ঘৃণায় লজ্জায় মনির এবার কাকাবাবুর গোস্টি উদ্ধার করে । মেঘবালিকা , আমি এবার তোমাকে মেঘ বলেই ডাকব । আমি আবার আসব , আজ তাহলে
চলি ।
মেঘ বালিকা দেখল মনিরের চোখে এক বিন্দু জল । এবার মেঘ বলল
কেন আসবেন আপনি ?
কেন ? মেঘ আমি তোমার কেউ কি হতে পারিনা ।
--------- না ।
----- অযথা মিছে মায়া
বাড়িয়ে কি লাভ । ক্ষণকালের জন্য স্বপ্নের দেখা সেই স্মৃতি স্বপ্নেই হারিয়ে যাওয়া ভাল বাস্তবে রূপ দিলে শুধু কষ্টই বাড়বে ।
জেনে রাখা ভাল তেলে আর জলে যেমন মিশ হয়না । তেমনি হাওড় পাড়ের ক্লিষ্ট মানুষ গুলুর সুখ দুখ মরম বেদনা সেই পর্যন্ত পউছেনা যেখানে বাস
করে রঙিন দুনিয়ার সুখি সমৃদ্ধ রক্ত চুষা মানুষ গুলু ।
-----মেঘ আমি ওদের মত না । আমি তোমাদের পাশে থাকতে চাই আমাকেও
তোমাদের দলে ভিড়িয়ে নাও ।
-------- না অচেনা বন্ধু । ঐ যে দেখ শীত আসছে । অথিতি পাখিদের কলগুঞ্জনে মুখরিত হবে হাওড় বাঁওর অঞ্চল । শীত কেটে যাবে ওরাও ধিরে ধিরে উড়ে যাবে আপন গন্তব্যর সিমানায় । যে পাখিরা অথিতি হয়ে নির্মল বায়ুতে বাঁচার স্বপ্নে বিভোর তারা সবাই কি ফিরে যায় । যায়না বন্ধু কিছু পাখি
ঐ ইজারাদার দের মত লালসার শিকার হয় তাদের বন্ধুকের নিশানায় ।
ওরা যেমন আমরা ও তেমন
হার না মেনে উপায় নেই মনিরের । এক সপ্তাহ কাটিয়ে কাকাবাবুর বাড়ী
থেকে বের হয়ে শেষবার মেঘের সাথে দেখা করার অভিপ্রায়ে ছুটে আসে বটতলার কুটিরে ।
কেউ কোথাও নেই । ভাঙ্গা কলসি আর ভাঙ্গা কুটিরে খেলা করছে শেষ বিকেলের রোদ । নিজের অজান্তেই মনিরের বুক ভেঙ্গে বেরিয়ে আসে একটা দীর্ঘশ্বাস । দূর থেকে কানে ভেসে আসে একটা গুলির আওয়াজ আর অচেনা
পাখিদের কর্কশ চিৎকার ।




টুকাই
*********
হাবলু রাতের অন্ধকারে ঘর ছাড়ে । মনের সাথে যুদ্ধ করে সে এখন কঠিন সিদ্ধান্তের দ্বারপ্রান্তে । আর কত এভাবে নিজ পরিবারের অত্যাচার অনাচার সহ্য করে টিকে থাকবে । একমাত্র অবলম্ভন ছিল বড় ভাবি , যে তাঁকে ছোট কাল থেকে কুলে পিটে করে মানুষ করেছে । মায়ের মৃত্যুর পর ৬ মাস থেকে বড় ভাবি
মায়ের অভাব পূরণ করে তাকে লালন পালন করেছে । বাবা স্কুল শিক্ষক সেই
মায়ের পেটে রেখেই ইহজগত ত্যাগ করে । বড় এবং মেজু ভাই এর আচরন এমন যে মনে হয় ওরা তার সৎ ভাই ।
ভাবির স্নেহ আদর তার শৈশব জীবনে মা বাবার অভাব বুঝতে দেয়নি । সন্তানের
মত প্রতিটি অভাব পূরণ করেছে তার মাতৃত্তের মমতা দিয়ে । সেই মা সমতুল্য ভাবির সাথে তাকে মিথ্যা বদনাম রটিয়ে মেজু ভাবি কি কাণ্ডটাই না করল । তা শুনে বড় ও মেজু দুভাই তাকে ধরে আচ্ছামত পিটাল । রিতিমত তিন মাস তাকে বিছানায় পড়ে থাকতে হল ।
রাতের অন্ধকারে ভাবি আসে হাব্লুর জন্য খাবার লয়ে । হাব্লু হাবলু উট খাবার
কটি খেয়ে নে নইলে শরীর আরও খারাপ হবে যে , ইশ মুখটি কেমন শুকিয়ে
আমসি হয়ে গেছে ।
____ ভাবি আমি খাবনা তুমি আর আমার ঘরে আসবানা । যে আপন মায়ের পেটের ভাই তার রক্তকে অস্বীকার করে সেখানে তুমি কেন? আমার জন্য কষ্ট সইবে , মিথ্যা অপবাদ সইবে ।
___ হাবলু ভাই আমার তুই আমার সামনে একথাটি বলতে পারলি । সেই ছোট কাল থেকে আমি কত মায়ামমতায় বড় করেছি । আমি আমার নিজের সন্তানদের এত আদর করিনি যে টুকু তুঁই পেয়েছিস । হাবলু রে আইজ বুঝি আমার পরান ডা জইলা পুইরা খাক হইয়া গেল । বড় ভাবির দুচোখ বেয়ে অশ্রু ঝরে ।
---------- কেদনা ভাবি এই কান ধরে বলছি আমার ভাইয়েরা আমাকে কাটুক মারুক তবুও তোমাকে আমি কখনও হারাতে চাইনা । আজও তুমি খানা মুখে তুলে না দিলে আমি খেতে পারিনা ।
-------ভাবি ভাত তরকারি মেখে খানা মুখের সামনে তুলে ধরে । নে ভাই খেয়ে নে আর যেন দুষ্টুমি না হয় ।
----------বদমেজাজি বড় ভাই বাব্লু ঘুম থেকে উটে ঘটনাটা দেখে চিৎকার করে রাতের ঘুম হারাম করে দেয় । মাগি আবার চুপি চুপি পিরিতি চলছে । আজ না হয় শেষ করে ফেলব । বড় ভাবির চুলের মুটি ধরে বেদম পেটায় বড় ভাই হাবলু । ভাবির বোবা কান্নায় বিছানায় পড়ে কাঁদে হাবলু । আড়াল থেকে তা দেখে খিল খিল করে হাসে মেজু ভাবি ফালানি ----শিক্ষা হয়েছে এক্কেবারে জনমের ।
সেই থেকে হাবলুর মাথায় চিন্তা কেমন করে বাড়ী থেকে পালানো যায় ।
রাতের অন্ধকারে হাবলু শেষবারের মত বড়ভাবির কক্ষে ডুকে । তার পদস্পর্শ করে । তারপর ছোট ব্যাগটি কাধে ঝুলিয়ে অজানা গন্তব্য হনহন করে পা চালায় ।
তার আঁখির পাতায় বারবার ভেসে উটে মায়ের অভাব বুঝতে না দেওয়া মায়ের মমতামাখা বড় ভাবির মুখ । যার
স্তন খেয়ে সে বেঁচে আছে এই ধুলির ধরায় । তার অজানা গন্তব্য চলার সাথি
একরাশ অখণ্ড নিরবতা ভেদ করে উটে বুকের হু হু বোবাকান্না ।

দিনাজপুর থেকে পায়ে হেটে বহুদুর পথ অতিক্রম করে চলে আসে লঞ্চ ঘাটে । লঞ্চে উটে পড়ে সে , লঞ্চ ছেড়ে দেয় । ভোরের আযান কানে আসে । ক্ষিদেয়
পেট ছু ছু করছে হাব্লুর । কিনে কিছু খাবে সঙে কানা কড়িও নেই ।
সকালে কত মেম ভদ্রলোক নাস্তা করছে মজাসে । দেখে দেখে জিভে পানি আসে তার । খিদে মেটানোর উপায় একটা আছে আর তা হল লঞ্চের চাপকল
থেকে পানি খাওয়া । হাত মুখ ধুয়ে চাপকল থেকে পেট পুড়ে পানি খায় সে এবং লঞ্চের ডেকে এসে শুয়ে পড়ে । ভোরের প্রকৃতি দেখে দেখে আর বিশুদ্ধ
বাতাস এর ঘ্রান লয়ে ঘুমিয়ে পড়ে ।
লঞ্চের কেরানির ধাক্কায় ঘুম ভাঙ্গে হাব্লুর । -------এই নবাবের বেটা কনে যাইবা ।
--- জি তা জানিনা ।
-------তার মানে ফাজলামো সত্যি কইরা ক কনে যাইবায় নইলে লঞ্চ থাইকা এখনই নামাইয়া দিমু ।
---- মাথা নিচু করে থাকে হাবলু , জি আমারে নামাইয়া দেন আমি চইলা যাই । -------- কোথেকে উটছ , শান্তা ফেরিঘাট থেকে ।
--------যাইবা কই ,
-----তাত জানিনা ।
--------আচ্ছা যেটুক এসেছ বাড়া হইল ৪০ টাকা ।
--- জি আমার কাছে কোন টাকা নাই ।
--------- টাকা নাই মানে মগের মুল্লুক পাইচ্ছ । টাকা দে ।
------ জি আমার কাছে এই ব্যাগটা ছাড়া আর কিছুই নাই ।
কেরানি মুখ খিচিয়ে হাব্লুর ব্যাগটা দেখে । উৎসুক যাত্রীরা ঘটনাটা উপভোগ করে । ব্যাগ হাতিয়ে দেখে লাভের অংকের চাইতে ক্ষতি বেশি শুধুই অযথা সময় নষ্ট । কয়েকটা পুরনো ময়লা কাপড় ছাড়া সেথা আর কিছুই নাই । চিৎকার করে কেরানি এই তুই কাজ করতে জানিস ।
------- জি স্যার কি কাজ
----- বাসন পাতি ধৌত করা , টেবিল পরিস্কার ইত্যাদি ইত্যাদি । ------ জি স্যার , পারব ।
----- তাহলে আজই কাজে লেগে যা ।
হাবলু মনে মনে ভাবল ভালই হয়েছে । কাজের বিনিময়ে লঞ্চ ভাড়া দিতে হবেনা । সেই সাথে কপালে খানাও জুটবে ।
সকাল থেকে অক্লান্ত পরিশ্রম করে হাবলু / এমন কি লঞ্চের ম্যানেজার সহ যারা লঞ্চের স্টাফ সবারই ফুট ফরমায়েশ করে । সবারই খানা দানার পর
যা কিছু অবশিষ্ট থাকে তাই জুটে তার ভাগ্য । রাতে থালাবাসন ধুয়ে ঘুমানোর
সময় হলে ম্যানেজার তাকে ডাকে ------ হাবলু হাবলু
---- জি স্যার
----------আমার মাথাটা টিপে দেত ।
মাথা টিপে হাবলু ঘুমে তার চোখ টুঁলুটুঁলু করে । একেকবার তার মনে হয় ম্যানেজারের টুটি চেপে ধরতে । মাঝেমধ্য বদমেজাজি ম্যানেজার রাগান্বিত হয়ে হাবলুর গায়ে হাত তুলে ।
বেশ কদিন এভাবেই কাটিয়ে দেয় লঞ্চে ।
একদিন সুযোগ বুঝে রাতের অন্ধকারে লঞ্চ ত্যাগ করে সে । এবং সে ছুটে অজানা গন্তব্যর দিকে তার মনের মধ্য ভেসে উটে কৈশোরের উদ্দাম দিনগুলির কথা ।

অশ্র ছাড়াই বাঘ শিকারি
**********


সময়টা ১৮ শ শতকের মাঝামাঝি । ভুমি অবমুক্ত ও রায়তের খাজনা আদায় এবং নানা অত্যাচার অনাচারের বিরুদ্ধে সাধারন
প্রজারা বিদ্রোহ করেছিল জমিদারের বিরুদ্ধে। পরগনা সাতলাখি সেলবরষ । কথিত
রয় সিলেট বাংলা ভুমির মধ্য সবচাইতে বড় জমিদারি এলাকা । তখনকার
সময় ৭লক্ষ টাকা ভুমি খাজনা প্রতি বছর কর আদায় হত ।

জমিদার তুতা মিয়া । হাতি শালে হাতি ঘোড়া শালে ঘোড়া / ছিল খানদানী ঝাকজমক পূর্ণ এক অতি শৌখিন তেজস্বী প্রবাদ পুরুষ ।একদিকে সুনামগঞ্জের উত্তর পূর্ব অঞ্চল অন্যদিকে কংসের ঘের
মোহনগঞ্জ নেত্রকোনার কিছুঅংশ এবং হিমালয় পাহাড়ের পাদদেশ
পর্যন্ত বিশ্রিত ছিল তার জমিদারি ।

প্রজা বিদ্রোহ দমন করতে তার লাটিয়াল ও রক্ষি বাহিনির খড়গ হস্ত ছিল খুবই সিদ্ধ ।
প্রজা বিদ্রোহের মুল হোতা আনিক /মানিক দুই ভাই প্রথমে জমিদার এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় । তাদের গাঁয়ে এত টুকু শক্তি
ছিল যে কুটার ছাড়াই বড় বড় গাছের ডাল ছিড়ে লাকড়ি বানিয়ে
ফেলতেন ।
কোনের কুঁড়া যা দিয়ে পানি সেচের কাজে লাগে । এই কোনের কুঁড়া কে লাটি বানিয়ে হাজার খানেক পাইক পেয়াদা কে সামাল
দিয়েছিলেন ।
জমিদার লোক লাগিয়ে রাতের অন্ধকারে দুই ভাইকে গুলি করে
হত্তা করে এবং লাছ মনাই নদীতে ফেলে দেয় । আনিক মানিকের মা ফৌজ রানি লোক লস্কর লয়ে লাছ উদ্ধার করে
সিলেট আদালতে সরাসরি হাজির হয় । এবং হাকিমের নিকট
সবিস্তার বর্ণনা দেন এবং অনেক টাকাও দেন ।
বিচারক কারন জানতে চাইলে উত্তর আসে জমিদার মানুষ মেরে
আপনাদের বস্তার বস্তা টাকা দিতে পারে । আর আমি মা হয়ে
সন্তানের লাছ লয়ে উপযুক্ত বিচারের দাবিতে টাকা দিলে সেটা
অবেধ্য হবে কেন ।
হাকিম সেদিন লজ্জাবনত হয়ে উপযুক্ত বিচারের কাট গড়ায় দাড়
করাতে জমিদার তুতা মিয়া ও তার ভাই লাল মিয়া কে গ্রেফতার করে ।

বিচারে জমিদার দুই ভাই তুতা মিয়া ও লালমিয়ার যাবত জীবন দণ্ডাদেশ দেয়া হয় ।
বহুদিন পর জেল থেকে তুতা মিয়ার কানে আসে একটি আচানক সংবাদ । বাঘের কবলে এলাকাবাসি জিম্মি । যারা এই
বাঘের কবল থেকে এলাকা বাসিকে মুক্ত করতে পারবে তাকে
ইচ্ছামাফিক পুরস্কার প্রধান করা হবে ।
তুতা মিয়া হাকিম কে তার বাঘ শিকারের ইচ্ছার কথা ব্যক্ত
করেন খালি হাতে ।জমিদার
তুতা মিয়া বাঘের সাঝ পড়ে বাঘের সামনে গিয়ে হাজির হয় এবং
বাঘের নকল ডাক ছাড়ে । বাঘ তুতা মিয়ায় দিকে হা করে লাফ
দেয় । তুতা মিয়া সুযোগ মত তার হাত বাঘের গলায় ডুকিয়ে বাঘের
জিব্বা ছিড়ে বাঘটিকে শায়েস্তা করে এবং জেল থেকে মুক্তি লাভ
করে ।
বাঘের চামড়াটি দিয়ে স্থানীয় এক লোক তার ঘর ছাউনি দিয়েছিল ।কথিত আছে তুতা মিয়া অনেক বাঘ সিংহ ও হরিণ
কৌশলে যন্ত্র ছাড়াই শিকার করেছেন ।
কালের গর্বে হারিয়ে গেছে সেলবরষের সাতলাখি জমিদার তুতা মিয়ার আদি ঐতিহ্য জৌলুষ ।
বর্তমানে ১৪ গুম্ভুজ বিশিষ্ট একটি মসজিদ তাদের স্মৃতির মিনার
হয়ে দারিয়ে আছে জুড়া পুকুর পাড়ে ।

প্রিয় দেশ বাসি
সাহিত্য সমাজের দর্পণ , সমাজের সব মানুষের সুখ দুখ আনন্দ বেদনার চিত্র
পুষ্পটিত হয় কবির কবিতা গল্প উপন্যাসে তথা সাহিত্যর সকল চেতনায় ।জ্ঞান ও বিবেক সব চাইতে মানুষের বড় বন্ধু আর সে জ্ঞান আহরন হয় ভাল বই পড়ে । কবিদের ক্ষুরদার লেখনিতে সমস্ত জাতি পায় সটিক দিক নির্দেশনা । সুসভ্য জাতি গঠনে যুগযুগ ধরে
কবি সাহিত্যিক গন জ্ঞান ,বিজ্ঞানে ,চিন্তা চেতনায় সমাজের দিক দর্শন। তাদের যথার্থ মুল্যায়ন ও সৃজনশীল মননে সব মহলকে সহযোগিতা করা একান্ত কর্তব্য । প্রচারে জাতীয় কবি সংসদ ও সাহিত্য সমাজ বাংলাদেশ ।




























সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:০৭
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×