somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তুমি নেই ভাবতে পারিনা মাগো।

১২ ই মে, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


মা, তুমি নেই ভাবতে পারিনা কিছুতেই। তোমাকে নিয়ে অনেক ভেবে অবশেষে আমি ফিরে আসি বাস্তবে। আমার সেই বাস্তব তোমাকে হারানোর বাস্তব। আমার সেই পৃথিবী তুমিহীন শূন্যতার হাহাকারে ভরা। তোমাকে ছাড়া সেই গহীন শূন্যতায় আমি নিজকে হারিয়ে ফেলি বার বার। আবার ফিরে আসি বাস্তবতার কঠিন কঠোর আলিঙ্গনে। ডুবে যাই সময়ের ব্যস্ত টানাপোড়েনে। সেখানে নিজকে জাগিয়ে রাখার একমাত্র আশ্রয় তুমি মা। তোমার কড়িকাঠের দেহটাকে আমি আর ইচ্ছে করলেই হাত বাড়িয়ে ছুঁতে পারবনা জানি, তোমাকে মা বলে ডাকতে পারিনা। তাতে কি হয়েছে? তুমি তো রয়েছো আমার চারপাশটা জুড়ে। কেন ভাববো তুমি নেই। কেন নিজকে পৃথিবীর এক নিঃস্বতম মানবের ছায়ায় বিসর্জন দিব?

মা, পৃথিবীর অমোঘ নিয়মে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে তুমি একদিন আমাদের ছেড়ে চলে যাবে-এ তো জানাই ছিল। তখন ভাবতাম তুমিহীন পৃথিবীতে আমি হয়তো নিজকে হারিয়ে ফেলবো। ভাবতাম, আমার চোখের সামনে আমার মা মারা যাবে এ কেমন করে হয়? অথচ দেখো! তোমাকে কবরে শুইয়্যে দিয়ে কেমন বেঁচে আমি! হেসে-খেলে আগের মতই জীবনের চাকায় গতি সঞ্চার করে যাচ্ছি। তোমার চলে যাওয়ায় আমার প্রতিদিনের পথ চলায় এতটুকু স্থবিরতা নেমে আসেনি মা। তার কারণ, তুমি নেই একথাটা আমি ভাবতে পারিনা কিছুতেই। আমার দৃঢ় বিশ্বাস সন্তানকে ছেড়ে একজন মা বেশীদিন বেশী দূরে থাকতে পারেনা। তুমিওতো সেই চিরায়ত মা। কোথায় আর যাবে? রয়েছো আমার কাছে কাছেই। তোমার নিঃশ্বাসের ছোঁয়ায় আমার বিশ্বাসের ভিত শক্ত হয় মা। তুমি যদি না-ই থাকবে তাহলে এই বিরুদ্ধ পৃথিবীতে আমি আমার অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছি কিভাবে? তোমার আশীর্বাদ ছাড়া সেটা কি কখনও সম্ভব? বলো মা। আমি আজও তোমার আশীর্বাদের ছায়াতলে নিজেকে সব সময় নিরাপদ ভাবি। তাই তো মা তুমি নেই-একথাটা ভাবতে পারিনা কিছুতেই।

বাড়ি ফিরে তোমাকে দেখতে পাবোনা-একথাটা আজও জোড় দিয়ে ভাবতে পারিনা। মনের ভিতর কোথায় যেন ক্ষীণ একটা আশা উঁকি দিয়ে যায়। বাড়ি গিয়ে যদি দেখতে পেতাম আগের মতো আমার ফেরার অপেক্ষায় বসে আছো তুমি! মাকে হারিয়ে এমনি বুঝি হয় সন্তানের! মেনে নেয়া আর মানিয়ে নেয়ার নানা প্রলোভনে এমনি নানা আশা-নিরাশার দোলে সে। কিন্তু ঘরে ঢুকা মাত্রই কঠিন সত্যটা আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে নেয় আমাকে। তুমি নেই! কোথাও নেই! নিজকে ধাতস্থ করি। চারপাশে ভালো করে তাকাই। তোমার স্মৃতির হাজারো প্রজাপতি মুখর হাতছানিতে আমাকে কাছে ডাকছে। এদের কাছে গিয়ে আমি তোমার শরীরের গন্ধ পাই। তোমার নিঃশ্বাসের শব্দ শুনতে পাই। আমি ভুলে যাই তুমি নেই। আনমনে মা বলে ডেকে উঠি। তুমি যেন সেই ডাকে সাড়া দাও। আমি ষ্পষ্টত শুনতে পাই। তাহলে তুমিই বলো মা! কি করে মেনে নিব তুমি নেই। তুমি আগের মতই আমাকে ভালোবাসছো, কাছে টানছো।
শুধু আমার কথাই বা বলছি কেন? তোমার ভালোবাসা দিয়ে যাদেরকে তুমি মায়ার বন্ধনে জড়িয়েছিলে ওরা সবাই তোমাকে লালন করছে মনে মনে। যারা বিভিন্ন সময় সাহায্যের আশায় তোমার কাছে আসতো, তুমি তাদেরকে আমার কথা বলে অপেক্ষায় রাখতে। তারা ঠিক সময় হিসাব করে আমার বাড়ি যাওয়ার দিনটিতে চলে আসতো। তোমার প্রতিশ্র“তিমতো আমি তাদের দাবী পূরণ করতাম। জানো মা, আমার বাড়ি যাওয়ার সময় হিসেব করে ওরা আজও আসে। আমি তাদেরকে ফিরাইনা মা। আমি বাড়ি গেলেই ওদেরকে দেয়া তোমার প্রতিশ্র“তি পূরণ হবে এটা আমি কিছুতেই ভুলতে পারিনা মা। কারণ, আমি টের পাই তুমি অপেক্ষা করছো আমি কখন তোমার প্রতিশ্র“তি রক্ষা করব! তোমার এমন হার না মানা অসংখ্য প্রতিশ্র“তি আমাকে সব সময় তাড়া করে বেড়ায়। সেই আগের মতো। তুমি যেমন আমাকে তাড়া দিতে ‘একে এটা দাও, ওকে ওটা দাও’ বলে। একবার ভাবো তো মা! আমার চারপাশের বাস্তবতায় সর্বক্ষণ তোমার এমন সরব উপস্থিতিতে আমি কি করে মেনে নিব তুমি নেই। কি করে অন্যের কাছে নিজের পরিচয় দিব যে আমি মাতৃহীন। তাহলে যে ঝঞ্জাবিক্ষুব্ধ এই পৃথিবীর বুকে যুদ্ধ করে টিকে থাকার সাহস ও শক্তিটুকু হারিয়ে ফেলবো আমি।

মাগো, ভালোবাসা কি কখনও মরে যায়, তুমিই বলো? পৃথিবীতে তুমিই ছিলে আমার একমাত্র ভালোবাসা, আমার সুখ-স্বপ্নের বাসা, হাসি-কান্না-আনন্দ-বেদনার উৎস। আমার ভালোবাসার সেই মনটা এখনও মরে যায়নি মা। মনজুড়ে সুখ-স্বপ্নের আনন্দ-হিল্লোলে এখনও আমি দোলায়িত হই। হাসি-কান্না-অনন্দ-বেদনার অনুভূতি এখনও আমাকে সমানভাবে আলোড়িত করে। মাগো, তোমাকে ঘিরে আমার অনুভূতিগুলো ছিল এমনি প্রাণবন্ত, মুখরতার সীমাহীন উচ্ছলতায় ভরপুর। সেই অনুভূতিগুলো তো আমার তেমনি আছে মা। তাই তো তুমি নেই, এই ভাবনাকে মনে স্থান দিতে কষ্ট হয় আমার। যেদিন আমার এই অনুভূতিগুলো ডানা ভেঙে মাটির সাথে মিশে যাবে সেদিনই কেবল এই বিশ্বাস আমার মনে ঠাঁই পাবে যে তুমি নেই, চিরদিনের জন্যে চলে গেছো এই পৃথিবী ছেড়ে, তোমার সন্তানের ভালোবাসার মায়া কাটিয়ে।

৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে কোন প্রজন্ম সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত? ১৯৭১ থেকে একটি সংক্ষিপ্ত ভাবনা

লিখেছেন মুনতাসির, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৩

বাংলাদেশে দুর্নীতির প্রশ্নটি প্রায়ই ব্যক্তি বা দলের দিকে ছুড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু একটু গভীরে গেলে দেখা যায়, এটি অনেক বেশি প্রজন্মভিত্তিক রাজনৈতিক - অর্থনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে যুক্ত। ১৯৭১ এর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

×